বিভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরি টক বরই ভর্তা হোক বা বরইয়ের সঙ্গে শুধু লবণ মরিচের গুঁড়া—এই সময়ে কার না খেতে ভালো লাগে। বরইয়ের কথা শুনলেই জিভে পানি চলে আসে। ছোট-বড় টক-মিষ্টি বরই, নারকেলি কুলের সঙ্গে নতুন ধরনের বাণিজ্যিক উচ্চ ফলনশীল জাতের বাউকুল, আপেল কুল ইত্যাদিও পাওয়া যাচ্ছে হাট-বাজারে, এমনকি ফেরিওয়ালার ঝুড়িতেও।
আবার বরই শুকিয়ে যুগ যুগ ধরে আমাদের উপমহাদেশে আচার, চাটনি তৈরি হয়ে আসছে।
সঙ্গে যোগ করা হয় নানা মসলা আর গুড়। তবে ভারতীয় উপমহাদেশ ছাড়াও রাশিয়া, দক্ষিণ ইউরোপ, চীন এবং মধ্যপ্রাচ্যে জন্মায় বরইয়ের নানা জাত।
এই বরইয়ের মধ্যে মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলো আছে যথেষ্ট পরিমাণে। এতে ভিটামিন সি-এর পরিমাণ অনেক বেশি।
১০০ গ্রাম বরই খেলে ভিটামিন সি-এর দৈনিক চাহিদার ৭৭ শতাংশ পূরণ হয়ে যায়। এতে আরো আছে ভিটামিন এ ও বি কমপ্লেক্স। প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থেরও ভালো উৎস বরই।
আরো পড়ুন
বাইক সাইড স্ট্যান্ডে রাখলে কি আসলেই ক্ষতি হয়?
এ ছাড়া এতে আছে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, জিংক ও ফসফরাস।
এই ক্যালসিয়াম আমাদের দাঁত ও হাড় ভালো রাখে। এর পটাশিয়াম আমাদের শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। এত পুষ্টিকর এই ফলে পানি ও আঁশের পরিমাণ বেশি হওয়ায় এতে অনেক কম ক্যালরি থাকে। এর ৮০ শতাংশই হচ্ছে জলীয় অংশ। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে যেকোনো ধরনের বরই খেতে পরামর্শ দেন ডায়েটেশিয়ানরা।
উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য টক বরই অত্যন্ত উপকারী। ডায়রিয়া, ক্রমাগত মোটা হয়ে যাওয়া, রক্তশূন্যতা, ব্রংকাইটিস ইত্যাদি রোগ নিরাময়ে চমৎকার কাজ করে এই ফলটি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিটামিন, ফাইবার ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ বরই আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ উপকারী। ফলে ত্বকে বয়সের ছাপ দূর করতেও এটি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
হাড়ের সমস্যা দূর করতে, হজম ক্ষমতা বৃদ্ধিতে, কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়েও এটি কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে বরই। চীনের প্রাচীন ঐতিহ্য অনুসারে, কুল অনিদ্রার সমস্যা নিরাময় করতে সহায়তা করে। বীজসহ পুরো ফলটাই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ফাইটোকেমিক্যাল, পলিস্যাকারাইড, ফ্ল্যাভোনয়েড, স্যাপোনিন সমৃদ্ধ। এইসব উপাদান স্নায়ুকে শান্ত করে, মন ও শরীরকে শিথিল করে এবং ভালো ঘুম হতে সহায়তা করে।
আরো পড়ুন
ভাতের সঙ্গে কাঁচা লবণ খেলে হতে পারে যে ক্ষতি
স্ট্রেস কমাতেও জুড়ি নেই এই ফলের। মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত রাখাসহ এটি উদ্বেগ কমাতেও অত্যন্ত সহায়ক। এ ছাড়া বরই হরমোনের মাত্রা ঠিক রাখতেও সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন এই মৌসুমি ফলটি খাওয়ার অভ্যাস শুরু করতে পারেন।
বরইয়ে থাকা স্যাপোনিন নামক পদার্থ মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। আলঝেইমার ও ডিমেনশিয়া রোগীদের ক্ষেত্রে ব্রেন ফাংশন ভালো করতে বরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বরইয়ে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি গুণের জন্য চীনে বরইয়ের চা পান করা হয়। পুষ্টিবিদদের মতে, শুকনা কিংবা কাঁচা বরই উভয়েই প্রদাহ উপশম করতে ভূমিকা রাখে। বরই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস সমৃদ্ধ। এই দুটি উপাদান ক্যান্সারের বিরুদ্ধেও কাজ করে। ব্যথানাশক ওষুধের ক্ষেত্রে বরই অনেক সময় বিপরীতমুখী ভূমিকা পালন করে থাকতে পারে। তাই ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়ার সময় বরই এড়িয়ে যাওয়া ভালো।
গবেষণায় দেখা গেছে, ‘পাইলরি’ নামের এক ধরনের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বর্তমান যুগে ঘরে ঘরে এসিডিটি আর গ্যাস্ট্রিক আলসারের জন্য অনেকাংশে দায়ী। অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণের কারণে বরই এই ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে বেশ কার্যকর বলে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় জানা গেছে।
আরো পড়ুন
পায়ে নীল রঙের শিরা, ঘরোয়া উপায়েই মিলবে সমাধান
সুস্থ ও নীরোগ জীবনের জন্য আমাদের দৈনিক খাদ্যতালিকায় বরইজাতীয় ফলকে প্রাধান্য দেওয়াই যায়। খুব দুর্লভ কিছু ক্ষেত্রে কোনো কোনো ব্যথানাশক ওষুধের সঙ্গে বরইয়ের কিছু বিপরীতধর্মী ভূমিকা দেখা যায়, যা কিনা এই ওষুধের পরিপূর্ণ শোষণ কিছুটা বাধাগ্রস্ত করে। বরই নিজেই একটি অ্যান্টি-ডিপ্রেসেন্ট হওয়ায় দিনে যথেষ্ট পরিমাণ বরই খাওয়া হলে অবসাদের জন্য নেওয়া নিয়মিত ওষুধের ডোজ কমিয়ে আনা উচিত। ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটি প্রযোজ্য।