৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে সাড়ে পাঁচ মাসে ঝিনাইদহে ১১টি খুন হয়েছে। সবশেষ শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাতে শৈলকুপার রামচন্দ্রপুর এলাকায় তিনজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
সম্প্রতি ঝিনাইদহ যেন সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়তই কোথাও না কোথাও ঘটছে অস্ত্রের মহড়া, পাল্টাপাল্টি-ধাওয়া, গোলাগুলি, খুন, ছিনতাই, চুরি-ডাকাতিসহ অপরাধমূলক নানা কর্মকাণ্ড।
জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে চরমপন্থী নেতা হানিফ আলী ওরফে হানেফকে হরিণাকুণ্ডুর বাড়ি থেকে মোবাইল ফোনে ডেকে এনে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। সেই সময় তার দুই সঙ্গীকেও হত্যা করা হয়। তাদের মাথায় ও বুকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
১১ ফেব্রুয়ারি সকালে হরিণাকুণ্ডুর হাকিমপুর গ্রামে সামাজিক বিরোধের জেরে মোশাররফ হোসেন নামের এক আইনজীবীর সহকারীকে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা।
১৮ জানুয়ারি সদর উপজেলার বাদপুকুরিয়া গ্রামের যুবক রুবেল হোসেনকে হত্যা করে তার বাড়ির পাশে সেপটিক ট্যাংকের মধ্যে ফেলে রাখে দুর্বৃত্তরা।
১৫ জানুয়ারি সকালে কোটচাঁদপুরের চাঁদপাড়া গ্রামে কাওসার আলী নামের পুলিশের এক সোর্সকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। গত বছরের ৯ ডিসেম্বর শৈলকুপার দীঘল গ্রামে সামাজিক দ্বন্দ্বের জেরে বাদশা মোল্লাকে নামের এক কৃষককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
২৬ নভেম্বর রাতে মহেশপুর উপজেলার মোশাররফকে আলীকে হত্যা করে তার লাশ রেখে যাওয়া হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
১৪ নভেম্বর সদর উপজেলার শিকারপুর গ্রামে সাফাওয়ান হোসেন নামের এক মাদরাসা ছাত্রকে শ্বাসরোধে হত্যা করে পুকুরে ফেলে দেয় দুর্বৃত্তরা।
২২ সেপ্টেম্বর শেলকুপার দুধসর গ্রামের মাদরাসা শিক্ষার্থী আইরিন আক্তার তিথিকে ধর্ষণের পর হত্যা করে তার মরদেহ স্থানীয় এক মাঠে ফেলে রাখা হয়। ১২ সেপ্টেম্বর মহেশপুরের ভালাইপুর এলাকায় আব্দুর রশিদ নামের এক যুবককে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
সাধারণ মানুষের অভিযোগ, ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও ঝিনাইদহে পুরোপুরি সক্রিয় হতে পারেনি পুলিশ প্রশাসন। পুলিশের আগের মতো টহল ও অভিযান দেখা যাচ্ছে না।
এ ছাড়া কারাগারে থাকা বেশ কয়েকজন চরমপন্থী নেতা জামিনে বেরিয়ে গেছেন। একইসঙ্গে পালিয়ে থাকা সন্ত্রাসীরাও এলাকায় ফিরছেন। সক্রিয় হয়ে উঠেছে কিশোর অপরাধীরা। জেলার বিভিন্ন এলাকায় মোটরসাইকেলে মহড়া দিচ্ছে তারা। যাদের অধিকাংশেরই বয়স ১৬-২২ বছরের মধ্যে। ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদা দাবি ও মাদক ব্যবসায়ও জড়িয়ে পড়ছে তারা। এসব কারণে জেলাজুড়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটছে।
সংশ্লিষ্টদের দ্রুত নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে জেলা সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি বীর মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘চোখের সামনে প্রতিনিয়ত যা দেখছি, তাতে আমরা খুবই শঙ্কিত। চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্য দিয়ে সবাইকে যেতে হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসন মাঠে থাকলেও এখন তারা অনেকটাই নিষ্ক্রিয়।’
জেলা বিএনপির সহ-সভাপিত এনামুল কবির মুকুল বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা রহস্যজনক। তারা কোনো বিশেষ অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য এমনটা করছে কিনা তা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। জনমানুষের নিরাপত্তা দিতে না পারলে তাদের সব অর্জনই ম্লান হয়ে পড়বে।
ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মঞ্জুর মোর্শেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অপরাধীরা পুলিশের চোখ ফাঁকি দেওয়ার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। তবে প্রতিটি ঘটনাতেই তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’