সড়কের ওপর ২২ বৈদ্যুতিক খুঁটি, স্থানীয়দের ক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঝিনাইদহ
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঝিনাইদহ
শেয়ার
সড়কের ওপর ২২ বৈদ্যুতিক খুঁটি, স্থানীয়দের ক্ষোভ
ছবি: কালের কণ্ঠ

ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার পায়রাডাঙ্গা থেকে পারফলসি নবনির্মিত সড়কটি মাত্র সাড়ে ৬ কিলোমিটার। অথচ এই স্বল্প দূরত্বের সড়কে ২২টি বৈদ্যুতিক খুঁটি রেখেই সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান খুঁটিগুলো অপসারণের জন্য বেশ কিছুদিন আগে স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে টাকাও জমা দিয়েছেন। তবে এখনো পর্যন্ত খুঁটিগুলো সড়কের ওপর থেকে সরানো হয়নি।

এদিকে বৈদ্যুতিক খুঁটি রেখে প্রশস্ত সড়ক নির্মাণ করায় ওই সড়কে চলাচলরত যানবাহন ও পথচারীদের মধ্যে দুর্ঘটনা ঘটার শঙ্কা রয়েছে।

জানা গেছে, উপজেলা এলজিইডি ৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্পের আওতায় সড়কটি নির্মাণ করে। নির্মিত ২৯ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে উপজেলার পায়রাডাঙ্গা থেকে পার ফলসি সড়কটি ৬ দশমিক ৪৭ কিলোমিটার দীর্ঘ। গ্রামের মধ্য দিয়ে চলে যাওয়া আঁকাবাঁকা এ সড়কটি মিশেছে হরিণাকুণ্ডু  উপজেলা শহরে।

দুই থেকে তিন ফুট জায়গার মধ্যেই বৈদ্যুতিক খুঁটি রেখে পিচের সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।

আরো পড়ুন
সাবেক হুইপ ইকবালুর রহিমসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্য প্রবাসীর মামলা

সাবেক হুইপ ইকবালুর রহিমসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্য প্রবাসীর মামলা

 

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পায়রাডাঙ্গা থেকে পার ফলসি সড়কটির পিচ কার্পেটিং কয়েকদিন আগে শেষ হয়েছে। ৬ দশমিক ৪৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কটিতে নেই কোনো সতর্কীকরণ নির্দেশনা। সড়কজুড়ে রয়েছে মোট ২২টি বৈদ্যুতিক খুঁটি।

বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলো রেখেই শেষ করা হয়েছে সড়কের পিচ কার্পেটিংয়ের কাজ। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

পায়রাডাঙ্গা গ্রামের কলেজছাত্র রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘সড়কটি তৈরি করায় আমাদের এলাকার মানুষের কষ্ট লাঘব হয়েছে। তবে সড়কের ওপর বৈদ্যুতিক খুঁটি থাকায় যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই খুঁটিগুলো দ্রুত অপসারণ করতে হবে।

সিঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা ইকবাল হোসেন বলেন, ‘সড়কের ওপর খুঁটি রেখে পিচ করার সময় আমরা আপত্তি জানিয়েছিলাম। তবে তখন সংশ্লিষ্টরা আমাদের কথা শোনেনি। আমাদের এখন একটাই দাবি সড়কের ওপর থেকে খুঁটিগুলো দ্রুত সরিয়ে ফেলা হোক।’

আরো পড়ুন
দাফনের আড়াই মাস পর বাড়ি ফিরল কিশোর!

দাফনের আড়াই মাস পর বাড়ি ফিরল কিশোর!

 

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ইয়াদ আলী বলেন, ‘সড়কের ওপর খুঁটিগুলো অপসারণের জন্য আমরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে টাকা জমা দিয়েছি। আমরা আশা করছি খুব দ্রুতই সড়কের ওপর থেকে খুঁটি সরানো হবে।’

হরিণাকুণ্ডু পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম প্রকৌশলী আবুল কালাম বলেন, ‘ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা জমা দিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটি সরানোর জন্য আবেদন করেছে। আমরা চেষ্টা করব খুব দ্রুতই ওই সড়ক থেকে খুঁটিগুলো সরিয়ে ফেলার।’

ঝিনাইদহ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনোয়ার উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে টাকা পরিশোধ করেছে বলে আমাকে জানিয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তাদের কিছু প্রক্রিয়া আছে। সেগুলো শেষ করে সড়কের ওপর থেকে খুঁটি অপসারণের কাজ শুরু করবে।’

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

নরসিংদী

মাইকে ঘোষণা দিয়ে ২ ভাইকে পিটিয়ে হত্যা

নরসিংদী প্রতিনিধি
নরসিংদী প্রতিনিধি
শেয়ার
মাইকে ঘোষণা দিয়ে ২ ভাইকে পিটিয়ে হত্যা
নিহত দুই ভাই

নরসিংদীর পলাশ উপজেলা ঘোড়াশালে মাইকে ঘোষণা দিয়ে সহোদর দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার (৩১ মার্চ) রাতে উপজেলার ঘোড়াশালের ভাগদী গ্রামের কুড়ইতলী এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। 

এ ঘটনায় পুলিশ তিনজনকে আটক করেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনির হোসেন।

নিহতরা হলেন— পলাশ উপজেলার কুড়ইতৈল গ্রামের আশরাফ উদ্দিনের ছেলে রাকিব (২৫) এবং সাকিব (২০)। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন নিহতদের বাবা আশরাফ উদ্দিন ও তার স্ত্রী রাবেয়া খাতুন। আটককৃতরা হলেন— কুড়ইতলী এলাকার পাভেল হোসেন, খবির মিয়া ও উসমান মিয়া।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, সোমবার ভোরে ভাগদীর কুড়ইতলী এলাকায় দুই যুবক অটোরিকশার ব্যাটারি চুরি করতে যায়।

এ সময় টের পেয়ে এলাকার লোকজন হিমেল নামের এক যুবককে ধরে ফেললেও আরেকজন পালিয়ে যায়। পরে এলাকার লোকজন তাকে গণপিটুনি দেয়। পরে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

এই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিকেলে ঘটনাস্থলে যায় রাকিব, সাকিবসহ অন্যান্যরা।

এ সময় তারা ভাগদী এলাকার এক অটোরিকশা চালককে মারধর করে। পরে সন্ধ্যায় আবার ৩০ থেকে ৩৫ জন যুবক ভাগদীর কুড়ইতলী এলাকায় গেলে স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এ সময় কুড়ইতলী এলাকার পাভেলের নেতৃত্বে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেয় এলাকায় ডাকাত এসেছে। 

পরে স্থানীয়রা লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের আটক করে গণপিটুনি দেয়। এতে গুরুতর আহত অবস্থায় নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সাকিবের মৃত্যু হয়।

উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায় তার বড় ভাই রাকিব।

নিহতের চাচি হাজেরা বেগম বলেন, এলাকার কিছু দুর্বৃত্ত দীর্ঘদিন ধরে চাঁদা চেয়ে আসছিল। চাঁদা না দেওয়ায় আজকে ঈদের দিন ঘুরতে গেলে সন্ত্রাসীরা সাকিব ও রাকিবকে কুপিয়ে হত্যা করে। আমরা এই হত্যার বিচার চাই।

নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত ডা. সুদীপ কুমার সাহা বলেন, সাকিব ও রাকিব নামে দুই ভাইকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। এরমধ্যে সাকিবকে আমরা মৃত অবস্থায় পাই। আর রাকিবের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিক্যালে পাঠানো হলে পথেই সে মারা যায়। তাদের মাথায় ও শরীরে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত বলা যাবে।

পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনির হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, চোর সন্দেহে একজনকে ভোরে গণপিটুনি দেয় স্থানীয়রা। পরে তাকে উদ্ধার করে পুলিশের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, এরই প্রতিবাদ করতে গিয়ে পুনরায় পিটুনির ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় একজন সদর হাসপাতালে এবং অপরজন ঢাকায় নেয়ার পথে মারা যায়। নিহতরা দুজন সহোদর ভাই। আমরা চাঁদাবাজির কোনো তথ্য পাইনি।

আরো পড়ুন
ঈদের ছুটিতেও বায়ুদূষণে শীর্ষ দশে ঢাকা

ঈদের ছুটিতেও বায়ুদূষণে শীর্ষ দশে ঢাকা

 

আমরা তদন্ত করে দেখছি এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কি না। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি থমথমে রয়েছে, এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করা হয়েছে। নিহতদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

মন্তব্য

‘সজীবই ছিল আমাদের একমাত্র সম্বল’

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
‘সজীবই ছিল আমাদের একমাত্র সম্বল’
সংগৃহীত ছবি

নরসিংদী শহরের তরোয়া এলাকার বাসিন্দা মো. হালিম সরকারের ছেলে ডা. সজীব সরকার। ডা. সজীব সরকার ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র লেকচারার হিসেবে কমর্রত ছিলেন। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন সজীব। গত ১৮ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে ‘কমপ্লিট শাটডাউনের’ মধ্যে ছোট ভাইকে আনতে গিয়ে ঢাকার উত্তরার আজমপুরে গুলিতে নিহত হন তিনি।

 

আরো পড়ুন
দুই অঞ্চলে ৮০ কিমি বেগে ঝড়ের আভাস

দুই অঞ্চলে ৮০ কিমি বেগে ঝড়ের আভাস

 

প্রতিবার ঈদে পরিবারের সদস্যরা আনন্দে মেতে ওঠলেও এবারের ঈদে কোনো আনন্দ ছিল না ডা. সজীব সরকারের পরিবারে। নিজের বড় ছেলেকে হারিয়ে এখন পাগলপ্রায় মা ঝর্না বেগম। তিনি শয্যাশায়ী। অক্সিজেন ছাড়া একমুহূর্তও চলতে পারেন না।

ঈদের দিন বিছানায় শুয়ে শুয়েই ছেলের জন্য বিলাপ করতে থাকেন তিনি। মোবাইলের স্কিনে ছেলের ছবির দিকে একপলকে চেয়ে থাকেন। আর আল্লাহর কাছে ছেলের জন্য দোয়া করতে থাকেন।

ঝর্ণা বেগম বিলাপ করতে করতে বলেন, সজীব প্রতি ঈদে বাড়ির সবার জন্য কেনাকাটা করত।

সবচেয়ে বেশি সে আমার জন্য কাপড় কিনে আনত। আমার পরিবারের সে একমাত্র সম্বল ছিল। তাকে কষ্ট করে লেখাপড়া শিখিয়ে ডাক্তার বানিয়েছি। সেও আমার সেবা করত। আমার ছেলে এখন আমার কাছে নাই।
আমি কান্নাকাটি করি না, আল্লাহর কাছে দোয়া করি ছেলেকে যেন ভালো রাখেন।

আরো পড়ুন
ইসরায়েলি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচের পদত্যাগ

ইসরায়েলি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচের পদত্যাগ

 

শহীদ ডা. সজীব সরকারের বোন সুমাইয়া সরকার বলেন, ভাইয়া পরিবারের প্রাণ ছিলেন। তিনি পরিবারটাকে আগলে রাখতেন। প্রতি রমজানে আমরা পরিবারের সবাই একসঙ্গে ইফতার করতাম। তিনি পিঠা, পায়েস খেতে পছন্দ করতেন। প্রতি ঈদেই তিনি নামাজ পড়ে এসে সেমাই, পিঠা খেতেন। নামাজে যাওয়ার আগে আমাকে ঘুম থেকে ডেকে খাবার তৈরি করতে বলতেন। আজ ভাই নেই, আমাকে কেউ ঘুম থেকে ডাকেনি। বাড়িতে কোনো ঈদের আয়োজন নেই। পুরো বাড়িতে এখন শূন্যতা ও নীরবতা বিরাজ করছে।

সজীবের এই আত্মত্যাগকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে ও স্মরণ রাখার জন্য হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যসেবার কোনো প্রতিষ্ঠানের নামকরণ ডা. সজীব সরকারের নামে করার জন্য সরকারের কাছে দাবি করেন তিনি।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

‘মোগো বাড়ি কোনো ঈদ হয় না’

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
‘মোগো বাড়ি কোনো ঈদ হয় না’
সংগৃহীত ছবি

‘সিডরে সাগরে মাছ ধরার সময় নিখোঁজ হয় স্বামী। একমাত্র সন্তানকে নিয়ে এখনো আছি। ছেলে রিকশা চালিয়ে সংসার চালায়। অনেক কষ্ট করে দিন যাপন করছি।

’ 

ঈদের আয়োজনের কথা জানতে চাইলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘মোগো বাড়ি কোনো ঈদ হয় না। পাশের বাড়ি সেমাই নাস্তা দেয় তা দিয়া ঈদ হয়।’

কথাগুলো বলছিলেন বরগুনার পাথরঘাটার সদর ইউনিয়নের বাদুরতলা গ্রামের লাভলী আক্তার। গতকাল ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে।

সবাই ঈদের আনন্দে মেতে উঠলেও লাভলী আক্তারের মনে ঈদের আনন্দ নেই। শুধু লাভলী নয়, তার মতো এমন হাজারো লাভলী রয়েছে বাদুরতলার জেলে পরিবারগুলোতে। যারা একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্যদের হারিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। 

আরো পড়ুন
মায়ানমারে স্কুলের ধ্বংসস্তূপে সন্তানদের নাম ধরে ডাকছেন মা-বাবারা

মায়ানমারে স্কুলের ধ্বংসস্তূপে সন্তানদের নাম ধরে ডাকছেন মা-বাবারা

 

জানা গেছে, পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের রুহিতা, পদ্মা, চরলাঠিমারা, জিনতলা, টেংরা, চরদুয়ানী ইউনিয়নের দক্ষিণ চরদুয়ানী, তাফালবাড়িয়া, জ্ঞানপাড়া, গাববাড়িয়াসহ একাধিক গ্রামের অসংখ্য জেলে পরিবারে নেই ঈদ আনন্দ।

একে তো কর্মক্ষম ব্যক্তি বছরের পর বছর ধরে সাগরে গিয়ে নিখোঁজ অপরদিকে অভাবের সংসারের টানাপোড়েন এমন অবস্থায় ঈদ তাদের জন্য আদার ব্যাপারির জাহাজের খোঁজ নেওয়ার মতো অবস্থা।  

২০২৩ সালের ১৭ নভেম্বরে সাগরে মাছ শিকার করতে ঘূর্ণিঝড় মিধিলির কবলে পড়ে নিখোঁজ হন ২৫ জেলে। নিখোঁজ জেলে পরিবারের সদস্যদের আর্তনাদ এখনো থামছে না। উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের হারিয়ে তারা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। তাদের বাবা-ভাই আদৌ বেঁচে আছেন কি-না, জানেন না স্বজনেরা।

তবু প্রিয়জনের আশায় বুক বেঁধে নীরব অপেক্ষায় দিন কাটছে এসব জেলের পরিবারের সদস্যদের।

আরো পড়ুন
রামুতে গরু চোরাচালান নিয়ে গোলাগুলি, নিহত ১

রামুতে গরু চোরাচালান নিয়ে গোলাগুলি, নিহত ১

 

নিখোঁজ জেলেরা হলেন - আবু কালাম (৬০), মজিবর চাপরাশি (৪৫), ইউসুফ আলী (৩৫), মো. জাফর (৩৫), আব্দুস সত্তার (৬৫), নাদিম (২০), মো. বেল্লাল (২৫), মো. ইয়াসিন (২৫), আউয়াল বিশ্বাস (৪৮), সফিকুল ইসলাম (৪০), মো. ফারুক (৩৫), আব্দুল খালেক (৫০), মো. নান্টু মিয়া (৩৫), মাহতাব (৪৫), সিদ্দিক মৃধা (৪৩), কালু মিয়া (৪০), মো. মনির হোসেন (৪৫), সহিদুল ইসলাম (৪০), মো. সুবাহান খাঁ (৭১), মো. ইউনুস সরদার (৭৩), মো. খলিল (৬১), আব্দুর রব (৬০), মো. আল আমিন (৩৫), মো. লিটন (৪১) ও মো. কালাম (৩৬)।  

রুহিতা গ্রামের কালু মাঝির মেয়ে রাইসা মনি বলেন, ‘প্রতিমুহূর্তে বাবার জন্য মন কাঁদে। মাঝেমধ্যে নিজের অজান্তে বাবাকে ডাক দিই। বাড়ির দরজায় দৌড়ে আসি, এই বুঝি বাবা আসছেন। এতোদিন কীভাবে কেটেছে, আমাদের সঙ্গে না থাকলে কেউ বুঝবেন না। প্রায় দিনই না খেয়ে থাকি। সংসার কীভাবে চলে কেউ খোঁজ নেয় না। মা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকায় মায়ের পাশে থাকতে হয়। শ্বশুর বাড়িতে থাকি না।’

প্রতিবেশী নিখোঁজ ইউসুফের ছোট ভাই ইয়াকুব আলী বলেন, ‘ভাই দুই সন্তান রেখে সাগরে যান। আর ফিরে এলেন না। সন্তানদের মুখের দিকে তাকালে নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারি না। সারা দিন বাবা বাবা বলে কান্না করে। অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি, আজও ভাইকে পাইনি। জীবিত আছেন না মারা গেছেন, তা-ও জানি না।’ 

আরো পড়ুন
তৃতীয় মেয়াদেও কি প্রেসিডেন্ট হতে চান ট্রাম্প, সংবিধানে কী আছে

তৃতীয় মেয়াদেও কি প্রেসিডেন্ট হতে চান ট্রাম্প, সংবিধানে কী আছে

 

পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, ‘উপকূলের জীবন-জীবিকা, জেলেদের নিয়ে এখন ভাবার সময় এসেছে। প্রতিনিয়ত পরিবার হারাচ্ছে উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে। নিখোঁজ পরিবারকে বিভিন্ন সময় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হয়েছে, যা চলমান রয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘পাথরঘাটায় ১৯৯৩ সাল থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত নিখোঁজ জেলেদের তালিকাসংবলিত স্মৃতিফলক করা হয়েছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদের সহযোগিতা করা হচ্ছে। ঈদকে সামনে রেখে ১৮৮ জেলে পরিবারের মাঝে ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে।

মন্তব্য

‘গরিব গো আবার কিয়ের ঈদ’

এম সোহেল, রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী)
এম সোহেল, রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী)
শেয়ার
‘গরিব গো আবার কিয়ের ঈদ’

নদীর কিনারে সারি সারি নৌকা, এরই একটির গলুইতে বসে আছেন ঝুমুর বেগম। ছোট্ট শিশু মুন্নি নায়ের নৌকার বৈঠায় হাত রেখে আনমনা তাকিয়ে রয়েছে। চোখের সামনে শান্ত নদী। কিন্তু বুকের ভেতর তোলপাড় করে কষ্ট।

ঝলমলে আকাশে খাঁ খাঁ রৌদ্দুর। সব জায়গায় ঈদের আমেজ। কিন্তু তাদের ভাসমান এই জীবনে সেই আমেজের ছিটেফোঁটাও নেই।

‘গাঙে মাছ নাই, হাতে টাহা (টাকা) নাই।

গরিব গো আবার কিয়ের (কিসের) ঈদ’—এমন কথাই আক্ষেপের সুরে বেরিয়ে এলো ঝুমুর বেগমের মুখ থেকে। তাঁর স্বামী শহীদ হাওলাদার চুপচাপ নৌকার ছইয়ে শুয়ে আছেন। নদীতে মাছ ধরে সংসার চলত, এখন নদী যেন অভিমান করে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। নদীতে তেমন মাছ নেই, যাও পাওয়া যায়, তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলাই দায়।

আরো পড়ুন
রামুতে গরু চোরাচালান নিয়ে গোলাগুলি, নিহত ১

রামুতে গরু চোরাচালান নিয়ে গোলাগুলি, নিহত ১

 

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নঘেঁষা বুড়াগৌরাঙ্গ নদীতীরে মান্তা পল্লীতে বাস করেন ঝুমুর-শহীদ দম্পতি। ঝুমুর বেগমের পাশের নৌকাটি সোহেল ভূঁইয়ার। তাঁর নৌকায় তাকাতেই আরেক দৃশ্য। ছোট্ট মেয়ে জমেলা নৌকার সামনেই বসা। তীরের শিশুদের দিকে তাকিয়ে আছে।

আরেক বোন মিমিলা নৌকার পেছনের দিকে বসা। নৌকার কাছে যেতেই সোহেল বললেন, ‘নদীতে মাছ নাই। অনেক কষ্টে ধারদেনা করে বাচ্চার পোশাক কিনছি। নিজেরা অহনও (এখনো) লই নাই। বাজারে গেছিলাম দুইজনার কাপড় কিনতে, দাম কইল দুই হাজার টাকার বেশি। এত টাকা কই পাব?’ হতাশ কণ্ঠে বলেন তিনি।

এই হতাশার গল্প শুধু এই দুই পরিবারেরই নয়। ঈদ সামনে রেখে মান্তা পল্লীর বেশির ভাগ পরিবারের উত্সবের গল্পে এমন করুণ সুর বাজছে। মান্তা সম্প্রদায়ের লোকজনের ভাষ্যমতে—গাঙে (নদীতে) তেমন মাছ নেই, ঈদের আনন্দ নেই। ঈদ মানেই তাদের কাছে শুধুই বিলাসিতা। নদীই মান্তা সম্প্রদায়ের জীবন। কিন্তু এবার ঈদের আগে সেই নদীর বুকে নৌকাগুলোতে কেবল হতাশা আর দারিদ্র্যের ছাপ।

আরো পড়ুন
ভারতে পটকা বানানোর সময় বিস্ফোরণ, চার শিশুসহ নিহত ৭

ভারতে পটকা বানানোর সময় বিস্ফোরণ, চার শিশুসহ নিহত ৭

 

ঝুমুর বেগমের মতো মায়েরা সন্তানদের নতুন জামা দিতে পারেননি, পুরনো কাপড় ধুয়ে ঈদের দিন কাটানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সোহেল মাঝির মতো বাবারা ঈদের বাজারে গিয়ে সন্তানের জন্য কিছু কিনলেও নিজেদের জন্য কিনতে পারেননি। সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে ফিরে এসেছেন শূন্য হাতে। শহীদ হাওলাদারের মতো জেলেরা কাজ হারিয়ে নৌকার ছইয়ে শুয়ে থাকেন। দিন পার করেন দুশ্চিন্তায়। গ্রামে ঈদের বাজার জমজমাট। কিন্তু মান্তা পল্লীতে নেই কোনো খুশির ঝলকানি।  

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইকবাল হাসান বলেন, ‘সরকার ও প্রশাসন তাদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে। মান্তা পল্লীর জেলেদের জন্য বিশেষ সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করব।’

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ