<p>হেমন্তের শুরুতেই গাছি বাড়িতে ধুম পড়ে। শীত আসার আগেই খেজুরগাছের-পাতা সরপা পরিষ্কার করেন গাছিরা। তারপর ঠাণ্ডা যখন জেঁকে বসে তখন শুরু রস সংগ্রহের প্রক্রিয়া।</p> <p>শীতকালে দুপুরটা ব্ড্ড ছোট। বেলার সঙ্গে পারা কঠিন। আগেই গাছকাটা চাই। গাছিরা তাই দুপুরে গ্রাসটা কোনো রকমে নাখে-মুখে গুঁজে বেরিয়ে পড়েন মাঠে। তারপর গাছ কাটেন, রাতভর রস জমা হয় রসে ভাঁড়ে। সকালে সেই রস জ্বালিয়ে গুড় তৈরি করেন গাছিরা। </p> <p>একবার ভাবুন তো শীতকালেই কেন খেজুরের রস পাওয়া যায়। কেন গরম কালে গাছিরা গাছ কাটেন না?</p> <p>আসলে খেজুর রসের জন্য তাপমাত্রা খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গ্রীষ্মকালের খেজুরগাছের নিজের প্রচুর পানির চাহিদা থাকে। সেই পানি ব্যবহার করে নিজের শরীর ও ফলের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য জোগায়। কিন্তু শীতকালে খেজুরগাছের নিজের জন্য পানির চাহিদা কম থাকে। তাই বাড়তি পানি শরীরে গাছের ভেতর রস হিসেবে জমা করে রাখে।</p> <p>তাই শীতে সহজেই খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহ করা সম্ভব হয়। সেটার পরিমাণ অনেক বেশি হয়।</p> <p>তাই বলে কি গরমকালে গাছ কাটলে রস পাওয়া যাবে না একেবারেই?</p> <p>পাওয়া যাবে। কিন্তু তা পরিমাণে খুব কম। </p> <p>তাহলে গরমেও তো কিছুটা রস গাছিরা সংগ্রহ করে গুড় বানাতে পারেন।</p> <p>গরমকালে ব্যাকটেরিয়ার প্রাদুর্ভাব থাকে খুব বেশি। খাওয়া কিংবা গুড় তৈরির উপযোগী রস পেতে হলে ২০ ডিগ্রির কাছাকাছি তাপমাত্রা থাকতে হয়ে। তাপমাত্রা এর বেশি হলেই সহজেই রসে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে এবং নষ্ট হয়ে যায়। সেই রস পানের অযোগ্য হয়ে যায়। এমনকি গুড়ও হয় না সেই রসে।</p> <p>এ কারণেই গাছিরা সন্ধ্যায় গাছ কাটেন। সারা রাত নলি বেয়ে রস জমা হয় মাটির ভাঁড়ে। সকালে ঠাণ্ডা থাকতে থাকতে রস জ্বালিয়ে গুড় তৈরি করে ফেলা হয়। </p> <p>শীতকালে রস যদি দুপুর পর্যন্ত রাখা হয়, সেই রস আর খাওয়া যায় না। সেই রস থেকে ভালো গুড়ও পাওয়া যায় না।<br /> শীতের সময় বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকে। ফলে রস সহজে নষ্ট হয় না। এই শুষ্ক পরিবেশ খেজুরের রসের সতেজতা বজায় রাখে এবং এটি দীর্ঘক্ষণ তাজা থাকে।  </p> <p>গরমের সময় বিভিন্ন পোকামাকড়, যেমন মাছি বা পিঁপড়া, খেজুরের রসের প্রতি আকৃষ্ট হয়। কিন্তু শীতে এসব পোকামাকড় তেমন সক্রিয় থাকে না, তাই রস সংগ্রহ করা সহজ হয়।  </p> <p>সুতরাং খেজুরের রসের গুণাগুণ নির্ভর করে তাপমাত্রার ওপর। আর সেই তাপমাত্রা শুধু শীতকালেই নিশ্চিত হয়।</p>