একই সংগঠনে কাজের সূত্রে তাদের পরিচয়। শুরু থেকেই তারা একে অপরের প্রতি কিছু ভিন্ন অনুভূতির ছোঁয়া পায়। এর মাঝেই শুরু হয় তাদের ভালোবাসার গল্পের। তবে তাদের সম্পর্কটা সহ্য হয়নি অনেকেরই।
একই সংগঠনে কাজের সূত্রে তাদের পরিচয়। শুরু থেকেই তারা একে অপরের প্রতি কিছু ভিন্ন অনুভূতির ছোঁয়া পায়। এর মাঝেই শুরু হয় তাদের ভালোবাসার গল্পের। তবে তাদের সম্পর্কটা সহ্য হয়নি অনেকেরই।
ঈশান আর তোঘনী পাশাপাশি বসে আছে, তবু যেন এক আকাশ সমান দূরত্ব এসে দাঁড়িয়েছে তাদের মাঝে।
ঈশান বলল, আমার ওপর ভরসা রাখো, আমরা এই বিয়েটা থামাতে সক্ষম হবো।
- আর কোনো উপায় নেই, আমাকে ক্ষমা করে দিও....
সেদিন নিরাশ হয়েই বাড়ি ফিরে ঈশান। এদিকে এই সুযোগ হাতছাড়া করেনি দিশা।
তোঘনীর পরিবার থেকে তার বিয়ে ঠিক করেছে।
সেদিন রাতে ঈশান দিশাকে অনেক অনুরোধ করে বলে, আমার পক্ষে সম্ভব নয় এভাবে থাকা, আপনি তোঘনীকে একটু বুঝান দয়া করে।
- আমি ওকে বুঝানোর অনেক চেষ্টা করেছি। তবে আপনাকে কিছু কথা বলি?
- জি বলুন।
- তোঘনী বলেছে সে সেই ছেলেকেই বিয়ে করতে চায়।
এর মাঝে বিয়েটা বন্ধ করতে সক্ষম হয় তোঘনী।
মাস দুয়েক পর ঈশানের সাথে তোঘনীর দেখা। দিশার বলা কথাগুলো মনে পড়ে ঈশানের। সে নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, রেগে গিয়ে তোঘনীকে অনেক কথা শোনাতে থাকে। তোঘনী এসবের কিছুই বুঝতে পারছিল না। একরকম বিভ্রান্তি নিয়ে সে দিশার দিকে তাকায়, দিশাকে দেখে তোঘনী বুঝতে পারে সবটা। তোঘনী কিছু না বলেই সেখান থেকে চলে যায়।
ঈশান আবার তোঘনীর কাছে গিয়ে বলে, আমাকে দয়া করে সবটা খুলে বলো।
- সব তো শুনেছ-ই!
- আমি সত্যিটা জানতে চাই।
- যদি বলি দিশা মিথ্যে বলেছিল?
- আমি তোমাকে বিশ্বাস করি।
- দিশা কখনো আমাদের ভালো চায়নি। সে আমাদের আলাদা করতে এসব বলেছিল।
- ওর কথাগুলো আমি বিশ্বাস করিনি।
তোঘনী একথা শুনে নিঃশব্দে কাঁদে। হঠাৎ ঈশান বলে উঠে, ভালোবাসি তোমায়।
- আমিও তো অনেক বেশি ভালোবাসি।
সম্পর্কিত খবর
পহেলা ফাল্গুন ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে লাবণ্য ও অমিতের আমেজ-উত্তেজনা ও প্রস্তুতির কমতি নেই। তাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ বসন্ত এটি। দিন টাকে উদযাপন করতে লাবণ্য নীল রঙের শাড়ি পরেছে, অমিতও কিঞ্চিৎ নীল রঙের একটা পাঞ্জাবি পরেছে; তবে পুরোপুরি নীল রং বললে ভুল হবে!
দুই জন পাশাপাশি ক্যাম্পাসের কৃষ্ণচূড়া শোভিত রাস্তায় হেঁটে চলেছে। প্রথম দর্শনে দেখলে মনে হবে হাত দুটো বিনা সুতায় গেঁথে আছে; সময় যত গড়াচ্ছে তাদের হাঁটার গতি তত কমে আসছে! এক পর্যায়ে লাবণ্য নজরুল ভাস্কর্যের পাদদেশে বসে খোশ গল্প করার প্রস্তাব দেয়, প্রেয়সীর প্রস্তাব কী অমিত প্রত্যাখ্যান করতে পারে? দুজন পাশাপাশি বসে আছে আর আকাশপানে আনমনা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, দেখলে মনে হবে শত জনমের বিরহ তাদের ঘিরে রেখেছে।
চন্দ্রবিন্দু ক্যাফেতে বসে দুজনে চা পান করছে। অমিত চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে আর অবলীলায় লাবণ্যের দিকে তাকিয়ে আছে। পলকহীন চাহনিতে প্রেয়সীর সৌন্দর্য অবলোকন করছে, মাঝেমধ্যে চায়ের কাপে চুমুক দিতে ভুলে যাচ্ছে।
'আর কিছু চাই না, এক একবার তুমি শুধু আমার পাশে থাইকো; দাসী ভাবিয়া একবার এমন বসন্তে দেখা দিও, কেবল চক্ষু পরিতৃপ্ত করিব।' এই কথা বলে লাবণ্য হলে প্রস্থান করল।
পৃথিবীর জন্য যিনি নির্ভেজাল মুগ্ধতা চাষ করেন, তিনি আমার জাদুকর। তাকে প্রথম দেখেছিলাম ডিপার্টমেন্টের সিঁড়িতে, চোখেমুখে অদ্ভুত মায়া নিয়ে ধাপ গলে নামছিলেন। সেদিন থেকেই গোপন অস্থিরতায় ক্রমশ ডুবতে শুরু করলাম। দিনদুয়েক খোঁজখবর নিয়ে তার সম্পর্কে জেনে বুকের সাহস হাঁটুতে গিয়ে ঠেকল।
নামের পাশে লেখা লেকচারার, ডিপার্টমেন্ট অফ ইংলিশ। নতুন ফ্যাকাল্টি। এত মানুষের ভিড়ে কেন তাকেই এত নিখুঁতভাবে ভালো লাগতে হবে? দ্বিধায় পড়লাম। মনকে বুঝিয়েও পরিত্রাণ পেলাম না।
এই পর্যায়ে পুরোপুরি বোবা হয়ে গেলাম। পরপর দুইদিন তিনি ‘হ্যালো’ লিখলেও রিপ্লাইয়ের জন্য কোনো শব্দই খুঁজে পেলাম না। পরবর্তী ৩ দিনের মাথায় মিডটার্ম পরীক্ষা শুরু।
কি রকম একটা ঘোরে থেকে বাসে, দৌড়ে, হেঁটে শ্যামলী পৌঁছলাম। বুক ধড়ফড় করছে, কোনোকিছুই ঠিকঠাক ভাবতে পারছি না। ইতিমধ্যেই দ্বিতীয় কল, ‘আপনি অন্যমনস্ক কেন? দেখে রাস্তা পার হন। সাবধানে।’
তার মুখোমুখি দাঁড়াতেই বললেন, ‘অফিস রুমে আসেননি কেন?’
- ‘জি? অসুস্থ ছিলাম।’
- ‘অসুস্থ থাকবেন তাহলে পিছনে ঘুরঘুর করেছেন কেন?'
- ‘জি?’
- ‘ভীতু।’
একটা বক্স হাতে দিয়ে বললেন, ‘ডার্ক চকলেট। রাতে খাবার পরে খাবেন। ভয় কমবে।’
যাওয়ার সময় মুখটিপে হাসলেন যেন।
আমি ঠায় দাঁড়িয়ে তার চলে যাওয়া দেখছি। বুকের ধড়ফড় স্বাভাবিক হয়ে আসছে। শুধু মনে হচ্ছে, এই ঢাকা শহর, এই রাত, এই ব্যস্ততা এর আগে এত মুগ্ধকর লাগেনি কোনোদিন...
রাত ৯টায় একটা মেসেজ পেয়ে থমকে যাই। যেখানে লেখা, আমি রাজু। আপাতত বেকার তবে কিছু একটা করার চেষ্টা করছি। আমার বাসা নাভারণ তবে থাকি না সেখানে।
আমি একটা মাত্রিমনিয়াল সাইটে বিয়ের বায়োডাটা দিয়েছিলাম। সেখানে দেখে যোগাযোগ করেছে।
ঠিক দুইদিন পরে কি মনে করে রিপ্লাই করলাম।
রাজুর সব কথা কেমন যেন অদ্ভুত। তার কখনো মনে হয় সারাবিশ্বের মানুষ মেরে ফেলি আবার মনে হয় সে কিছুদিন পরে নিজেকে মেরে ফেলবে। এরকম হাজারও কথা। কেমন যেন তাকে জানার আগ্রহ বাড়ে। একটু একটু করে কথা আগাতে থাকে। সে একটা বিজনেস দাঁড় করাতে চেষ্টা করে। সেখানে আমি ও যোগ দেই।
রাজু হঠাৎ একদিন বলে বসে, 'চলো প্রেম করি।'
এমন একটা মানুষকে আর যাই হোক ভালোবাসা যায় না। তারপরও সময় চাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার। রাজু বলে, 'তাড়াতাড়ি জানিও।'
তারপর কি মনে করে 'হ্যা' বলি। মনে বিশ্বাস ছিল, প্রেম হলেও এই মানুষ সংসারি হবে না। প্রেম তো করাই যায় কিছুদিন। এভাবে কিছুদিন কাটতে থাকে।
তারপর আসে সেই ক্ষণ যা আমি কখনোই আশা করিনি। রাজু একদিন বলল, 'চলো বিয়ে করি।'
আমি আবার সময় চাই তিন মাস। প্রথমদিকে রাজি হলেও পনের দিনের মাথায় গিয়ে রাজু বলে, তিন মাস থাকতে পারবে না। দ্রুত বিয়ে করবে।
এমন একটা মানুষকে বিয়ে করার কথা ভাবতে গেলেই আমার গা শিউরে ওঠে। কিছুতেই মনকে বোঝাতে পারি না। এদিকে রাজু বলে, "হয় বিয়ে করো না হয় 'না' বলো। কিছু একটা করো।"
আমি না বলতে পারি না, মায়া লাগে। এদিকে আবার পালিয়ে বিয়ে করতে হবে। কেউ থাকতে পারবে না। রাজুর পরিবার বলতেও কিছু নাই। কি করব ভেবে পাই না। শেষমেষ মায়া কাটাতে না পেরে দুজনে বিয়ে করে ফেলি।
আশ্চর্যের বিষয় হলো এই মানুষটা সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা মানুষ। যেটা সে বিয়ের আগে বলেছিল তার সাথে কোনো সম্পর্ক নাই তার। রাজু আর আমি, সুখে দুঃখে ভেসে চলেছি দুইটা বছর। এভাবে চলতে চাই আরো বহু বছর..
ক্যান্টিনে ফোন হাতে বসে আছি হঠাৎই পিছে থেকে কেউ বলে উঠল, প্রিয়তমেষু অজান্তা, হতে চাই তোমার নীলরঙা আকাশের সাদা মেঘ, হতে চাই অনন্তকাল মেঘভেজা নীলিমা।
পিছে ফিরে তাকাতেই দেখি নীলাদ্রি। দেখা মাত্রই লজ্জায় মুখ ফিরিয়ে নিল। বৃষ্টি প্রায় থেমে গেছে চায়ের দাম মিটিয়ে ওরা চলে গেল।
আমি সাজিদ। নীলাদ্রি আমার ১ বছরের জুনিয়র। ওর সাথে কখনো কথা হয়নি।
ক্লাস শেষে ভার্সিটি ক্যাম্পাসে বসে ফোনের নোট প্যাডে লিখছিলাম এমন সময় রিনরিনে কণ্ঠ শুনতে পেলাম। কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচেই ঠিক আমার উল্টো দিকে নীলাদ্রি তার বান্ধবীদের সাথে গল্প করছে ।
পরিশেষে শুরু হলো তাদের এক নতুন অধ্যায়। পরে অবশ্য জানা যায়, নীলাদ্রির পছন্দ ছিল সাজিদের করা ছেলে মানুষী। এলোমেলো চুলে তার দুরন্তপনা, সবার সাথে মেশার এক অসম্ভব ক্ষমতা। মেয়েদের সামনে পড়লেই তার মধ্যে যে মিশুক ভাব ফুটে ওঠে তা ছিল নীলাদ্রির ভালোলাগার উৎস।