ক্যান্টিনে ফোন হাতে বসে আছি হঠাৎই পিছে থেকে কেউ বলে উঠল, প্রিয়তমেষু অজান্তা, হতে চাই তোমার নীলরঙা আকাশের সাদা মেঘ, হতে চাই অনন্তকাল মেঘভেজা নীলিমা।
পিছে ফিরে তাকাতেই দেখি নীলাদ্রি। দেখা মাত্রই লজ্জায় মুখ ফিরিয়ে নিল। বৃষ্টি প্রায় থেমে গেছে চায়ের দাম মিটিয়ে ওরা চলে গেল।
কবিতায় ভালোবাসা
রাশিদুল ইসলাম

আমি সাজিদ। নীলাদ্রি আমার ১ বছরের জুনিয়র। ওর সাথে কখনো কথা হয়নি।
ক্লাস শেষে ভার্সিটি ক্যাম্পাসে বসে ফোনের নোট প্যাডে লিখছিলাম এমন সময় রিনরিনে কণ্ঠ শুনতে পেলাম। কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচেই ঠিক আমার উল্টো দিকে নীলাদ্রি তার বান্ধবীদের সাথে গল্প করছে ।
- জি বলুন।
- তোমাকে যেদিন প্রথম দেখি কবিতা আবৃতির সময় ওইদিনই তোমার চোখের মায়া আর আবৃত্তির প্রেমে পড়ি কিন্তু সামনে এই বিষয়ে কথা বলার সাহস হয়নি।
- এখন এতো সাহস কই পেলেন ?
- ক্যান্টিনে দেখার পর ওই চোখের মায়া আর উপেক্ষা করতে পারিনি তাই খোঁজ নিয়ে জানতে পারি তোমার জীবনে কেউ নেই। তাই মনে জমা থাকা কথা গুলো বলে দরকার তাই।
- ক্লাসের সময় হয়ে গেছে এখন যাও পরে বলব। (অস্বস্তি অনুভব করায় বলতে চাইলাম না।)
- নাহ, এখনি বলবেন? না হলে আবার কি ভেবে সামনে আসা বাদ দিবেন!
- আচ্ছা, কেউ যদি ফাল্গুনের এই শুভ্রতায় তোমার কোমলমতি কনিষ্ঠ আঙুল ধরে হাঁটতে চায়? অনুমতি কি মিলবে তার?
- কিছু কিছু চাওয়াগুলোর স্বভাবই হলো শরতের ওই সাদা মেঘের ভেলার ন্যায়, যা কখনো ঝুম বৃষ্টি হয়ে ঝরে না।
- শরতের সাদা মেঘের ভেলাই আবার হেমন্তের শেষ প্রান্তরে কুয়াশা হয়ে লুটিয়ে পড়ে ঘাসের বুকে।
- অতঃপর দুজনে পারি জমাব অচেনা কোনো এক দিগন্তে, যেখানে ইচ্ছে হলেই মেঘের অণু হয়ে ঝরে পরা যাবে।
পরিশেষে শুরু হলো তাদের এক নতুন অধ্যায়। পরে অবশ্য জানা যায়, নীলাদ্রির পছন্দ ছিল সাজিদের করা ছেলে মানুষী। এলোমেলো চুলে তার দুরন্তপনা, সবার সাথে মেশার এক অসম্ভব ক্ষমতা। মেয়েদের সামনে পড়লেই তার মধ্যে যে মিশুক ভাব ফুটে ওঠে তা ছিল নীলাদ্রির ভালোলাগার উৎস।
সম্পর্কিত খবর

থেকো আমার সাথে
সজীব চন্দ্র দাশ

পহেলা ফাল্গুন ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে লাবণ্য ও অমিতের আমেজ-উত্তেজনা ও প্রস্তুতির কমতি নেই। তাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ বসন্ত এটি। দিন টাকে উদযাপন করতে লাবণ্য নীল রঙের শাড়ি পরেছে, অমিতও কিঞ্চিৎ নীল রঙের একটা পাঞ্জাবি পরেছে; তবে পুরোপুরি নীল রং বললে ভুল হবে!
দুই জন পাশাপাশি ক্যাম্পাসের কৃষ্ণচূড়া শোভিত রাস্তায় হেঁটে চলেছে। প্রথম দর্শনে দেখলে মনে হবে হাত দুটো বিনা সুতায় গেঁথে আছে; সময় যত গড়াচ্ছে তাদের হাঁটার গতি তত কমে আসছে! এক পর্যায়ে লাবণ্য নজরুল ভাস্কর্যের পাদদেশে বসে খোশ গল্প করার প্রস্তাব দেয়, প্রেয়সীর প্রস্তাব কী অমিত প্রত্যাখ্যান করতে পারে? দুজন পাশাপাশি বসে আছে আর আকাশপানে আনমনা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, দেখলে মনে হবে শত জনমের বিরহ তাদের ঘিরে রেখেছে।
পরক্ষণেই অমিত বলল, 'একদিন সবই হবে, শুধু সময়ের অপেক্ষা।'
সাথে সাথেই লাবণ্য বলে ওঠে, 'সামনের বসন্তে এভাবে তোমার পাশাপাশি বসতে পারব তো? আজকের মতো কোপায় ফুল গেঁথে দিবে তো?'
এবার অমিত কিছুটা চুপচাপ বসে আছে, অমিত জানে না সামনের দিনগুলোতে কি হতে চলছে।
চন্দ্রবিন্দু ক্যাফেতে বসে দুজনে চা পান করছে। অমিত চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে আর অবলীলায় লাবণ্যের দিকে তাকিয়ে আছে। পলকহীন চাহনিতে প্রেয়সীর সৌন্দর্য অবলোকন করছে, মাঝেমধ্যে চায়ের কাপে চুমুক দিতে ভুলে যাচ্ছে।
এবার অমিত কিছুটা কাঁপা গলায় বলল, 'তুমি আমার জীবনে আছো তো? বাকিটা জীবন তোমার এই অপরূপ সৌন্দর্য অবলোকন করতে পারব তো?'
লাবণ্য কিছুটা অভয় দিয়ে বলল, 'হ্যাঁ, আমি সব সময় তোমার পাশে আছি। তুমি শুধু বাকিটা জীবন আমার সাথে থেকো।' এই বলে লাবণ্য শক্ত করে অমিতের হাতটা চেপে ধরল। দুজনেই কিছুটা চুপচাপ থাকার পর অমিত বলল, 'অনেকটা রাত হয়েছে। চলো তোমাকে হলে দিয়ে আসি।
এই বলে দুজনে হল সম্মুখে হাঁটতে শুরু করল। হল গেটে এসে দুজন দুজনের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।
'আর কিছু চাই না, এক একবার তুমি শুধু আমার পাশে থাইকো; দাসী ভাবিয়া একবার এমন বসন্তে দেখা দিও, কেবল চক্ষু পরিতৃপ্ত করিব।' এই কথা বলে লাবণ্য হলে প্রস্থান করল।

জাদুকরময় রাত
নূরনবী সোহাগ

পৃথিবীর জন্য যিনি নির্ভেজাল মুগ্ধতা চাষ করেন, তিনি আমার জাদুকর। তাকে প্রথম দেখেছিলাম ডিপার্টমেন্টের সিঁড়িতে, চোখেমুখে অদ্ভুত মায়া নিয়ে ধাপ গলে নামছিলেন। সেদিন থেকেই গোপন অস্থিরতায় ক্রমশ ডুবতে শুরু করলাম। দিনদুয়েক খোঁজখবর নিয়ে তার সম্পর্কে জেনে বুকের সাহস হাঁটুতে গিয়ে ঠেকল।
নামের পাশে লেখা লেকচারার, ডিপার্টমেন্ট অফ ইংলিশ। নতুন ফ্যাকাল্টি। এত মানুষের ভিড়ে কেন তাকেই এত নিখুঁতভাবে ভালো লাগতে হবে? দ্বিধায় পড়লাম। মনকে বুঝিয়েও পরিত্রাণ পেলাম না।
এই পর্যায়ে পুরোপুরি বোবা হয়ে গেলাম। পরপর দুইদিন তিনি ‘হ্যালো’ লিখলেও রিপ্লাইয়ের জন্য কোনো শব্দই খুঁজে পেলাম না। পরবর্তী ৩ দিনের মাথায় মিডটার্ম পরীক্ষা শুরু।
- ‘জি। ক্যাম্পাসে।’
- ‘শ্যামলী আসেন। ডিপিআরসির সামনে অপেক্ষা করছি।’
- ‘জি।’
কি রকম একটা ঘোরে থেকে বাসে, দৌড়ে, হেঁটে শ্যামলী পৌঁছলাম। বুক ধড়ফড় করছে, কোনোকিছুই ঠিকঠাক ভাবতে পারছি না। ইতিমধ্যেই দ্বিতীয় কল, ‘আপনি অন্যমনস্ক কেন? দেখে রাস্তা পার হন। সাবধানে।’
তার মুখোমুখি দাঁড়াতেই বললেন, ‘অফিস রুমে আসেননি কেন?’
- ‘জি? অসুস্থ ছিলাম।’
- ‘অসুস্থ থাকবেন তাহলে পিছনে ঘুরঘুর করেছেন কেন?'
- ‘জি?’
- ‘ভীতু।’
একটা বক্স হাতে দিয়ে বললেন, ‘ডার্ক চকলেট। রাতে খাবার পরে খাবেন। ভয় কমবে।’
যাওয়ার সময় মুখটিপে হাসলেন যেন।
আমি ঠায় দাঁড়িয়ে তার চলে যাওয়া দেখছি। বুকের ধড়ফড় স্বাভাবিক হয়ে আসছে। শুধু মনে হচ্ছে, এই ঢাকা শহর, এই রাত, এই ব্যস্ততা এর আগে এত মুগ্ধকর লাগেনি কোনোদিন...

অপ্রিয় ভালোবাসা
সিনাত আরা

রাত ৯টায় একটা মেসেজ পেয়ে থমকে যাই। যেখানে লেখা, আমি রাজু। আপাতত বেকার তবে কিছু একটা করার চেষ্টা করছি। আমার বাসা নাভারণ তবে থাকি না সেখানে।
আমি একটা মাত্রিমনিয়াল সাইটে বিয়ের বায়োডাটা দিয়েছিলাম। সেখানে দেখে যোগাযোগ করেছে।
ঠিক দুইদিন পরে কি মনে করে রিপ্লাই করলাম।
রাজুর সব কথা কেমন যেন অদ্ভুত। তার কখনো মনে হয় সারাবিশ্বের মানুষ মেরে ফেলি আবার মনে হয় সে কিছুদিন পরে নিজেকে মেরে ফেলবে। এরকম হাজারও কথা। কেমন যেন তাকে জানার আগ্রহ বাড়ে। একটু একটু করে কথা আগাতে থাকে। সে একটা বিজনেস দাঁড় করাতে চেষ্টা করে। সেখানে আমি ও যোগ দেই।
রাজু হঠাৎ একদিন বলে বসে, 'চলো প্রেম করি।'
এমন একটা মানুষকে আর যাই হোক ভালোবাসা যায় না। তারপরও সময় চাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার। রাজু বলে, 'তাড়াতাড়ি জানিও।'
তারপর কি মনে করে 'হ্যা' বলি। মনে বিশ্বাস ছিল, প্রেম হলেও এই মানুষ সংসারি হবে না। প্রেম তো করাই যায় কিছুদিন। এভাবে কিছুদিন কাটতে থাকে।
তারপর আসে সেই ক্ষণ যা আমি কখনোই আশা করিনি। রাজু একদিন বলল, 'চলো বিয়ে করি।'
আমি আবার সময় চাই তিন মাস। প্রথমদিকে রাজি হলেও পনের দিনের মাথায় গিয়ে রাজু বলে, তিন মাস থাকতে পারবে না। দ্রুত বিয়ে করবে।
এমন একটা মানুষকে বিয়ে করার কথা ভাবতে গেলেই আমার গা শিউরে ওঠে। কিছুতেই মনকে বোঝাতে পারি না। এদিকে রাজু বলে, "হয় বিয়ে করো না হয় 'না' বলো। কিছু একটা করো।"
আমি না বলতে পারি না, মায়া লাগে। এদিকে আবার পালিয়ে বিয়ে করতে হবে। কেউ থাকতে পারবে না। রাজুর পরিবার বলতেও কিছু নাই। কি করব ভেবে পাই না। শেষমেষ মায়া কাটাতে না পেরে দুজনে বিয়ে করে ফেলি।
আশ্চর্যের বিষয় হলো এই মানুষটা সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা মানুষ। যেটা সে বিয়ের আগে বলেছিল তার সাথে কোনো সম্পর্ক নাই তার। রাজু আর আমি, সুখে দুঃখে ভেসে চলেছি দুইটা বছর। এভাবে চলতে চাই আরো বহু বছর..

ভালোবাসার এক দিন
মো. আনারুল ইসলাম রানা

আড্ডাবাজ তকমা গায়ে থাকায় খুব সহজে পরিচয় হয়েছিল ইলাবতীর সঙ্গে। নামটা কেমন পৌরাণিক মনে হলো? প্রথম তার নাম শুনে আমারও এমন মনে হয়েছিল। ধীরে ধীরে খুব পরিচিত মনে হতে লাগল ইলাবতীকে। সে আমাদের কলেজের শিক্ষার্থী।
ফেসবুকে অবশ্য আমাদের কথাগুলো ছিল খুবই ছকবাঁধা। এই যেমন ইলাবতী জানতে চাইত, জব সেক্টর কেমন? কখনো বা পড়াশোনার টিপস। আমি তার কাছে শুনতাম ক্যাম্পাসের বর্তমান হালচাল।
ইলাবতীর ছিল ছবি তোলার শখ।
এর মধ্যেই এলো আমাদের কলেজের দশম বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠান। দুই দিনব্যাপী পুনর্মিলনী উৎসবে আমি গেলাম ক্যাম্পাসে। ইলাবতীকে দেখলাম একটা শাড়ি পরেছে। নীল জমিনে কালো পাড়।
আমিও পাঞ্জাবি পরেছি। ইলাবতীকে সামনে দেখে বললাম, ‘আমাদের দুজনের পোশাক মানিয়েছে বেশ, চলো একটা ছবি তুলি।’
ইলাবতী হাসতে হাসতে পাশে এলো। সেলফি তুলল। সেলফি তোলার এক ফাঁকে আস্তে করে বলল, ‘নীল শাড়িতে তো ছবি তুললাম, যদি লাল শাড়িতে ছবি তুলতে চাই?’
কী উত্তর দেব খুঁজে পাচ্ছিলাম না। একটা হাসি দিয়ে বললাম, ‘ছবি তুলতে আমিও রাজি, তবে আমার মাথায় তখন একটা পাগড়ি থাকবে।’