গাজার সার্বিক পরিস্থিতির সঙ্গে জড়িত ‘সব পক্ষ’ যুদ্ধবিষয়ক আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলবে বলে আশা করে যুক্তরাষ্ট্র। তবে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত ১৫ জনের বিষয়ে দেশটি কোনো মূল্যায়ন করেছে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে তারা। নিহতদের মাঝে কেউ ছিলেন স্বাস্থ্যকর্মী, কেউ আবার বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্মী ও একজন জাতিসংঘ কর্মকর্তা।
এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, ‘এ মুহূর্তে গাজায় যা কিছু ঘটছে, সেই সব কিছুর জন্যই হামাস দায়ী।
’
জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা জানিয়েছে, গত ২৩ মার্চ পাঁচটি অ্যাম্বুল্যান্স, একটি অগ্নিনির্বাপক ট্রাক ও একটি জাতিসংঘের গাড়ি একের পর এক হামলার শিকার হয়েছে। এই ঘটনায় ১৫ জন নিহত হন এবং তাদের সবাইকে একত্র করে গণকবরে দাফন করা হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তাদের সেনারা এমন কিছু যানবাহনের ওপর গুলি চালিয়েছে, যেগুলো ‘সন্দেহজনকভাবে’ অগ্রসর হচ্ছিল। কারণ ওই যানবাহনগুলো তাদের হেডলাইট জ্বালিয়ে রাখেনি বা যানবাহনগুলোতে কোনো জরুরি সংকেতও চালু ছিল না।
তাদের দাবি, নিহতদের মধ্যে একজন হামাস সদস্যও ছিলেন। পাশাপাশি সেখানে অন্যান্য যোদ্ধাও ছিলেন। তবে মরদেহগুলোকে একসঙ্গে বালিতে কবর দেওয়া নিয়ে তারা কোনো মন্তব্য করেনি।
আরো পড়ুন
দক্ষিণ গাজায় ‘অত্যন্ত কঠোর যুদ্ধে’ ফিরছে ইসরায়েলি সেনারা
এদিকে যুদ্ধ সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক আইনে বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া আছে।
একই সঙ্গে চিকিৎসাসেবার সঙ্গে যুক্ত মানুষদের ব্যাপারেও এই আইনে বিশেষ সুরক্ষা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী মিত্র যুক্তরাষ্ট্রও তার নিজের আইনের কাছে বাধা। আইন অনুযায়ী, যুদ্ধবিষয়ক আইন লঙ্ঘন করে বিদেশি সামরিক বাহিনী এই অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে না।
জাতিসংঘের মানবিক সংস্থার প্রধান জনাথন হুইটল জানিয়েছেন, ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত একটু অ্যাম্বুল্যান্সের জরুরি আলোর সাহায্যে গণকবরটি চিহ্নিত করা হয়েছে। এক্সে প্রকাশিত এক ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘এখানে যা হয়েছে, তা পুরোপুরিভাবে একটি ভয়াবহ ঘটনা।
স্বাস্থ্যকর্মীরা কখনোই লক্ষ্যবস্তু হতে পারে না।’
হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির আলোচনা স্থগিত হওয়ার পর গত ১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েল ফের গাজায় আকাশ ও স্থল অভিযান চালানো শুরু করে। সেই থেকে গাজায় এক হাজার জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
অন্যদিকে নতুন করে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকার বেশ কিছু স্থান খালি করার নির্দেশনা দিয়েছে তেল আবিব। নোটিশে বলা হয়েছে, ‘সন্ত্রাসী’দের নিরস্ত্র করার জন্য ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বড় ধরনের অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে, ফলে রাফা ও পার্শ্ববর্তী খান ইউনিসের স্থানীয় বাসিন্দারা যেন দ্রুত আল-মাওয়াসি অঞ্চলে সরে যান। এরপর ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সাম্প্রতিক দুই মাসব্যাপী যুদ্ধবিরতির সময় রাফায় নিজেদের বাড়িতে ফেরত আসা হাজার হাজার ফিলিস্তিনি ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে শুরু করে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নির্দেশে গাজার এক পঞ্চমাংশ এলাকা এখন খালি করে ফেলা হয়েছে।
এ ছাড়া জরুরি ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ থাকায় গাজার হাসপাতালগুলোতে দেখা দিয়েছে ওষুধ স্বল্পতা। যুদ্ধবিরতি ভেঙে লাগাতার ১৫ দিনের মতো চলছে ইসরায়েলি আগ্রাসন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর সীমান্ত পার করে ইসরায়েলের ওপর হামাসের এক নজিরবিহীন হামলার জবাবে ইসরায়েল গাজায় এই অভিযান শুরু করে। ওই হামলায় প্রায় এক হাজার ২০০ জন নিহত হয় এবং ২৫১ জন ইসরায়েলিকে জিম্মি করা হয়। এর পর থেকে চলমান যুদ্ধে ৫০ হাজার ৩৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।