<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিগত সরকারের আমলে ১৫ বছরে দেশে অনেক উন্নয়নকাজ হয়েছে। কিন্তু সেসবের কত শতাংশ নিয়ম মেনে হয়েছে, সেগুলো কতটা টেকসই হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। বিগত সরকারের সময় সরকারি অর্থে এমন অনেক ভবন বা স্থাপনা তৈরি হয়েছে, যেগুলোতে লোহার রডের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে বাঁশ। কোনো কোনোটি নির্মাণ শেষ না হতেই ভেঙে পড়েছে। মূলত উন্নয়নের নামে করা হয়েছে লুটপাট। কালের কণ্ঠে গত তিন দিন ধারাবাহিক প্রতিবেদনে সেই লুটপাটের চিত্র তুলে ধরে বলা হয়েছে, অন্তত আটটি প্রকল্পে ব্যয় করা হয়েছে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। অথচ হাজার হাজার কোটি টাকার এসব প্রকল্প মানুষের খুব একটা কাজে আসছে না। প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় গৃহহীনদের ঘর দিতে আট হাজার ৭৯৯ কোটি টাকা খরচ করা হয়। অথচ যাদের ওই ঘর দেওয়া হয়েছে, তাদের বেশির ভাগই ওই সব ঘর ব্যবহার করে না। নিম্নমানের কাজের কারণে বেশির ভাগ ঘরই এখন পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে খুশি করতে অন্যের জমি দখল করে ডিসি-টিএনওরা গৃহহীনদের ঘর দেওয়ার কাজ করেছেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রকাশিত ধারাবাহিক প্রতিবেদনের দ্বিতীয় পর্বে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৫ বছরে ১৭ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সড়ক ও সেতু, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতের হাজার হাজার প্রকল্পে অনিয়ম, দুর্নীতি আর লুটপাট হয়েছে সীমাহীন। প্রভাবশালীদের ইচ্ছায় অপ্রয়োজনীয়, কমিশননির্ভর এবং অপচয়ের এসব প্রকল্পের একটি বড় অংশই গেছে স্বার্থান্বেষী মহলের পেটে। সড়ক ও সেতু বিভাগের ওপর করা টিআইবির একটি গবেষণার তথ্য ধরলেও গড়ে এই অনিয়ম, লুটপাট ও দুর্নীতির অঙ্ক কমবেশি চার লাখ কোটি থেকে সাত লাখ কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এ রকম যত্রতত্র বাছবিচারহীন প্রকল্পে নয়ছয় করে লুটে নেওয়া হয়েছে বিপুল অঙ্কের টাকা। একটি বড় অংশই লোপাট ও অনিয়মে জলে গেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পদ্মা রেল সংযোগ, কর্ণফুলী টানেল, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও পায়রা বন্দর প্রকল্পে খরচ করা হচ্ছে এক লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত এসব মেগাপ্রকল্পের অর্থনৈতিক আউটপুট শূন্য। সড়ক যোগাযোগে পদ্মা সেতু বিল্পব ঘটালেও পদ্মা রেল সেতুর ৩৯ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ পুরোই জলে গেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেলের অনেক প্রকল্পই নেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায়। এর মাধ্যমে জনগণের কতটা লাভ হবে বা অর্থনৈতিকভাবে এই প্রকল্প থেকে কতটা সফলতা আসবে, তা চিন্তা করা হয়নি। ফলে এত বড় বিনিয়োগ করেও অর্থনীতিতে তার কোনো ভূমিকা নেই। যেমন লক্ষ্যমাত্রার পাঁচ ভাগের এক ভাগ গাড়ি চলে কর্ণফুলী টানেলে। দিনে গড়ে আয় হচ্ছে ১২ লাখ টাকার মতো। অথচ দিনে রক্ষণাবেক্ষণের খরচ সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা। এর বাইরে বছরে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা টানেলের ঋণ পরিশোধ করতে হবে। মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুর পর জ্বালানিসংকটে বারবার বন্ধ হয়। উদ্দেশ্য সফল হয়নি দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেললাইন নির্মাণের। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব প্রকল্পে যেমন জনগণের অর্থের অপচয় হয়েছে, তেমনি দুর্নীতিবাজদের সহযোগিতা করা হয়েছে। এখন এই প্রকল্পগুলো নতুন করে যাচাই করা দরকার। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত। ভবিষ্যতে যাতে এভাবে কেউ জনগণের অর্থ অপচয় না করতে পারে, সে জন্য তাদের যথোপযুক্ত বিচার হওয়া উচিত।</span></span></span></span></p>