দেশের শিল্প খাত, বিশেষ করে বেসরকারি শিল্প খাত ভালো নেই। প্রতিনিয়ত নানা ধরনের সংকট মোকাবেলা করতে হচ্ছে। গত আগস্টে সরকার পতনের পর থেকেই দেশে এক ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ভালো নয়।
বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করতে হবে
- বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি সর্বনিম্ন

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বেসরকারি খাতের ঋণে প্রবৃদ্ধি ৭.২৮ শতাংশ হয়েছিল, দেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০২১ সালের মে মাসে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭.৫৫ শতাংশ। গত ডিসেম্বরে অর্জিত প্রবৃদ্ধি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে নিচে রয়েছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে দেশের ব্যাংকগুলোর মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ২১ লাখ ৫০ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি ঋণ ছিল চার লাখ ১৫ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা।
আমরা মনে করি, বেসরকারি খাতের বিকাশ ত্বরান্বিত করতে নানামুখী উদ্যোগ নিতে হবে। সর্বোপরি এই খাতে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
সম্পর্কিত খবর

নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিন
- গণপরিবহনে ডাকাতির আশঙ্কা

বছরে দুটি ঈদ বাঙালি মুসলমানদের প্রধান দুটি ধর্মীয় উৎসব। কাজের প্রয়োজনে যে যেখানেই থাকুক, এ সময় সুস্থ-সবল প্রায় সবাই নাড়ির টানে পরিবার বা স্বজনদের কাছে ফিরবেই। সামনে ঈদুল ফিতর। এখনো সপ্তাহ দুয়েক বাকি।
গবেষণা ও সচেতনতামূলক প্রতিষ্ঠান সেভ দ্য রোডের তথ্য মতে, গত আট মাসে সড়ক, রেল ও নৌপথে চার হাজার ৫০৫টি ছিনতাই এবং ২৫৫টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে শুধু সড়কপথে এক হাজার ৮৬৮টি ছিনতাই আর ১১৩টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছে ১৬৮ জন। এ ছাড়া ফুটপাত বা চলার পথে দুই হাজার ৪৩২টি ছিনতাই ও ৩৫টি ডাকাতির ঘটনায় এক হাজার ১৭ জন আহত এবং একজন নারীসহ দুজন নিহত হয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য মতে, গত বছর জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে নিবন্ধিত যাত্রীবাহী বাসের সংখ্যা ৫৪ হাজার ৪৭৪।
আমরা চাই, এবারের ঈদ যাত্রা নিরাপদ ও আনন্দদায়ক হোক। ডাকাতি-ছিনতাই থেকে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা রোধেও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।

মহাসচিবের ইতিবাচক বার্তা
- সংলাপে সহায়তায় প্রস্তুত জাতিসংঘ

রমজান সংহতি সফর শেষে বাংলাদেশ ছেড়ে গেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। চার দিনের সফরে গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় আসেন তিনি। শুক্রবার তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কক্সবাজার সফর করেন। সেখানে তাঁরা লাখো রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতারে অংশ নেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশ সফর শেষে গতকাল রবিবার সকালে ঢাকা ছেড়ে যান। ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার আগে গত শনিবার এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই বলে আশ্বস্ত করেছেন যে ‘জাতিসংঘ শান্তি, জাতীয় সংলাপ, আস্থা ও নিরাময়কে উৎসাহিত ও সহায়তা করতে প্রস্তুত।
বর্তমান বিশ্ববাস্তবতায় জাতিসংঘ মহাসচিবের বাংলাদেশ সফর নিঃসন্দেহে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। কারণ বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। মানবিক কারণে বাংলাদেশ কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে সাময়িক আশ্রয় দিয়েছে।
সামরিক অভিযানের মুখে মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে মায়ানমার সরকার শুধু টালবাহানা করছে। বাংলাদেশ সফরে এসে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন, রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মায়ানমারের সব প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে ভূমিকা রাখতে হবে।
বাংলাদেশ এখন এক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের কাজ হাতে নিয়েছে। আগামী দিনের উজ্জ্বল বাংলাদেশে জাতিসংঘ তার সহায়তা দিয়ে যাবে, জাতিসংঘ মহাসচিব সে বার্তাই দিয়ে গেলেন।

সময় ও অর্থের এ অপচয় কেন
- কাজ শেষ না করেই প্রকল্পের সমাপ্তি

জনস্বার্থে রাষ্ট্রীয়ভাবে নানামুখী প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। কিন্তু প্রকল্প গ্রহণ থেকে বাস্তবায়ন পর্যন্ত পুরো কাজ যদি সঠিকভাবে সম্পন্ন না হয়, তাহলে জনপ্রত্যাশা যেমন পূরণ হয় না, তেমনি রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় হয়। নিকট অতীতে এমন অনেক নজির রয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) থেকে এসংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
আইএমইডির সাবেক সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রথম দিকে দেখা যায়, অনেক সময় তড়িঘড়ি করে প্রকল্প নেওয়া হয়।
আইএমইডির প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির আওতায় মোট ৩২৫টি প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্য ছিল। বাস্তবায়িত হয় ২৭৭টি এবং লক্ষ্যের বাইরে থেকে যায় ২৪টি প্রকল্প। এগুলোর মধ্যে শতভাগ কাজ শেষ না করেই বিভিন্ন পর্যায়ে সমাপ্ত ঘোষণা করা হয় ১২৯টি প্রকল্প।
আমরা চাই, রাষ্ট্রীয় অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা হোক। প্রকল্পের সম্পূর্ণ ও মানসম্মত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনেই সমাধান
- কক্সবাজারে জাতিসংঘ মহাসচিব

ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণ ও বর্বর নির্যাতনের কারণে দলে দলে রোহিঙ্গা মায়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসে। এই জনগোষ্ঠীর বিপুলসংখ্যক মানুষের ভার বহন করতে গিয়ে বাংলাদেশ হিমশিম খাচ্ছে। মানবিক কারণে বাংলাদেশ কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে সাময়িক আশ্রয় দিয়েছে। ওদিকে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা তাদের মাতৃভূমি মায়ানমারে ফিরে যেতে চায়।
বাংলাদেশে আশ্রিত ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার জন্য বিশ্বের সাহায্য-সমর্থন প্রয়োজন।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন, রোহিঙ্গা শিবির ও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া স্থানীয় সম্প্রদায়গুলো জলবায়ু সংকটের ঝুঁকিতে প্রথম সারিতে আছে। এটি ঠিক যে কক্সবাজার অঞ্চলের স্থানীয় মানুষের জীবন রীতিমতো দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। একটি জেলার একটি অংশে ১০ লাখ অতিরিক্ত মানুষ আশ্রয় নেওয়ায় তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
গত শুক্রবার ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। বৈঠক প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক বৈঠকে ঢাকার সংস্কার এজেন্ডার প্রতি জাতিসংঘের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং বিশ্বের ‘সবচেয়ে বৈষম্যের শিকার জনগোষ্ঠীর’ জন্য তাঁর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি জাতিসংঘের ‘ব্যাপক কৃতজ্ঞতা’ প্রকাশ করেছেন গুতেরেস।
নিরাপদে, স্বেচ্ছায় এবং মর্যাদাপূর্ণভাবে ফিরে যাওয়াই রোহিঙ্গা সংকটের প্রাথমিক সমাধান—এ বাপারে কোনো সন্দেহ নেই। তাই রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবাসনে জোর দিতে হবে। এই অঞ্চলের প্রতিটি দেশ ও আঞ্চলিক সংস্থাকে এই সংকট সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে হবে। দ্রুত প্রত্যাবাসনের চেষ্টা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতার কোনো বিকল্প নেই। আমাদের প্রত্যাশা, জাতিসংঘ মহাসচিবের এই সফর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তরিক ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।