<p> বিলাসী</p> <p> শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়</p> <p> ১। 'বাবুরা, আমাকে একটি বার ছেড়ে দাও, আমি রুটিগুলো ঘরে দিয়ে আসি। বাইরে শিয়াল-কুকুরে খেয়ে যাবে, রোগা মানুষ সমস্ত রাত খেতে পাবে না।'- ব্যাখ্যা করো।</p> <p> উত্তর : শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'বিলাসী' গল্পে ধৈর্য, সহনশীলতা, মায়া-মমতা এবং স্নেহ-ভালোবাসায় চিরন্তন এক প্রাণময়ী নারী হলো বিলাসী।</p> <p> মৃত্যুঞ্জয় তাকে ভালোবেসে বিয়ে করে। কিন্তু তৎকালীন হিন্দু সমাজ তাদের এ ভালোবাসা ও সংসারধর্মের স্বীকৃতি দেয়নি, বরং কতিপয় যুবককে মৃত্যুঞ্জয় আর বিলাসীর পেছনে লেলিয়ে দেয়। একদিন এসব যুবক বাগানবাড়িতে গিয়ে দেখল যে বিলাসী মৃত্যুঞ্জয়ের জন্য রুটি তৈরি করছে। যুবকরা বিলাসীকে ওই অবস্থায় টেনেহিঁচড়ে বাইরে নিয়ে যেতে থাকে। এই অবস্থায় বিলাসী তার সদ্যরোগমুক্ত স্বামীর কথা ভেবে শঙ্কিত হয় এবং তাদের কাছে মিনতি জানিয়ে আলোচ্য উক্তিটি করেছে। এ উক্তিতে মৃত্যুঞ্জয়ের প্রতি বিলাসীর গভীর ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।</p> <p> ২। 'আর শুধু নিকা নয়, তাও না হয় চুলায় যাক, তাহার হাতে ভাত পর্যন্ত খাইতেছে।'- ব্যাখ্যা করো।</p> <p> অথবা, 'গেল গেল গ্রামটি এবার রসাতলে গেল।'- উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।</p> <p> উত্তর : শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'বিলাসী' গল্পে খুড়োর উদ্ধৃত উক্তির মধ্য দিয়ে তৎকালীন হিন্দু সমাজের অন্ধ সংস্কারই প্রকাশ পেয়েছে।</p> <p> বিলাসীর সেবা আর মমতায় আপ্লুত মৃত্যুঞ্জয় ভালোবেসে বিয়ে করে বিলাসীকে। কিন্তু তৎকালীন হিন্দু সমাজ মেনে নিতে পারেনি এ বিয়ে। জাতের প্রশ্ন তুলে তারা নানা অপবাদে জর্জরিত করেছে মৃত্যুঞ্জয় ও বিলাসীকে। মৃত্যুঞ্জয়ের জ্ঞাতি খুড়ো সারা গ্রাম ঘুরে ঘুরে বলে বেড়াতে লাগল যে, 'গেল, গেল, গ্রামটা এবার রসাতলে গেল।' শুধু তাই নয়, খুড়ো মৃত্যুঞ্জয়কে 'অন্নপাপ'-এর জন্যও দায়ী করে। বস্তুত তৎকালীন হিন্দু সমাজে বর্ণভেদ প্রথা এবং বিভিন্ন রকম সংস্কার এতটাই তীব্র ছিল যে সাপুড়ের মেয়ে বিলাসীকে মৃত্যুঞ্জয় বিয়ে করেছে- সেটা যত অপরাধ, তার চেয়েও মারাত্মক হচ্ছে সাপুড়ের মেয়ের হাতে মৃত্যুঞ্জয়ের ভাত খাওয়া, যা ক্ষমার অযোগ্য। এর ফলে মৃত্যুঞ্জয়-বিলাসীকে সমাজচ্যুত করা হয়।</p> <p> ৩। 'ঠাকুর আমার মাথার দিব্যি রইল, এসব তুমি আর কখনো করো না।'- উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।</p> <p> অথবা,</p> <p> 'ঠাকুর, এসব ভয়ংকর জানোয়ার।'- উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।</p> <p> অথবা,</p> <p> 'বিলাসীর কথাই ফলিল এবং মর্মান্তিকভাবেই সেদিন ফলিল।'- ব্যাখ্যা করো।</p> <p> উত্তর : শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'বিলাসী' গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র বিলাসী সমাজ বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে নিচু জাতের হলেও সততায় সে ছিল অতুলনীয়া।</p> <p> সন্ন্যাসীগিরিতে ইস্তফা দিয়ে ন্যাড়া মৃত্যুঞ্জয়কে ওস্তাদ মেনে সাপুড়ে হয়েছিল। অবশেষে তন্ত্রমন্ত্র শিখে, হাতে মাদুলি বেঁধে সে পুরোদস্তুর সাপুড়ে বনে যায়। মৃত্যুঞ্জয় ও ন্যাড়ার সাপ ধরা নিয়ে অসাবধানতার ভয় সব সময়ই বিলাসীর মনে ছিল। সে জানত, সাপ খুব ভয়ংকর। তাই সাপ ধরা আর সাপ খেলানোয় তাদের সাবধানি হতে বিলাসী সব সময়ই উপদেশ দিত। অবশেষে</p> <p> একদিন সাপের দংশনে মৃত্যুঞ্জয়ের মৃত্যু হলে বিলাসীর ধারণা সত্যে পরিণত হয়। আসলে তন্ত্রমন্ত্র কিছুই নয়, কৌশলটাই হলো আসল। বিলাসীও এ কথা জানত। সাপ নিয়ে খেলতে গেলে মৃত্যুঝুঁকি থাকে- বিলাসী এ কথাই প্রকাশ করেছে আলোচ্য উক্তিটির মধ্য দিয়ে।</p> <p>  </p> <p>  </p> <p>  </p>