<p>আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ভারত উপমহাদেশের একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ। তিনি ছিলেন আমাদের অন্যতম জাতীয় নেতা। দীর্ঘ এক দশক আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন মাওলানা তর্কবাগীশ। আজীবন সংগ্রামী এই নেতা বঙ্গবন্ধুকে সম্মান করতেন জাতির পিতা হিসেবে।</p> <p>তর্কবাগীশ ১৯০০ সালের ২৭ নভেম্বর সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলাধীন তারুটিয়া গ্রামে এক পীর বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা হজরত আবু ইসহাক (রহ.) ছিলেন সুখ্যাত এক আধ্যাত্মিক পরিবারের সুযোগ্য উত্তরাধিকারী এবং তাঁর মাতা ছিলেন বেগম আজিজুন নেছা। শৈশব থেকেই আবদুর রশীদ তর্কবাগীশের মধ্যে দেশপ্রেমের উন্মেষ ঘটে। মাত্র ১৩ বছর বয়সে তিনি জমিদার মহাজনদের বিরুদ্ধে অসহায় দুধ বিক্রেতাদের সংগঠিত করে দুধের ন্যায্য মূল্য প্রদানে মহাজনদের বাধ্য করেন। ১৯২২ সালে ২২ বছর বয়সে তিনি ব্রিটিশবিরোধী ঐতিহাসিক ‘সলংগা আন্দোলন’-এ নেতৃত্ব দান করেন, যার জন্য তাঁকে কারাভোগ করতে হয়। এই ‘সলংগা আন্দোলন’ ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে ‘রক্তসিঁড়ি’ হিসেবে পরিচিত। তিনি উত্তর ভারতের দেওবন্দ মাদরাসায় শিক্ষালাভ করেন। লাহোরের এরশাদ ইসলামিয়া কলেজে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সেরা বাগ্মীর স্বীকৃতি লাভ করে তিনি ‘তর্কবাগীশ’ হিসেবে পরিচিত হন।</p> <p>আবদুর রশীদ গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর একজন ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। ১৯৩৮ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে তিনি বাংলা, আসাম ও ভারতের বিভিন্ন স্থানে সাংগঠনিক কাজে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচার গুলিবর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে তিনি পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশন থেকে ওয়াক আউট করেন এবং পরে মুসলিম লীগ পার্লামেন্টারি পার্টি থেকে পদত্যাগ করেন। আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্য হিসেবে পাকিস্তান গণপরিষদে ১৯৫৫ সালের ১২ আগস্ট তিনিই প্রথম বাংলা ভাষায় বক্তৃতা করেন। তিনি ১৯৫৬ থেকে ১৯৬৭ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন আপসহীন। তিনি ১৯৮৬ সালের ২০ আগস্ট ৮৭ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। ২০০০ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করে।   </p>