<p>আগুনে পুড়লে ছাই থাকে, নদীভাঙনে তা-ও থাকে না। অথচ নদীমাতৃক বাংলাদেশের জীবনধারা, কৃষি ও অর্থনীতি সবই নদীর ওপর নির্ভরশীল। ১৯১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পদ্মা নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে এ দেশের মোট এক হাজার ৭৪৯ বর্গকিলোমিটার এলাকা। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল মাওয়া, শরীয়তপুর ও চাঁদপুর এলাকা। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশবিষয়ক সংস্থা নাসার এক প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৯৬৭ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সময়ে ৬৬ হাজার হেক্টরের বেশি এলাকা পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়েছে। বিলীন হওয়া এই জায়গার পরিমাণ ঢাকা শহরের আয়তনের প্রায় আড়াই গুণ। নাসার গবেষণা বলছে, পদ্মা পৃথিবীর সবচেয়ে ভাঙনপ্রবণ নদী। আমাদের দেশের তিনটি প্রধান নদী পদ্মা-মেঘনা-যমুনা ছাড়াও কুশিয়ারা, ধরলা, তিস্তা, পায়রা, ডাকাতিয়া, করতোয়া, বড়াল, আড়িয়াল খাঁ, কর্ণফুলী, শঙ্খ নদীতেও সারা বছর ধরেই কমবেশি ভাঙন চলতে থাকে।</p> <p>দেশে সবচেয়ে বেশি নদীভাঙন হয় বর্ষাকালে। এ সময় নদীতে পানিপ্রবাহ বেড়ে যায় এবং স্রোতের তীব্রতায় তীরের মাটি ধসে পড়ে। নদীভাঙনের মূল কারণ প্রাকৃতিক। তবে মানবসৃষ্ট কারণগুলোও এর প্রকোপ বাড়িয়ে তোলে। বিশেষ করে অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে ও অতিরিক্ত বালু উত্তোলন নদীর গভীরতা ও স্রোতের ভারসাম্য নষ্ট করে। এই দুইটি কারণে নদীভাঙনের গতি তরান্বিত হয়। নদী-তীরবর্তী গাছপালা ধ্বংস করার ফলেও তীরের মাটি দুর্বল হয়ে ভেঙে পড়ে।</p> <p>প্রতিবছর নদীভাঙনের শিকার হয় দুই থেকে তিন লাখ মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার এক-তৃতীয়াংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে শহরমুখী হয়, যা নগরায়ণের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। এক সমীক্ষা অনুযায়ী, ১৯৭০ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ লাখ মানুষ নদীভাঙনের কারণে জমি ও ঘরবাড়ি হারিয়েছে। এদের অনেকেই নদীর চরে আশ্রয় নিয়ে দিনাতিপাত করে, যেখানে জীবনযাত্রার মান অত্যন্ত নিম্ন। শিশুদের শিক্ষাজীবন ব্যাহত হয় এবং নারীরা চরম আর্থ-সামাজিক অসুবিধার সম্মুখীন হন। সব মিলিয়ে দেশে প্রায় ১.৫ মিলিয়ন মানুষ প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নদীভাঙনের কারণে। সরকার নদীভাঙন রোধে বালুর জিও ব্যাগ, সিসি ব্লক, ক্রসড্যাম নির্মাণ ইত্যাদি উপায় অবলম্বন করলেও তাতে খুব বেশি সফলতা আসেনি।</p> <p> </p> <p>♦  আল সানি</p>