সন্ত্রাসবাদে যুক্ত জামায়াত-শিবির নেতাদের তালিকা করা হতে পারে। এরই মধ্যে ১৪ দলের শরিক দলগুলোর পক্ষ থেকে সরকারের কাছে এই দাবি জানানো হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি আমলে নিয়েছেন। আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দলের একাধিক শীর্ষ নেতা কালের কণ্ঠকে এমন তথ্য জানিয়েছেন।
জামায়াতের সন্ত্রাসী নেতাদের তালিকা হচ্ছে
তৈমুর তুষার

ওই নেতারা কালের কণ্ঠকে জানান, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি হলো জামায়াতকে নিষিদ্ধ শুধু নয়, তাদের নিষ্ক্রিয় করতে হবে। দলটির যাঁরা সশস্ত্র নেতাকর্মী আছেন তাঁদের যেকোনোভাবে চিহ্নিত করতে হবে। এটা করা না গেলে তাঁরা সমাজে ঘাপটি মেরে থাকার সুযোগ পাবেন।
দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, সরকার, আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, নির্বাহী আদেশে জামায়াত ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ করা হলেই তারা থেমে যাবে না।
১৪ দলের গুরুত্বপূর্ণ শরিক জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার পর তাদের কার্যকরভাবে নিষ্ক্রিয় করতে হবে। কোন কোন ক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয় করা যায় সেগুলো বের করতে হবে।
সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু আরো বলেন, ‘জামায়াতের অর্থায়ন কিভাবে হয়, কোন কোন প্রতিষ্ঠান অর্থায়ন করে সেগুলো চিহ্নিত করা, বিদেশি সংযোগ আছে কি না, বিদেশ থেকে অর্থায়ন করা হয় কি না সেগুলো চিহ্নিত করে নিষ্ক্রিয় করতে হবে। সহযোগী সংগঠনগুলোকেও নিষ্ক্রিয় করতে হবে।’
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, মূলত সন্ত্রাসবাদে জড়িত জামায়াতের নেতাকর্মীদের তালিকা করার উদ্দেশ্য হলো ওই নেতাকর্মীরা যেন নতুন কোনো নামে, নতুন কোনো পরিচয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে না পারেন।
নাম প্রকাশ না করে ১৪ দলের গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা বলেন, ‘আমেরিকা যেমন সন্ত্রাসবাদী কোনো সংগঠনকে শুধু নিষিদ্ধ করে না, ওই সংগঠনের নেতাদের নামের তালিকা প্রকাশ করে তাঁদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকে। আওয়ামী লীগ সরকারও সেই পথ নেবে।’
১৪ দলের শরিক তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জামায়াতকে নিষিদ্ধ এবং তাদের সন্ত্রাসী নেতাদের তালিকা করার জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানিয়েছি। সন্ত্রাসীদের তালিকা না করা হলে ওরা মানুষের সঙ্গে মিশে যাবে। সরকারের উচিত হবে দ্রুত এই তালিকা তৈরি করা।’
দলীয় একাধিক সূত্র বলছে, দল নিষিদ্ধের পাশাপাশি জামায়াতকে অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকেও চিহ্নিত করায় গুরুত্ব দেবে সরকার। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বিভিন্ন সময়ে জামায়াতকে অর্থের জোগান দেওয়া অনেক প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করে রেখেছে। সেই তালিকাগুলো এখন আবার যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন চাইবে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়। সেই তালিকার ভিত্তিতে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
সন্ত্রাসবাদে যুক্ত জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের তালিকার পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে জনমত তৈরিতেও গুরুত্ব দেবে সরকার। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সব রাজনৈতিক দল, শ্রেণি-পেশার মানুষকে যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতের অতীত কর্মকাণ্ড প্রচারে উদ্বুদ্ধ করা হবে।
দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠার পর থেকে কী কী কর্মকাণ্ড করেছে, কিভাবে যুদ্ধাপরাধ করেছে, কিভাবে স্বাধীনতার পর সন্ত্রাস করেছে সেগুলোর একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন তৈরি করে তা জাতির সামনে তুলে ধরতে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়কে পরামর্শ দিয়েছেন ১৪ দলের নেতারা।
একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিনবার নিষিদ্ধ হয়েছে জামায়াতে ইসলামী। ব্রিটিশ ভারতে ১৯৪১ সালে জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠিত হয়। পাকিস্তান আমলে দুইবার এই দল নিষিদ্ধ হয়। প্রথমবার ১৯৫৯ সালে, দ্বিতীয়বার ১৯৬৪ সালে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭২ সালের সংবিধানে ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। ফলে স্বাধীন বাংলাদেশের শুরুতেই নিষিদ্ধ হয় জামায়াত। কিন্তু ১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমান সংবিধান পরিবর্তন করায় আবারও বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ পায় জামায়াত।
১৪ দলের একাধিক নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, অতীতে দেখা গেছে, জামায়াত নিষিদ্ধ হওয়ার পর বিভিন্ন দলে আশ্রয় নেয়। সুযোগ বুঝে তারা আবার সংগঠিত হয়। নিষিদ্ধ থাকার সময় তাদের ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে আর্থিক সুবিধা পায়। একাধিক রাষ্ট্র থেকেও তারা অর্থ সহযোগিতা পায়। এগুলো তাদের টিকে থাকতে বড় ধরনের সহায়ক হয়। এবার সরকারকে সে সুযোগগুলো পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জামায়াতের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রকারান্তরে জঙ্গিবাদকে উসকে দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস দমনে যে আইন রয়েছে সেটা অনুসরণ করেই জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। তাদের দলের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত তাদের বিরুদ্ধেও আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সম্পর্কিত খবর

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্য গুরুতর
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন এবং ইসলামী খেলাফতকে কেন্দ্র করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাপ্রধান তুলসী গ্যাবার্ড যে মন্তব্য করেছেন, সেটি ‘গুরুতর’ বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। গতকাল মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্য নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অবস্থান জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় যে প্রতিক্রিয়া (তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্যের) জানিয়েছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অবস্থান ওটাই। তাঁর (তুলসী গ্যাবার্ড) মন্তব্য গুরুতর।
গত সোমবার নয়াদিল্লিতে এনডিটিভি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাপ্রধান তুলসী গ্যাবার্ড বলেন, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ক্যাথলিক ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে চলমান দুর্ভাগ্যজনক নিপীড়ন, হত্যা ও অন্যান্য নির্যাতন যুক্তরাষ্ট্র সরকার, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসনের উদ্বেগের একটি প্রধান ক্ষেত্র। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন মন্ত্রিসভা ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে আলোচনা মাত্র শুরু হচ্ছে, কিন্তু এটি উদ্বেগের মূল জায়গার একটি হয়ে রয়েছে।
এর প্রতিক্রিয়ায় গত সোমবার রাতেই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা গভীর উদ্বেগ ও হতাশার সঙ্গে তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্য লক্ষ্য করেছি, যেখানে তিনি বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিপীড়ন ও হত্যা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে বলেছেন, ইসলামপন্থী সন্ত্রাসীদের হুমকি এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বৈশ্বিক তৎপরতা একই আদর্শ ও লক্ষ্য দ্বারা পরিচালিত হয়। সেই আদর্শ ও লক্ষ্য হলো ইসলামপন্থী খেলাফতের মাধ্যমে শাসন করা।
তুলসী গ্যাবার্ডের এ মন্তব্য বিভ্রান্তিকর এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও সুনামের জন্য ক্ষতিকর উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকার বলেছে, বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবে শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইসলাম চর্চার জন্য সুপরিচিত এবং চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে স্থানীয় সময় সোমবার বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে করা প্রশ্নে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নবনিযুক্ত মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস সরাসরি কোনো জবাব দেননি। একজন সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল, গত নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের কয়েক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। এখন নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নিয়েছে এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রায় ৬০ দিন ধরে দায়িত্ব পালন করছেন।
এ প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র ট্যামি ক্রুস বলেন, ‘আপনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কথা বলছেন, যিনি অন্য দেশের ঘটনাবলি কিভাবে দেখেন, তা নিয়ে কথা বলেছিলেন। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও এ বিষয়ে তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করেন। কূটনৈতিক আলোচনা এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে কথোপকথনের বিষয়ে আমি কোনো পূর্বানুমান করতে চাই না। এসব বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’
সাংবাদিক পুনরায় একই প্রশ্ন উত্থাপন করতে চাইলে মুখপাত্র ব্রুস বলেন, ‘সরকার থেকে সরকার পর্যায়ে কূটনৈতিক আলোচনা বা কোনো নির্দিষ্ট দেশে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলি সম্পর্কে সরাসরি মন্তব্য করা আমার কাজ নয়।

আরসাপ্রধান আতাউল্লাহ ৫ সহযোগীসহ গ্রেপ্তার
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

মায়ানমারের রোহিঙ্গা বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) প্রধান আতাউল্লাহকে পাঁচ সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১১। গত সোমবার রাতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভূমিপল্লী আবাসন এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার তাঁদের দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলা হলে আদালত পাঁচ দিন করে মোট ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের মধ্যে আরসার প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনীর (৪৮) বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অসংখ্য মামলা রয়েছে।
গতকাল বিকেলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পৃথক দুই মামলায় ১০ দিন করে রিমান্ড চাইলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মঈনউদ্দিন কাদির পাঁচ দিন করে মোট ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. কাইউম খান এর সত্যতা নিশ্চিত করেন।
গ্রেপ্তারকৃত অন্যরা হলেন মোস্তাক আহমেদ (৬৬), সলিমুল্লাহ (২৭), মো. আসমতউল্লাহ (২৪), হাসান (৪৩) ও মনিরুজ্জামান (২৪)। এঁদের মধ্যে মনিরুজ্জামান ছাড়া সবাই রোহিঙ্গা।
নারায়ণগঞ্জ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি খোরশেদ আলম মোল্লা জানান, আসামিরা নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আগে থেকেই বিভিন্ন সময়ে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড সংঘটিত করার জন্য গোপন বৈঠক করতেন। গত সোমবার র্যাব গোপনে খবর পায় যে আসামিরা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড সংঘটিত করার জন্য সিদ্ধিরগঞ্জের ভূমিপল্লী আবাসন এলাকার একটি বহুতল ভবনে গোপন বৈঠক করছেন। পরে র্যাব-১১-এর সদস্যরা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালিয়ে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে মায়ানমারের সশস্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনী রয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অসংখ্য মামলা রয়েছে।
জুনুনীর গ্রেপ্তারের খবরে রোহিঙ্গারা খুশি : এদিকে বিশেষ প্রতিনিধি, কক্সবাজার জানান, আতাউল্লাহ আবু জুনুনীর গ্রেপ্তারের খবরে ক্যাম্পগুলোর সাধারণ রোহিঙ্গারা ব্যাপক খুশি। প্রতিনিয়ত আরসা সন্ত্রাসীদের হাতে হত্যার শিকার হওয়ার আতঙ্কে থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। অন্যদিকে কমান্ডারের গ্রেপ্তারে আরসা সন্ত্রাসীরা হতবাক হয়ে পড়েছে।
আরসা কমান্ডার জুনুনীর গ্রেপ্তারের খবরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে রীতিমতো আনন্দের বার্তা ছড়িয়ে পড়েছে। কেননা পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত রোহিঙ্গা আতাউল্লাহ আবু জুনুনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোসহ মায়ানমার সীমান্তে আসার পর থেকেই রক্তাক্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা জানান, জুনুনীবিহীন রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো ছিল অত্যন্ত শান্ত। এত খুনাখুনির ঘটনাও ছিল না। জুনুনী পাকিস্তান থেকে এসে আরসার নেতৃত্ব নেওয়ার পরই রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে শুরু হয় একের পর এক খুনাখুনির ঘটনা। জুনুনীর কারণেই ক্যাম্পগুলোতে অস্ত্রধারীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রোহিঙ্গা নেতা বলেন, জুনুনী বাংলাদেশে বিচারের সম্মুখীন হওয়া থেকে রেহাই পেতে পাকিস্তানে পালিয়ে যাচ্ছিলেন।
আরসার সদস্যদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় র্যাবের মামলা : ময়মনসিংহ নগরীতে র্যাবের অভিযানে আটক আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে কোতোয়ালি থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলাটি করেন র্যাব-১১-এর নায়েক সুবেদার হারুনুর রশীদ।
এর আগে রবিবার রাতে নগরীর নতুনবাজার এলাকার গার্ডেন সিটি নামের একটি বহুতল ভবনে অভিযান চালিয়ে এদের গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ টাকা। অভিযানে চারজনকে আটক করা হলেও মামলা করা হয়েছে মোট ১০ জনের নামে। আসামিরা হলো জুনুনী, মোস্তাক আহম্মেদ , মনিরুজ্জামান, সলিমুল্লাহ, হোসনা, হাসান-১, আসমত উল্লাহ, হাসান-২, শাহীনা ও ছিনুয়ারা।

শিশু আছিয়ার বাবার চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেন তারেক রহমান
নিজস্ব প্রতিবেদক

মাগুরায় শিশু আছিয়ার মর্মান্তিক মৃত্যুর পর মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়া বাবাকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. রফিকুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে ঢাকার একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে আছিয়ার বাবাকে ভর্তি করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এসব তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্যসচিব রবিউল ইসলাম নয়ন।
রবিউল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সোমবার আমরা মাগুরায় ইফতার মাহফিলের আয়োজন করি।
উল্লেখ্য, গত ৫ মার্চ নিজ বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয় আট বছরের শিশু আছিয়া।
৫ মার্চের ঘটনার পর থেকেই আছিয়ার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন তারেক রহমান।

চলে গেলেন কালের কণ্ঠের আলী হাবিব
- বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের শোক
নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রতিদিনের মতো গতকাল মঙ্গলবারও সকাল ১১টায় অফিসে ঢুকে নিজের কাজগুলো করছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কালের কণ্ঠের সহকারী সম্পাদক আলী হাবিব। বিকেলে নিয়মিত পাতা দেখার অংশ হিসেবে সম্পাদকীয় পাতাও তিনিই দেখে দিচ্ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে অসুস্থবোধ করলে সহকর্মীরা প্রেসার পরীক্ষা করেন। এ সময় প্রেসার সঠিক না থাকায় সহকর্মীরা তাঁকে রোজা ভেঙে স্যালাইন পান করতে বলেন।
আলী হাবিবের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক কাদের গনি চৌধুরী, কালের কণ্ঠের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া। শোকবার্তায় তাঁরা আলী হাবিবের রুহের মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ গত রাতে এক শোক বার্তায় প্রয়াত আলী হাবিবের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নারী অধিকার আদায়ের আন্দোলনে মহিলা পরিষদের অন্যতম এক সুহূদ ছিলেন আলী হাবিব।
আলী হাবিব জাতীয় প্রেস ক্লাবের স্থায়ী সদস্য ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর খবর শুনে সাবেক সহকর্মী ও বন্ধুদের অনেকেই কালের কণ্ঠ কার্যালয়ে ছুটে আসেন। সবার মধ্যে নেমে আসে শোকের ছায়া।
কালের কণ্ঠের আর্ট অ্যান্ড গ্রাফিকস বিভাগের সিনিয়র গ্রাফিকস ডিজাইনার মো. সাফিউল্লাহ ছোটন বলেন, ‘১৬ বছর ধরে আলী হাবিব ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করছি। আজও (গতকাল) তিনি সম্পাদকীয় পাতা দেখে দিয়েছিলেন। কে জানত আজকে তিনি শেষবারের মতো পাতা দেখছেন। এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না।’
আলী হাবিবের মরদেহ গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেড প্রাঙ্গণে আনা হয়। কালের কণ্ঠ সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাব সভাপতি কবি হাসান হাফিজ প্রয়াত আলী হাবিবের বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের কথা স্মরণ করেন।
ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেড প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত জানাজায় অংশ নেন বসুন্ধরা গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা আবু তৈয়ব, কালের কণ্ঠ সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি কবি হাসান হাফিজ, বাংলাদেশ প্রতিদিনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আবু তাহের, নির্বাহী সম্পাদক মনজুরুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মোস্তফা মামুন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল বায়েস, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার ছাড়াও ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের সব গণমাধ্যমের সাংবাদিক ও সহকর্মীরা।
আজ বুধবার বাদ জোহর ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুতে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর দাদার কবরের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হবে।
আলী হাবিব ছিলেন নন্দিত ছড়াশিল্পী। কথাসাহিত্যেও তাঁর সমান বিচরণ ছিল। ছড়া দিয়ে লেখালেখি শুরু করেছিলেন তিনি। ছড়ার জগতে অভিষিক্ত হয়েছিলেন ষাটের দশকের শেষার্ধে, স্কুলজীবনেই।
ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুতে ১৯৬৪ সালের ২৩ মার্চ জন্মেছিলেন আলী হাবিব। একসময় শুধুই বক্তব্যধর্মী ছড়া লিখতেন তিনি। নিটোল শিশুতোষ ছড়ায় তাঁর স্বাচ্ছন্দ্য ছিল। ছোটদের জন্য লেখা তাঁর গল্পগুলোও সহজে ছুঁয়ে যায় সবাইকে। ছড়ার পাশাপাশি তিনি রম্য গল্পচর্চা করেছেন। নিয়মিত লিখেছেন ব্যঙ্গ কলাম। তাঁর বেশ কটি ছড়ার বই ও রম্য গল্পও প্রকাশিত হয়েছে।
আলী হাবিব দৈনিক জনকণ্ঠে সম্পাদকীয় সহকারী হিসেবে যোগদান করেন ১৯৯৩ সালে। পরে ২০০১ সাল থেকে সহকারী সম্পাদক। ফিচার বিভাগের প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন। রঙ্গভরা বঙ্গদেশ ও ঝিলিমিলি ফিচার পাতার বিভাগীয় সম্পাদক।
আলী হাবিব কালের কণ্ঠে ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে কর্মরত ছিলেন। তিনি পত্রিকাটির উপসম্পাদকীয় বিভাগে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে লেখালেখি করতেন।
ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেড প্রাঙ্গণে গতকাল রাতে আলী হাবিবের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ছবি : কালের কণ্ঠ