<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে প্রকাশিত হতে শুরু করেছে ব্যাংক খাতের লুটপাটের চিত্র। এ পরিস্থিতিতে তীব্র তারল্য সংকটে পড়েছে আওয়ামী সুবিধাভোগীদের লুটপাটের শিকার ব্যাংকগুলো। ব্যাংক লুটপাটের তথ্য প্রকাশিত হতে শুরু করলে ডজনখানেক ব্যাংক গ্রাহকের টাকা উত্তোলনের চাপ সামাল দিতে পারছে না। বিভিন্ন উৎ থেকে ধার করে চলতে হচ্ছে তাদের। অন্যদিকে আবার আমানতের চাপে কোনো কোনো ব্যাংকের ভল্টে টাকা রাখার জায়গা নেই। সীমার বেশি টাকা জমা পড়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দিচ্ছে এসব ব্যাংকের অনেক শাখা। গত দুই সপ্তাহে বিভিন্ন ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ৮৫ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা জমা দিয়েছে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিটি ব্যাংকের শাখায় ভল্টের একটি নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারিত। সীমার বেশি টাকা এলে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা সোনালী ব্যাংকের চেস্ট শাখায় জমা করতে হয়। সরকার পতনের পর কয়েক দিন নিয়মিত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা নিচ্ছিল ব্যাংকগুলো। দৈনিক চাহিদা মেটাতে অন্য ব্যাংক থেকেও ধার করেছে। তবে গেল দুই সপ্তাহে ব্যাংকগুলো যত টাকা নিয়েছে, জমা করেছে তার চেয়ে বেশি।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">গত ১ অক্টোবর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে জমা হয়েছে আট হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা। গত ৩০ সেপ্টেম্বর তা ছিল ছয় হাজার ৬৯৩ কোটি টাকা। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে জমা হয়েছে ৮৫ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা। এসব টাকা ট্রাক ভর্তি করে প্রতিদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দিয়ে যাচ্ছে ব্যাংকগুলো। তবে নতুন করে ৮৩ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা ধার নিয়েছে সংকটে থাকা কিছু ব্যাংক।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বর্তমানে নোটস ইন সার্কুলেশন বা প্রচলনে থাকা টাকার পরিমাণ কমে গত ৩ অক্টোবর তিন লাখ ১০ হাজার কোটিতে নামে। গত ১৫ আগস্ট তা ছিল তিন লাখ ২২ হাজার ৬১ কোটি টাকা। ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে টাকা উত্তোলনের চাপ বেড়েছিল ব্যাংকে। তাই ওই সময় মানুষের হাতে টাকার পরিমাণ বেড়েছিল। সেটি আবারও ব্যাংকিং চ্যানেলে ফেরত আসতে শুরু করেছে। সাধারণত নোটস ইন সার্কুলেশন বা মানুষের হাতে প্রচলিত টাকার পরিমাণ থাকে দুই লাখ ৮০ থেকে ৯০ হাজার কোটি। ব্যাংকের ওপর আস্থা ধীরে ধীরে বাড়লে টাকা আরো ফেরত আসবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, সার্কুলেশনে থাকা নোটের মধ্যে দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে সারা দেশে ১১ হাজারের মতো ব্যাংক শাখার ভল্টে ১৬ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকার মতো জমা থাকে। সার্কুলেশনে থাকা বাকি টাকা রয়েছে নাগরিকদের পকেট, ঘরের আলমারি, সিন্দুক কিংবা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">জানা গেছে, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন উপায়ে অর্জিত অর্থ নানা উপায়ে অনেকে ঘরে রেখেছিলেন। তবে সরকার পরিবর্তনের পর তাঁদের বেশির ভাগ পলাতক। ঘরে টাকা রেখে তাঁদের কেউ কেউ বর্তমানে বিপদে আছেন। ফলে নিরাপদ বোধ না করায় বিভিন্ন উপায়ে তাঁরা ভালো ব্যাংকে টাকা জমা রাখছেন।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আবার সরকার পতনের পর থেকে বড় অঙ্কের নগদ টাকা তুলতে পারছে না মানুষ। এর কারণ, সরকার পতনের প্রথম সপ্তাহে দিনে সর্বোচ্চ এক লাখ, দ্বিতীয় সপ্তাহে দুই লাখ এবং তৃতীয় সপ্তাহে তিন লাখ টাকা নগদ উত্তোলনের সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। এখন অবশ্য সেই সীমা তুলে দেওয়া হয়েছে। তার পরও সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংক থেকে অনেকে বড় অঙ্কের আমানত তুলতে পারছে না। বিশেষ করে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, সোশ্যাল ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, বাংলাদেশ কমার্স ও ইউনিয়ন ব্যাংকের বিপুল অঙ্কের পে-অর্ডার নগদায়নের অপেক্ষায় রয়েছে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগের মতো টাকা ছাপিয়ে তারল্য সহায়তা দেবে না। তবে ব্যাংকগুলো আন্ত ব্যাংক মুদ্রা সরবরাহের মাধ্যমে এ সহায়তা নিতে পারে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">জানা গেছে, নামে-বেনামে ব্যাংকগুলো থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণ নিয়ে পাচারের অভিযোগ খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থা। নামে-বেনামে টাকা বের করে নেওয়ায় তীব্র তারল্যসংকট তৈরি হয়েছে ব্যাংকগুলোয়।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে যেসব ব্যাংক দুর্বল হয়ে পড়েছে সেগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ ব্যবস্থায় তারল্য সহায়তা দিতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তন করা হয়েছে। তবে তারল্যসংকটের কারণে ক্ষুদ্র আমানতকারীরা আতঙ্কিত হয়ে টাকার জন্য ব্যাংকগুলোতে যাচ্ছেন। টাকা না পাওয়ায় অনেক অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে। এমন পরিস্থিতি বিবেচনায় ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর তৎকালীন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার আত্মগোপনে চলে যান। এরপর গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পান অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর। তিনি যোগ দিয়েই ব্যাংক খাতের সংস্কারে মনোযোগ দেন।</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p> </p>