এক যুগে দেশে নতুন করদাতা যুক্ত হয়েছে এক কোটি ১১ লাখ মানুষ। কিন্তু টিনধারী এসব মানুষের মধ্যে মাত্র ৩০ শতাংশ আয়কর রিটার্ন দেন। বাকি ৭০ শতাংশের বিষয়ে আয়কর আইনজীবী ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাদের কাজ করতে হবে বলে জানিয়েছেন অভ্যন্তীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরও কেন তাঁরা রিটার্ন দিচ্ছেন তা খুঁজে বের করতে হবে।
রিটার্নধারীর সংখ্যা বাড়াতে হবে। গত বুধবার রাত ১১টায় চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি কনভেনশন সেন্টারে চট্টগ্রাম আয়কর আইনজীবীদের বার্ষিক ভোজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই কথা বলেন তিনি।
আবদুর রহমান খান বলেন, আগে আয়কর দাতার সংখ্যা ছিল ২১-২২ লাখ। গত ১০-১২ বছরে এক কোটি ১১ লাখ নতুন আয়কর দাতা নিবন্ধন হয়েছে।
কিন্তু তাদের মধ্যে ৩০ শতাংশ আয়কর রিটার্ন দেন। আইনজীবীরা তাদের ক্লায়েন্টদের আয়কর না দিলে কী সমস্য হবে সেটা বুঝিয়ে বলেন না। আবার এনবিআরের যে পরিদর্শকরা আছেন তাঁরা করদাতাদের বাড়ি ভিজিট করেন না, তদারকি করেন না। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আয়কর দাতার টাকা-পয়সা কেমন আছে সেটাও দেখেন না।
তিনি বলেন, ‘আমরা একটি ঋণগ্রস্ত জাতিতে পরিণত হয়েছি। কারণ প্রতিবছর আমাদের যে রাজস্ব আয় হয়, তার চেয়ে ব্যয়ের পরিমাণ অনেক বেশি। আমাদের অভ্যন্তরীণ ঋণও বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ঋণের এই ঘানি টানতে হবে। তাই ঋণ কমাতে আমাদের অবশ্যই রাজস্ব আহরণের পরিমাণ বাড়াতে হবে।
’
এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, একটা দেশের রাজস্ব আয়ের কত শতাংশ আয়কর থেকে আসে, সেটা ওই দেশ কতটা সভ্য তার একটি মাপকাঠি নির্দেশ করে। আমরা এখনো সভ্য জাতি থেকে বহুদূরে। তাই আয়কর আদায়ের হিস্যা বৃদ্ধি করতে হবে।
আইন সংশোধনের কথা জানিয়ে আবদুর রহমান খান বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে আমাদের আয়কর আইন, মূসক আইন, শুল্ক আইনের অপব্যবহার ঘটে। আবার এগুলো সময়োপযোগীও না। এই তিনটা আইন ব্যাপকভাবে সংস্কার করতে হবে। আমাদের যে পরিমাণ আয়কর আদায় হয়, এর সমপরিমাণ লোকসান হয়। ট্যাক্স অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ও ট্যাক্স পলিসি পৃথক লিডারশিপে নিতে হবে।’
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. নাজিম উদ্দীন চৌধুরী বলেন, সামনে রমজান। এ রমজানে যাতে দ্রব্যমূল্যের দাম কম থাকে এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান পদক্ষেপ নেবেন। যাতে সাধারণ মানুষ রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ে কষ্ট না পান।
চট্টগ্রাম কর আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. তাহেরের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মো. বাকাউল্লা চৌধুরীর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন ট্যাক্সেস আপিলাত ট্রাইব্যুনালের সদস্য মো. শাহীন আক্তার হোসেন, বাংলাদেশ ট্যাক্স লয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রমিজ উদ্দিন আহমেদ, ট্যাক্সেস আপিলাত ট্রাইব্যুনালের সদস্য মো. জাকির হোসেন, চট্টগ্রাম কর কমিশনার (আপিল) শামিনা ইসলাম, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য অ্যাডভোকেট এ এস এম বদরুল আনোয়ার, চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-১-এর কর কমিশনার মো. আবুল কালাম আজাদ, চট্টগ্রাম কর-২-এর কর কমিশনার মো. আবদুস সোবহান, চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-৩-এর কর কমিশনার মো. মঞ্জুর আলম, চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-৪-এর কর কমিশনার আয়েশা সিদ্দিকা শেলী, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. নাজিম উদ্দীন চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক, চট্টগ্রাম কর আইনজীবী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক চৌধুরী খালিদ বিন সরওয়ার প্রমুখ।