করোনা মহামারির কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে শিক্ষা ব্যয় বেড়েছে। অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে এ ব্যয় আরো বেশি। এখানে শিক্ষা ব্যয়ের ৭১ শতাংশই বহন করে পরিবার। দেশে মাধ্যমিক পর্যায়ের ৯৪ শতাংশ শিক্ষার্থী বেসরকারি স্কুলে পড়াশোনা করে।
মাধ্যমিকের ৯৪% শিক্ষার্থী বেসরকারি স্কুলে পড়ে
নিজস্ব প্রতিবেদক

বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের সহযোগিতায় পরিচালিত জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকোর ‘গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং রিপোর্ট ২০২২’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব বিষয় জানানো হয়। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে এই প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সম্মানিত অতিথি ছিলেন গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধুরী।
পরে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন ইউনেসকো জেম রিপোর্টের পরিচালক ম্যানোস আন্তোনিনিস। গবেষণার বাংলাদেশ পর্ব নিয়ে কথা বলেন ব্র্যাকের ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্টের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমেদ।
গত নভেম্বরেও দেশের শিক্ষা নিয়ে একই ধরনের তথ্য তুলে ধরা হয়েছিল—অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে জানানো হয়, এবার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। নভেম্বরের প্রতিবেদনটি ছিল আংশিক।
মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৪ শতাংশ শিক্ষা খাতে ব্যয় করতে সুপারিশ করে জাতিসংঘ। তবে গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ খরচ করছে আড়াই শতাংশেরও কম।
ইউনেসকোর প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য অভিভাবকরা বেসরকারি স্কুল প্রাধান্য দেন। মূলত ইংরেজি ভাষা শিক্ষা এবং ‘উচ্চতর শ্রেণির’ প্রতীক হিসেবে তাঁরা এসব স্কুল প্রাধান্য দেন। ফলে বাড়ছে এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশেও বাড়ছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। তবে মাধ্যমিক শিক্ষায় এই প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। বেসরকারি পর্যায়ে দেশের প্রাক-প্রাথমিকে শিক্ষার্থীর হার ৫৫ শতাংশ, প্রাথমিক পর্যায়ে ২৪ শতাংশ, মাধ্যমিক পর্যায়ে ৯৪ শতাংশ এবং উচ্চশিক্ষায় ৩৬ শতাংশ।
প্রতিবেদনের তথ্য মতে, দেশে পেশা হিসেবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা পেশা জনপ্রিয় হচ্ছে। ২০০০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত শিক্ষকদের জন্য পরিবারগুলোর ব্যয় গ্রামীণ এলাকায় ২৮-৫৪ শতাংশ এবং শহরাঞ্চলে তা ৪৮-৬৭ শতাংশ বেড়েছে। যেখানে ২০১৭-১৮ সালে ভারতে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ১৩ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়াশোনা করেছে।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদানের ক্ষেত্রে পরিবারগুলোকে ঋণ করতে হয়। দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ৬ শতাংশ পরিবার স্কুলের ফি মেটাতে ঋণ করে থাকে। বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ (৩৩ শতাংশ) পরিবার ঋণ করে বেসরকারি পলিটেকনিকে পড়াশোনার খরচ মেটায়। ভুটান, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ দিতে সরকারি ঋণ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তিনির্ভরতা পড়াশোনার দিকে আগ্রহ বাড়ছে। এ জন্য বাড়ছে বেসরকারি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে বাংলাদেশে নির্বাচিত কারিগরি বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কোর্সের জন্য উপবৃত্তি দেয়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নথিভুক্ত না থাকায় এই উপবৃত্তি প্রযোজ্য নয়। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা নানা ধরনের ফির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, উচ্চশিক্ষায় মুনাফা অর্জন এবং বেসরকারীকরণ নিয়ে দ্বিধা ও সংশয় রয়েছে। ভুটানে দেখা গেছে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দ্বিগুণ শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ। তাদের শিক্ষানীতিতে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এক ছাতার নিচে নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছে।
শিক্ষা খাতে বেশির ভাগ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব ইউনেসকোর প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। সারা দেশে বেসরকারি ২০ হাজার স্কুল-কলেজ রয়েছে। তার মধ্যে ১৮ হাজারের বেশি এমপিওভুক্ত (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার), বাকি দুই হাজারের কম নন-এমপিও প্রতিষ্ঠান। এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের ৮০ শতাংশ সরকারিভাবে অনুদান দেওয়া হয়ে থাকে।
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ‘শিক্ষা খাতে দুটি মন্ত্রণালয়কে একত্রীকরণ বিষয়ে বলা হয়েছে। মন্ত্রণালয় এবং বিশেষজ্ঞ দল আলাদা হলেও আমরা একত্রে কাজ করে যাচ্ছি। প্রাথমিকের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে মাধ্যমিকের যোগসাজশ রাখা হয়েছে। যেখানে প্রাথমিকের পড়া শেষ হবে, সেখান থেকেই মাধ্যমিকের পাঠদান শুরু করা হয়েছে।’
স্কুলে ভর্তির অনিয়মের অভিযোগ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ভর্তি বাণিজ্য বন্ধ করতে এবং মেধাবী শিক্ষার্থীদের সব স্কুলে ছড়িয়ে দেওয়া লক্ষ্যে বিগত বছর থেকে অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, ‘শিশুদের আনন্দের সঙ্গে পাঠদানের জন্য চলতি বছর থেকে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হচ্ছে। আগামী তিন শিক্ষাবর্ষে সব শ্রেণিতে তা বাস্তবায়ন করা হবে। এ বিষয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ অব্যাহত রয়েছে।’
রাশেদা কে. চৌধুরী বলেন, ‘অরবিন্দ কেজরিওয়াল দিল্লির শিক্ষার চেহারা বদলে দিয়েছেন। এখন সেখানে ৯০ শতাংশ যায় পাবলিক স্কুলে। কিভাবে এবং কেন সেটা হলো, আমাদের জানা উচিত। এখন সেখানে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থী পায় না। পুরো সরকারি শিক্ষাকে শিক্ষার্থীবান্ধব করা হয়েছে। শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অবকাঠামো দেওয়া হয়েছে। মনিটরিং করা হচ্ছে।’
অধ্যাপক মনজুর আহমেদ বলেন, ‘আমাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু সেই সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষার বিনিয়োগ বাড়েনি। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশও নিচের দিকে আছে। তাদের অবস্থা বাংলাদেশ থেকে একটু ভালো হলেও ততটা ভালো নয়।’ সরকারি অর্থায়নের মানে কিন্তু সব প্রতিষ্ঠানের জাতীয়করণ নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরবর্তী ধাপে যেতে এমপিও মডেলটাকে সংস্কার করা যেতে পারে।
সম্পর্কিত খবর

চীনে স্বাস্থ্যসেবার পরিধি বাড়ছে
চালু হচ্ছে চট্টগ্রাম কুনমিং ফ্লাইট
নিজস্ব প্রতিবেদক

চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর কুনমিংয়ের হাসপাতালগুলোতে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের মানুষদের সহায়তা করতে বন্দরনগর চট্টগ্রাম থেকে কুনমিং রুটে ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনা করেছে চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইনস। গতকাল শনিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
চীন এরই মধ্যে বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসার জন্য ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিংয়ের চারটি হাসপাতাল নির্ধারণ করেছে। তবে চড়া বিমানভাড়া শহরটিতে ভ্রমণের পথে বড় বাধা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
কুনমিংয়ের সেরা তিনটি হাসপাতালকে বাংলাদেশের রোগীদের চিকিৎসাসেবার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল তিনটি হলো দ্য ফার্স্ট পিপলস হসপিটাল অব ইউনান প্রভিন্স; দ্য ফার্স্ট অ্যাফিলিয়েটেড হসপিটাল অব কুনমিং মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি এবং ফাওয়াই ইউনান হসপিটাল, চায়নিজ একাডেমি অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস। চিকিৎসার ধরন, ভিসা প্রক্রিয়া সহজীকরণ, দোভাষী নির্বাচনসহ সামগ্রিক চিকিৎসাসেবার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে দুই দেশের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কাজ করছেন।
কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম-কুনমিং রুটে সরাসরি ফ্লাইট চালু হলে যাতায়াত ব্যয় ও সময় কমে আসবে।
চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, কুনমিংয়ের হাসপাতালে বাংলাদেশিদের জন্য আলাদা ফ্লোর বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসার খরচ সহনীয়। একজন চীনা নাগরিকের সমান ফিই দিয়ে থাকেন একজন বাংলাদেশি রোগী।
বর্তমানে চায়না ইস্টার্নের ঢাকা-কুনমিং সরাসরি দৈনিক ফ্লাইট আছে। এ ছাড়া প্রতি মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনিবার অতিরিক্ত একটি ফ্লাইট পরিচালনা করে। রাউন্ড ট্রিপ ভাড়া ৩৫ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। কুনমিং ভ্রমণ সহজ করতে ঢাকা থেকে কুনমিং রুটে বিমানভাড়া কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
চীনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা ভবিষ্যতে বাংলাদেশিদের জন্য আরো স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র উন্মুক্ত করবে।
আগামী এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের একদল সাংবাদিককে কুনমিংয়ে পাঠানো হবে সরেজমিনে চিকিৎসার সুবিধাগুলো দেখে আসার জন্য।
গত মাসে প্রথমবারের মতো কয়েক ডজন বাংলাদেশি চিকিৎসার জন্য কুনমিংয়ে যান। তাঁরা সেখানকার হাসপাতালগুলোর মানের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তবে অনেকেই যাতায়াত ব্যয় নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন।
চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যাবসায়িক দেশ। চীন থেকে বাংলাদেশের প্রায় সব শিল্প-কারখানার কাঁচামাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের তৈরি পণ্য আমদানি হয়। তাই প্রতিবছরই হাজার হাজার ব্যবসায়ী চীনের বিভিন্ন শহর ভ্রমণ করে থাকেন। তবে দুই দেশের মধ্যে এত দিন সরাসরি বিমানসেবা ছিল না।
কুনমিংয়ে রয়েছে বিশ্বের বিখ্যাত স্টোন ফরেস্ট। কুনমিংকে চীনারা নাম দিয়েছে ‘চিরবসন্তের নগর’। সারা বছরই সেখানে ফুল ফোটে। রঙিন থাকে কুনমিংয়ের পথঘাট ও বাসাবাড়ির আঙিনা।
এমনিতে কুনমিং হচ্ছে চীনের ট্রানজিট পয়েন্ট। বাংলাদেশ থেকে যেসব পর্যটক, শিক্ষার্থী বা ব্যবসায়ী চীনের বিভিন্ন প্রদেশে যান, তাঁদের পরদিন বিমানের ফ্লাইট ধরতে প্রথমে কুনমিংয়ে এক রাত অবস্থান করতে হয়।
বিমানে ঢাকা থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে কাছের ইউনান প্রদেশের কুনমিং মাত্র দুই ঘণ্টার পথ, অর্থাৎ প্রায় ১২০০ কিলোমিটার। বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ মায়ানমারের সীমানার পূর্ব পাশেই ইউনানের অবস্থান। চীনের ৪৩টি প্রদেশের একটি ইউনান।

সবিশেষ
আফগানি নতুন প্রজন্মের নারীরা বোরকা ছেড়ে আবায়ায় ঝুঁকছেন
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

নতুন প্রজন্মের আফগান নারীরা বোরকা থেকে আবায়ার দিকে ঝুঁকছেন। আবায়াও ইসলামী নারীদের পছন্দের পোশাক। আবায়ার সঙ্গে থাকে হিজাব, মাথার ওড়না, এমনকি নেকাবও। অথবা বলা যেতে পারে, আফগান আধুনিক নারীরা সৌদি স্টাইলের পোশাক আবায়া অথবা নিকাব-ঘোমটার দিকে ঝুঁকে পড়ছেন।
২০২১ সালে পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর তালেবানরা নারীদের ওপর কঠোর পর্দা প্রথা চালু করে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত একই আইন চালু ছিল।
তরুণ আফগান নারীরা আবায়া পরলেও মাথায় ঠিকই হিজাব পরেন। আর যাঁরা হিজাব পরেন না, তাঁরা মুখে মেডিক্যাল মাস্ক লাগিয়ে ঘর থেকে বের হন। নিদেনপক্ষে সৌদি আবায়ার ওপর নিকাব পরেন, যা তাঁদের চোখ ছাড়া আর সব কিছু ঢেকে রাখে।
রাজধানী কাবুলের ২৩ বছরের নন্দিনী তাহমিনা আদেল বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের আফগান নারীরা মনে হয় না বোরকা বেছে নেবেন। ডিজাইন ও কালারের কারণে তাঁরা এটা মানতে অনাগ্রহী।

প্রায় শতভাগ কারখানার বেতন-বোনাস পরিশোধ
নিজস্ব প্রতিবেদক

আন্দোলনের মুখে ঈদের আগে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকদের বেতন-বোনাসের তিন কোটি টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান। তবে তা মানেননি সাধারণ শ্রমিকরা। গতকাল শনিবারও শ্রম ভবনের সামনে শ্রমিকরা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে তাঁদের প্রাপ্য বেতন-বোনাসের দাবি জানাতে থাকেন। কিন্তু গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকদের সমস্যার সমাধান হয়নি।
এদিকে তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ ও শিল্প পুলিশ জানিয়েছে, প্রায় শতভাগ কারখানার মালিক শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করেছেন। আর টিএনজেডসহ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে কাজ করছে সরকার। এদিকে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শ্রমসচিব জানিয়েছেন, শ্রমিকদের বেতন-বোনাস সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত টিএনজেডের তিন মালিক শ্রম ভবনে নিরাপত্তা হেফাজতে থাকবেন।
বিজিএমইএর তথ্যানুসারে ঈদের আগেই প্রায় শতভাগ কারখানার শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করা হয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিজিএমইএর সদস্য কারখানা দুই হাজার ১০৭টির মধ্যে দুই হাজার ৯৮টি কারখানা ঈদ বোনাস পরিশোধ করেছে, যা প্রায় ৯৯.৫৭ শতাংশ। এ ছাড়া মার্চ মাসের বেতন (১৫-৩০ দিনের) পরিশোধ করেছে—এমন কারখানা দুই হাজার ৭৯টি, যা ৯৮ শংতাশের বেশি।
এদিকে শিল্প পুলিশ জানিয়েছে, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঈদের বোনাস, মার্চ মাসের বেতন বিজিএমইএসহ অন্য সংগঠনের প্রায় সব শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিশোধ করেছে।
তবে টিএনজেডসহ সাতটি কারখানা বেতন-বোনাস পরিশোধ করতে পারেনি। এই বেতন-বোনাস পরিশোধে বিজিএমইএ, শ্রম মন্ত্রণালয় ও শিল্পাঞ্চল পুলিশ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গার্মেন্টস ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সহসাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর মঈন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘টিএনজেডসহ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধে প্রায় সাড়ে ১৭ কোটি টাকা দরকার। শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান ঈদের আগে তিন কোটি টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা সেটা মানেননি।
এ প্রসঙ্গে শ্রমসচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মালিকপক্ষের তিনজনকে হেফাজতে রাখা হচ্ছে। কারখানার যন্ত্রপাতি বিক্রি করে আপাতত শ্রমিকদের পাওনা তিন কোটি টাকা পরিশোধ করা হবে। আগামী ৮ এপ্রিল অফিস খোলার পর এ বিষয়ে পূর্ণ সমাধান দেওয়া হবে।’
বিজিএমইএর প্রশাসক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘টিএনজেড ও এসসেইন অ্যাপারেলস—এ দুই কারখানার বেতন-ভাতা নিয়ে সমস্যা হয়েছে। টিএনজেডের পরিচালক শনিবার বিকেলের মধ্যে শ্রমিকের পাওনা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এসসেইন অ্যাপারেলসের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। এর বাইরে যেসব কারখানা বেতন বা বোনাস দেয়নি, তারা ছুটির আগেই দেবে।’
বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘দুটি কারখানায় বেতন-ভাতা নিয়ে সমস্যা আছে। সেগুলো সমাধানের চেষ্টা চলছে। ৯০ শতাংশ কারখানা ছুটি দিয়ে দিয়েছে। বাকিরা বেতন-ভাতা পরিশোধ করে শনিবার ছুটি দিয়ে দেবে।’
গাজীপুরে বেতন-বোনাস পাননি ৫ কারখানার শ্রমিকরা
নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর জানান, গাজীপুরে বেতন-বোনাস পাননি পাঁচ কারখানার কয়েক হাজার শ্রমিক। ফলে এই শ্রমিকদের ঈদের আনন্দ মাটি হয়ে গেছে। গাজীপুর শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুরের জারা কম্পোজিট, মোগরখাল এলাকার এএনজেড অ্যাপারেলস, তিন সড়ক এলাকার স্টাইল ক্রাফট, শ্রীপুরের জৈনা বাজার এলাকার এইচডিএফ অ্যাপারেলস এবং কালিয়াকৈর উপজেলার কামরাঙ্গাচালা এলাকার হ্যাগ নিটওয়্যার গতকাল শনিবার দুপুর পর্যন্ত শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করেনি।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম বলেন, জারা নিট কম্পোজিট ও হ্যাগ নিটওয়্যার কারখানার মালিক লাপাত্তা। এতে বেতন ও ঈদ বোনাস থেকে বঞ্চিত হয়েছেন জারার ৪০০ এবং হ্যাগ নিটওয়্যারের ৩০০ শ্রমিক। এইচডিএফ অ্যাপারেলসের দুই হাজার ৩০০ শ্রমিকও বেতন-বোনাস থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের আশ্বাস দিয়েছে, ঈদের পর বেতন-বোনাস পরিশোধ করবে। শ্রমিকরা বিষয়টি মেনে নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

আপন ভুবন বৃদ্ধাশ্রম
স্মৃতি হাতড়ে সান্ত্বনা খোঁজেন
মোবারক আজাদ

ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে পরিবার-পরিজন নিয়ে আনন্দ-খুশি ভাগাভাগি করে নেওয়া। তবে ঈদের এই আনন্দ-খুশিতে অংশ নেওয়ার সুযোগ হয় না অনেকের। উল্টো ঈদ এলে বিষাদ নেমে আসে তাঁদের জীবনে, দুই চোখ বেয়ে জল নামে।
বৃদ্ধাশ্রমটির একজন বাসিন্দা জোহরা বেগম (৮০)।
জোহরা বেগমের মতো আপন ভুবন বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় পেয়েছেন রেনু বেগম। তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, পুরান ঢাকার ইসলামবাগ এলাকায় তিনি তিন ছেলে, এক মেয়ে আর স্বামীর সঙ্গে থাকতেন। পারিবারিক শত্রুতার জেরে সব কিছু হারাতে হয় তাঁকে। স্বামী মারা যাওয়ার পর কিছুদিন মানুষের বাসাবাড়িতে কাজ করেছেন। এরপর অসুস্থ হলে হাসপাতালে তাঁকে একা তিন মাস কাটাতে হয়। পরে যে বাসায় ভাড়া থাকতেন, সে বাসার লোকজন আপন ভুবন বৃদ্ধাশ্রমের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে এখানে পাঠান। রেনু বেগম জানান, এখানে তিনি অনেক ভালো আছেন। এখানে আসার পর তাঁর নিঃসঙ্গতা দূর হয়েছে। কিন্তু তিনি কিছুতেই নিজের সংসার, সন্তান ও স্বামীর কথা ভুলতে পারছেন না।
আপন ভুবন বৃদ্ধাশ্রমের প্রধান কো-অর্ডিনেটর জারা জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই মায়েদের তো আপনজন বলতে আমরাই। আমাদের সঙ্গেই তাঁরা ঈদ করবেন। ঈদের দিন সেমাই, পিঠা, পোলাও-রোস্টসহ একটি পরিবারে সাধারণভাবে যা যা আয়োজন থাকে আমরাও এখানে এই মায়েদের জন্য সেসবের আয়োজন করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। ঈদের আগের দিন এই মায়েদের হাতে মেহেদি পরাব, ঈদের দিন নতুন শাড়ি, ম্যাক্সির সঙ্গে ইমিটেশনের গহনা পরিয়ে তাঁদের সাজাব। আর ঈদের দিন আবহাওয়া ভালো থাকলে এবং এই মায়েদের শরীর ভালো থাকলে তাঁদের পাশের পার্কে ঘুরাতে নিয়ে যাব।’
ঈদের দিন এই অসহায় বৃদ্ধাদের মানসিক অবস্থা কেমন থাকে, জানতে চাইলে জারা জামান বলেন, ‘এই মায়েরা আক্ষেপ করেন, যদি তাঁদের স্বামী-সন্তান থাকত, তাহলে তাঁদের এখানে আশ্রয় নিতে হতো না। আবার সন্তান থাকলে নিশ্চয় তাঁদের দেখতে আসত। ভালো মানের খাবার, পোশাক, আমাদের শতভাগ আদর-ভালোবাসা দেওয়ার পরও অনেকের পরিবার না থাকার আক্ষেপ ঘুচছে না। এ কারণে আমরা তাঁদের বেশি করে সঙ্গ দেওয়ার চেষ্টা করি, যাতে এই মায়েরা মন খারাপ না করেন।’
প্রতিষ্ঠানটির মূল উদ্যোক্তা রুমি রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শুরুতে ২০২২ সাল থেকে আমরা চারজন নিঃসন্তান নারী নিয়ে এই বৃদ্ধাশ্রম পরিচালনা শুরু করি। বর্তমানে এই সংখ্যা ২৯। মা-বাবাকে নিজের সন্তানরা যেভাবে ভালোবাসে, আদর-যত্নে রাখে, আমরাও এখানে থাকা মায়েদের সেভাবে রাখার চেষ্টা করছি। যেকোনো উৎসবের সময় আমাদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি।’
প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা জানান, বর্তমানে এখানে থাকা ২৯ জন মায়ের মধ্যে বেশির ভাগ মানসিক ভারসাম্যহীন। তাঁদের ৮০ শতাংশ প্রেসার, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে আক্রান্ত। এঁদের মধ্যে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মা-ও রয়েছেন। এই মায়েদের ঈদ উৎসব কাটে পরিবারের সদস্যদের কাছে না পাওয়ার কষ্ট ও অভিমান বুকে চেপে।
জানা গেছে, আপন ভুবন বৃদ্ধাশ্রম প্রতি মাসে এই ময়েদের ভরণ-পোষণে ব্যয় করে প্রায় ছয় লাখ টাকা। এই ব্যয় নিঃসন্তান চার নারীসহ তাঁদের পরিবার ও পরিচিতজনরা বহন করেন। কিছু অর্থ অনুদানের মাধ্যমেও পাওয়া যায়। মাঝেমধ্যে কেউ কেউ এক বেলা খাবার সরবরাহ কিংবা কেউ কিছু কাপড়চোপড় দিয়ে যান। তবে রমজান মাসে কিছু শাড়ি ও জাকাত পাওয়া যায়। তবে জাকাতের পরিমাণ আরো বাড়লে এই মায়েদের সেবায় আরো কিছুটা বেশি ব্যয় করা যেত।