ঢাকা, মঙ্গলবার ২৫ মার্চ ২০২৫
১১ চৈত্র ১৪৩১, ২৪ রমজান ১৪৪৬

ঢাকা, মঙ্গলবার ২৫ মার্চ ২০২৫
১১ চৈত্র ১৪৩১, ২৪ রমজান ১৪৪৬
রংপুর সিটি করপোরেশন

২০ কাউন্সিলর গ্রেপ্তারের ভয়ে অফিসে আসেন না

নজরুল ইসলাম রাজু, রংপুর
নজরুল ইসলাম রাজু, রংপুর
শেয়ার
২০ কাউন্সিলর গ্রেপ্তারের ভয়ে অফিসে আসেন না

গ্রেপ্তারের ভয়ে বাড়িছাড়া রংপুর সিটি করপোরেশনের (রসিক) ২০ কাউন্সিলর। আওয়ামী লীগ সমর্থিত হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে দেওয়া হয়েছে হত্যা ও মারামারির মামলা। এ কারণে তাঁরা অফিসেও আসেন না।

এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ১২ সিটি করপোরেশনের মেয়রকে অপসারণ করে দায়িত্ব দিয়েছে বিভাগীয় কমিশনারদের।

কিন্তু রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের বিরুদ্ধে

ব্যবসায়ী হত্যার অভিযোগে মামলা হওয়ায় তিনি সিটি করপোরেশনে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। ফলে নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সিটি করপোরেশন রংপুর। এ সিটির  ৩৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২০টিতে নির্বাচিত কাউন্সিলররা আওয়ামী লীগ সমর্থিত।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে তাঁরা আত্মগোপন করেছেন। এর মধ্যে অনেক কাউন্সিলর মামলার আসামিও হয়েছেন। তবে অন্যরাও ঠিকমতো অফিস করছেন না।

রংপুর সিটি করপোরেশনের কার্যালয় ও বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে জানা গেছে, কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর সারা দেশের মতো রংপুর সিটি করপোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২০ জন কাউন্সিলর ও ছয়জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ সমর্থক এবং বিভিন্ন পদে থাকার কারণে জনরোষের ভয়ে আত্মগোপন করেছেন।

নাগরিকরা জরুরি প্রয়োজনে কার্যালয়ে ও সিটি করপোরেশনে গিয়েও তাঁদের দেখা পাচ্ছে না।

সেবা নিতে আসা সিরাজুল ইসলাম বলেন, সিটি করপোরেশনে এসে কাউন্সিলর ও মেয়র বা প্রশাসনের দেখা না পেয়ে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি আমরা। কাউকে পাওয়া যায়নি সিটি করপোরেশনে। দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে জনসাধারণকে।

অন্যদিকে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বেশির ভাগ দায়িত্বে না থাকায় ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে অনেক ওয়ার্ড।

রংপুর সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ৩৩টি ওয়ার্ডে প্রায় ২৫ লাখ মানুষের বাস। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মহানগরের পশুরাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারাধন রায়কে কুপিয়ে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়।

রংপুর সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা মকবুল হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা ও সমর্থক কাউন্সিলররা তাঁদের অফিসেও আসেন না, সিটি করপোরেশন অফিসেও আসেন না। তাঁরা ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর থেকে আত্মগোপনে চলে গেছেন।

সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাহবুবার রহমান মঞ্জু বলেন, প্রায় ২০ জনের মতো কাউন্সিলরকে আমরা দেখতে পাচ্ছি না। কাউন্সিলরদের অনুপস্থিতির কারণে নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নগরবাসী। এর পরও নাগরিকরা এলে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান  মোস্তফা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ১২টি সিটি করপোরেশেনের মেয়রদের অপসারণ করে। এর আগে প্রায় ২০ জনের মতো কাউন্সিলর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে আসছেন না সিটি করপোরেশনে। মেয়র ও কাউন্সিলর না থাকায় নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মানুষ। কিন্তু আইন অনুযায়ী কিছুই করতে পারছি না। তা ছাড়া প্রতিটা ওয়ার্ডে কাউন্সিলরদের আলাদা অফিস করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় তাঁরা অফিস করছেন না।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সাবেক এমপি আফজাল গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক, হাওরাঞ্চল ও মেহেরপুর প্রতিনিধি
নিজস্ব প্রতিবেদক, হাওরাঞ্চল ও মেহেরপুর প্রতিনিধি
শেয়ার
সাবেক এমপি আফজাল গ্রেপ্তার
আফজাল হোসেন

কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর-নিকলী) আসনে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ও বাজিতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আফজাল হোসেনকে মেহেরপুর শহর থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার ভোররাতে তাহের ক্লিনিকপাড়ার জনৈক মামুন হোসেনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মেহেরপুর জেলার পুলিশ সুপার মাকসুদা আক্তার খানম সন্ধ্যায় জানান, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) রিকুইজিশনের (অধিযাচন) ভিত্তিতে গতকাল সাবেক এমপি আফজাল হোসেনকে মেহেরপুর সদর থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। ডিবির একটি দল ঢাকা থেকে মেহেরপুরে আসছে।

রাতেই তাঁকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

জানা গেছে, আশ্রয়দাতা মামুন হোসেন সাবেক এমপি আফজালের মালিকানাধীন আফজাল সুজ কম্পানির কর্মচারী। পুলিশ একই সঙ্গে ইবনে মামুন নামের মেহেরপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক একজন নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে মেহেরপুর সদর থানায় নিয়েছে। সূত্রমতে, শহরের হোটেল বাজার এলাকার ইবনে মামুনের ভাইয়েরা মেহেরপুরে জুতার ব্যবসা করেন।

আফজাল সুজ কম্পানির সঙ্গে ইবনে মামুনের ভাইদের ব্যাবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে। সে সূত্রেই ওই নেতার সঙ্গে আফজাল হোসেনের সখ্য ছিল।

মেহেরপুর সদর থানার পরিদর্শক পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা জানান, তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাবেক এমপি আফজালের অবস্থান শনাক্ত করে ডিবি। রবিবার স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা ইবনে মামুনকে প্রথমে আটক করে পুলিশ।

এরপর তারা তাঁকে নিয়ে সাবেক এমপি আফজালকে গ্রেপ্তার অভিযানে নামে।

সূত্র জানায়, রবিবার দিবাগত রাতে পুলিশ আফজাল হোসেনকে গ্রেপ্তারে মেহেরপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ সালিকা গ্রামে উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের বাড়িতে অভিযান চালায়। সেখানে তাঁকে না পেয়ে গতকাল ভোররাতে পুলিশ স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা ইবনে মামুনের সহায়তায় আফজাল সুজের কর্মচারী মামুন হোসেনের তাহের ক্লিনিকপাড়ার বাসায় অভিযান চালিয়ে সাবেক এমপিকে গ্রেপ্তার করে।   

তবে মেহেরপুরের স্থানীয় একাধিক সূত্রের তথ্যমতে, গতকাল ভোরের দিকে জেলার মুজিবনগর উপজেলার সোনাপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন আফজাল হোসেন।

মেহেরপুর সদর থানার ওসি মেজবাহ উদ্দিন সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে জানান, গ্রেপ্তার হওয়া সাবেক এমপি আফজাল হোসেনকে তাঁর থানার হেফাজতে রাখা হয়েছে।

বাজিতপুর থানার ওসি মো. মুরাদ হোসেন জানান, বাজিতপুর থানায় সাবেক এমপি আফজাল হোসেনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলাসহ অন্তত সাতটি মামলা রয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই গত বছরের ৪ আগস্ট  বাজিতপুর উপজেলা সদরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সশস্ত্র হামলার অভিযোগে বিস্ফোরক আইনে করা হয়। এ ছাড়া কিশোরগঞ্জ সদর থানায় গত আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে হতাহতের ঘটনায় আফজাল হোসেনসহ অন্যদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা হয়।

মন্তব্য
কূটনীতিকদের সম্মানে ইফতারে এনসিপি

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন একটি গণপরিষদ নির্বাচন হওয়া উচিত

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন একটি গণপরিষদ নির্বাচন হওয়া উচিত
মো. নাহিদ ইসলাম

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মনে করে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন একটি গণপরিষদ নির্বাচন হওয়া উচিত, যেখানে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা প্রথমে জাতিকে একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান উপস্থাপন করবেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি স্থায়ী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।

বিদেশি কূটনীতিকদের সম্মানে গতকাল সোমবার রাজধানীর বনানীর একটি পাঁচতারা হোটেলে আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন এনসিপি নেতারা। অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য দেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব আখতার হোসেন।

ইফতার অনুষ্ঠানে ২৭ দেশের মিশনপ্রধান অথবা মিশন প্রতিনিধি অংশ নেন।

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, দেশের সব শ্রেণির ছাত্র ও জেন-জি জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিল। তারা ছিল নিরস্ত্র, কিন্তু দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। হাসিনার শাসনামলে হাজার হাজার মানুষ নিহত বা স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ব বরণ করেছিলেন।

এই নৃশংসতা স্পষ্টভাবে নথিভুক্ত এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এই গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার জুলাইয়ের বিদ্রোহের একটি কেন্দ্রীয় দাবি হিসেবে রয়ে গেছে। এই সাহসী তরুণরা আমাদের দেখিয়েছেন যে নাগরিকরা যখন তাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থার ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে, তখন তারা চিরকাল চুপ থাকে না। তারা জেগে ওঠে।
তারা লড়াই করে। এবং তারা স্বপ্ন দেখে। আর সে কারণেই আমরা এখানে আছি। ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির জন্ম হয়েছে প্রয়োজনীয়তা থেকে।

তাঁদের রাজনৈতিক তিনটি উদ্দেশ্য রয়েছে জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, জনগণের ন্যায়বিচার, সংস্কার এবং একটি গণপরিষদ নির্বাচন, যা পরবর্তী সংসদ হিসেবেও কাজ করবে।

গণপরিষদ নির্বাচন প্রয়োজন এ জন্য যে বর্তমান বিদ্যমান সংবিধান মৌলিকভাবে ত্রুটিপূর্ণ। কেবল একটি নতুন সংবিধানের মাধ্যমেই আমরা একটি প্রকৃৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন করতে পারি। জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রতিবেদনে বিশেষভাবে বাংলাদেশে গভীর কাঠামোগত সংস্কারের আহ্বান জানানো হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, এনসিপি বহুদলীয় গণতন্ত্রে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে। আমরা সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক দায়িত্ব এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ওপর নির্মিত সমাজের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

ইফতার অনুষ্ঠানে যেসব দেশের মিশনপ্রধান উপস্থিত ছিলেন সেই দেশগুলো হলো আর্জেন্টিনা, চীন, ইরান, ডেনমার্ক, স্পেন ও নরওয়ে। মিশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন সেসব দেশ হলো তুরস্ক, ফিলিস্তিন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, পাকিস্তান, সুইডেন, নরওয়ে, সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়া। এ ছাড়া ছিল জার্মানি, চীন, ভিয়েতনাম, অস্ট্রেলিয়া, নেপাল, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সুইজারল্যান্ড, কসোভো, নেদারল্যান্ডস, কানাডা, জাপান, শ্রীলঙ্কা ও রাশিয়া।

এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদের দাবি : নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না। সরকারের উচিত এবং আমরা সেই দাবি জানাচ্ছি, আওয়ামী লীগকে একটি সন্ত্রাসী দল হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। দলটির নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। আমরা সংস্কারের কথা বলছি। মানুষ আসলে পরিবর্তন চায়। আবার সংস্কারে অনেকেরই অনাগ্রহ। যতই অনাগ্রহ থাকুক না কেন, আমরা যারা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ছিলাম, তারা অবশ্যই পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করব।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ শহরের বাংলা ভবন রেস্টুরেন্টে নারায়ণগঞ্জ জাতীয় নাগরিক পার্টির ইফতার মাহফিলে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

বক্তব্যে জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে নানা ধরনের বাস্তবতা আছে। আমরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর বাস্তবতার মধ্যে আছি।

জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল আমিনের সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন সদস্য আহমেদুর রহমান তনু, শওকত আলীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

 

 

মন্তব্য

আর্থিক মন্দায় স্মার্টফোন বিক্রি ও ইন্টারনেট ব্যবসায় ধস

মাসুদ রুমী
মাসুদ রুমী
শেয়ার
আর্থিক মন্দায় স্মার্টফোন বিক্রি ও ইন্টারনেট ব্যবসায় ধস

দেশে মোবাইল উৎপাদন ও আমদানির পরিমাণ ছিল বছরে চার কোটির ওপরে। আর বিক্রির পরিমাণ ছিল সাড়ে তিন কোটি বা তার কিছু বেশি। কিন্তু অর্থনৈতিক স্থবিরতায় মোবাইল উৎপাদন ও বিক্রি অর্ধেকে নেমেছে। অন্যদিকে ইন্টারনেট ব্যবহারও কমেছে।

ঈদ উপলক্ষে নানা ছাড় দিয়ে বিক্রি বাড়ানোর চেষ্টা করছে স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলো। এমনকি স্মার্টফোন বিক্রি বাড়াতে ঋণও দেওয়া হচ্ছে।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মূল্যস্ফীতির ধারাবাহিকতায় মানুষ কম খরচ করতে শুরু করেন, ফলে স্মার্টফোন কেনা কমতে থাকে। বেশির ভাগ ব্যবহারকারী তাঁদের পুরনো ফোনে থাকতেই পছন্দ করেন, কিছু গ্রাহক কম দামে সেকেন্ড হ্যান্ড ও আন-অফিশিয়াল ফোন বেছে নেন।

অন্যদিকে ডলারের উচ্চমূল্যে স্মার্টফোনের উপকরণ খরচ বেড়েছে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের আগে-পরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি স্মার্টফোন বিক্রিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। ডলার সংকটে লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খোলার মধ্যে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় পরিস্থিতি আরো বেগতিক হয়।

টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে দেশে উৎপাদন করা ফিচার ও স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছে দুই কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার।

এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বিক্রি হয়েছে ১৮ লাখ ১৯ হাজার হ্যান্ডসেট। ফেব্রুয়ারি মাসে বিক্রি হয়েছে ১৩ লাখ ৮৮ হাজার ফোন। এক মাসেই বিক্রি কমেছে চার লাখ ৩১ হাজার ফোন। অন্যদিকে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এই বিক্রি ছিল ১৮ লাখ ৯২ হাজার এবং ফেব্রুয়ারিতে ২১ লাখ ৪৭ হাজার। অর্থাৎ গত বছরের জানুয়ারির তুলনায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে বিক্রি কমেছে ৭৩ হাজার এবং ফেব্রুয়ারিতে বিক্রি কমেছে সাত লাখ ৫৯ হাজার ফোনসেট।

টেকনো, ইনফিনিক্স ও আইটেল মোবাইলের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আইস্মার্টইউ টেকনোলজি বিডি লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রেজওয়ানুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে মোবাইল ফোনের বিক্রি কমছে। টানা উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের আয় কমেছে। দেশে অর্থনৈতিক স্থবিরতা এবং কালোবাজারে ফোন আসা বেড়ে যাওয়ায় মোবাইল ফোন বিক্রি ৩০ শতাংশ কমেছে। আর স্মার্টফোন বিক্রি কমেছে ২০ শতাংশ।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সাবেক সভাপতি ও বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম মাশরুর কালের কণ্ঠকে বলেন, দেশে অর্থনৈতিক স্থবিরতা চলছে। সাত মাস ধরে ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক ধারা চলছে। কর্মসংস্থানের অবস্থা ভালো নয়। দীর্ঘদিন ধরে মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী ছিল। এতে মানুষের হাতে টাকা কমে গেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব শুধু স্মার্টফোন কিংবা ইন্টারনেট নয়, অন্যান্য জায়গায়ও পড়েছে। সরবরাহব্যবস্থায় সমস্যা না থাকলেও চাহিদা কমে গেছে। এ কারণে দেশে স্মার্টফোন বিক্রি এবং ইন্টারনেট ব্যবহার কমেছে।

এদিকে আমদানি কমায় ২০১৮ সাল থেকে স্থানীয়ভাবে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোন সংযোজনের কারখানা স্থাপন করা হচ্ছে। দেশে স্থাপিত ১৭টি কারখানায় বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। কারখানায় শ্রমিকের সংখ্যা ২৫ হাজারের বেশি, যার মধ্যে নারী শ্রমিক প্রায় ৩০ শতাংশ।

দেশের মোবাইল হ্যান্ডসেটের বাজার প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার। আমদানি করা হ্যান্ডসেট থেকে সরকার সঠিকভাবে রাজস্ব পাচ্ছে না। তাই রাজস্ব আদায় নিশ্চিত করা, এই খাতে বিনিয়োগ আকর্ষণ ও জাতীয় নিরাপত্তা অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে এনইআইআর সিস্টেম চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি। বর্তমানে অবৈধভাবে আমদানি করা মোবাইল হ্যান্ডসেট বিক্রির বিষয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকায় সরকার প্রতিবছর প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।

বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, অর্থনৈতিক সক্ষমতা কমে যাওয়ায় হ্যান্ডসেটের বাজারে বিক্রি কমেছে। এ ছাড়া ইন্টারনেট প্যাকেজের দাম বাড়ায় মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহারও কমিয়ে দিয়েছে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা স্মার্টফোনের দাম বেশি, গ্রে মার্কেটে কম হওয়ায় মানুষের সেদিকে ঝোঁক বাড়ছে। গ্রাহকের চাহিদামতো দাম কমিয়ে দেশে উৎপন্ন ফোনের মান উন্নত করা এবং দাম আরো কমানো গেলে বাজারে গতি আসতে পারে।

মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, অবৈধ ফোনের বিক্রি নিয়ন্ত্রণে সরকারের তেমন উদ্যোগ নেই। চোরাই পথে আসা অনিবন্ধিত হ্যান্ডসেটের বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং দেশীয় উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুরক্ষা দিতে ২০২১ সালের জুলাইয়ে দেশে প্রথমবারের মতো ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) প্রকল্প চালু করে বিটিআরসি। তবে দুর্নীতি ও অনিয়মে কার্যক্রম শুরুর সপ্তাহখানেকের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায় প্রকল্পটি। এই প্রকল্পের ২৯ কোটি টাকা সরকারের সুবিধাভোগীরা ভাগ-বাটোয়ারা করেছে। ফলে অবৈধ ফোনের বাজার ক্রমেই বেপরোয়া গতিতে বাড়ছে।

মোবাইলে ইন্টারনেট গ্রাহক কমেছে ১.৩২ কোটি : দেশে সাত মাস ধরে টানা মোবাইল ও মোবাইল ইন্টারনেটের গ্রাহক কমছে। মানুষ এই খাতের পেছনে ব্যয়ও কমিয়ে দিয়েছেন। বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি পর্যন্ত আগের সাত মাসে মোবাইল ফোন গ্রাহক কমেছে ৯৪ লাখের মতো। একই সময়ে মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী কমেছে এক কোটি ৩২ লাখ। মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড মিলিয়ে দেশে এখন ইন্টারনেটের মোট গ্রাহক ১৩ কোটির মতো, যা গত জুনে ছিল প্রায় ১৪ কোটি ২২ লাখ।

বিটিআরসি গত ৬ মার্চ মুঠোফোন ও ইন্টারনেট গ্রাহকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, গত জুন মাসে মুঠোফোনের গ্রাহক সর্বোচ্চ ১৯ কোটি ৬০ লাখ ছাড়িয়েছিল। এরপর তা কমতে শুরু করে। জানুয়ারিতে গ্রাহকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮ কোটি ৬৬ লাখের মতো।

সবচেয়ে বেশি কমেছে মোবাইল ইন্টারনেটের গ্রাহক। গত জুনে ইন্টারনেট গ্রাহক ছিল প্রায় ১২ কোটি ৯২ লাখ। এর পরের মাস থেকেই ধারাবাহিকভাবে এই সংখ্যা কমতে থাকে। বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারিতে মোবাইল ইন্টারনেটের গ্রাহক কমে দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ৬০ লাখে।

 

মন্তব্য
নুরুল হক নুর

সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত

বরিশাল অফিস
বরিশাল অফিস
শেয়ার
সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত
নুরুল হক নুর

গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেছেন, সেনাপ্রধানকে নতুন করে বিতর্কিত করা, সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া নিঃসন্দেহে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

গতকাল সোমবার দুপুরে বরিশাল প্রেস ক্লাবের হলরুমে গণ অধিকার পরিষদ জেলা ও মহানগর শাখা আয়োজিত কর্মিসভায় নুরুল হক নুর এ কথা বলেন।

নুরুল হক নুর বলেন, দেশে একটি সফল আন্দোলনের ফলে আমাদের তরুণদের প্রতি সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, ভরসা ও প্রত্যাশা রয়েছে। সেই আন্দোলনের নেতা হিসেবে হাসনাত-সারজিস বেশ পরিচিত।

তবে হাসনাত ও সারজিস দুজনে সেনাপ্রধানকে নিয়ে ফেসবুকে পৃথক স্টাটাস দিচ্ছে। দেশের মধ্যে সারজিস ও হাসনাতের বক্তব্য চরম উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করেছে।

তিনি আরো বলেন, হাসনাত বলেছেন সেনাবাহিনী আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতে চায় রিফাইন আওয়ামী লীগ নামে। আবার সারজিস বলছেন সেনাপ্রধান তা বলেননি।

যেহেতু এঁরা দুজনই নতুন রাজনৈতিক দল নাগরিক পার্টির নেতা, তাই নাগরিক পার্টির উচিত বিষয়টি তদন্ত করে আসল ঘটনা উন্মোচন করা।

কর্মিসভায় নুর বলেন, সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার প্রশ্নই ওঠে না। তারা শুরু থেকেই সাধারণ মানুষের সঙ্গে ছিল। সেনাপ্রধান শেখ হাসিনার আত্মীয় হওয়া সত্ত্বেও ৪ আগস্ট হাসিনাকে বলেছিলেন ক্ষমতা ছাড়তে হবে।

যেখানে পুলিশ প্রশাসন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে সেনাবাহিনী নিরলস কাজ করে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। তাই সেনাবাহিনীকে নিয়ে এমন মন্তব্য কোনোভাবেই কাম্য নয়।

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ