<p><span style="color:#d35400">পাখিটি মানুষ দেখলে নড়াচড়া না করে চুপটি করে বসে থাকে। খুব বেশি উড়তে পারে না। সহজে মানুষের শিকারে পরিণত হওয়ার কারণে এগুলোর সংখ্যা কমে গেছে। বাংলা রাঙাচ্যাগা এ দেশের আবাসিক পাখি। </span></p> <p><span style="color:#d35400">পাখিটি দেশে এখন খুব বিরল </span></p> <p> </p> <p> </p> <p>ছেলেবেলায় বরিশালের গ্রামে একটি পাখির নাম শুনতাম গ্রামের কৃষকদের মুখে। ধানক্ষেতে নাকি পাখিটি খুব দেখা যেত। পাখিটি মানুষ দেখলে নাকি নড়াচড়া না করে চুপটি করে বসে থাকত। খুব বেশি উড়তে পারত না। যে কারণে সহজেই মানুষের শিকারে পরিণত হতো। সেই পাখিটিকে তারা ডাকত রঙিলাচ্যাগা বলে।</p> <p>তখন প্রায়ই শুনতাম গ্রামের ছেলেরা নদীর চরে যায় রঙিলাচ্যাগা পাখি ধরতে। এই নামের নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে। তবে আমার জানা নেই, জানতে পারিনি আজও। গ্রামের মানুষের হাতে শিকার করা রঙিলাচ্যাগা পাখি দেখেছি ছেলেবেলায়। এভাবে সহজে মানুষের শিকারে পরিণত হওয়ার কারণে বাংলাদেশের এই পাখিটির সংখ্যা কমে গেছে। বাংলা রাঙাচ্যাগা বাংলাদেশের আবাসিক পাখি। পাখিটি দেশে এখন খুব বিরল।</p> <p>বহু বছর আগে সাভারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে গিয়ে বাংলা রাঙাচ্যাগা দেখেছিলাম দুটি। তারপর ২০১৪ সালে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার এক গ্রামে দেখেছিলাম একটি বাংলা রাঙাচ্যাগার বাসা।</p> <p>বাসাটি ছিল বেগুনক্ষেতে। বেগুনগাছের দুটি পাতার একটি ছায়াতলেই বাসাটি। বাসায় সামান্য কিছু আগাছা বিছানো। ছেলে পাখিটি ডিমে তা দিচ্ছে। দূর থেকে আমাকে দেখেছিল পাখিটি। দুপুরের রোদে আমি একটু দূরে গাছের ছায়ায় লুকিয়ে পড়েছিলাম এবং দুরবিন দিয়ে পাখিটিকে পর্যবেক্ষণ করেছি। প্রায় ২০ মিনিট পর পাখিটি পাশে থাকা বেরং নদীতে খাবার খেতে গিয়েছিল। তখন দেখলাম বাসায় দুটি ডিম। ডিমের রং কালচে হলুদের মিশ্রণ। এরপর রাজশাহীর পদ্মার চরে জলাশয়ে একসঙ্গে অনেক বাংলা রাঙাচ্যাগা দেখেছিলাম। তৃণ ঘেরা ওই জলাশয়টি ছিল তাদের বসবাসের আদর্শ জায়গা।</p> <p>এই পাখি সাধারণ জলাশয়, স্যাঁতসেঁতে তৃণভূমি, ধানক্ষেত, আগাছাপূর্ণ অগভীর নদীতে (উত্তর অঞ্চলে) বসবাস করে। এরা একা, দলে এবং কখনো বিচ্ছিন্ন ঝাঁকে থাকে। অগভীর জলে এবং কর্দমাক্ত মাটিতে ঠোঁট ঢুকিয়ে খাবার খায়। সাধারণত নিশ্চুপ ও সতর্ক থাকে। তবে ওড়ার সময় ডাকে। খাবারের তালিকায় আছে জলজ পোকা, কেঁচো, ঘাসের কচি ডগা, চিংড়িজাতীয় প্রাণী, আগাছার বীজ ও শস্যদানা। খুব সকালে এবং বেলা শেষে কর্মচঞ্চল থাকে। দুপুরে জলাশয়ের ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে থাকতে পছন্দ করে।</p> <p>প্রজননকালে মেয়ে পাখি গোধূলি বেলায় গান গায়। তবে পূর্ণিমার সময় সারা রাত গভীর গলায় গান গায়। জোড়া বাঁধার পর মেয়ে পাখি ডিম পেড়ে অন্য ছেলে পাখির সঙ্গে প্রেমে লিপ্ত হয়ে আবার ডিম পাড়ে। মেয়ে পাখি বহুগামী। প্রজননের পুরো সময় মেয়ে পাখি এমন কাণ্ড করে। মেয়ে পাখি সাধারণত এক মৌসুমে দুই সঙ্গীর সঙ্গে সংসার করে, তবে চারজনের সঙ্গেও সংসার করতে পারে। কেবল ছেলে পাখি ডিমে তা দেয় এবং ছানা লালনপালন করে। পাখির জগতে এমন ব্যতিক্রমী নিয়ম খুব কম প্রজাতিতে দেখা যায়। বাংলা রাঙাচ্যাগাকে বাংলাদেশের সব জেলায় পাওয়া যায়। তবে প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস হওয়ায় এ পাখির সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে।</p> <p> </p> <p>লেখক : নিসর্গী ও পরিবেশবিদ, জার্মান অ্যারোস্পেস সেন্টার</p> <p> </p>