<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">৩৫ হাজার সদস্যের কৃষিবিদদের জাতীয় সংগঠন কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে (কেআইবি) এক যুগেরও বেশি সময় চলেছে লুটপাটের মহোৎসব। নানা খাত দেখিয়ে ভুয়া ভাউচার বানিয়ে টাকা আত্মসাৎ ছিল নিত্যদিনের ব্যাপার। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা রাজধানীর খামারবাড়ির কেআইবি কার্যালয়টি ব্যবহার করতেন তাঁদের দলীয় কার্যালয়ের মতোই। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শুধু তা-ই নয়, এ বছর জুলাই মাসজুড়ে এবং ৫ আগস্ট ভোর পর্যন্ত এই কার্যালয়টিকে ব্যবহার করা হয়েছিল ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র ও লাঠিসোঁটা জমা করে রাখা হয়েছিল এখানে। কৃষি সেক্টরের আওয়ামীবিরোধীদের আন্দোলন দমানোর কৌশল নির্ধারণ ও প্রতিরোধের জন্য প্রধান কার্যালয়টি ব্যবহার করত বলে কৃষিবিদরা জানিয়েছেন।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সংস্থাটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সব নেতাই আত্মগোপনে। অনেকেরই বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা। আত্মগোপনে থাকা কমিটির সদস্যরা এরই মধ্যে অনলাইনে সভা করে সমাজসেবা অধিদপ্তরে প্রশাসক নিয়োগের জন্য আবেদন করেছেন। এ বিষয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নার্গিস খানম কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যেহেতু কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন একটি বড় সংস্থা, তাই এগুলো ভালোভাবে পর্যালোচনা করছি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আওয়ামী শাসনামলে আমাদের এখানে আসার সুযোগ দেওয়া হয়নি। নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনটিকে তারা দলীয় কার্যালয় বানিয়েছিল।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০১৭ থেকে ২০২৪ সালে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের অডিটরিয়ামে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, যুব মহিলা লীগ, কৃষক লীগ, মৎস্যজীবী লীগ, মহিলা শ্রমিক লীগের মতো দলীয় সংগঠনগুলোর ২০টি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু এর জন্য কোনো ভাড়া পরিশোধ করা হয়নি। এই ২০টি অনুষ্ঠানের জন্য কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের ৯৬ লাখ ৯৬ হাজার টাকা অপচয় হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইনস্টিটিউশনের মহাসচিব খায়রুল আলম প্রিন্স বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থাকলে ভাড়া নেওয়া হবে না এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> এ সিদ্ধান্তে সাধারণ কৃষিবিদদের সায় ছিল কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সংগঠনটির সদস্য ও কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী কৃষিবিদ মাসুদুল হক ঝন্টু বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনগুলোর অনুষ্ঠান বিনা ভাড়ায় ও কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের অর্থায়নে হয়েছে। এভাবে আরো বহু প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠান করা হয়েছে। এই দুর্নীতির প্রমাণ যাতে না থাকে সে জন্য নথিপত্র সরিয়ে ফেলা হয়েছে বলে আমরা খবর পেয়েছি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জানা যায়, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের মূল অডিটরিয়াম ছাড়াও একাধিক হলরুম বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভাড়া দেওয়া হয়। এসব অনুষ্ঠানের খাবার সরবরাহ ও সাজসজ্জার জন্য একাধিক প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্তির নিয়ম থাকলেও মাত্র একটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইকবাল ক্যাটারিং</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> নামে এই প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিয়ে মুনাফা তুলে নিতেন কয়েকজন নেতা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সংস্থাটির সদস্য কৃষিবিদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, নিয়ম অনুযায়ী অনুষ্ঠানে অতিথিপ্রতি ১০০ টাকা কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনকে দিতে হয়। কিন্তু এক হাজার অতিথি উপস্থিত থাকলে দেখানো হতো ৩০০ জন। এর মাধ্যমে এক দিনেই অন্তত ৭০ হাজার টাকা আত্মসাত করতেন নেতারা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত অডিট রিপোর্ট পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের দলীয় অনেক কাজও করা হয়েছে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের টাকায়। আট মাসে দুই লাখ টাকা আপ্যায়ন ব্যয় তুলে নেওয়া হয়েছে। কার পেছনে এই অর্থ ব্যয় হয়েছে তা কেউ জানে না। এই সংস্থার অর্থায়নে মন্ত্রীদের অভিনন্দন জানিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় অপ্রয়োজনীয় প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়েছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কৃষিবিদরা বলছেন, অনুষ্ঠানের ভ্যাট ভোক্তাদের কাছ থেকে আদায় করা হলেও সরকারি কোষাগারে নিয়মিত জমা দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। ট্যাক্স দেওয়া হচ্ছে না। মাত্র ছয় মাসে সিকিউরিটি সার্ভিস বাবদ ১৪ লাখ ৮৮ হাজার ও ক্লিনিং সার্ভিস বাবদ ১৫ লাখ ৯৭ হাজার টাকা বিল পরিশোধ দেখানো হয়েছে। লিফট রক্ষণাবেক্ষণ, এসির পার্টস ক্রয়ের নামে নিয়মিত টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এগুলোর তদন্ত প্রয়োজন। এ বিষয়ে মহাসচিব খায়রুল আলম প্রিন্স বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমি ব্যক্তিগতভাবে এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নই। অন্য কেউ করে থাকলে এর দায় আমার না।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিরোধী মত দমাতে ব্যবহার হতো কার্যালয়টি : ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শফিকুর রহমান নোভেল বলেন, ৪ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমর্থনে মিছিল ও সাধারণ ছাত্রদের ওপর হামলা করা হয় এই অফিসের সামনে থেকে। ঢাকার সব কৃষিসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের এখানে জড়ো করা হয়েছিল। এই কার্যালয়টি থেকেই ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে শোভাযাত্রা করেছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ বাহিনী গড়ে তোলা হয়েছিল। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দুই বছরের কমিটি আট বছর : কেআইবির সর্বশেষ নির্বাচন হয় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে। বিএনপি ও জামায়াতের সদস্যদের প্রার্থী হওয়ার সুযোগ না দিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কার্যনির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সভাপতি এ এম এম সালেহ ২০১৯ সালে মারা যাওয়ার পর সিনিয়র সহসভাপতি শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হন। ওই কমিটি এখনো বহাল। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দুই বছর মেয়াদি কার্যনির্বাহী কমিটি আট বছর ধরে চলছে। সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিমের বিরোধে নতুন করে আর কমিটি হয়নি। </span></span></span></span></p>