ঢাকা, সোমবার ০৭ এপ্রিল ২০২৫
২৪ চৈত্র ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৬

ঢাকা, সোমবার ০৭ এপ্রিল ২০২৫
২৪ চৈত্র ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৬

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ব্যাপারে মুখ খুলছেন অনেকে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ব্যাপারে মুখ খুলছেন অনেকে

মা-বাবা হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির একমাত্র সন্তান মাহির সরওয়ার মেঘ। বলেছেন, আশা করা যাচ্ছে, পজিটিভ (ইতিবাচক) কিছু একটা শুনতে পাব।

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ব্যাপারে মুখ খুলছেন অনেকে১৩ বছর আগে ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে ভাড়া বাসায় খুন হওয়ার সময় মেঘ ছিলেন পাঁচ বছরের শিশু। এখন তাঁর বয়স ১৮ বছর।

গতকাল মঙ্গলবার আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের ১৩তম বার্ষিকীতে মামা নওশের আলম রোমানের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনে এসেছিলেন মেঘ। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। সেখানে মামলাটির তদন্ত ও বিচার নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনজনই কথা বলেন।

মামলাটির তদন্তপ্রক্রিয়া নিয়ে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, গত ১৩ বছরেও এই মামলার তদন্ত শেষ করে রহস্য উন্মোচন করতে পারেনি।

আমরা মনে করি, এটি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে একটি বড় ধরনের ব্যর্থতা। এই সরকার আসার পর হাইকোর্ট বিভাগের আদেশে একটি উচ্চতর টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। এই টাস্কফোর্স ৪ এপ্রিলের মধ্যে হাইকোর্টে তদন্তের সারবত্তা পেশ করবে।

তদন্তের অগ্রগতি জানিয়ে শিশির মনির বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি এবং কৌশল প্রয়োগ করে প্রমাণাদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। যেটুকু আমরা জানতে পেরেছি, বেশ কিছু ডেভেলপমেন্ট (উন্নতি) হাতে এসেছে। এই ডেভেলপমেন্টগুলো নিয়ে হাইকোর্টে একটি তদন্ত প্রতিবেদন সাবমিট করা হবে।

বিগত সময়ে মামলাটির তদন্তকাজ সঠিকভাবে পরিচালনা করতে দেওয়া হয়নি দাবি করে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, অতীতে এই ইনভেস্টিগেশন (তদন্ত) সিস্টেমকে (প্রক্রিয়াকে) অবস্ট্রাকশন (বাধাগ্রস্ত) করা হয়েছে। ইনভেস্টিগেশন আইনি পদ্ধতিতে চলতে দেওয়া হয়নি।

এই মর্মেও তদন্তে তথ্য-উপাত্ত উঠে এসেছে।

তিনি বলেন, গত ১৩ বছরে অনেক সাক্ষ্য-প্রমাণই ডিসঅ্যাপিয়ার (গায়েব) হয়ে গেছে, হারিয়ে গেছে। সব কিছুর পরও এখন একটি আশার আলো দেখা যাচ্ছে। আমরা আশা করি, স্বল্পতম সময়ের মধ্যেই তদন্ত কর্মকর্তা একটি গ্রহণযোগ্য এবং সত্যিকার অর্থেই একটি বিচার পরিচালনা করার মতো উপযুক্ত তদন্ত রিপোর্ট আদালতে দাখিল করবেন। এটিই আমরা প্রত্যাশা করি।

এক প্রশের জবাবে শিশির মনির বলেন, তদন্তের বিষয়টির সঙ্গে একটু সেনসেটিভিটি (স্পর্শকাতরতা) আছে। তদন্তের বিষয়টির সঙ্গে এক ধরনের সিক্রেসি (গোপনীয়তা) আছে। তার পরও এতটুকু জানাচ্ছি, অন্য মামলায় জেলে আছেন এ রকম ব্যক্তিদের সঙ্গেও তদন্ত কর্মকর্তা আলাপ-আলোচনা করেছেন। যাঁরা কি না কিছুটা স্টেটমেন্ট দিয়েছেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ব্যাপারে তাঁরা মুখও খুলেছেন।

উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিরা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কি না, জানতে চাইলে এই আইনজীবী বলেন, সব ধরনের ব্যক্তিই আছেন বলে বোঝা যাচ্ছে।

 

আশা করি পজিটিভ কিছু শুনতে পাব : মেঘ

রুনির ভাই ও মামলার বাদী নওশের আলম রোমান সাংবাদিকদের বলেন, ১৩ বছর পরও তদন্তের যে অগ্রগতি, তা ২০১২ সালেই রয়ে গেছে। তার পরও আমরা কিছুটা আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। যেহেতু আগের সরকার এখন নেই। আগের সরকারকে আমরা মনে করতাম, সরকারের সংশ্লিষ্ট কেউ বা সরকার স্বয়ং এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) বলেছিলেন, কারো বেডরুম পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব তাঁর না। এই শব্দটা থেকেই আমরা আসলে মনে করি, তৎকালীন সরকার বা তাদের সংশ্লিষ্ট কেউ এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।

রোমান বলেন, এখন যেহেতু সব কিছুই পরিবর্তন হয়েছে, কিছুটা আশার আলো আমরা দেখতে পাচ্ছি। তবে এতবার আশাভঙ্গ হয়েছে যে আশাবাদী হতে পারছি না, যতক্ষণ পর্যন্ত তদন্ত রিপোর্ট কী আসছে সেটা জানতে পারছি।

এরপর সাংবাদিকরা মেঘের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে তো কিছু হইত না। এখন তো দেখতেছি ওরা (পিবিআই টাস্কফোর্স) কাজ করতেছে। তো একটু হইলেও আমরা হোপফুল (আশাবাদী)। আশা করা যাচ্ছে, পজিটিভ কিছু একটা শুনতে পারব।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে ভাড়া বাসায় খুন হন বেসরকারি টিভি চ্যানেল মাছরাঙার বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও তাঁর স্ত্রী এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি। তখন রুনির ভাই নওশের আলম রোমান বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলানগর থানায় মামলা করেন। প্রথমে এই মামলা তদন্ত করছিল শেরেবাংলানগর থানার পুলিশ। চার দিন পর মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। এই দম্পতির একমাত্র সন্তান মেঘকে উদ্ধৃত করে পুলিশ তখন জানিয়েছিল, খুনি ছিল দুজন।

 

সাগর-রুনির বাসার দুই নিরাপত্তারক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে টাস্কফোর্স

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি পশ্চিম রাজাবাজারের যে বাসায় ভাড়া থাকতেন, সেই বাসার নিরাপত্তারক্ষী এনামুল ও পলাশ রুদ্র পালকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে চার সদস্যের টাস্কফোর্স। মামলার তদন্তপ্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত পিবিআইয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন।

পিবিআইয়ের এই কর্মকর্তা বলেন, সাগর-রুনি যে বাসায় ভাড়া থাকতেন, সেই বাসার একজন নারী গৃহকর্মীকেও খুঁজছে পিবিআই। এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিশ।

সাগর-রুনি খুনের মামলায় এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে মোট আটজন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ডেইলি মেইলের প্রতিবেদন

ফ্ল্যাট নিয়ে পার্লামেন্টে মিথ্যাচারের অভিযোগ টিউলিপের বিরুদ্ধে

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
ফ্ল্যাট নিয়ে পার্লামেন্টে মিথ্যাচারের অভিযোগ টিউলিপের বিরুদ্ধে
টিউলিপ সিদ্দিক

যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রতিমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশে একটি ফ্ল্যাটের মালিকানা নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে অসত্য তথ্য দিয়েছেন কি না, সে ব্যাপারে প্রশ্ন তোলা হয়েছে ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে। গুলশানের ওই অ্যাপার্টমেন্ট সম্পর্কে লেবার এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশেও তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিক অবশ্য অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ডেইলি মেইলকে তিনি বলেছেন, ২০০২ সালে মা-বাবার কাছ থেকে উপহার হিসেবে ফ্ল্যাটটি পেয়েছিলেন।

২০১৫ সালের মে মাসে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপি হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বৈধভাবে তিনি ছোট বোন আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর কাছে সেটি হস্তান্তর করেন। একই বছরের জুনে ওয়েস্টমিনস্টারে এমপিদের জমা দেওয়া সম্পদের হিসাবে বলা হয়েছিল, পরিবারের একজনের সঙ্গে যৌথভাবে ওই সম্পত্তির মালিকানায় আছেন টিউলিপ। পরের মাসেই ওই ফ্ল্যাটের মালিকানা হস্তান্তর করার কথা বলা হয়েছে সেখানে।

কিন্তু ডেইলি মেইল বলছে, সম্প্রতি ঢাকার সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে ভিন্ন তথ্য পেয়েছে তারা।

সেখানে সংরক্ষিত নথি বলছে, টিউলিপ সিদ্দিক এখনো ওই ফ্ল্যাটের মালিক, যা দুদকের অভিযোগের সঙ্গেও মিলে যাচ্ছে।

চলতি বছরের ১০ মার্চ দুদকের পক্ষ থেকে বলা হয়, টিউলিপ সিদ্দিক তাঁর বোনকে গুলশানের ফ্ল্যাটটি হস্তান্তরে যে নোটারি ব্যবহার করেছেন, তদন্তে তা ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে।

টিউলিপ ওই ফ্ল্যাটের মালিকানা রূপন্তীকে হেবা করে দেন। হেবা দলিলটি হয় ২০১৫ সালের ৯ জুন।

সেখানে দাতা ছিলেন রিজওয়ানা সিদ্দিক (টিউলিপ সিদ্দিক); গ্রহীতা আজমিনা সিদ্দিক। দলিলে বলা হয়, বোনের প্রতি ভালোবাসা ও স্নেহ থেকে সম্পত্তি হেবা করে দিতে চান দাতা।

দলিল অনুযায়ী, ২৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকায় কেনা গুলশানের ফ্ল্যাটটি আজমিনা সিদ্দিককে দেওয়া হয়। দলিলে ফ্ল্যাটের সম্পূর্ণ মালিকানা, স্বত্ব, অধিকার এবং একটি পার্কিং স্পেস হস্তান্তরের কথা বলা রয়েছে। সেই দলিল অনুযায়ী ফ্ল্যাটের অবস্থান, গুলশান রেসিডেনশিয়াল মডেল টাউনের ১১ নম্বর প্লটে।

এটি ভবনের দ্বিতীয় তলার দক্ষিণ-পূর্ব পাশের একটি ফ্ল্যাট। দুজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে হেবা দলিলটি সম্পন্ন হয়। সেই হেবা দলিলে স্বাক্ষর রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী সিরাজুল ইসলামের। তবে তিনি বলেছেন, স্বক্ষরটি তাঁর নয়।

টিউলিপ সিদ্দিকের আইনজীবী বলেছেন, যথাযথভাবেই হেবা সম্পন্ন করা হয়েছিল এবং টিউলিপ পরিবারের সদস্যের সঙ্গে যৌথভাবে ফ্ল্যাটের মালিকানায় থাকার কথা ঘোষণাও করেছিলেন, যেহেতু ফ্ল্যাটের ভাড়া তাঁর বোনই পেতেন।

 

 

মন্তব্য

নাটোরে দৈনিক ‘প্রান্তজন’ সম্পাদকের দুই হাত ভেঙে দিল দুর্বৃত্তরা

    বগুড়ায় দুই সাংবাদিকের ওপর হামলা
নাটোর ও বগুড়া প্রতিনিধি
নাটোর ও বগুড়া প্রতিনিধি
শেয়ার
নাটোরে দৈনিক ‘প্রান্তজন’ সম্পাদকের দুই হাত ভেঙে দিল দুর্বৃত্তরা

নাটোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক প্রান্তজন পত্রিকার সম্পাদক সাজেদুর রহমান সেলিমের ওপর হামলা চালিয়ে তাঁর দুই হাত ভেঙে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল রবিবার দুপুরে কলেজ থেকে ফেরার পথে দুর্বৃৃত্তরা তাঁর ওপর হামলা চালায়।

অন্যদিকে বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকায় দুই সাংবাদিকের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জলেশ্বরীতলার জেলখানা মোড়ে একটি জুস বারের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

আহত দুই সাংবাদিক হলেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার উত্তরাঞ্চল প্রতিনিধি ও মাছরাঙা টেলিভিশনের বগুড়া প্রতিনিধি খোরশেদ আলম এবং অনলাইন পোর্টাল বগুড়া লাইভের স্টার করেসপন্ডেন্ট আসাফুদৌলা নিয়ন। তাঁদের সঙ্গে থাকা তৌহিদুল ইসলাম নীরব নামের একজনও আহত হয়েছেন।

নাটোরে আহত সেলিম সদর উপজেলা পণ্ডিত গ্রামের তসলিম উদ্দিনের ছেলে। তিনি চন্দ্রকলা কলেজের প্রভাষক।

হামলার পর তাঁকে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হামলার শিকার সেলিম জানান, চন্দ্রকলা কলেজ থেকে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মোটরসাইকেলে নাটোর শহরের দিকে যাচ্ছিলেন তিনি। পথিমধ্যে চন্দ্রকলা গ্রামের আব্দুল ওহাবের নেতৃত্বে কয়েকজন তাঁর ওপর হামলা চালায়। ওহাব স্থানীয় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করেন সেলিম।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দুর্বৃত্তরা সেলিমের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে। তারা সেলিমকে পাশের একটি চায়ের স্টলে নিয়ে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। পরে হকিস্টিক ও বাটাম দিয়ে ব্যাপক মারধর করে ফেলে রেখে যায়। ওই সময় তাঁর মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করা হয়। হামলাকারীরা চলে যাওয়ার আগে সেলিমকে আর কলেজে না আসার হুমকি দেয়।

পরে স্থানীয়রা আহত অবস্থায় সেলিমকে উদ্ধার করে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।

আহত সেলিম জানিয়েছেন, হামলাকারীদের মধ্যে আব্দুল ওহাব ছাড়া অন্যদের তিনি চেনেন না। হামলায় তাঁর দুই হাত ভেঙে গেছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষতচিহ্ন তৈরি হয়েছে। তিনি এ ঘটনার বিচার দাবি করেন।

নাটোর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক পলাশ কুমার সাহা জানান, এক্স-রে রিপোর্টে দেখা যায় আহত সেলিমের দুই হাত ভেঙে গেছে। পরে একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে তাঁর দুই ভাঙা হাতে প্লাস্টার করা হয়। নাটোর সদর থানার ওসি মাহবুবুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, সেলিমের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আহত সেলিমকে গতকাল অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে বলে নাটোর সদর হাসপাতালের চিকিৎসক পলাশ কুমার সাহা জানান।

অন্যদিকে বগুড়ায় হামলার শিকার সাংবাদিক খোরশেদ আলম বলেন, বিকেল ৩টার দিকে আমরা জুস পান করতে যাই। জুস পান করে বাইরে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ করে একদল কিশোর বয়সী বখাটে সন্ত্রাসী এসে প্রথমে সাংবাদিক নিয়নকে ঘিরে ধরে। তাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা মারধর শুরু করে। মাথায় কিল-ঘুষি দেয়। এরপর ছুরিকাহত করতে গেলে নিয়ন আমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। এ সময় সন্ত্রাসীরা তাঁকেও রাস্তায় ফেলে মারধর করতে থাকে। এ সময় নীরব নামের একজন আহত হন।

সাংবাদিক নিয়ন বলেন, হামলাকারীদের চিনি না। তবে এর মধ্যে একজন পূর্বপরিচিত। সম্ভবত এরা আগে থেকে আমাদের অনুসরণ করছিল। জুস বার থেকে বের হওয়ার সময় কয়েকজন আমাকে ঘিরে ধরে নাম-ঠিকানা জিজ্ঞেস করে। আমি পরিচয় দিয়ে বাইরে বের হওয়ার সময় তারা পেছন থেকে আমাকে আক্রমণ করে। আমার মাথায় ও চোখে অনেক কিল-ঘুষি মারতে থাকে। আমি ডান চোখে আঘাত পেলে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিই। আমাকে রক্ষা করতে গিয়ে খোরশেদ আলম ও নীরব আহত হয়েছেন। কী কারণে তারা আমাদের মেরেছে, বিষয়টি এখনো পরিষ্কার হতে পারিনি।

বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। হামলাকারীদের আটক করতে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে। এই হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুতই আইনের আওতায় আনা হবে।

 

 

মন্তব্য

কক্সবাজারে জমি নিয়ে বিরোধে জামায়াত নেতাসহ নিহত ৩

বিশেষ প্রতিনিধি, কক্সবাজার
বিশেষ প্রতিনিধি, কক্সবাজার
শেয়ার
কক্সবাজারে জমি নিয়ে বিরোধে জামায়াত নেতাসহ নিহত ৩

মাত্র সাত শতক জমির বিরোধ নিয়ে পারিবারিক সংঘর্ষের ঘটনায় জামায়াতে ইসলামীর ওয়ার্ড আমিরসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরো চারজন।

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পসংলগ্ন পশ্চিম পাড়া গ্রামে গতকাল রবিবার সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। উখিয়া থানার ওসি আরিফ হোসেন ঘটনাটি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, পুলিশের দুটি দলকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে।

নিহত ব্যক্তিরা হচ্ছেন রাজাপালং ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড শাখা জামায়াতের আমির ও কুতুপালং বাজার জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আবদুল্লাহ আল মামুন (৪৫), তাঁর জ্যাঠাতো ভাই আবদুল মান্নান ও জ্যাঠাতো বোন শাহীনা বেগম (৩৮)।

নিহতদের প্রতিবেশী রাজাপালং ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন ঘটনার বিবরণ দিয়ে কালের কণ্ঠকে জানান, ঘটনার সময় চাচাতো-জ্যাঠাতো ভাইদের পরিবারের সদস্যরাই ছুরি, দা ও লাঠি নিয়ে একে অপরের ওপর হামলে পড়ে।

ইউপি মেম্বার জানান, মাত্র সাত শতক (স্থানীয় মাপে ১৪ কড়া) ভিটি জমি নিয়ে মসজিদের খতিব ও জামায়াত নেতা মাওলানা আবদুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে জ্যাঠাতো ভাই আবদুল মান্নানের বিরোধ চলে আসছিল। গতকাল সকালে মাওলানা মামুন জমিতে ঘেরা দেওয়ার কাজ শুরু করলে উভয় পক্ষের মধ্যে প্রথমে কথা-কাটাকাটি এবং পরে সংঘর্ষ শুরু হয়।

গুরুতর আহত অবস্থায় মাওলানা মামুনকে উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করা হয়।

অন্যদিকে প্রতিপক্ষ জ্যাঠাতো ভাই আবদুল মান্নান ও তাঁর বড় বোন শাহীনাকে গুরুতর আহত অবস্থায় পাশের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর তাঁরা মারা যান।

এমএসএফ হাসপাতালে পরিবারের আরো চারজনকে আহত অবস্থায় নেওয়া হয়। পরে তাদের মধ্যে দুজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

তাদের একজনের নাম আবদুল হামিদ। অন্যজনের নাম জানা যায়নি।

 

খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফ সদস্যকে গুলি করে হত্যা

খাগড়াছড়ি ও পানছড়ি প্রতিনিধি জানান, গতকাল রাতে এক ইউপিডিএফ সদস্যকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার চেঙ্গী ইউনিয়নের ডুমবিল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত অমর জীবন চাকমা ডুমবিল এলাকার সত্যপ্রিয় চাকমার ছেলে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় সূত্র জানায়, অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজন অস্ত্রধারী এসে বাড়িতে ঢুকে তাঁকে হত্যা করে পালিয়ে যায়। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত অমর জীবন চাকমা ইউপিডিএফ ছেড়ে সম্প্রতি ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) দলে যোগ দিয়েছিলেন।

ইউপিডিএফের জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা জানিয়েছেন, নিহত ব্যক্তি ইউপিডিএফের সাবেক সদস্য। দলবদল শেষে বর্তমানে স্বাভাবিক জীবনে ছিলেন। জনসংহতি সমিতির সদস্যরা তাঁকে হত্যা করেছে বলে শোনা গেছে।

পানছড়ি থানার ওসি জসিম উদ্দিন জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন খবর শোনা গেলেও লাশের সন্ধান মেলেনি। তবে লাশ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

মন্তব্য

দেশে মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্যের অগ্রগতি নেই

শিমুল মাহমুদ
শিমুল মাহমুদ
শেয়ার
দেশে মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্যের অগ্রগতি নেই

দেশে গত দুই দশকে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির পর তা থমকে গেছে। এতে নবজাতক ও মাতৃমৃত্যু একই জায়গায় অবস্থান করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) পূরণে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে।

সর্বশেষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালে বাংলাদেশে এক লাখ শিশু জন্ম দিতে গিয়ে ১২৩ জন মায়ের মৃত্যু হয়েছে।

এ হার ২০২০ সাল থেকে একই ছিল। এদিকে ২০২৩ সালে বাংলাদেশে প্রতি এক হাজার জীবিত শিশুর জন্মের পর ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০২১ সালে প্রতি হাজার নবজাতকের মধ্যে মারা গেছে ২২ জন।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যুর হার ৭০-এর নিচে এবং নবজাতক মৃত্যুর হার ১২ জনের নিচে নামিয়ে আনতে হবে।

মা ও নবজাতক নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করা কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বলেন, এখনো অনেক হাসপাতালে মিডওয়াইফ নেই, জরুরি ওষুধ নেই, কোনো কোনো সময় রোগী আনার মতো অ্যাম্বুল্যান্স নেই, এমনকি চিকিৎসক থাকলেও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম থাকে না। এই চিত্র শুধু অব্যবস্থাপনাই নয়, এটি আমাদের জাতীয় অগ্রাধিকার ও মূল্যবোধের নগ্ন প্রতিফলন। যার ফলে মাতৃমৃত্যুতে অগ্রগতি হচ্ছে না।

তাঁরা বলছেন, দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সে শিশুমৃত্যুর মধ্যে প্রায় অর্ধেক মারা যায় জন্মের ২৮ দিনের মধ্যে, অর্থাৎ নবজাতক অবস্থায়।

অপরিণত জন্ম, জন্মের সময় ওজন কম হওয়া, জন্মের সময় শ্বাসকষ্ট, সংক্রমণ, জন্মগত ক্রটি নবজাতক মৃত্যুর কারণ। এসব কারণ দূর করা সম্ভব হচ্ছে না বলে শিশুমৃত্যু কমছে না।

এমন পরিস্থিতির মধ্যে আজ সোমবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস-২০২৫। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত প্রতিপাদ্যের আলোকে এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, জন্ম হোক সুরক্ষিত, ভবিষ্যৎ হোক আলোকিত। দিবসটি উপলক্ষে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য বিষয়ে কাজ করে এমন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

দিবসটি উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাণী দিয়েছেন।

বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভের (বিডিএইচএস) সর্বশেষ সমীক্ষা বলছে, নানা সংকটের কারণে মাতৃমৃত্যুর ৪৮ ভাগই হচ্ছে সরকারি হাসপাতালে। এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে নিতে গিয়ে মারা যাচ্ছে ১৯ শতাংশ। এ ছাড়া বেসরকারি হাসপাতালে মারা যায় ১৩ শতাংশ।

আইসিডিডিআরবির মা ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের বিজ্ঞানী আহমদ এহসানূর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, একজন মা যদি নিরাপদে সন্তান জন্ম দিতে না পারেন, যদি একটি নবজাতক প্রথম সপ্তাহেই মারা যায়, তাহলে অন্য যে উন্নয়নের গল্পই বলা হোক না কেন, সেই উন্নয়ন অসম্পূর্ণ। উন্নয়ন তখনই অর্থবহ হয় যখন তা মানুষের জীবনের প্রতি যত্ন ও সম্মানকে কেন্দ্রে রাখে। এই মৃত্যু শুধু একটি পরিবারকে নাড়া দেওয়া হয় না, বরং পুরো জাতির বিবেককে নাড়া দেওয়া উচিত।

সম্প্রতি প্রকাশিত প্রসব-পরবর্তী সেবা ও প্রসব-পরবর্তী পরিবার পরিকল্পনা বৃদ্ধিতে বহুদেশীয় গবেষণামূলক প্রকল্প সংযোগ-এর ফলাফলে দেখা গেছে, ৪৩ শতাংশ মা সন্তান ধারণ করছেন ১৮ বছর বয়সে। ৩১ শতাংশ নারীর (১৫ থেকে ১৯ বছর) দুই সন্তানের মধ্যে ব্যবধান ১৭ মাস। প্রসূতিদের ৪৭ শতাংশ প্রসব-পরবর্তী সেবা গ্রহণ করছেন না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর কালের কণ্ঠকে বলেন, এবার বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসে মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে আমাদের কার্যক্রম পুরো বছর পরিচালিত হবে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য  সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। এর প্রধান লক্ষ্য হলো প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার মূল উদ্দেশ্য হলো রোগ প্রতিকার নয়, প্রতিরোধ করা।

ডা. জাফর বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করতে হলে ২০৩০ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যুর হার ৭০-এর নিচে এবং নবজাতক মৃত্যুর হার ১২ জনের নিচে নামিয়ে আনতে হবে। আমরা এ লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি।

তিনি বলেন, আমরা সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি মাতৃ স্বাস্থ্য, নবজাতক স্বাস্থ্য, শিশু স্বাস্থ্য  ও কিশোর স্বাস্থ্য।  আমরা মনে করি, মা সুস্থ থাকলে বাচ্চা সুস্থ থাকবে, জাতি সুস্থ থাকবে।  মা যদি দুর্বল হয়, শিশু পুষ্টিহীনতায় ভুগবে, শিশুর ওজন কম হবে, সময়ের আগে জন্মাবে। এসব শিশুর নানা সংক্রমের ঝুঁকি থাকে। নানা রোগে ভোগে। তাই নবজাতক ও মাতৃ স্বাস্থ্যের অগ্রগতির জন্য সরকারের পাশাপাশি এনজিও ও জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে।

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ