বছর তিনেক আগেও টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত ছিলেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরা। ব্যস্ত পৃথিবীতে মানুষের কাছে টেস্ট ক্রিকেটের আবেদন তৈরি করা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু গত তিন বছরে সেই চিত্র আশাব্যঞ্জক হারে বাঁক নিয়েছে। রোমাঞ্চকর একেকটা টেস্ট, ক্রিকেটের বনেদি এই সংস্করণকে আরো বেশি জীবন্ত করে তুলেছে।
উল্টো এই সময়ে ওয়ানডে ক্রিকেটেরই মুখ থুবড়ে পড়ার দশা!
উদ্বেগজনক হারে কমে এসেছে ওয়ানডের সংখ্যাও। তবে বিশ্ব ক্রিকেটের এই বিপ্লবের ইতিবাচক প্রবাহ আছে বাংলাদেশে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সর্বশেষ চক্রে চারটি ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। এর তিনটিই আবার দেশের বাইরে।
এই সময়ে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স যতটা খারাপ ছিল, টেস্ট ক্রিকেটে উন্নতির গ্রাফ ছিল ততটাই ভালো। এই দলের অন্যতম সদস্য ওপেনার জাকির হাসান মনে করেন, টেস্টের সংখ্যা আর টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি কারণে ফল পাওয়া যাচ্ছে। জাকির বলছিলেন, ‘আগে যখন লম্বা বিরতি দিয়ে খেলা হতো, তখন পারফরম্যান্স করা কঠিন ছিল। কারণ যারা শুধু টেস্ট খেলে, বিরতির সময়টাতে তারা ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলে। সেখানে বোলিংয়ের মান আর আবহ নিশ্চয়ই ভিন্ন। তাই মানিয়ে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মধ্যে থাকলে বেশি মানিয়ে নিতে হয় না। আর অবশ্যই বলতে হয়, টেস্ট ক্রিকেট এখন বাড়তি মনোযোগ পাচ্ছে।’
কিছু আক্ষেপ থাকলেও টেস্ট ক্রিকেটে উন্নতির গ্রাফ নিয়ে সন্তুষ্টির কথাও শোনালেন জাকির, ‘এখন নিয়মিত খেলতে পারার কারণে আমরা দেশের বাইরে ফল পাচ্ছি।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সর্বশেষ চক্রে হয়তো আরো ভালো করতে পারতাম। দেশে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুইটা টেস্ট কিংবা শ্রীলঙ্কার সঙ্গে একটা টেস্ট জিততে পারলে আমাদের উন্নতির গ্রাফটা আরো ভালো দেখাত। তবে এটা পরিষ্কার যে আমরা জেতা শুরু করেছি। বড় দলগুলো টেস্টে আমাদের এখন গোনায় ধরছে। তারা জানে এখন আমাদের বিপক্ষে সহজে টেস্ট জেতা যাবে না। এটা বড় পাওয়া।’
জাকিরের মতে এর পেছনের কারিগর বোলাররা, ‘বড় দলগুলো আমাদের নিয়ে ভাবতে বাধ্য, কারণ আমরা এখন তিনটা জেনুইন ফাস্ট বোলার নিয়মিত খেলতে নামি। এর সঙ্গে বিশ্বমানের দুইটা স্পিনার। যে কেউ আমাদের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে নামলে অনেক পরিকল্পনা করতে হয়। এখন আমাদের ব্যাটিংটা আরেকটু ভালো করতে হবে। টপ অর্ডারকে আরেকটু স্থিতিশীল হতে হবে।’
দারুণ একটা বোলিং লাইনআপের কারণেই টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী হাবিবুল বাশার, ‘এখন আমাদের আরো বেশি টেস্ট খেলা উচিত। কারণ আগে আমরা স্পিন নির্ভর দল ছিলাম। এখন আমাদের একঝাঁক ফাস্ট বোলার আছে। টেস্ট ম্যাচ জেতার জন্য যেটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য যত বেশি পারা যায় টেস্ট খেলা উচিত।’
টেস্ট ক্রিকেটের এই ইতিবাচক প্রবাহ ধরে রাখতে চায় ক্রিকেট বোর্ড। সেই ছাপ দেখা গেছে বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে। সর্বশেষ চুক্তিতে টেস্ট ক্রিকেটারদের বেতন বেড়েছে দেড় লাখ টাকা। মমিনুল হক-তাইজুল ইসলামরা এখন পাবেন ছয় লাখ টাকা। ম্যাচ ফিও ছয় লাখ থেকে বেড়ে হয়েছে আট লাখ টাকা। টেস্ট ক্রিকেটারদের আর্থিক সুরক্ষার কথা ভেবেই এমনটা করা হয়েছে বলে কিছুদিন আগে জানান ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান নাজমুল আবেদীন ফাহিম। ক্রিকেটাররা যেন আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার আশায় এক সংস্করণ থেকে আরেক সংস্করণে যাওয়ার চেষ্টা না করেন, সেই ভাবনাও ছিল এবারের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে।
টেস্ট নিয়ে এই ভাবনাগুলো ইতিবাচকতার প্রবাহ তৈরি করতে পারে দেশের ক্রিকেটে।