<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চলনবিলে দেশীয় প্রজাতির মাছের সংকট দেখা দেওয়ায় শুঁটকির চাতালের মালিকরা তাঁদের ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন। বৈশ্বিক জলবায়ুর পরিবর্তন, উজানে অপরিকল্পিত বাঁধসহ অবকাঠামো নির্মাণ করায় এ বিলে এখন আর স্থায়ীভাবে বর্ষার পানি থাকে না। কোনো কোনো বছর বর্ষার দেখা একেবারেই মেলে না। যার ফলে মিঠা পানির মাছের একটি বড় উৎস এখন টান পড়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শুঁটকি তৈরির চাতাল মালিক উল্লাপাড়া উপজেলার বিনায়েকপুর গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলমের (৫২) বর্ণনায় এ চিত্র উঠে এসেছে। তিনি এক দশক ধরে চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ উপজেলা এলাকার মহিষলুটিতে শুঁটকি তৈরির চাতালে শুঁটকি উৎপাদনের মৌসুমি ব্যবসা করেন। তাঁর চাতালে এলাকার ২০ থেকে ২২ জন নারী শ্রমিক এই কাজে নিয়োজিত থাকতেন তিন থেকে সাড়ে তিন মাস। কিন্তু এ বছর মাছসংকটে তিনি তাঁর শুঁটকির ব্যবসা সংকুচিত করে এনেছেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, চলতি বছর দেশীয় প্রজাতির মাছের শুঁটকি তৈরির এ ভরা মৌসুমে মাছের আকালে অলস পড়ে আছে চলনবিল অঞ্চলের ১৩০ থেকে ১৫০টি শুঁটকি তৈরির বেশির ভাগ চাতাল। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শুঁটকি তৈরি চাতাল মালিক জাহাঙ্গীর আলমের ভাষ্য অনুযায়ী, শ্রাবণের মাঝামাঝি তাঁরা শুঁটকি তৈরির চাতাল স্থাপন করেন। তারপর ভাদ্র মাসের শেষের দিকে তাঁরা শুঁটকি উৎপাদনে নেমে পড়েন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মূলত ভাদ্র থেকে অগ্রহায়ণ মাসকে তাঁরা দেশীয় প্রজাতির মাছের শুঁটকি তৈরির ভরা মৌসুম ধরে থাকেন। অথচ এ বছর ভরা মৌসুমের শুরুতেই মাছের আড়ত বা শুঁটকি তৈরির উপযোগী সব উৎস স্থানেই মাছ মিলছে না। মাছের এ ধরনের আকাল গত চার থেকে পাঁচ বছরে ঘটেনি বলে মন্তব্য করেন তিনি। গত বছর জাহাঙ্গীর আলম পুরো মৌসুমে তাঁর শুঁটকির চাতালে দুই হাজার মণ শুঁটকি তৈরি করলেও এ বছর তাঁর অর্ধেক শুঁটকি উৎপাদন করতে পারবেন কি না তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন বলে যোগ করেন। সেই সঙ্গে বেকার হয়ে পড়েছেন এলাকার প্রায় ৩০০ নারী শ্রমিক।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অবশ্য তাড়াশ উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালে পুরো শুঁটকি তৈরির মৌসুমে শুধু তাড়াশ উপজেলা এলাকায় থাকা শুঁটকির চাতালে প্রায় ৩০০ টন দেশীয় মাছের শুঁটকি উৎপাদন করা হয়েছিল। অথচ এ বছর বড় ও মাঝারি আকারের শুঁটকির চাতালগুলো মাছের অভাবে অলস পড়ে আছে। এটাই বাস্তবতা বলে মন্তব্য করেন আরেক চাতাল মালিক আনিছুর রহমান। তবে যখন খাল, নয়নজুলি, নালা, ডোবা শুকিয়ে মাছ ধরা শুরু হবে তখন শুঁটকি তৈরির উপযোগী কিছু মাছ পাওয়া যাবে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সে ভরসায় আছেন চাতাল মালিক ও শ্রমিকরা।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এদিকে নিকট অতীতে চলনবিল এলাকার ৯টি উপজেলার বিভিন্ন অংশে বর্ষা মৌসুমে প্রায় চার মাস তিন থেকে আট ফুট পর্যন্ত পানি থাকত। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে চলনবিল অঞ্চলেও পানির পরিমাণ ও পানি থাকার আয়ুষ্কাল কমে এসেছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ভাদ্র মাসের শেষেই প্রবহমান পানির জন্য বিখ্যাত চলনবিলের তাড়াশ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, গুরুদাসপুর, সিংড়া, আত্রাই এলাকার বিভিন্ন অংশ থেকে পানি একেবারে নেমে গেছে। এ কারণে দেশীয় প্রজাতির শুঁটকি করা হয় এমন মাছ যেমন-পুঁটি, টেংরা, টাকি, মাঝারি আকারের বোয়াল, শোল, চান্দা, গুচি, ছোট আকারের ইছা বা চিংড়িসহ কোনো মাছই চাহিদামতো পাওয়া যাচ্ছে না।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নাটোরের গুরুদাসপুর এলাকার শুঁটকির চাতাল মালিক মো. নান্নু মিয়া জানান, ভাদ্র মাসেও চাতালে শুঁটকি উৎপাদন তেমন শুরু করতে পারেননি চলনবিল অঞ্চলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বেশির ভাগ শুঁটকির চাতাল মালিক। ছোট আকারের কিছু শুঁটকির চাতাল চালু থাকলেও তাঁদের অবস্থাও নাজুক। চলনবিলের দেশীয় প্রজাতির শুঁটকি তৈরির মাছের ওপরই তাঁরা নির্ভরশীল।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মশগুল আজাদ বলেন, চলনবিল অঞ্চলটা বড় এলাকা। আর এ বছর বিলের পানি আগেভাগেই নেমে গেছে, তাই বিলের দেশীয় মাছের উৎসমুখ থেকে শুঁটকি তৈরির মাছ পাওয়ার ক্ষেত্রেও কিছুটা ছন্দঃপতন ঘটেছে। ২০২৩ সালে এ উপজেলায় শুঁটকি উৎপাদিত হয়েছিল ১৪৩ মেট্রিক টন। এ বছর কিছুটা কম হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।</span></span></span></span></p>