<p>‘ঘরে থাকা একটি ছবি মাঝেমধ্যে বের করে দেখি। প্রতিদিন অন্তত একবার কবরস্থানে যাই। চলার পথে প্রতিটি মুহূর্তই ওর কথা মনে পড়ে। আমার তিন মেয়ের চারটি পুত্রসন্তান। ইয়াসিন ছিল সবার আদরের। বড় হয়ে ওর মায়ের দুঃখ ঘোচাবে এমনটি আশা ছিল সবার। জন্মের এক বছরের মাথায় ওর প্রতিবন্ধী বাবা মারা যায়। আমার মেজো মেয়ের একমাত্র ছেলে ছিল ইয়াসিন। স্বামীহারা হয়ে ঢাকায় গিয়ে টুকরা কাগজ সংগ্রহ করে বিক্রি করেই সংসার চালায় ইয়াসিনের মা মঞ্জিলা। কিন্তু দুঃখ তার পিছু ছাড়ল না। সন্তান শহীদ হওয়ায় সে আজ পাগলপ্রায়।’ কোটা আন্দোলনে শহীদ খুলনার রূপসা উপজেলার রহিম নগরের ইয়াসিন শেখের নানি মোমেনা খাতুন কথাগুলো বলছিলেন। পাশে থাকা তাঁর বড় মেয়ে রূপবান বেগমও বললেন, ‘ইয়াসিনের কথা ভোলার নয়। ওকে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছি। গত কোরবানির ঈদে বেড়াতে এসেছিল। এরপর ফিরল লাশ হয়ে।’</p> <p>কোটা সংস্কার আন্দোলনে ২১ জুলাই পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৫ জুলাই রাজধানীর মুগদা হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন শহীদ ইয়াসিন। একেবারে জীর্ণ কুটিরেই বাস তাঁদের। ইয়াসিনের নানা নুরু সানা খুলনার দাকোপ উপজেলার একটি প্রত্যন্ত এলাকা থেকে অনেক আগেই রূপসার রহিম নগরে এসে বসবাস শুরু করেন। ইয়াসিনের মৃত্যুর সময় বয়স হয়েছিল ১৭ বছর। কয়েক বছর হলো ইয়াসিনও তাঁর মায়ের কাছে থাকতেন ঢাকায়। কিছুদিন একটি এলপি গ্যাসের দোকানে চাকরি করেন। এরপর কখনো অটো চালিয়ে আবার কখনো রিকশা চালিয়ে কিছু পয়সা আয় করে মায়ের সহযোগী হন।</p> <p>ইয়াসিনের বেড়ে ওঠা সেই রহিম নগরে গিয়ে দেখা মেলে তাঁর নানি মোমেনা খাতুন ও বড় খালা রূপবান বেগমের। তাঁদের মধ্যে এখন শুধুই ইয়াসিনের স্মৃতি।</p> <p>ইয়াসিনের মা মঞ্জিলা বেগম মোবাইলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘বড় আশা ছিল ইয়াসিন আমার অভাবের সংসারে হাল ধরবে। কিন্তু তা হলো না। ওর মৃত্যুর পর আজ পর্যন্ত ঠিকমতো কাজ করতে পারছি না।’</p> <p>তিনি বলেন, ‘আমাকে কাজ করে খাওয়ানোর মতো আর কেউ নেই। সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে দুই লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। তবে টাকায় কি আর সন্তানের অভাব পূরণ হয়?’</p> <p>স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুস সালাম বলেন, ‘প্রায়ই রহিম নগর কলোনি কবরস্থানের সীমানায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় ইয়াসিন শেখের নানি ও বড় খালাকে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে শাড়ির আঁচলে চোখ মুছেই চলে যান তাঁরা। পরিবারটির দুঃখ যেন সহ্য করার মতো নয়।’</p> <p> </p>