<p>জনবলের অভাবে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি যেন নিজেই ‘রোগী’তে পরিণত হয়েছে। ফলে ৫০ শয্যার সরকারি এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার পাঁচ লক্ষাধিক মানুষের প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।</p> <p>জানা গেছে, হাসপাতালটিতে মেডিক্যাল অফিসার পদ রয়েছে ২৩টি। এর মধ্যে শূন্য রয়েছে ৯টি পদ। বাকি ১৪ জনের মধ্যে একজন চিকিৎসককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। দুজন প্রেষণে রয়েছেন ঝিনাইদহ শিশু ও জেলা সদর হাসপাতালে।</p> <p>অন্যদিকে হাসপাতালে ১১ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ থাকলেও আছে মাত্র একজন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ১০টি পদ খালি থাকায় উপজেলার মানুষ উন্নত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ ছাড়া হাসপাতালে গাইনি ও অ্যানেসথেসিয়া পদ খালি রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। এতে করে হাসপাতালটিতে নিয়মিত অপারেশন হচ্ছে না। ফলে অনেকে বাধ্য হয়ে বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে মোটা টাকা দিয়ে অপারেশন করাচ্ছেন।</p> <p>সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালটিতে ধারণক্ষমতার অন্তত দুই গুণ রোগী ভর্তি রয়েছে। চিকিৎসা দিতে চিকিৎসক ও নার্সদের রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। চিকিৎসক সংকটের কারণে হাসপাতালের বহির্বিভাগ চালাচ্ছেন উপসহকারী মেডিক্যাল অফিসাররা। এতে করে হাসপাতালের যথাযথ সেবা না পেয়ে বেশির ভাগ রোগী চলে যাচ্ছেন স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে।</p> <p>জানা যায়, সরকারি এই হাসপাতালটিতে সুইপারের পদও খালি রয়েছে দুটি। এতে করে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার হয় না। ফলে হাসপাতালজুড়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।</p> <p>হাসপাতালের প্যাথলজিতে ডেঙ্গু পরীক্ষার কীট সংকট রয়েছে। নেই জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন। হাম রুবেলার ও পোলিও টিকারও সংকট প্রতিনিয়ত দেখা দেয়।</p> <p>ফুলহরি গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে আসা নাজমুল হোসেন নামের এক রোগী জানান, ‘হাসপাতালের এক্স-রে মেশিনে কোনো কাজ করে না। বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে এক্স-রে করাতে হয়। আমরা কোনো ওষুধ হাসপাতাল থেকে পাইনি। একজন ওয়ার্ডবয় স্লিপ দিয়ে বললেন বাইরে থেকে ওষুধ কিনে নেবেন।’</p> <p>কাশীনাথপুর গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘বিদ্যুৎ চলে গেলে অন্ধকারে থাকেন রোগীরা। অনেক সময় মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখতে হয়। আমাদের এই হাসপাতাল নিজেই যেন রোগী হয়ে পড়েছে।’</p> <p>অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নানাবিধ সংকটের সুযোগ নিচ্ছে সক্রিয় দালালচক্র। ওই চক্র হাসপাতালে আসা রোগীদের নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় প্রাইভেট ক্লিনিকে। ফলে তারা বিভিন্ন সময় অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন। এতে গত ছয় মাসে অপচিকিৎসার শিকার হয়ে অন্তত আটজন প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে।</p> <p>শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাশেদ আল মামুন বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে চিকিৎসকের পাশাপাশি জনবলসংকটও রয়েছে। ফলে আমরা যথাযথ সেবা দিতে পারছি না। মাঝেমধ্যে কয়েকবার হাসপাতালের জেনারেটরের সমস্যা ছিল সেটা ঠিক করা হয়েছে। এই সংকটের মধ্যেই আমরা চেষ্টা করছি সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার।’</p> <p>ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ডা. হাদী জিয়া উদ্দিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবলসহ নানা সংকট রয়েছে। এ নিয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। দ্রুতই এ সংকট কেটে যাবে।’</p> <p> </p> <p> </p> <p> </p>