<p>মুন্ডা দক্ষিণ এশিয়ার একটি বড় নৃগোষ্ঠী। সংসৃ্কত শব্দ মুন্ডার অর্থ গ্রামপ্রধান। মুন্ডাদের নিজস্ব ভাষা ‘মুন্ডারি’। কিন্তু এর কোনো লিখিত রূপ নেই, কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে বর্ণমালা। কথ্য ভাষাও আজ বিলুপ্তির পথে। খুলনার কয়রা, ডুমুরিয়া এবং সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর, মুন্সিগঞ্জ, দেবহাটা ও তালা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে মুন্ডাদের বসতি আছে। সাড়ে ১৫ হাজার ভোটারসহ এই সম্প্রদায়ের প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি জনবসতি রয়েছে এই দক্ষিণাঞ্চলে। সমাজের সৃষ্ট নানা অবজ্ঞা-অবহেলায় পদে পদে প্রতিকূলতায় পদদলিত হচ্ছে তারা।</p> <p>জানা যায়, দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী, উত্তর বেদকাশী ও কয়রা সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে প্রায় দুই হাজার মুন্ডা পরিবার রয়েছে। একসময় তাদের অনেক জায়গাজমি থাকলেও অক্ষরজ্ঞানহীন হওয়ায় মহাজনের ঋণের চড়া সুদে তাদের এসব জমি হাতিয়ে নেয় সমাজের প্রভাবশালীরা। জন্ম থেকে মুন্ডারা খুবই পরিশ্রমী। তারা অলস জীবনযাপনে অভ্যস্ত নয়। শ্রম বিক্রি করে তারা সংসার চালায়। উপযুক্ত পারিশ্রমিক তারা পায় না। তাই অভাব তাদের নিত্যসঙ্গী। বেঁচে থাকার তাগিদে তারা বেছে নিয়েছে বিভিন্ন পেশা। মৌসুমে মহাজনের জমিতে দিনমজুর, বনে-জঙ্গলে মাছ ধরা, গৃহস্থের বাড়িতে কামলা খাটার পাশাপাশি এলাকায় যখন কাজ থাকে না, তখন ধান কাটা ও ইটভাটায় কাজ করতে তারা দেশের বিভিন্ন জেলায় চলে যায়। মুন্ডা পরিবারের নারী-পুরুষ সবাই জীবিকার তাগিদে ঘরে-বাইরে কাজ করে। এর পরও দুঃখ-দৈন্য তাদের জীবনযুদ্ধের নিত্যসঙ্গী। খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপন প্রণালী ও সাংস্কৃতিক চর্চার ভিন্নতাও তাদের বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে মূলধারার সঙ্গে। তবে মুন্ডাদের মধ্যে এখন অনেকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে।</p> <p>উত্তর বেদকাশী বড়বাড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির সুম্মীতা জানায়, সীমিত গণ্ডির মধ্যেই তারা ধীরে ধীরে বড় হয়েছে। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার স্বপ্নও সে দেখে। সামাজিক বৈষম্য ও সাংস্কৃতিক ভিন্নতা, উঁচু-নিচুর ভেদাভেদ এড়িয়ে সে এগিয়ে যেতে চায়।</p> <p>কয়রা সদরের তরুণ মুন্ডা বলেন, ‘আমাদের সংস্কৃতি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার পথে। শিশুদের জন্য নেই আলাদা স্কুল বা পাঠ্যবইয়ের ব্যবস্থা। স্কুলে অন্যরা আমাদের ছেলেমেয়েদের ভালোভাবে নেয় না। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের মাতৃভাষা।’ ভাষা রক্ষায় তাদের শিশুদের মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিসহ ভাষা সংরক্ষণ, পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন তারা।</p> <p>উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুলী বিশ্বাস বলেন, কয়রার আদিবাসী মুন্ডা ও মাহাতো পরিবারের সদস্যদের স্বাবলম্বী করার জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে তাদের সহযোগিতা করা হচ্ছে। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তাদের ভাষা সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।</p> <p> </p>