<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিজয়ের বার্তা নিয়ে প্রতিবছরই আসে ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। এ ছাড়া ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস এবং ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান জানাতে গল্লামারী স্মৃতিসৌধে আসে অগণিত মানুষ। কিন্তু দিবসগুলো চলে গেলে আবারও বধ্যভূমিকে ভুলে যায় সবাই। কিন্তু দুই প্রজন্ম ধরে পতাকাপ্রেমে আবদ্ধ হয়ে আছেন হায়দার শিকদার। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুস সাত্তার শিকদারের মৃত্যুর পর তাঁর রেখে যাওয়া দায়িত্বটি পালন করে যাচ্ছেন সেজো ছেলে হায়দার। প্রতিদিন সকালে পতাকা উত্তোলন করে সূর্যাস্তের আগে সম্মান জানিয়ে পতাকা নামিয়ে, স্মৃতিসৌধে আলো জ্বালিয়ে তবেই বাসায় ফেরেন হায়দার শিকদার। এই কাজ করতে গিয়ে তিনি কোনো দিন খুলনার বাইরে যাননি। শুধু একবার ঢাকায় গিয়েছিলেন নিজের চাকরির জন্য। কিন্তু সে চাকরিটিও হয়নি। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বছরের পর বছর কিভাবে এমনটি সম্ভব জানতে চাইলে হায়দার শিকদার জানান, এটি তাঁর বাবার শিক্ষা। বাবা আব্দুস সাত্তার শিকদার ছিলেন যুদ্ধকালীন কমান্ডার। স্বাধীনতার পর কয়েক বছর তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে (যেখানে রেডিও সেন্টার ছিল) একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে সেখানেই জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাঁর দায়িত্ব ছিল এটি। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা করা হয়নি তাঁকে। শুধু নিজের দায়িত্ববোধ থেকেই এটি করতেন আব্দুস সাত্তার শিকদার। ২০০৮ সালে তাঁর মৃত্যুর পর দায়িত্বটি পুরোপুরিই অর্পিত হয় ছেলে হায়দারের ওপর। সেই থেকে তিনিও কাজটি করছেন বিরামহীনভাবে। কয়েক বছর আগে ঢাকায় গেলে তাঁর বড় ভাই ওই কয়েক দিন পতাকা উত্তোলন ও নামানোর কাজটি করেন। এরপর আর কোনো দিন খুলনার বাইরে যাননি হায়দার। শুধু ২০১৮ সালে বিয়ের সময় গিয়েছিলেন বাগেরহাটের মোল্লাহাটে। বিয়ের দিন সকালেও পতাকা উত্তোলন করে বিকেলে ফিরে এসে আবার পতাকা নামান হায়দার শিকদার। এর চার দিন পর ছোট ভাইয়ের সঙ্গে গিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে আসেন। এরপর আর কোনো দিন শ্বশুরবাড়িও যাননি।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিনা পারিশ্রমিকে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও স্মৃতিসৌধের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করলেও সংসার চলে কিভাবে জানতে চাইলে তিনি জানান, কাছাকাছি কোনো জায়গায় রাজমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ করেন ঘণ্টা চুক্তিতে। দিনের বেলায় কাজ শেষে সূর্যাস্তের আগেই ফিরে আসেন। এতে যে টাকা পান তা দিয়েই চলে সংসার।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হায়দার শিকদারের দাদার বাড়ি ছিল মাদারীপুরে। তাঁর দাদার বাবা এসে খুলনার শেখপাড়ায় বাড়ি করেন। স্বাধীনতার কয়েক বছর আগে গল্লামারী স্মৃতিসৌধের পাশে ৯ কাঠা জমি কিনে পরিবারসহ বসবাস শুরু করেন তাঁর বাবা আব্দুস সাত্তার শিকদার। স্বাধীনতার পর সেখান থেকে সমাজসেবা অধিদপ্তর পাঁচ কাঠা জমি অধিগ্রহণ করে। বর্তমানে বাড়িটি চার কাঠার ওপর। এসএসসি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন হায়দার।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গল্লামারী স্মৃতিসৌধ ঘিরে হায়দারের রয়েছে অনেক স্বপ্ন। বিভিন্ন সময় সরকারের পক্ষ থেকে এ স্মৃতিসৌধ নিয়ে গৃহীত পদক্ষেপের ফলে তাঁর স্বপ্ন আরো সুদৃঢ় হয়। সরকারের তরফ থেকে বিভিন্ন সময় বলা হতো, এর চারদিকে সীমানাপ্রাচীর হবে, থাকবে সুইমিংপুল, চারদিকে থাকবে নার্সারি এমনকি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক জাদুঘরও। থাকবে একটি লাইব্রেরিও। আর সরকারের ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে হায়দারই শুধু নয়, অনেক লোকেরই কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p>