ফের বদলের হাওয়া সংস্কৃতি অঙ্গনে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসার পর সংস্কৃতি অঙ্গনের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও কমিটিগুলোয় পরিবর্তন এসেছে। নতুন দায়িত্বশীলদের মাধ্যমে শিল্পাঙ্গন সরবও হয়েছে। তবে শুক্রবার রাতে আরেকটি পরিবর্তনের খবর এলো।
ফের বদলের হাওয়া সংস্কৃতি অঙ্গনে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসার পর সংস্কৃতি অঙ্গনের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও কমিটিগুলোয় পরিবর্তন এসেছে। নতুন দায়িত্বশীলদের মাধ্যমে শিল্পাঙ্গন সরবও হয়েছে। তবে শুক্রবার রাতে আরেকটি পরিবর্তনের খবর এলো।
এদিন সন্ধ্যায় একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় স্ট্যান্ডআপ কমেডি ‘জোকের রাজনীতি’।
বিষয়টি নিয়ে কালের কণ্ঠকে সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, ‘নাম পরিবর্তনের প্রস্তাবনা শিল্পকলা পরিষদের বৈঠকে পাস হয়েছে।
পরিবর্তনের ভাবনা কিভাবে এলো? নতুন নামও বা বাছাই করা হয়েছে কোন প্রক্রিয়ায়? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জাতীয় নাট্যশালা একটি ভবনের নাম, অডিটরিয়ামের নাম তো নাট্যশালা হতে পারে না। এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটারের ভাবনাটা শুরুতে আমারই ছিল, কিন্তু এটা তো মিলনায়তনের নাম হতে পারে না। আমাদের মনে হয়েছে, নাট্যাঙ্গনে যাঁদের অবদান আছে, তাঁদের নামেই নামকরণ করা উচিত।
শোনা যাচ্ছে, শুধু এই তিনটি নয়, একাডেমির চারুকলা ভবন এবং সংগীত, আবৃত্তি ও নৃত্যকলা ভবনের আরো চারটি মিলনায়তনের নামও বদল করা হচ্ছে। এর মধ্যে সংগীত, আবৃত্তি ও নৃত্যকলা ভবনের একটি মিলনায়তন এবং নির্মীয়মাণ আরেকটি মিলনায়তনের নামকরণ করা হচ্ছে সংগীতজ্ঞ ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ এবং মরমী সাধক শাহ আবদুল করিমের নামে। চারুকলা ভবনের মিলনায়তন এবং নির্মীয়মাণ আরেকটি মিলনায়তনের নামকরণ করা হচ্ছে চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান ও ভাস্কর নভেরা আহমেদের নামে। তবে বিষয়টি নিয়ে এখনই কিছু জানাননি একাডেমির মহাপরিচালক।
তাঁদের অভিমত
পরিবর্তনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করব
মামুনুর রশীদ, অভিনেতা ও নাট্যনির্দেশক
এটা খুবই অন্যায় হচ্ছে। জাতীয় নাট্যশালা সব দেশে থাকে। হঠাৎ নাম পরিবর্তনের কী প্রয়োজন হলো তাঁদের, বুঝতে পারলাম না। খুব অপ্রয়োজনীয় একটি কাজ করছেন। এটার কোনো মানেই হয় না। ঢাকা শহরের বিভিন্ন রাস্তা মুক্তিযোদ্ধাদের নামে নামকরণ করা হয়েছে, আমরা খুশিও হয়েছিলাম। কিন্তু কেউ কি তাঁদের নামে রাস্তাগুলো চেনে? এসব সিদ্ধান্ত একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। এই লোকগুলো কোনো কাজ খুঁজে পাচ্ছে না, এ জন্য এসব নাম বদল করছে। এই নামগুলো থাকবেও না। অন্তর্বর্তী সরকারের পর নতুন সরকার আসবে, তখন এই নামগুলো কেউ রাখবেও না। তখন কী হবে? আমাদের তো মানুষই মনে করে না। আমরা যাতে অভিনয় না করি, তার সব ব্যবস্থা তিনি বসে বসে করছেন। এই নাম পরিবর্তনের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করব। সেলিম আল দীন কি খুব অতীত হয়ে গেছেন? মুনীর চৌধুরীর নামে নয় কেন? এই নাম পরিবর্তনের অধিকার তাঁকে কে দিয়েছে? হু গেভ হিম অথরিটি? একটা দেশে সংসদ আসবে ভবিষ্যতে। সেখানে আলোচনা হবে। জাতি যদি চায়, তখন পরিবর্তন হবে। আমি উপদেষ্টাদের প্রতি আহবান জানাই, তাঁরা বিষয়টি বিবেচনা করবেন এবং এই পরিবর্তন হতে দেবেন না। এটা খুব অগণতান্ত্রিক একটি সিদ্ধান্ত। নাট্যকর্মীরাও চাচ্ছেন না।
খুব আশ্চর্য লাগছে
তারিক আনাম খান, অভিনেতা ও নাট্যজন
আমি জানি না। কী নাম হচ্ছে, তা-ও জানি না। আপনার কাছ থেকেই শুনলাম। খুব আশ্চর্য লাগছে। জাতীয় নাট্যশালা নাম তো ভালো, অনেক দেশেই আছে, স্টুডিও থিয়েটার নামও সুন্দর। এটা ঠিক যে, যাঁরা নাট্যাঙ্গনে অবদান রেখেছেন, তাঁদের স্মরণ রাখার জন্য নামকরণ করা যেতে পারে। কিন্তু এই মুহূর্তে এই পরিবর্তনের কোনো দরকার ছিল না। অবশ্যই সেলিম আল দীন শ্রদ্ধার মানুষ, তাঁর অবদান বিশাল। পরিবর্তন নিয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনাও হয়নি। এগুলো আসলে দ্বিমত তৈরি করে। অমুক এই পক্ষে, তমুখ ওই পক্ষে। এর ফলে যাঁরা শ্রদ্ধেয় মানুষ, তাঁরাই পরে বিতর্কে পড়ে যান। এ কারণে এটা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
কাজে ব্যস্ত থাকা যুক্তিযুক্ত
মুনমুন আহমেদ, নৃত্যশিল্পী
নাম পরিবর্তন নিয়ে ব্যস্ত থাকার চেয়ে কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকাকে আমি যুক্তিযুক্ত মনে করি। আমরা নাম পরিবর্তনের পেছনে যে মেধা, অর্থ ও সময় ব্যয় করি, সেটা যদি সংস্কৃতির কাজে ব্যয় করি—সেটাই উত্তম হবে। এটুকুই আমার বক্তব্য।
সম্পর্কিত খবর
নাটক
ডকুড্রামা ফিরে আসে বারবার
[রাত ৯টা, বিটিভি]
রচনা সৈয়দ অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড, প্রযোজনা নাসির উদ্দিন। অভিনয়ে সুমনা সোমা, গোলাম কিবরিয়া, দিলরুবা দোয়েল, রকি খান, জাফরিন ফেরদৌসী, গোলাম রাব্বানী মিন্টু প্রমুখ।
জমশের আলীর এপিটাফ
[দুপুর ১টা ৫ মিনিট, চ্যানেল আই]
রচনা হারুন রশীদ, পরিচালনা গোলাম হাবিব লিটু। অভিনয়ে প্রাণ রায়, সুষমা সরকার, মো. বারী, ম. আ. সালাম, জুলফিকার চঞ্চল, গোলাম মাহমুদ প্রমুখ।
বীরাঙ্গনা
[রাত ১০টা, বৈশাখী]
রচনা টিপু আলম মিলন, চিত্রনাট্য আনন জামান, পরিচালনা শুদ্ধমান চৈতন। অভিনয়ে অপর্ণা ঘোষ, রওনক হাসান, মনোজ প্রামাণিক, রিয়া খান, মনির জামান, সানজিদা মিলা প্রমুখ।
চলচ্চিত্র
হাঙর নদী গ্রেনেড
[সকাল ১০টা, বৈশাখী]
অভিনয়ে সুচরিতা, ইমরান, দোদুল, বিজয়। পরিচালনা চাষী নজরুল ইসলাম।
ভুবন মাঝি
[সকাল ১০টা ১৫ মিনিট, দীপ্ত টিভি]
অভিনয়ে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, অপর্ণা ঘোষ। পরিচালনা ফাখরুল আরেফিন খান।
সংগীত
কথা ও সুরে স্বাধীনতা
[দুপুর ১টা ১০ মিনিট, বিটিভি]
সংগীত পরিবেশনায় সাব্বির জামান, প্রিয়াংকা গোপ, আতিয়া আনিসা, মৌমিতা তাসরীন নদী, মনিকা দেবনাথ, কিশোর দাস, বেলাল খান ও অপু আমান।
স্বাধীনতা আমার অহংকার
[দুপুর ৩টা, বিটিভি]
উপস্থাপনায় তাসনুভা মোহনা।
আজ দুপুরে
[দুপুর ১২টা ২০ মিনিট, এনটিভি]
সংগীত পরিবেশনায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী তিমির নন্দী।
জন্মভূমি
[সকাল ৭টা ৪৫ মিনিট, বৈশাখী]
দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করবেন জনপ্রিয় শিল্পীরা।
সকালের গান
[সকাল ৮টা ২০ মিনিট, বৈশাখী]
গাইবেন জনপ্রিয় শিল্পীরা।
বিবিধ
আমাদের স্বাধীনতা
[দুপুর ১২টা ২০ মিনিট, বিটিভি]
শিশুদের অংশগ্রহণে কবিতা, গান, নৃত্য, নাটিকা ও চিত্রাঙ্কনে সাজানো হয়েছে অনুষ্ঠানটি।
আমার স্বাধীনতা, আমার গর্ব
[৮টা ৩০ মিনিট, বিটিভি]
উপস্থাপনায় আমিরুল ইসলাম কাগজি, আলোচনায় বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন [বীর বিক্রম] এবং নজরুল গবেষক ও যুগান্তরের সম্পাদক আব্দুল হাই শিকদার।
সরাসরি রং তুলিতে মুক্তিযুদ্ধ
[সকাল ১১টা ৩০ মিনিট, চ্যানেল আই]
থাকছে খ্যাতনামা চিত্রশিল্পীদের চিত্রাংকন, সংগীতশিল্পী ফেরদৌস আরা ও সংগীত প্রতিষ্ঠান ‘সুরসপ্তক’-এর পরিবেশনা। সঙ্গে থাকবে আবৃত্তি ও নৃত্য পরিবেশনা। উপস্থাপনায় আফজাল হোসেন।
পূর্ণাঙ্গ ক্রিকেট লিগের আদলে ঢাকার শোবিজ তারকাদের নিয়ে আয়োজিত হতে যাচ্ছে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ‘সেলিব্রিটি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি’ বা সিসিটি। বসুন্ধরা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বসবে এ জমকালো আসর। ২৪ এপ্রিল মাঠে গড়াবে ম্যাচ, চলবে ৩ মে পর্যন্ত।
সোমবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে টুর্নামেন্টের ঘোষণা দিয়েছে আয়োজক প্রতিষ্ঠান এসএস স্পোর্টস।
নানা শঙ্কা পেরিয়ে অবশেষে মুক্তির অনুমতি পেয়েছে ঈদের সবচেয়ে আলোচিত ছবি ‘বরবাদ’। মেহেদী হাসান হৃদয়ের ছবিটিকে গতকাল ছাড়পত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড। তবে এর জন্য কিছু দৃশ্য সংশোধন করতে হয়েছে। যেসব দৃশ্যে ‘অধিক বীভৎসতা’ দেখানো হয়েছে, সেগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে।
দেশের মিডিয়া জগতে এক অনন্য নিদর্শন ইত্যাদি। আর ঈদের ইত্যাদি মানেই বিশেষ আকর্ষণ, বিশেষ আয়োজন। ইত্যাদি পরিণত হয়েছে ঈদ ঐতিহ্যে। এবারের পর্বের বিশেষ দিকগুলো কী কী?
প্রতি ঈদেই আমরা চেষ্টা করি সমসাময়িক বিষয় নিয়ে বিষয় বৈচিত্র্যে অনুষ্ঠান সাজাতে।
এবারের ইত্যাদিতে একটি গান গেয়েছেন সিয়াম আহমেদ ও জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি। তাঁরা তো অভিনয়শিল্পী, তাঁদের বেছে নিলেন কিভাবে? তাঁদের নিয়ে গান হতে পারে, কী কারণে মনে হয়েছে?
আমরা বৈচিত্র্যে বিশ্বাস করি। এটাও একটা বৈচিত্র্য।
প্রতি ঈদের মতো এবারও বিদেশিদের নিয়ে একটি পর্ব রয়েছে। এই পর্বের শুটিং অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
এই অভিজ্ঞতা বলে বোঝানো যাবে না। আমি গত দুই যুগ ধরেই এই কাজটি করছি। কাজটি অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ এবং কষ্টসাধ্য। এর জন্য প্রচুর সময় দিতে হয়। বিদেশিদের সঙ্গে কাজ করার আনন্দই আলাদা। তারা সময় মেনে চলেন এবং কাজটাকে উপভোগ করেন। তারা অপেশাদার তবে অনেক পেশাদার শিল্পীরও তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। বিশেষ করে বিদেশিদের সময়জ্ঞান, নিষ্ঠা, একাগ্রতা, কষ্টসহিষ্ণুতা, আন্তরিকতা দেখে আমি মুগ্ধ। মাত্র কয়েক দিনের পরিচয়ে বিদেশিদের সঙ্গে যে আত্মিক বন্ধন তৈরি হয়েছে, তা কখনোই ভোলার নয়।
তাঁদের কোথা থেকে খুঁজে নেন?
আমরা যেমন তাদের জন্য অপেক্ষা করি, তেমনি তারাও ইত্যাদির জন্য অপেক্ষা করেন। এ বছর যাঁরা করেছেন, আগামী বছর তাঁরা না থাকলেও ইত্যাদির জন্য তাঁরা তাঁদের বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিতজনদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ করিয়ে দেন। বিভিন্ন বিদেশি দূতাবাস ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিদেশিরাই এই পর্বে অংশগ্রহণ করেন। বিদেশিরা মনে করেন এটি তাঁদের জীবনে একটি নতুন অভিজ্ঞতা, অন্য রকম আনন্দ। তাই তাঁরা উৎসাহের সঙ্গে এই পর্বটির জন্য অপেক্ষা করেন এবং অংশগ্রহণ করেন।
ঈদে ইত্যাদির পাশাপাশি একটি নাটকও নির্মাণ করেন। এবারের ‘ঘরের কথা ঘরেই থাক’ নাটকটি নিয়ে বলুন...
বছরে দুই ঈদে দুটি নাটক নির্মাণ করি। তাও প্রায় দুই দশক ধরে। তবে আমি স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করি ইত্যাদিতেই। এটিএন বাংলার অনুরোধেই এখনো করে যাচ্ছি এই চ্যানেলেই। ভিউসর্বস্ব অস্থির বাণিজ্যিক যুগে ‘ঘরের কথা ঘরেই থাক’ নাটকটি বাণিজ্যিক বা ভিউর উদ্দেশ্যে নির্মিত নয়। তবে নাটকটি দর্শকরা পরিবার নিয়ে দেখতে পারবেন। কারণ এটি একটি সামাজিক নাটক। নাটকে গল্পের মাধ্যমে সমাজের ক্ষতগুলোকে তুলে ধরার চেষ্টা করি। সদ্য বিবাহিত এক দম্পতি এবং তাদের মা-বাবা, পাড়া-প্রতিবেশী ও বন্ধু-বান্ধব নিয়েই গড়ে উঠেছে ‘ঘরের কথা ঘরেই থাক’ নাটকের কাহিনি।
বিটিভিতে ইত্যাদি, এটিএনে নাটক। এই দুটি চ্যানেলের বাইরে আপনার কাজ সেভাবে পাওয়া যায় না। কেন?
নানা চ্যানেলে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করি না। আমি শিল্প-সংস্কৃতির চর্চার ক্ষেত্রে ব্যবসাটাকে গুরুত্ব দিই না। নাটক প্রতি মাসেই করা সম্ভব। কারণ ইত্যাদির ১ মিনিটের একটি নাট্যাংশ লিখতে অনেক সময় দুই-তিন দিনও লেগে যায়। আর নাটক শুরু করলে দুই দিনেই লিখে শেষ করা সম্ভব। চিত্রায়ণ-সম্পাদনা শেষে এক সপ্তাহেই একটি নাটকের নির্মাণ সম্পন্ন করা যায়। কিন্তু একটি ইত্যাদি নির্মাণ করতে দুই-তিন মাস সময় দরকার পড়ে। কারণ এর নির্মাণ অত্যন্ত জটিল। আমি নাটকের চেয়ে ইত্যাদিকে বেশি গুরুত্ব দিই। দর্শকরা তাদের মূল্যবান সময় বের করে আমার অনুষ্ঠান দেখতে বসেন, আমিও আন্তরিকভাবে তাদের সময়ের মূল্য দিতে চেষ্টা করি।
ইত্যাদি এবং আপনার নাটকে শিল্পীদের একটা বলয় আছে। বেশ কয়েকজন চেনা মুখ। তাঁদের অন্য কোথাও তেমন দেখা না গেলেও আপনার কাজে বরাবরই দেখা যায়। এই সম্পর্ক মেনটেইন করেন কিভাবে?
সম্পর্ক হয় ভালোবাসা থেকেই। শিল্পীরা আমাকে ভালোবাসেন, আমিও তাঁদের ভালোবাসি। এ সম্পর্ক দীর্ঘ তিন যুগেরও বেশি সময়ের। অনেক শিল্পীই আছেন, যারা অন্যান্য অনুষ্ঠান করলেও আমৃত্যু ইত্যাদিতেই অভিনয় করেছেন। দু-একটি উদাহরণ না দিলে বোঝা যাবে না। যেমন-পপ সম্রাট আজম খান, বাংলা গানের ঐশ্বর্য এন্ড্রু কিশোর কিংবা সংগীতশিল্পী খালিদ হাসান মিলু তাঁদের সবারই শেষ গানটি ছিল ইত্যাদিতে পরিবেশিত। অভিনেতা মহিউদ্দিন বাহার তাঁর শেষ দিনগুলোতে অ্যাম্বুল্যান্সে করে আমার এখানে এসে অভিনয় করে গেছেন, এ টি এম শামসুজ্জামানকে আমরা হুইল চেয়ার দিয়ে নিয়ে এসে অভিনয় করিয়েছি, সাইফুদ্দিন আহমেদ যত দিন পর্যন্ত একটি মাত্র শব্দ বলতে পারতেন-তত দিন পর্যন্ত আমার এখানে অভিনয় করে গেছেন, অভিনেতা আরিফুল হক বিদেশ যাওয়ার আগে শেষ অভিনয় আমার ইত্যাদিতেই করেছেন। হাসমত, ব্ল্যাক আনোয়ার, আমিনুল হক, হুমায়ুন ফরিদী, নাজমুল হুদা বাচ্চু, কে এস ফিরোজ, আলী আকবর রুপু, আব্দুল কাদের, এস এম মহসিন এ রকম বহু শিল্পীর উদাহরণ দেওয়া যাবে, যাঁদের শেষ কাজটি ছিল আমার অনুষ্ঠানেই। আসলে শিল্পীরা আমার সঙ্গে কাজ করে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, আমিও তাঁদের নিয়ে কাজ করে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি—এ জন্যই অনেক শিল্পীকে বরাবরই আমার এখানে কাজ করতে দেখা যায়।
সমাজের নানা অসংগতি তুলে ধরে আসছেন যুগ যুগ ধরে। মানুষ সচেতনও হচ্ছে। কিন্তু লোকে বলে, দিন দিন সমাজে অবক্ষয়, অসহিষ্ণুতা বাড়ছে। মানুষের মানবিকবোধ কমছে। আপনি কিভাবে দেখেন এটাকে?
আমাদের সমাজে মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ে সমাজের এক বিরাট অংশ পাশ্চাত্যের চমকসর্বস্ব বিকৃতির মরীচিকার পেছনে ছুটে ভুলতে বসেছে নিজের সভ্যতা-সংস্কৃতি, জড়িয়ে পড়ছে অসামাজিক কাজে, আসক্ত হয়ে পড়ছে মরণ নেশায়, হারিয়ে ফেলছে মানবিক গুণ। আত্মস্বার্থ, ব্যক্তি লোভও কেড়ে নিয়েছে মানুষের মানবিক গুণ। কিন্তু আশার কথা হলো মানবসত্তা ও মানবিক গুণের কখনোই মৃত্যু হয় না। অনেক জাগতিক স্বার্থের নিচে তা চাপা পড়ে থাকলেও তাকে জাগিয়ে তোলা যায়। মহানুভূতি ও সহানুভূতিতে জেগে উঠতে পারে মানুষ, নিজেকে করতে পারে মানব সেবায় উৎসর্গ। আমরা প্রায়ই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে চেষ্টা করি মানুষের সেই মানবিক গুণগুলো তুলে ধরতে।