<p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশে গণমাধ্যমের মূলস্রোত এবং বিশেষ করে রাজনৈতিক চিন্তাবিদদের মধ্যে এখন দেশীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে গণতন্ত্রের চর্চা নিয়ে বিভিন্ন প্রসঙ্গ উঠে আসছে। দীর্ঘদিনের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী কিংবা স্বৈরতান্ত্রিক মানসের অবসানের পর এখন অন্যান্য রাজনৈতিক দলে অভ্যন্তরীণভাবে গণতন্ত্রের চর্চা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তাদের ভাষায়, দু-একটি রাজনৈতিক (ইসলামী) দল ছাড়া অন্যদের মধ্যে গণতান্ত্রিক বিধি-বিধান কিংবা নীতিনৈতিকতার চর্চা তেমন একটা দেখা যায় না। এ ক্ষেত্রে বর্তমানে দেশের বড় দল বিএনপি এবং মাঝারি কিংবা ছোটখাটো অন্যান্য দলের মধ্যেও গণতন্ত্র চর্চার সংকট প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে বলে তাদের অভিযোগ। গণতান্ত্রিক আদর্শ কিংবা বিধি-বিধানে প্রত্যেক নাগরিকেরই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কিছু মৌলিক অধিকার থাকে, যার ব্যত্যয় ঘটলে গণতন্ত্র স্বৈরতন্ত্রে কিংবা স্বেচ্ছাচারে রূপান্তরিত হয়। গণতন্ত্র আর প্রকৃত গণতন্ত্র থাকে না, সেখানে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ইচ্ছা-অনিচ্ছা কিংবা আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। গণতান্ত্রিক কাঠামোটি একটি বিজ্ঞানভিত্তিক প্রক্রিয়ায় গঠিত হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়েছে। সেখানে উদার গণতন্ত্র ব্যক্তিস্বাধীনতার ওপর জোর দিয়েছে এবং তাতে গোষ্ঠী বা সরকারের কেন্দ্রীভূত ক্ষমতার প্রতি সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে। আর সামাজিক গণতন্ত্র গোষ্ঠী, সরকার এবং বিভিন্ন সংস্থার সম্মিলিত কর্মের মাধ্যমে সাম্যের ওপর জোর দিয়েছে। বলা হয়েছে, সফল গণতন্ত্র সর্বদা বিকশিত হয় এবং নীতি দ্বারা পরিচালিত হয়, যা জনগণ নির্ণয় করে থাকে। সেখানে জনগণের অংশগ্রহণ না থাকলে গণতন্ত্রের মৌলিক কাঠামো ক্রমে ভেঙে পড়বে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="গাজীউল হাসান খান" height="388" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2025/1.january/11-01-2025/mk/kk-NEW-M-11-13a.jpg" style="float:left" width="350" />গণতন্ত্রের জন্মস্থান হিসেবে বিবেচিত গ্রিসে ডেমোক্রেসি কথাটি দুটি শব্দের সংমিশ্রণ। </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ডেমো</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> একটি নগর বা রাষ্ট্রের নাগরিক আর </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ক্রেসি</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> বা </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ক্রাটস</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> হলো ক্ষমতা বা শাসন। আধুনিক গণতন্ত্র বহু শতাব্দী ধরে রূপ নিয়েছে। গ্রেটা থুনবার্গ একজন তরুণ সুইডিশ পরিবেশ আন্দোলনকারী। আধুনিক ২১ বছর বয়স্ক এই তরুণীর ভাষায়, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিজ্ঞান ও গণতন্ত্র দৃঢ়ভাবে আন্তঃসম্পর্কিত। কারণ উভয়ই বাকস্বাধীনতা, তথ্য এবং স্বচ্ছতার ওপর নির্মিত। আপনি যদি গণতন্ত্রকে সম্মান না করেন তাহলে আপনি সম্ভবত বিজ্ঞানকে সম্মান করবেন না। আর আপনি যদি বিজ্ঞানকে সম্মান না করেন তাহলে সম্ভবত আপনি গণতন্ত্রকে সম্মান করবেন না।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> এখানে গণতন্ত্রের সঙ্গে বিজ্ঞানকে টেনে আনার একটি গভীর তাৎপর্য রয়েছে। কারণ থুনবার্গ বলেছেন, গণতন্ত্র ও বিজ্ঞান দৃঢ়ভাবে আন্তঃসম্পর্কিত। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানও বৃহত্তরভাবে বিজ্ঞানের ক্রমবিকাশের ফল। এবং এদের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে জনগণ এবং বিশেষ করে একটি বৃহত্তর জনসমাজ কিংবা একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলা, যাতে জনগণের মৌলিক অধিকার ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা হবে, অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করা হবে। সুতরাং এই সম্পূর্ণ বিষয়টিই একটি বিজ্ঞানভিত্তিক সমন্বিত প্রচেষ্টা। এই প্রচেষ্টায় শাসক ও শাসিত, সরকার ও জনগণ কিংবা নেতা ও কর্মীর মধ্যে তাদের দায়দাযিত্ব সম্পর্কে সুস্পষ্ট কিছু শিক্ষা বা জ্ঞান থাকতে হবে, যা খুব কঠিন কোনো অনুশীলন বা চর্চা নয়। তা না হলে গণতন্ত্রের নামে বারবারই এক ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠীর শাসন জগদ্দল পাথরের মতো নেমে আসবে। এ ক্ষেত্রে কোনো রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে তাদের উচ্ছেদ করা ছাড়া ভিন্ন পথ থাকবে না। কিন্তু তাতেও প্রকৃত গণতন্ত্র কিংবা জনগণের কোনো মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে না, যতক্ষণ না তারা তাদের অধিকার সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন হয়ে ওঠে। বর্তমানে আমাদের দেশে গণতন্ত্র শব্দটি অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও তার অন্তর্নিহিত অর্থ কিংবা তাৎপর্য সম্পর্কে না শাসক, না শাসিত মানুষ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কেউই তেমনভাবে অবগত কিংবা ওয়াকিফহাল নয়। এখানে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলই শাসকশ্রেণির মূল লক্ষ্য; কোনো নীতি-আদর্শ বাস্তবায়ন নয়। সে কারণেই এত গণ-আন্দোলন, গণ-অভ্যুত্থান কিংবা তথাকথিত গণবিপ্লবের পরও প্রকৃত গণতন্ত্রের প্রাণপ্রতিষ্ঠা হয় না। স্বৈরাচার কিংবা কর্তৃত্ববাদ বিভিন্ন রূপে বারবার ফিরে আসে। এর জন্য মূলত দায়ী করা হয়েছে আমাদের দেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণভাবে গণতন্ত্রের চর্চা না থাকাকে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমাদের দেশে বিশেষ করে আশির দশক থেকে ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামের মতো বড় বড় মহানগরীতে কোনো জনসমাবেশ করতে হলে ট্রাকে ট্রাকে ভাড়া করে বিভিন্ন বস্তি থেকে লোক উঠিয়ে আনতে হয়েছে। এখানে এ কথা বলার কোনো অবকাশ নেই যে সেই মানুষগুলোর প্রকৃত অর্থে কোনো রাজনৈতিক সচেতনতা কিংবা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ছিল না। তারা কিছু নগদ পয়সার জন্য যার-তার সভায় যোগ দিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে দলীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের কথা সম্পূর্ণ আলাদা। তারা দলের সংগৃহীত সদস্য। শহর-নগর কিংবা গ্রামগঞ্জের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে তাদের সংগ্রহ করে দলের সদস্য পদ দেওয়া হয়। কিন্তু বিভিন্ন সংকটের কারণে তাদের উপযুক্ত রাজনৈতিক শিক্ষা কিংবা প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হয় না। কর্মসংস্থানের অভাবে আমাদের দেশের তরুণ ছাত্রসমাজের একটা বিশাল অংশই শেষ পর্যন্ত বেকার থেকে যায়। প্রথাগত চাকরির অভাবে তাদের বেশির ভাগই অনিয়মিত </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">টুকটাক কাজ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> কিংবা খণ্ডকালীনভাবে ছোটখাটো ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে থাকে। আর তা-ও সম্ভব না হলে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাপের খেয়ে বনের মোষ তাড়ায়</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন কিংবা গণসংগঠনের সঙ্গে জড়িত হয়ে শহর-নগর এবং গ্রামগঞ্জে তথাকথিত জনপ্রতিনিধিদের তল্পিবাহক হয়ে সময় কাটায়। মন্ত্রী, এমপি, মেয়র কিংবা চেয়ারম্যানের অফিসে ভিড় জমায়। বিভিন্ন কাজের তদবির করে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">টু পাইস আর্ন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> করার আপ্রাণ চেষ্টা করে। মিছিলে-মিটিংয়ে স্লোগান দেয় এবং দল ভারী করে। এভাবেই বেকার ছাত্র-যুবকরা ক্রমে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাস্তানি এবং এমনকি ধর্ষণসহ বিভিন্ন অসামাজিক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। সেসব কারণে তাদের বেশির ভাগেরই বিপুল সম্ভাবনাময় জীবনটা নষ্ট হয়ে যায়। তাদের কেউ কেউ সন্তানের পিতা হয়েও বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে। নয়তো বিভিন্ন যুব সংগঠনে নাম লিখিয়ে শেষ পর্যন্ত দু-একজন স্থানীয় সরকারের মেম্বার বা কাউন্সিলর বনে যায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বিশেষ চিন্তার বিষয় হচ্ছে, তাদের মধ্যে প্রকৃত অর্থে কোনো গণতান্ত্রিক বা রাজনৈতিক মূল্যবোধ কাজ করে না। কারণ তাদের মধ্যে উপরোক্ত প্রশিক্ষণ বা অনুশীলনের কোনো ছাপ নেই। তারা কোনো দলীয় নীতি-আদর্শ, গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র নিয়ে মাথা ঘামায় না। তাদের মনোযোগ কিংবা দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকে মূলত চাঁদাবাজি, ভাগ-বাটোয়ারা কিংবা যেভাবেই হোক অর্থ উপার্জনের দিকে। সেখান থেকেই মূলত শুরু হয় রাজনৈতিক অবক্ষয় কিংবা বিভিন্ন রাজনৈতিক গণসংগঠনের নামে নীতিনৈতিকতার ধস।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="গাজীউল হাসান খান" height="521" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2025/1.january/11-01-2025/mk/kk-NEW-M-11-13b.jpg" style="float:right" width="350" />ফিরে আসি দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক সংঠন হিসেবে বিএনপির কথায়। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জীবদ্দশায় তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের বিভিন্ন পর্যায়ে রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। এর পেছনে তৎকালীন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষিত সচেতন নেতার অবদান ছিল। তাঁরা দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়মিতভাবে ক্লাস নিতেন এবং রাজনৈতিকভাবে মৌলিক কিছু প্রশিক্ষণ দিতেন। মরহুম মশিয়ুর রহমানের মতো প্রাজ্ঞ প্রবীণ নেতা জিয়াউর রহমান প্রদত্ত ১৯ দফা উন্নয়ন কর্মসূচির বিভিন্ন ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ দিতেন। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর থেকে সেসব সম্পূর্ণভাবে উধাও হয়ে গেছে। কৃষিজমি আবাদ, মৎস্য চাষ কিংবা নিরাপত্তাজনিত কারণে কেন দেশের প্রত্যন্ত প্রান্তরেও খাল কাটার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এখন সেসব কথা কেউ বলে না। দলের স্থানীয় পর্যায়ের নেতা নির্বাচনেও স্থানীয় নেতাকর্মীদের মতামত নেওয়া হয় না, পরামর্শ করা হয় না তাদের সঙ্গে। ওপর থেকে একটি কমিটি চাপিয়ে দেওয়া হয়। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রায় দেড় দশকের বেশি সময়ে উল্লিখিত সাংগঠনিক কাজগুলো খুব বেশি করা হয়নি। হাসিনা সরকারের প্রায় শেষ সময়ে বিভাগীয় পর্যায়ে বিএনপির বিভিন্ন গণসমাবেশ কৃতিত্বের সঙ্গে সাফল্যমণ্ডিত করা গেলেও দলের কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়নি নির্ধারিত সময়ের বহু পরও। এর অন্যতম প্রধান কারণ দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার কারাবরণ ও অসুস্থতা। তা ছাড়া দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান দীর্ঘদিন প্রবাসে নির্বাসিত অবস্থায় রয়েছেন। তার পরও এখন বিভিন্ন পর্যায়ে প্রশ্ন উঠেছে, খালেদা জিয়ার বন্দি অবস্থা কিংবা তারেক রহমানের নির্বাসনের কারণে কি দলীয় সাংগঠনিক অবস্থা একেবারে অচল হয়ে পড়তে পারে? একদিকে আওয়ামী লীগের হামলা-মামলা ও জেল-জুলুম এবং অন্যদিকে দলীয় সাংগঠনিক তৎপরতার অভাবে দলীয় নেতাকর্মীরা সব দিক থেকেই অত্যন্ত স্থবির হয়ে পড়েছিল। সে অবস্থায় দলের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চার কথা বলাই অবান্তর। কিন্তু আজ ফ্যাসিবাদমুক্ত অবস্থায় সেই ব্যবস্থা কি জরুরি ভিত্তিতে এখন থেকে নেওয়া যেতে পারে না?</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের চর্চা নেই</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ অভিযোগ নতুন নয়। সে কারণেই অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, বিগত দেড় দশকে আমাদের স্বৈরাচারবিরোধী কোনো আন্দোলন সাফল্যের মুখ দেখেনি। তা ছাড়া দলীয় কর্মীদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা কিংবা প্রকৃত শিক্ষা ক্রমে হারিয়ে যেতে বসেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে এখানেই অন্যান্য দলের নেতাকর্মীদের পার্থক্য। এরা অত্যন্ত রাজনীতিসচেতন অগ্রপথের যাত্রী। জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভিন্ন গোপন সভার আয়োজন করা হয়। এই নেতাকর্মীদের সভাগুলো সম্ভব হলে প্রায় নিয়মিতভাবেই চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ফলে তাদের মধ্যে গণতান্ত্রিক শিক্ষা ও ধ্যানধারণা এবং মাঠ পর্যায়ে আন্দোলনের প্রশিক্ষণ কৌশলগতভাবে একটি উন্নত পর্যায়ে পৌঁছেছে। তাই রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ কিংবা অনুশীলনের অভাবে অন্যরা যখন চাঁদাবাজি, দখলদারি এবং অবৈধ সিন্ডিকেট গড়ে তোলা নিয়ে ব্যস্ত, তখন উল্লিখিতরা সংগঠন গড়ে তোলা, গণতন্ত্রের অধিক চর্চা করা কিংবা তাদের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি প্রণয়নে মনোনিবেশ করতে পারছে। যত প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়েই বিএনপি এখন দিনাতিপাত করুক না কেন, দলীয় কর্মীদের মধ্যে সংগঠন জোরদার করার লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ ও গণতন্ত্র চর্চার বিষয়টি অত্যন্ত জোরদার করতে হবে। তা না হলে ছাত্রসমাজ ও তরুণ কর্মিবাহিনীকে অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে না এবং শেষ পর্যন্ত দল ও নিজের নেতৃত্বও রক্ষা করতে পারবে না। কারণ শেষ বিচারে রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ, গণতন্ত্রের চর্চা ও সংগঠনকে দুর্নীতি ও সামাজিক অনাচারমুক্ত রাখার মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে। সেখানেই সাফল্য নিহিত রয়েছে। নতুবা ক্ষমতায় গেলেও তা স্থায়ী হবে না। পরিণতি হতে পারে অনেকটা ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের মতোই। </span></span></span></span></span></p> <p> </p>