<p>অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ‘সাংবাদিকদের মুখ বন্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না। সাংবাদিকদের তাদের কাজ করতে দিতে হবে। সম্পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে তারা যাতে রিপোর্ট করতে পারেন সেই সুযোগ রাখতে হবে। যে দুষ্কর্ম আওয়ামী আমলে হয়েছে সেটা যাতে আমাদের আমলে না হয়। এটা একটা জুলাইয়ের স্পিরিট।’</p> <p>শনিবার (১১ জানুয়ারি) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) সাংবাদিক সমিতির আয়োজনে ‘জুলাই বিপ্লব গণমাধ্যমে গণমাধ্যমের ভূমিকা ও পরবর্তী প্রত্যাশা’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি।</p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘আপনার কর্মকাণ্ড নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে আপনার বিরুদ্ধে সাংবাদিক লিখবে। আপনার ওই রিপোর্টারকে মেনে নেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। তা না হলে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়তে পারব না। আপনি যদি শিবির কিংবা ছাত্রদল হন, আপনি দেখবেন, রিপোর্টটি ঠিক কিনা? আপনাকে ‍ওই রিপোর্টকে মানতে হবে। সাংবাদিকতার কাজ হচ্ছে ক্ষমতাসীন লোক বা গোষ্ঠীকে জবাবদিহি করা। তাকে দায়বদ্ধ করা।’</p> <p>বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ইতিহাস লিখে রাখেন। আপনারা অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের একদিন ডাকেন, সাত দিনও সময় লাগবে না। ঘৃণা উৎপাদন করে নয়, ভালো রিসার্চ করে কে পক্ষে বা বিপক্ষে ছিল লিখে রাখতে হবে। যারা ব্রিলিয়ান্ট জার্নালিজম করেছে তাদের কথা লিখে রাখা দরকার। বাঙালি লিখে রাখতে চায় না। আপনারা এ উদ্যোগটি গ্রহণ করেন। ইতিহাসটি লিখে রাখেন।’</p> <p>বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআইবি) মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করতে হবে। মানুষকে একতাবদ্ধ হতে হবে। কিভাবে রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করা যায় এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করতে হবে। কোনোভাবেই ঐক্য ভাঙা যাবে না।’</p> <p>জবি শিবির সভাপতি আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘জুলাই বিপ্লব সাংবাদিক ভাইদের অংশীদারি ছিল বৃহৎ পর্যায়ের। আমরা সাংবাদিক ভাইদের বর্ণনাতীত সহযোগিতা পেয়েছি। বিশেষ করে জবি সাংবাদিক সমিতি ছিল সামনের সারিতে। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন হামলা হয় আহত ভাইদের চিকিৎসার ওষুধ এনে সাহায্য করেছে সাংবাদিকরা। তারা আমাদের তথ্য দিয়ে সাহায্য করেছে।’</p> <p>জাস্টিস ফর জুলাইয়ের আহ্বায়ক সজিবুর রহমান বলেন, ‘অধিকাংশ টিভি, চ্যানেল ও পত্রিকা আছে, তারা সবই প্রায় আওয়ামী লীগকে সহায়তা করেছিল। এমন অবস্থায় আমরা সাংবাদিকতাকে কতটা নিরপেক্ষ দেখতে পাব সেখানে প্রশ্ন থেকে যায়। সাংবাদিকতা রাষ্ট্রের ফোর্থ স্টেট হওয়ার কথা। কিন্তু পূর্ববর্তী সময়ে দেখেছি, সাংবাদিকরা সরকারের আনুগত্য করে টিকে ছিলেন। তবে এখন আশা করি, সাংবাদিকরা জনগণের জন্য কাজ করবেন। এ ছাড়া তারা কোনো সরকারের দাসে পরিণত হবেন না।’</p> <p>জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইস উদ্দিন বলেন, একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ দল-মত নির্বিশেষে হয়েছে। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীন হয়েছি। যুদ্ধের পরই আমরা দেখলাম তৎকালীন সরকার বাকশাল কায়েম করে চারটি বাদে সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দিল। সাংবাদিকতার টুটি চেপে ধরা সেখান থেকেই শুরু। হাসিনা সরকার পিলখানা হত্যাকাণ্ড করার পাশাপাশি সাংবাদিকতারও টুটি চেপে ধরে। যেসব সাংবাদিক সাংবাদিকতার ইজ্জত ভূলুণ্ঠিত করেছেন তাদেরকে এখন বিচার করতে হবে। সাগর-রুনি হত্যার বিচার এই বাংলার মাটিতে হয়নি। মজলুম সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান বিচারের প্রতি সম্মান দেখাতে গিয়ে কুষ্টিয়ায় আদালতে হায়েনাদের আক্রমণের শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া আরো সাংবাদিক নির্যাতিত হয়েছেন।</p> <p>উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, জুলাইতে ন্যাক্কারজনক সাংবাদিকতা হয়েছে। সেটার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় সেই দিকে সাংবাদিকদেরই খেয়াল রাখতে হবে।</p> <p>জবি সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহতাব হোসেন লিমনের সঞ্চালনায় সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ইমরান হুসাইন। এ ছাড়া জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ভূমিকা রাখা ছাত্রশিবির, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা বক্তব্য দেন।</p>