<p>রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেপরোয়া হয়ে উঠছে ডাকাতচক্রের সদস্যরা। তাদের হাতে অস্ত্র থাকায় কোনো প্রতিবাদ করার উপায় থাকে না ভুক্তভোগীদের। এই অবস্থায় কুমিল্লা শহরের আশপাশের লোকজন আতঙ্কে রয়েছে।</p> <p>বেসরকারি কর্মকর্তা আজাদ হোসেন বেতনের টাকা তুলে রাত ১০টার দিকে বাড়ি যাচ্ছিলেন। এমন সময় শহরের রানীরদীঘির পাড় এলাকায় ছিনতাইকারীচক্রের কবলে পড়েন তিনি। ছিনতাইকারী দুজনের হাতে দেশীয় অস্ত্র এবং একজনের হাতে পিস্তল ছিল। আজাদের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে ৪০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় চক্রটি। </p> <p>পরদিন সকালে আজাদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এমন ভয়ংকর অভিজ্ঞতা এই প্রথম। কোনো কিছু করার আগে প্রাণের ভয়ে বেতনের পুরো টাকাই দিয়ে দিই।’ </p> <p>শুধু আজাদই নয়, কুমিল্লায় প্রায়ই এমন ভয়ংকর ঘটনা ঘটছে। রাত বাড়লেই শহরের পথে বা অলিগলিতে পথচারী ও সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অন্ধকার বা নিরিবিলিতে একা চলাফেরা করা যেন বিপদ! ছিনতাইকারীচক্র মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে সর্বস্ব লুট করে নেয়। বাড়তি ঝামেলা এড়াতে এসব ঘটনায় অনেকেই থানায় অভিযোগ করে না। কোনো কোনো ঘটনায় অভিযোগ করা হলেও লুট হওয়া মালামাল ফেরত পাওয়া যায় না।</p> <p>পুলিশ বলছে, শহরে ছিনতাই চক্রের দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে। এই চক্রের সদস্যদের ধরতে অভিযান চলছে। এদের মধ্যে কয়েকজনকে আটকও করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।</p> <p>পুরো শহর ঘুরে দেখা যায়, কান্দিরপাড় এলাকার টাউন হলের সামনে, লিবার্টি মোড়, পুবালি চত্বর, রাণীর দিঘির পাড়, মহিলা কলেজ রোড, চকবাজার শাপলা মার্কেট, তেলিকোনা চৌমুহনী, গোবিন্দ পুকুর পাড়, দক্ষিণ চর্থা, রাণীর বাজার, ঠাকুরপাড়া, ছোটরা, রেইসকোর্স ধানমন্ডি সড়ক এলাকা, টমছম ব্রিজ থেকে বাখরাবাদ সড়কের কয়েকটি এলাকা, কালিয়াজুড়ি পাক্কার মাথা, সংরাইশ কালিবাড়ি মোড়, টিক্কারচর, তালকুপুর পাড়, শাসনগাছা ও আশপাশের এলাকাসহ শহরের অন্তত ৫০টি স্পটে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে অহরহ। এসব এলাকায় বেশ কিছু ছিনতাই চক্রের সদস্য সক্রিয়। প্রতিদিনই কোনো না কোনো স্পটে ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। এতে আহতও হচ্ছেন অনেক পথচারী। এসব স্পটগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ ঘটনা ঘটছে টাউন হল ও আশপাশের এলাকায়। চক্রের সদস্যরা মানুষের সঙ্গে মিশে সুযোগ পেলেই অস্ত্র ঠেকিয়ে পথচারীদের কাছ থেকে টাকা, গহনা, মোবাইল ফোনসহ মূল্যবানসামগ্রী লুট করে নিয়ে যায়।</p> <p>ছিনতাইয়ের শিকার একাধিক ব্যক্তি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'প্রথম মাথায় বা পিঠে অস্ত্র ঠেকিয়ে বলে কোনো শব্দ করবি না, শব্দ করলেই শেষ যা যা আছে বের কর। তখন কিছু করার বা চিৎকার করার সাহস থাকে না। না দিতে জোড়াজোড়ি করলে চক্রের অন্য সদস্য কিলঘুষি মারতে থাকে। নিরুপায় হয়ে সব কিছু দিতে বাধ্য হই। ছিনতাই চক্রের বড় একটি অংশ কান্দিরপাড়, টাউনহল ও আশপাশের এলাকায় ঘুরাঘুরি করে। এই চক্রের সদস্যরা প্রকাশে অস্ত্র নিয়ে শহরে ঘুরাফেরা করে, কেউ কিছু বললে মারধর করার ঘটনাও ঘটে।' </p> <p>সম্প্রতি রাতে পূবালী চত্বর এলাকায় ছিনতাই করার সময় অস্ত্রসহ দুই ছিনতাইকারীকে আটক করে স্থানীয়রা। এই ঘটনার কিছুদিন পূর্বে কান্দিরপাড় এলাকায় পথচারী নারীর ব্যাগ থেকে টাকা ছিনতাই করতে গিয়ে জনতার হাতে মারধরের শিকার হয় চক্রের এক সদস্য। পরে তাকে পুলিশে দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে গত দুই মাসে কুমিল্লা শহরে কয়েকশ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার বেশির ভাগই থানায় কোনো অভিযোগ করা হয়নি।</p> <p>কুমিল্লায় ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানার তদন্ত কর্মকর্তা শিবেন বিশ্বাস বলেন, সম্প্রতি কুমিল্লা শহরে ছিনতাই বেড়েছে। ওদের সঙ্গে ছোটোখাটো অস্ত্র থাকে, কেউ ধরতে গেলেই আহত হওয়ার শঙ্কা থাকে। ছিনতাইকারীদের বেশিরভাগ নেশাগ্রস্ত। নেশা অবস্থায় ওরা বেশ উগ্র থাকে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেপরোয়া হয়ে উঠে তারা। তবে আমাদের অভিযান নিয়মিত চলছে। বৃহস্পতিবার সকালে কুমিল্লা টাউনহল এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।</p> <p>সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ নাজির আহমেদ খাঁন বলেন, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ সবসময় চেষ্টা করছে। শহরে পুলিশের টহল এবং পেট্রল টিম বাড়ানো হয়েছে। কোথাও যাতে সাধারণ মানুষ ছিনতাইয়ের শিকার না হয়। থানা, ফাঁড়ি ও ডিবি পুলিশের টিম কাজ করছে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্পটগুলোতে পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। যারা ছিনতাই করে তাদের কাছে ধারালো অস্ত্র থাকতে পারে। এ ধরনের কোনো ঘটনার তথ্য পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।</p>