<p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="letter-spacing:-.3pt">মৃত্যু থেকে খ্রিস্টের পুনরুত্থান তাঁর শাশ্বত জীবনের মৃত্যুহীন উচ্চারণ। যুগে যুগে এই অমিয় বাণী খ্রিস্টের অনুসারীদের প্রেরণা ও আশার উৎস হয়ে রয়েছে। খ্রিস্টের পুনরুত্থানই আমাদের কেন্দ্রীয় বিশ্বাস, আমাদের সব বিশ্বাস-সূত্র তারই প্রতিধ্বনি। খ্রিস্টের পুনরুত্থান খ্রিস্টানদের একমাত্র ঈশতাত্ত্বিক নির্ভরবিন্দু ও প্রচারের সারকথা। সাধু পৌলের কথায় </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="letter-spacing:-.3pt">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="letter-spacing:-.3pt">খ্রিস্ট যদি উত্থাপিত না হইয়া থাকেন, তাহা হইলে তো আমাদের প্রচারও বৃথা, তোমাদের বিশ্বাসও বৃথা (১ করিন্থীয় ১৫:১৪)।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="letter-spacing:-.3pt">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="letter-spacing:-.3pt"> কিন্তু আমাদের বুঝতে হবে খ্রিস্টের পুনরুত্থান কিভাবে এলো। পুুনরুত্থান তাঁর ক্রুশীয় মৃত্যুর দান। ক্রুশের নাটকে আপাত পরাজিত খ্রিস্ট মৃত মানুষ, পুনরুত্থানের গৌরবে তিনি বিজয়ী বীর, শাশ্বত জীবন্ত ঈশ্বরপুত্র। তিনি কেবল একজন মহামানবই নন। ঈশ্বরের অবতাররূপে তিনি মানুষের ইতিহাসে ও অভিজ্ঞতার মধ্যে প্রবেশ করেছিলেন। ঈশ্বর তাঁর মধ্য দিয়ে মানুষের জন্য স্বর্গীয় প্রেমকে চূড়ান্তভাবে মূর্ত করেছেন। তাঁর অলৌকিক জন্ম, অপমানজনক মৃত্যু ও আলোকদীপ্ত পুনরুত্থানের সব ঘটনার মধ্য দিয়ে তিনি মানুষের পাপের প্রায়শ্চিত্ত সাধন করেছেন। মানুষ তার নিজের কোনো সৎকর্ম, জ্ঞান বা সাধনার বলে ঈশ্বরের কাছে ধার্মিক হতে পারে না। </span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="letter-spacing:-.3pt"><img alt="প্রেরণা " height="172" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/03.March/31-03-2024/mk/kk-4-2024-03-31-03a.jpg" style="float:left" width="285" />সৎকর্ম ইত্যাদি ঈশ্বরের সঙ্গে তার সঠিক সম্পর্কে থাকার ফল, তার কারণ নয়। আমাদের সৎকর্মের সঙ্গে থাকে আমাদের অহংকার। আর অহংকার হলো বড় পাপ এবং অন্য অনেক পাপের মূল। তাই একমাত্র বিশ্বাসে আত্মসমর্পণের দ্বারাই মানুষ ঈশ্বরের দয়া ও অনুগ্রহে তাঁর সঙ্গে সঠিক সম্পর্কে বাস করতে পারে, যার ফলে তার হৃদয়ের হয় আমূল পরিবর্তন এবং মানুষ অন্য মানুষের সঙ্গেও সুসম্পর্কে বাস করতে পারে। ঈশ্বরে বিশ্বাস ও আত্মসমর্পণই চাবিকাঠি, কারণ সৎকর্ম, সাধনা ও জ্ঞান যে সবার সাধ্যের মধ্যে থাকে না! নিষ্পাপ ঈশ-পুত্র খ্রিস্টের আত্মদানেই ঈশ্বরের অসীম প্রেম প্রকাশিত হয়েছে। ত্যাগ ও প্রেমের গুরু খ্রিস্ট ক্রুশের কণ্টকাকীর্ণ পথেই পুনরুত্থানের গৌরবে উদ্ভাসিত হলেন। অনেকের কাছে তা দুর্বোধ্য বটে। প্রমাণের অন্বেষী যিহুদিদের কাছে তা ছিল বিঘ্নের বিষয়, আর জ্ঞানের পূজারি গ্রিকদের কাছে তা ছিল মূর্খতা। কিন্তু তার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে ঈশ্বরের জ্ঞান। যিনি শূন্য থেকে বিশ্বের সব কিছুই সৃষ্টি করেছেন, তাঁর পক্ষে কোনো কিছু কি অসাধ্য! </span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="letter-spacing:-.3pt">পাপে পতিত মানুষের প্রতি নিজের অনুগ্রহ ও প্রসন্নতায় ঈশ-মানব খ্রিস্ট মৃত্যুর রাজ্যে প্রবেশ করে মৃত্যুকে জয় করলেন। মানুষের পরিত্রাণের জন্য ঈশ্বরের প্রেমের কারণেই তিনি তাঁর বাধ্য ছিলেন। </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="letter-spacing:-.3pt">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="letter-spacing:-.3pt">পিতা আমাকে এই জন্য প্রেম করেন, কারণ আমি আপন প্রাণ সমর্পণ করি, যেন পুনরায় তাহা গ্রহণ করি। কেহ আমা হইতে তাহা হরণ না, বরং আমি আপনা হইতেই তাহা সমর্পণ করি। তাহা সমর্পণ করিতে আমার ক্ষমতা আছে এবং পুনরায় তাহা গ্রহণ করিতেও আমার ক্ষমতা আছে; এই আদেশ আমি আপন পিতা হইতে পাইয়াছি (যোহন ১০:১৭-১৮)।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="letter-spacing:-.3pt">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="letter-spacing:-.3pt"> যেহেতু খ্রিস্ট ছিলেন নিষ্পাপ, তাই মানুষের পাপের প্রায়শ্চিত্তের জন্য তাঁর মৃত্যুই ছিল একমাত্র ঈশ্বর নিরূপিত বিধান, পাপের প্রায়শ্চিত্তের জন্য পবিত্র ঈশ্বরের কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য যজ্ঞ। </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="letter-spacing:-.3pt">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="letter-spacing:-.3pt">তথাপি তাহাকে চূর্ণ করিতে সদাপ্রভুরই মনোরথ ছিল; তিনি তাহাকে যাতনাগ্রস্ত করিলেন...(যিশাইয় ৫৩:১০)।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="letter-spacing:-.3pt">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="letter-spacing:-.3pt"> পাপের কোনো অভিজ্ঞতা যাঁর মধ্যে ছিল না, তাঁকেই ঈশ্বর মানুষের পাপের জন্য যজ্ঞরূপে হত হতে দিলেন। </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="letter-spacing:-.3pt">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="letter-spacing:-.3pt">যিনি পাপ জানেন নাই, তাঁহাকে তিনি আমাদের পক্ষে পাপস্বরূপ করিলেন, যেন আমরা তাঁহাতে ঈশ্বরের ধার্ম্মিকতাস্বরূপ হই (২ করিন্থীয় ৫:২১)।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="letter-spacing:-.3pt">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="letter-spacing:-.3pt"> ঈশ্বর মারা যান না। মানবরূপে তিনি পৃথিবীতে এলেন, যেন তিনি মৃত্যুবরণ করতে পারেন; লক্ষ্য এই যেন তিনি তাঁর সে মৃত্যুর মাধ্যমে মানুষের পাপের দণ্ড বহন করে একাধারে ঈশ্বরের পবিত্রতার মান পূরণ করতে পারেন আর সঙ্গে সঙ্গে পাপী মানুষের প্রতি তাঁর প্রেমও দেখাতে পারেন। পাপের দণ্ড যদি মানুষকে দেওয়া হয়, তাহলে তার গতি হবে নরক। কিন্তু প্রেমময় ঈশ্বর সে দণ্ড বা শাস্তি বর্তিয়েছেন তাঁর পুত্রের ওপর। ক্রুশীয় অপমানজনক ঘৃণ্য মৃত্যু মানুষের পাপের ভয়াবহ বাস্তবতাকে তুলে ধরে। তাই পুনরুত্থান তার প্রমাণ যে, ওই দান ও ত্যাগের কোনো ক্ষয় নেই। খ্রিস্টের পুনরুত্থানের রহস্যকে বুঝতে হলে আমাদের প্রথমে বুঝতে হবে ঈশ্বরের চরিত্রকে : জগতে খ্রিস্টের আগমন, তাঁর সাধিত সব অলৌকিক কাজ, তাঁর পুনরুত্থান</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="letter-spacing:-.3pt">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="letter-spacing:-.3pt">সব কিছুই হয়েছে ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার শক্তিতে। পবিত্র আত্মাই ঈশ্বর। নিরাকার ঈশ্বর একজনই, কিন্তু তিনি পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মারূপে তিন ব্যক্তিসত্তায় বিরাজমান, যেন সৃষ্টির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক আমাদের কাছে অর্থবহ ও বোধগম্য হয়। তিনি তো মানষের মতো নন।</span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="letter-spacing:-.3pt">পিতার প্রেম পুত্রে প্রকাশিত হয়েছে এবং সেই প্রকাশের ধারাবাহিকতা ও তার ফল পবিত্র আত্মার কাজে নতুন জীবন ও নতুন সৃষ্টির মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়। খ্রিস্টের পুনরুত্থানে বিশ্বাসের অর্থ হলো পবিত্র আত্মায় জীবনকে নতুন করার আহ্বানে সাড়া দেওয়া। পাপের পুরনো ও </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="letter-spacing:-.3pt">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="letter-spacing:-.3pt">আপনারে লয়ে বিব্রত</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="letter-spacing:-.3pt">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="letter-spacing:-.3pt"> থাকার জীবনকে কবর দিয়ে জগৎ ও জীবনকে নতুনভাবে গ্রহণ করা। এর জন্য প্রথমে চাই এ জগতে থাকাকালে বিশ্বাসীর প্রকৃত মানবীয় মূল্যবোধ ও চেতনার পুনরুত্থান, পুনর্জন্ম। পাপের ভয়াবহ বাস্তবতা বুঝে খ্রিস্টের আত্মত্যাগকে মেনে নিতে না পারলে তাঁর পুনরুত্থানের আনন্দ লৌকিকতায়ই সীমাবদ্ধ থেকে যায়। খ্রিস্টের মৃত্যুর সঙ্গে যদি আমাদের লোভ ও স্বার্থ চিন্তার মৃত্যু না হয়, তাহলে তাঁর পুনরুত্থান আমাদের কোনো নতুনত্ব এনে দিতে পারে না। সব জরাজীর্ণতা ও সংকীর্ণতাকে বিসর্জন দিয়ে আমরা প্রকৃত মনুষ্যত্বকে লাভ করতে পারি। মর্ত্যের মানুষের মধ্যে পরমেশ্বরের সেই শাশ্বত বায়ু বা প্রাণবায়ুই মানুষকে সজীব করতে পারে। মানুষের সব দুঃখে-কষ্টে সর্বপ্রথম দুঃখ পান ঈশ্বর। আর ঈশ্বর চান আমরা যেন অন্যের দঃখ-কষ্টে দুঃখ পাই এবং তাদের প্রতি যথাসাধ্য সহমর্মিতার কাজ করি। </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="letter-spacing:-.3pt">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="letter-spacing:-.3pt">যাহারা আনন্দ করে, তাহাদের সহিত আনন্দ কর; যাহারা রোদন করে তাহাদের সহিত রোদন কর</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="letter-spacing:-.3pt">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="letter-spacing:-.3pt">(রোমীয় ১২:১৫-এ বলেছেন প্রেরিত পৌল)।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="letter-spacing:-.3pt">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="letter-spacing:-.3pt"> ঈশ্বরের সেই বাণী যেন আমরা শুনি। খ্রিস্ট ছিলেন অন্যের জন্য মানুষ, সব মানুষের জন্য মানুষ। আমাদের জন্য পুনরুত্থিত খ্রিস্ট সেই চিরায়ত আহবানই দেন।</span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="letter-spacing:-.3pt"> লেখক<b> : </b>যাজক, খ্রিস্টীয় ঈশতত্ত্বের শিক্ষক</span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p> </p>