ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ এখন ট্রাম্পের হাতে

  • ড. ফরিদুল আলম
শেয়ার
ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ এখন ট্রাম্পের হাতে

তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসা যুদ্ধের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে আসা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধের অবসান চাইছে। পুরো বিষয়টির জন্য দায় চাপানো হচ্ছে ইউক্রেনের বর্তমান নেতৃত্বের ওপর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইউরোপের দেশগুলোও এই যুদ্ধে সহায়তা দিয়েছে, যদিও তা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় কম, তবে তারা এখনো ইউক্রেন এবং এই যুদ্ধের বৈধতার পক্ষে তাদের তৎপরতা চালাচ্ছে। দীর্ঘ সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মধ্যে কৌশলগত স্বার্থের জায়গায় বড় ধরনের চিড় ধরার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

যুদ্ধ বন্ধের জন্য যে শান্তিপ্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে, সেটিও একতরফাভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রশাসনের উদ্যোগে পরিচালনা করা হচ্ছে। ইউরোপের কাছ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কিছু জানার প্রয়োজন পর্যন্ত উপলব্ধি করছে না যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বাগবিতণ্ডার পর যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে চলমান সহায়তা যখন আর চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছিলেন ট্রাম্প, এর পরপরই ইউরোপীয় দেশগুলো তাত্ক্ষণিকভাবে একত্র হয়ে ২২৬ বিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তাদের পক্ষ থেকে ইউক্রেনকে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদানের কথা বলা হয়। তারাও যুদ্ধ বন্ধ চায়, তবে সেটি যেন উভয় পক্ষের জন্য সম্মানজনক হয় এবং কোনোভাবেই ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে না হয় সেটির নিশ্চয়তা চায়।
ইউরোপের এ ধরনের তৎপরতা যে ট্রাম্প ভালোভাবে নেননি, সেটির জানান দিতে বিলম্ব করেননি তিনি। প্রথমে ইউক্রেনে সামরিক এবং পরে গোয়েন্দা সহায়তা বন্ধের ঘোষণা দেন। এর মাধ্যমে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হলো যে এই যুদ্ধে তিনি ইউক্রেনের পক্ষ ত্যাগ করেছেন।

ভীষণ এক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এখন ইউক্রেন এবং গোটা ইউরোপ।

পুরো ঘটনায় এখন পর্যন্ত দৃশ্যমানভাবে লাভবান পক্ষ হচ্ছে রাশিয়া। ইউক্রেন নিয়ে ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এ ধরনের টানাপড়েনের মাঝেই গেল ৮ মার্চ ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে বড় ধরনের ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ এখন ট্রাম্পের হাতেআঘাত করে বসে রাশিয়া, যেখানে বেশ কিছু নিরীহ মানুষ নিহত হওয়া ছাড়াও অবকাঠামোর ব্যাপক ধ্বংস সাধিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নেওয়া যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও ইউরোপের পক্ষ থেকে গৃহীত ইউক্রেনে শান্তিরক্ষী মোতায়েনের পরিকল্পনাকে প্রত্যাখ্যান করেছে রাশিয়া। অবস্থাদৃষ্টে এটিই বুঝতে পারা যাচ্ছে যে তারা এ বিষয়ে ইউরোপের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনায়ই যেতে সম্মত নয়, বরং এই যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ট্রাম্পের এই তৎপরতার মধ্য দিয়ে আপাতদৃষ্টিতে এই যুদ্ধের ফলাফল নির্ণীত হয়ে গেছে, আর তা হচ্ছে এই যুদ্ধে জয়ী হয়েছে রাশিয়া।
পরাজিত পক্ষ কেবল ইউক্রেন নয়, ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রও। তবে সেটি কি অনুধাবন করতে পারছেন ট্রাম্প?

আসলে এই যুদ্ধ শুরুর আগেই এমন ধরনের ফলাফল লিখিত হয়ে গিয়েছিল। মার্কিন প্রশাসন এত ব্যয় করে এই যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে যদি রাশিয়ার বিরুদ্ধে জয়ী হওয়ার চিন্তা করে থাকে, তবে সেটি মস্ত বড় একটি ভুল ছিল। এখানে বাইডেনের পরিকল্পনা এবং এর যথার্থতা নিয়ে আলোচনা করার আর কোনো অবকাশ নেই। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্র্যাট তথা বাইডেন প্রশাসন বিদায়ের পর ট্রাম্পের নেতৃত্বে রিপাবলিকান প্রশাসন এত দিন ধরে চলে আসা মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে এক বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে, আর তা হচ্ছে তারা একচেটিয়াভাবে তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থকে সর্বাগ্রে নিশ্চিত করতে চাইছে। এত দিন ধরে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইউরোপের সঙ্গে যেসব বিষয় নিয়ে অভিন্ন স্বার্থ জড়িত ছিল, সে জায়গা থেকে তারা অনেকটাই সরে গিয়ে বর্তমানে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ইউক্রেনের বিরল খনিজ পদার্থে নিজেদের ভাগ বসানোর কাজে। এর মধ্য দিয়ে রাশিয়ার শক্তি বৃদ্ধি এবং ভবিষ্যত্ হুমকির বিষয়টি তিনি কিভাবে মোকাবেলা করবেন, সেসব এখনো স্পষ্ট নয়। তবে যে বিষয়টি স্পষ্ট, তা হচ্ছে ইউরোপের সঙ্গে তাদের দূরত্ব বাড়তে যাচ্ছে এবং আগামী দিনগুলোতে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের একত্রে চলার নীতি অনেকটাই শ্লথ হয়ে যাবে। এ বিষয়ে এরই মধ্যে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ তাঁর এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইউরোপের দূরত্ব বৃদ্ধি পেতে যাচ্ছে।

এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কোনো অভিপ্রায় ট্রাম্পের রয়েছেএমন মনে হচ্ছে না, বরং বিষয়টি তাঁর সমন্বিত পরিকল্পনার অংশ বলেই মনে হচ্ছে। ট্রাম্প এর আগের মেয়াদে (২০১৬-২০২০) যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন বহুপক্ষীয় সংস্থাগুলোতে থাকার বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অনেক বেশি মূল্য চোকাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করে এলেও এবার নির্বাচিত হওয়ার আগেই নির্বাচনী প্রচারণাগুলোতে স্পষ্টভাবে ন্যাটো থেকে বের হয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিলেন। আর এ ধরনের প্রচ্ছন্ন হুমকির একটি বড় কারণ হলো ন্যাটোতে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া সামরিক ও আর্থিক সহায়তা ইউরোপীয় দেশগুলোর তুলনায় দ্বিগুণ এবং এর মধ্য দিয়ে মূলত ইউরোপীয় দেশগুলোই যুক্তরাষ্ট্রের অবদানের মধ্য দিয়ে সুরক্ষা পেয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য লাভের একমাত্র জায়গা হচ্ছে এই সামরিক সংস্থার আর্টিকল ৫, যেখানে এটি নিশ্চিত করা হয়েছে যে ন্যাটোভুক্ত কোনো দেশ আক্রান্ত হলে পুরো সংস্থা তার প্রতিরক্ষায় সমন্বিতভাবে কাজ করবে। যুক্তরাষ্ট্রের হয়তো এই বোধোদয় হচ্ছে যে ১৯৪৯ সালে ন্যাটো প্রতিষ্ঠার যে প্রেক্ষাপট ছিল, সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পর বর্তমান সময় পর্যন্ত মার্কিন নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিঘ্ন সৃষ্টি করার মতো কোনো রাষ্ট্র এখন পর্যন্ত নেই। সে ক্ষেত্রে তারা কেনই বা তাদের অর্থে ইউরোপকে সুরক্ষা দিয়ে যাবে? এমন প্রশ্ন থেকেই ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যগুলোকে তাদের জিডিপির ৫ শতাংশ ন্যাটোতে বরাদ্দ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের এখন পর্যন্ত এই সংস্থায় থেকে যাওয়ার প্রাসঙ্গিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। ট্রাম্প নিজ দেশের নিরাপত্তা নিয়ে যতটা আত্মবিশ্বাস ধারণ করেন, ইউরোপীয় দেশগুলো এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনকে সমন্বিত নিরাপত্তা নিশ্চিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে।

পরিস্থিতি বলে দিচ্ছে বৈশ্বিক বিষয়ে ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে ইউরোপের দৃষ্টিভঙ্গি ঠিক মিলছে না। ট্রাম্পের কথার যৌক্তিকতা রয়েছে। তিনি সম্প্রতি এটিও বলেছেন, সব ইউরোপীয় দেশকে যুক্তরাষ্ট্র যে সহায়তা করে, এর চেয়েও বেশি সহায়তা করতে হয়েছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনকে, যার ফলাফল শূন্য। তিনি এ ধরনের যুদ্ধ চালাতে চাইছেন না। সে ক্ষেত্রে রাশিয়ার যে আগ্রাসী মনোভাব, সেটিকে কি তবে তিনি প্রশ্রয় দিচ্ছেন? এই যুদ্ধে রাশিয়ার বিরুদ্ধে গোটা পশ্চিমা বিশ্বের সম্পৃক্ততা থাকা সত্ত্বেও রাশিয়া ইউক্রেনের ২০ শতাংশ ভূমির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে, যা জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের বাগবিতণ্ডার পর আরো সম্প্রসারিত হচ্ছে। তবে কি তিনি নীরবে রাশিয়াকে ইউক্রেনের ভূমি দখলে সম্মতি দিচ্ছেন? এই জায়গাটিতে সম্প্রতি নীরবতা ভঙ্গ করেছেন ট্রাম্প। তিনি জানিয়েছেন যে শান্তিচুক্তি না হওয়া পর্যন্ত রাশিয়া যদি তার আধিপত্য ধরে রাখে, এ ক্ষেত্রে রাশিয়ার বিরুদ্ধেও নতুন করে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি তিনি বিবেচনা করছেন।

এরই মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ একটি সুবিধাজনক স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের দুই দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী সপ্তাহে আরেকটি বৈঠকের মধ্য দিয়ে যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিয়ে একটি ধারণায় আসা সম্ভব হতে পারে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে আসার পর ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তাঁদের কাছ থেকে নতুন করে আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি পেলেও তিনি এবং তাঁর ইউরোপীয় মিত্ররা এটি নিশ্চিত জানেন যে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়া রাশিয়ার বিরুদ্ধে তাঁরা কিছুই করতে পারবেন না। তা ছাড়া শুরু থেকেই এই যুদ্ধে রাশিয়া অনেকটা সুবিধাজনক জায়গায় রয়েছে। এমন বাস্তবতায় যুক্তরাষ্ট্রের ওপর সব রাগ, ক্ষোভ ভুলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং যেকোনো শর্তে এই যুদ্ধ বন্ধে আবার আলোচনায় বসতে আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, সব পক্ষই এখন ট্রাম্পকে গুরুত্ব দিচ্ছে।

ট্রাম্প এখন সবচেয়ে সুবিধাজনক জায়গায় রয়েছেন এবং এই যুদ্ধ বন্ধে তাঁর যেকোনো উদ্যোগ ইউরোপের মেনে নেওয়া ছাড়া পথ নেই। এরই মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলেনস্কির সঙ্গে ফের আলোচনায় বসার বিষয়ে অনাগ্রহের কথা জানানো ছাড়াও তাঁকে তাঁর পদ থেকে সরে যাওয়ার বার্তা দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি এখন এমন যে যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছার বাস্তবায়ন করতে গিয়ে জেলেনস্কি যদি সত্বর দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। সে ক্ষেত্রে রাশিয়ার সঙ্গে বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে যে বিষয়টি সামনে চলে আসতে পারে, তা হচ্ছে ইউক্রেনের খনিজ পদার্থে যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে তারা, বিনিময়ে দনবাস অঞ্চলে রাশিয়ার আধিপত্যের স্বীকৃতি মিলতে পারে। সব শেষে ইউক্রনের জন্য এই যুদ্ধ একটি বড় ট্র্যাজেডি!

 

লেখক : অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

mfulka@yahoo.com 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ক্রীড়াঙ্গনে বিরোধিতা ও বিভাজন

    ইকরামউজ্জমান
শেয়ার
ক্রীড়াঙ্গনে বিরোধিতা ও বিভাজন

ক্রীড়াঙ্গনে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর স্বার্থসংশ্লিষ্ট খেলা অহরহ চলছে। অবস্থাটা এখন অনেকটা গা সওয়া হয়ে গেছে। সবাই ইঁদুর দৌড়ে ব্যস্ত নিজে এবং নিজেদের নিয়ে। পানি ঘোলা করে মাছ শিকারের প্রাণান্তকর চেষ্টা।

অভিযোগ উত্থাপন করলে তো হবে নাপ্রমাণ তো করতে হবে। নিজ এবং গোষ্ঠীর স্বার্থের জন্য ক্রীড়াঙ্গনকে অস্থির এবং অশান্ত করে তুলতে বিবেকে বাধে না। ক্রীড়াঙ্গনে সমবেত আকাঙ্ক্ষাগুলো হালে আর পানি পাচ্ছে না। কোচের নিয়োগ বাতিল চান কিছু খেলোয়াড়।
তাঁদের হুমকি, দাবি পূরণ না হলে মাঠে নামবেন না। কোচ-খেলোয়াড় এবং সংগঠক কারো কি অধিকার আছে খেলাকে জিম্মি করার?

ক্রীড়াঙ্গনে বাড়ছে সস্তার খেলা। প্রতিবাদের ভাষা হয়ে পড়েছে নেতিবাচক এবং কলুষিত, যেটি ক্রীড়াঙ্গনের জন্য অশুভ। মুক্তচিন্তায় বিশ্বাসী মানুষ যেখানে বাড়া উচিত, সেখানে মুক্তচিন্তায় অবিশ্বাসীর সংখ্যা বাড়ছে, উপরন্তু স্বার্থ মগ্ন।

খেলার চেতনা বারবার ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। ক্রীড়াঙ্গনে বিরোধিতা আর বিভাজনের মিছিল ক্রমেই বড় হচ্ছে।

দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার জন্য যাঁরা একসময় শতভাগ সামর্থ্য উজাড় করে দিয়ে মাঠে লড়েছেন দেশের হয়েএখন সেখানে অন্যরা খেলছেন আর তাই প্রকাশ্যে নেতিবাচক চিন্তার প্রতিফলন, এটি কোন ধরনের মানসিকতা। কোনো খেলায় কেউ তো সব সময়ের জন্য অপরিহার্য নন। পুরনোর পরিবর্তে নতুনরা দায়িত্ব নেবেনএটি স্বাভাবিক।

কে কাদের ব্যবহার করেছেন। কে কিভাবে ব্যবহৃত হয়েছেন। কিভাবে মাথায় তুলে সময় গড়াতে আবার ঠিকই মাটিতে নামিয়ে এনে করুণা করা হয়েছে। মিডিয়ার একটি অংশ কিভাবে ফ্রাই প্যানে ঘি ঢেলেছে। কে কী বলেছেন আর কে কী বলেননি, তা সত্ত্বেও মিডিয়ায় উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে এসব গবেষণা করে লাভ নেই।

কোনো প্রতিষ্ঠান তো নীতিহীনতা, অরাজকতা এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের অযৌক্তিক দাবির কাছে নত হতে পারে না। স্বয়ং বাফুফের সভাপতি নারী খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলেছেন, বুঝিয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে আলোচনার দরজা খোলা রেখেছেন। বাফুফে পুরো বিষয়টিকে ধৈর্যের সঙ্গে প্রফেশনালি হ্যান্ডল করেছে। স্বাক্ষর রেখেছে অভিভাবকসুলভ আচরণের।

ক্রীড়াঙ্গনে বিরোধিতা ও বিভাজনজীবন আর সময় কারো জন্য আটকে থাকবে না। ব্রিটিশ কোচ পিটার বাটলার নতুন খেলোয়াড় নিয়ে ২৩ সদস্যের স্কোয়াড গঠন করেছেন। দলের অধিনায়ক আফঈদা খন্দকার। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে দুটি ফ্রেন্ডলি ম্যাচ। র্যাংকিংয়ে ১৬ ধাপ এগিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটি। সংযুক্ত আরব আমিরাত দলটি বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলার আগে আজারবাইজান ও বাহরাইনের বিপক্ষে গোছালো ফুটবল খেলে জিতেছে। দুটি ফ্রেন্ডলি ম্যাচেই ১-৩ গোলে পরাজিত হয়েছে বাংলাদেশ, যেটি ইতিবাচক প্রাপ্তি গোল খাওয়ার পর বাংলাদেশ দল হাল ছেড়ে দেয়নি। শক্তিশালী দলের বিপক্ষে লড়েছে আর উভয় ম্যাচে একটি করে গোল পরিশোধ করেছে। এটি ইতিবাচক প্রাপ্তি। প্রতিকূল পরিবেশেও লড়াই মাঠে দান ছেড়ে না দেওয়াটা অবশ্যই আশাব্যঞ্জক।

বাংলাদেশ ১-৩ গোলে পরাজিত হয়েছে। এতে মন খারাপ করার কিছুই নেই। নতুন দলটি মাত্র তিন সপ্তাহ প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমে সাধ্যমতো ভালো ফুটবল খেলার চেষ্টা করেছে বলেই গোলের ব্যবধান কম হয়েছে। যাঁরা বলছেন দুটি খেলায়ই পরাজয়! তাঁদের নিশ্চয়ই জানা আছে বিগত দিনগুলোতে যখনই বাংলাদেশ নারী দল দক্ষিণ এশিয়ার বাইরে আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট নতুবা ফ্রেন্ডলি ম্যাচে অংশ নিয়েছে, বিভিন্ন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে কতগুলো করে বল জালে ঢুকেছে। তথাকথিত আবেগের বশবর্তী হয়ে বিরোধিতা, স্পর্শকাতরতা এবং নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনা থেকে ক্রীড়াঙ্গন মুক্ত হোক। দিনশেষে সব হিসাবে কিন্তু আমাদের দেশটির নাম উচ্চারিত হয়। আমরা সবাই চেয়েছি বলেই নতুন মেয়েদের নিয়ে দল গঠনে বাধ্য হয়েছে বাফুফেএই ক্ষেত্রে দলটি সাধ্য অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করুক। অভিজ্ঞতা অর্জন করুক। বাফুফে দল গঠন করেছে, দল পাঠিয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে, এটি তো নারী ফুটবলের স্বার্থে। সবার উচিত বাঁকা চোখে নয়, আশাব্যঞ্জক মন নিয়ে নারী ফুটবলের নতুন সাহসী উদ্যোগকে স্বাগত জানানো। ঈদের ছুটির পর দল পুনর্গঠনের কাজটি ভালোভাবেই শুরু হবে। কেননা আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই নারী জাতীয় দলকে গুরুত্বপূর্ণ কম্পিটিশনে নামতে হবে। তত দিনে দৃশ্যপটে যথেষ্ট পরিবর্তন লক্ষণীয় হবে বলে মনে করি। কোচের অপশন বাড়বে। স্কোয়াড নির্বাচনে কোচই সর্বেসর্বা। তাঁর কাজে হস্তক্ষেপ করা হয় না। ফিটনেস, শৃৃঙ্খলা এবং দলের চাহিদা অনুযায়ী কার্যকর খেলোয়াড় নিয়েই স্কোয়াড গঠিত হয়। এখানে বিদ্বেষ, অভিমান, ক্ষোভ কোনো কিছুরই স্থান হওয়ার কথা নয়। ব্রিটিশ কোচ আশা করছেন, আগামী অ্যাসাইনমেন্টের আগে দলটিকে একটি ম্যাপে আনা সম্ভব হবে এবং খেলায় উন্নতি লক্ষণীয় হবে বিশেষ করে দলীয় খেলায়।

সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে দল ফিরে আসার পর বাফুফের প্রেসিডেন্ট এসে নারী খেলোয়াড়দের সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি এবং গভর্নিং বডির সবার পক্ষ থেকে প্রশংসা করেছেন ভালো খেলার জন্য। সাংবাদিকদের সঙ্গে পরে অবশ্য মুখোমুখি হননি। তবে তাঁর সঙ্গে উপস্থিত বাফুফের সহসভাপতি ফাহাদ করিম কয়েকটি দৈনিকের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, বাফুফের প্রেসিডেন্ট তাবিথ আউয়াল মেয়েদের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, কখনো ভাববে না যে তোমরা বাইরের কেউ, তোমরা এই সফর থেকে জাতীয় দলের খেলোয়াড়। যতটুকু শুনেছি এবং বিশ্বাস করি তোমরা ভালো খেলেছ। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন পরবর্তী সফর থেকে আরো সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হবে।

প্রেসিডেন্ট, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, চারজন ভাইস প্রেসিডেন্ট, নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান শুধু নয়, গভর্নিং বডির সব সদস্য নতুনদের পাশে আছেন। সবাই চান নারী ফুটবল এগিয়ে চলুক। হিংসা, বিরোধিতা, দ্বন্দ্ব, স্বার্থপরতা এবং বৈষম্য থেকে মুক্ত থাকুক। নারী ফুটবল একটি পরিবার। একটি বড় পরিবারে ভুল-বোঝাবুঝি, দ্বন্দ্ব, অভিমান এবং মানসিক কষ্ট সংশ্লিষ্ট বিষয় সংক্রান্ত অনেক কিছু ঘটতে পারেতবে এসবই সাময়িক। ঐক্যবদ্ধ পরিবারটাই আসল। আর এই ঐক্যই পারে নারী ফুটবলকে ধাপে ধাপে অনেক দূরে নিয়ে যেতে। নারী ফুটবল বাস্তবধর্মী স্বপ্ন দেখাচ্ছে। আর তাই প্রয়োজন নতুন শ্বাস। নতুন মানসিকতা। সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক দিক হচ্ছে ফুটবলসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এখন নারী ফুটবল নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবছেন। গত বছর অক্টোবরে সাউথ এশিয়ান ফুটবলে টানা দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জয়ের পর বাফুফের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং বসুন্ধরা কিংসের প্রেসিডেন্ট মো. ইমরুল হাসান বলেছেন, নারী ফুটবল দেশের ফুটবলে নতুন সম্ভাবনা এবং স্বপ্নের জন্ম দিয়েছে। এত দিন এই ফুটবল নিয়ে তেমনভাবে ভাবা হয়নি, এটি সত্যি। এখন সময় এসেছে নারী ফুটবলকে দক্ষিণ এশিয়ার বাইরে আরো বড় সীমানায় নিয়ে যাওয়ার। এর জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ বাফুফে নেবে। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে সত্যি, তাই বলে বসে থাকলে তো চলবে না। সময়কে কাজে লাগাতে হবে। উদ্যোগ আর ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে সবই সম্ভব। বয়সভিত্তিক নারী ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ তো এরই মধ্যে ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।

এদিকে গত ৯ ফেব্রুয়ারি একটি বাংলা দৈনিককে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি তাবিথ আউয়াল বলেছেন, আমরা দুইবার সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এখানে পড়ে থাকলে তো হবে না। আমি এশিয়ান লেভেলে যেতে চাই। সামনে আমাদের সেই সুযোগ রয়েছে। শুধু এশিয়ান লেভেলে গেলে তো হবে না। আমি চাই ওখানেই থাকতে। এক ম্যাচ খেলে চলে এলাম, এটা আমার চাওয়া না। আরো পরিষ্কার করে বলি, আমাদের কমিটমেন্ট হচ্ছে এশিয়ার পরবর্তী লেভেলে যাওয়া। একবার উঠতে পারলে সেই লেভেলে থাকতে চাই। নিয়মিত খেলতে চাই। সে চিন্তা মাথায় রেখে আমাকে দল নিয়ে কাজ করতে হবে। সব সময় বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল এশিয়ান ফুটবলে খেলবে সেটাই আমার, আমাদের চাওয়া। দলের প্রস্তুতির জন্য যত রকম সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে পারি করব।

লেখক : কলামিস্ট ও বিশ্লেষক। সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি, এআইপিএস এশিয়া। আজীবন সদস্য, বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশন প্যানেল রাইটার, ফুটবল এশিয়া

মন্তব্য
সেলাই করা খোলা মুখ

জাগো মাঠ প্রশাসন, ‘কুণ্ঠে বাহে?’...

    মোফাজ্জল করিম
শেয়ার
জাগো মাঠ প্রশাসন, ‘কুণ্ঠে বাহে?’...

গত কিছুদিন ধরে দৈনিক পত্রিকাগুলোর পাতায় খুন-ধর্ষণ-ছিনতাই-লুণ্ঠন-দখলবাজি-চাঁদাবাজি ইত্যাদির সংবাদ এত বেশি আসছে যে একটি সংবাদপত্রকে সব ধরনের সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যম না বলে অপরাধজগতের মুখপত্র বললে মনে হয় খুব একটা অতিশয়োক্তি হবে না। অবশ্যই পাঠক দেশ-বিদেশের নানা গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ জানার জন্যই রোজ সকালে খবরের কাগজের জন্য চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করতে থাকেন। কেউ নিশ্চয়ই কোথায় কোন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের চারজন কোথায় মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরণ করেছে, কন্যাদায়গ্রস্ত কোন পিতা ছিনতাইকারীর হাতে তাঁর সর্বস্ব খুইয়ে পথে বসেছেনএই সব হৃদয়বিদারক সংবাদ পাঠের জন্য গাঁটের পয়সা খরচ করে পত্রিকা কেনেন না।

সারা দেশে অপরাধপ্রবণতা হঠাত্ করেই অনেকটা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে অনেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করছেন।

গত বছরের জুলাই-আগস্টের ঘটনাবলির সময় পুলিশ বাহিনী যে বেসামাল অবস্থায় নিপতিত হয়েছিল তাতে তার মাঠ পর্যায়ের সদস্যরা বোধগম্য কারণেই মনোবল হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে এবং ওই বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দৃঢ়তার কারণে পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। যেকোনো সুশৃঙ্খল বাহিনীর মূল চালিকাশক্তি তার মরাল বা মনোবল। মনোবলে চিড় ধরা মানে একটি অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত বাহিনীর পঙ্গুত্ববরণ করা।
বিগত সরকার পুলিশ বাহিনীর মতো একটি বেসামরিক বাহিনীকে নিরীহ নিরস্ত্র জনগণ নিধনে ব্যবহার করায় ওই বাহিনীর মনোবল শূন্যের কোঠায় পৌঁছে গিয়েছিল। যাক, স্বস্তির বিষয়, পরিস্থিতির এখন যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে।

দেশে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে যেকোনো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে যা থাকবে তা, আমার বিবেচনায়, দেশের মাঠ প্রশাসন। ভালো-মন্দ যাই হোক, আমাদের দেশের মাঠ প্রশাসন (এবং সামগ্রিকভাবে সমগ্র শাসনব্যবস্থা) চলছে প্রায় পৌনে তিন শ বছর আগে ব্রিটিশরাজ প্রবর্তিত বিধিব্যবস্থামত।

ব্রিটিশরাও তাদের পূর্বসূরী মোগলদের শাসনকাঠামোই মোটামুটি খোল-নলচে পাল্টে বহাল রেখেছিল। দেশ শাসিত হতো কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক নিয়োজিত কর্মচারীদের দ্বারা। ফলে ব্রিটিশরা যে জেলা, মহকুমা বা থানা ইত্যাদি যেভাবে রেখে গিয়েছিল ১৯৪৭ সালে তাদের বিদায়ের কালে, সেগুলো মোটামুটি সেভাবেই কিছু কিছু নাম-ধাম পরিবর্তন-পরিমার্জন করে এখনো সেভাবেই আছে। তখনো মাঠ প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল জেলা, এখনো তাই আছে। তখন জেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ দায়িত্বে যে ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন, এখনো তিনিই আছেন।
শুধু নাম বদলিয়ে এখন তিনি হয়েছেন ডেপুটি কমিশনার। বাংলায় বলা হয় জেলা প্রশাসক। একটি জেলার সার্বিক দায়িত্বে আছেন তিনি। তাঁর মৌলিক দায়িত্ব হচ্ছে ভূমি প্রশাসন ও ভূমি রাজস্ব আদায়, জেলার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ এবং সব ধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন। সব কিছু মিলিয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট জেলায় সরকারের প্রতিনিধি। তাঁকে বলা হয় সিম্বল অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, বা প্রশাসনের প্রতীক। ফলে জেলার কোথাও কোনো ঘটনা-দুর্ঘটনা ঘটলে সরকারের উপরিমহলে প্রথমেই খোঁজ পড়ে তাঁর। তাঁর বক্তব্যই হয় সরকারি বক্তব্য। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলাজনিত বা রাজনৈতিক বিষয়াদি নিয়ে তাঁর ভূমিকা আবহমানকালের।

জাগো মাঠ প্রশাসন, ‘কুণ্ঠে বাহে?’...পাকিস্তানি আমলে ষাটের দশকে একটি মহকুমা (বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা), তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে দুটি মহকুমা, বাংলাদেশের তিনটি বৃহত্তর জেলা (কুষ্টিয়া, খুলনা ও ঢাকা) এবং রাজশাহী বিভাগের বিভাগীয় কমিশনারের দায়িত্বপালনের অভিজ্ঞতা থেকে মাঠ পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে দুটি কথা বলার জন্য আজকের এই নিবন্ধ। গোড়াতেই বলে রাখতে চাই সম্প্রতি মাগুরার একটি শিশু ধর্ষণের (মেয়েটি গত বৃহস্পতিবার মারা গেছে। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) ঘটনায় দেশব্যাপী যে তুমুল বিক্ষোভের ঝড় বইছে তা খুবই স্বাভাবিক। বিশেষ করে আমাদের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্তানতুল্য তরুণ শিক্ষার্থীরা বারবার যেভাবে জাতির বিবেক ধরে নাড়া দিচ্ছে তাতে আমি অন্তত আশাবাদী, এই দেশে বৈষম্য থাকবে না, অন্যায় করে কেউ পার পাবে না, দেশে আইনের শাসন অতি শীঘ্র প্রতিষ্ঠিত হবে। তবে একটি কথা আন্দোলনকারীদের মনে রাখতে হবে, কোনো অপরাধীকে পাকড়াও করা, তাকে আইনের আওতায় আনা, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, ছিনতাই ইত্যাদি বন্ধ করার প্রাথমিক দায়িত্ব কিন্তু কোনো মন্ত্রী, সচিব বা বিভাগীয় বড় কর্তার নয়এই দায়িত্ব মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর। অতএব ঢাকায় নীতিনির্ধারণকারী কোনো মন্ত্রী, সচিব বা বিভাগীয় বড় কর্তার পদত্যাগ দাবি করা যুক্তিসঙ্গত নয়। তবে হ্যাঁ, তাঁদের কাছে অবশ্যই দাবি জানানো যেতে পারে। তাতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের টপ-টু-বটম সকলেরই টনক নড়বে সন্দেহ নেই।

এখন আসুন মাঠ পর্যায়ে কী ঘটছে, বা সব সময় কী ঘটে থাকে তা একটু নাড়াচাড়া করে দেখা যাক। মনে রাখা দরকার, একটি এলাকার চোর-চোট্টা-বদমাশ-ধর্ষকরা, ইভ টিজাররা, সব সময় চোখ-কান খোলা রেখে এলাকার ও.সি., এস.পি, ডি.সি., ইউএনও ইত্যাদি কর্মকর্তার গতিবিধি ও কার্যকলাপ মনিটর করে। যদি দেখে এদের একজনের সঙ্গে আরেকজনের সদ্ভাব নেই, একজনের কাজকর্মের সঙ্গে অন্যজনের কাজকর্মের সমন্বয়ের অভাব, কিংবা তাঁরা ব্যস্ত নিজের পকেটপূর্তিতে বা স্যারের জন্য চাঁদা তুলতে, অথবা কোনো নেতার তাঁবেদারি করতে, তখন তারা বগল বাজিয়ে নেমে পড়ে যাবতীয় কুকর্মে। অপরাধীরা ঠিকই লাইন বের করে ফেলে চুরি-ডাকাতি-ধর্ষণ ইত্যাদি যেকোনো অপরাধ করে কী করে নির্বিঘ্নে বেরিয়ে যেতে হবে।

এখানে দু-একটি মৌলিক বিষয়ের উল্লেখ করতেই হয়। জেলার আইনশৃঙ্খলা, অপরাধ দমন ইত্যাদির সার্বিক দায়িত্বে নিয়োজিত প্রধান দুই কর্মকর্তাডি.সি. এবং এস.পি.সারাক্ষণ জনসাধারণের নজরদারিতে আছেন, এটা ভুলে গেলে চলবে না। অতএব তাঁরা অফিসে এবং অফিসের বাইরে ব্যক্তিগত জীবনে পরস্পর পরস্পরের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ বা ভ্রাতৃত্বসুলভ আচরণ করেন, নাকি আমি কী হনু রে, ও আবার কে? ইত্যাদি মার্কা ব্যবহার ফুটে ওঠে তাঁদের কথায়-বার্তায়, চলনে-বলনে তা সব সময় পাবলিক লক্ষ্য করে। যেকোনো সমস্যায় বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ডি.সি.-এস.পি. ঘন ঘন নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলে সেটা বাস্তবায়ন করা সহজ হয়। একই কথা বলা যায় ইউএনও-ও.সি.-র বেলায়ও। অন্যথায় নিজ নিজ অফিসের অধস্তন কর্মকর্তা-কর্মচারী আদেশপালনে বা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে গড়িমসি করবে।

আরেকটি কথা। ডি.সি.-এস.পি.-র জনসংযোগ। জনপ্রশাসনের কর্মকর্তা ডি.সি. বা এস.পি. জেলার জনপ্রতিনিধিদের সাহায্য-সহযোগিতা-পরামর্শ ব্যতীত কখনোই সফল হতে পারবেন না। মনে রাখতে হবে, জনপ্রতিনিধি ওই এলাকার মানুষ, সান অব দ্য সয়েল, যে কারণে এলাকা, এলাকার মানুষ, সমস্যা ও তার সমাধান সম্বন্ধে তাঁর কিছু বিশেষ জ্ঞান থাকার কথা, যা আপনার নেই। কাজেই আপনি ডি.সি. বা এস.পি.যেই হোন না কেন অনেক সময় প্রকৃত তথ্য জানার জন্য, অথবা যেকোনো বিষয়ে জনসমর্থন লাভের জন্য স্থানীয় কোনো সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিরতিনি কোনো স্কুলের শিক্ষক, রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী বা ভূস্বামী হতে পারেনসাহায্য নিতে পারেন। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, কোনো টাউট-বাটপাড় যেন এই সুযোগে কাছে ভিড়তে না পারে। কুষ্টিয়ায় ১৯৭৪ সালে আমি যখন ডি.সি. হিসেবে যোগদান করি তখন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে কুষ্টিয়ায় বলা যায় দাবানল জ্বলছিল। আমার কাজ ছিল বিশেষ বিশেষ এলাকায় গিয়ে জনসাধারণকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ করা। গ্রামে গ্রামে মিটিং করতাম রাজনৈতিক নেতাদের মত। আমার বক্তৃতায় সদ্য স্বাধীন দেশকে ভালবাসা, তার উন্নয়নে কাজ করা, ঐক্যবদ্ধভাবে শান্তি-শৃঙ্খলার পক্ষে থাকার কথা বলতাম। এসব কাজে কুষ্টিয়ার সেই সময়ের রাজনৈতিক নেতাদের সাহায্য-সহযোগিতা খুবই কাজে লেগেছিল। আল্লাহর ইচ্ছায় তিন-চার মাসের মধ্যে সন্ত্রাসের আগুন নেভাতে সমর্থ হয়েছিলাম আমরা।

আরেকটি কথা। ডি.সি., এস.পি. এবং জেলার সব সিনিয়র কর্মকর্তাকে তাঁদের সকল কাজে সততার পরিচয় দিতে হবে। তবেই তাঁদের বিভিন্ন কাজেকর্মে জনসমর্থন পাওয়া যাবে। আর জনসমর্থন ব্যতীত কোনো উদ্যোগ-আয়োজনই সাফল্যের মুখ দেখবে না।

শেষ কথা, একটি আকুতি। ডি.সি.-এস.পি.-রা কি জাতির এই মাহেন্দ্রক্ষণে জুলাই-আগস্টের চেতনায় উদ্বুব্ধ হয়ে মাঠ প্রশাসনকে গণমুখী করতে পারেন না? পারেন না ক্রমবর্ধিষ্ণু মারাত্মক অপরাধগুলোর মূলোত্পাটন করতে? ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে এর অনেকখানিই সম্ভব বলে আমিতোমাদের এই বরিষ্ঠ সাবেক সহকর্মীমনে করি। মাঠ প্রশাসনের এই দুই ভ্রাতৃপ্রতিম সহকর্মী হাতে হাত মিলিয়ে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আইনশৃঙ্খলার পাগলা ঘোড়াকে নিশ্চয়ই অতি দ্রুত বাগে আনতে পারবে এ প্রত্যাশা শুধু আমার নয়, সমগ্র জাতির।

লেখক : সাবেক সচিব, কবি

mkarim06@yahoo.com

মন্তব্য

বাংলাদেশ এবং বৈষম্যের বেড়াজাল

    আব্দুল বায়েস
শেয়ার
বাংলাদেশ এবং বৈষম্যের বেড়াজাল

পাঠকের নিশ্চয়ই দারিদ্র্য ফাঁদের কথা মনে আছে, তেমনি এক ফাঁদ বৈষম্যফাঁদ, যা প্রজন্মে স্থানান্তরিত হতে পারে কিংবা মাকড়সার জালের মতো বৈষম্য ধরে রাখে। পুরুষশাসিত সমাজে একজন নারীর অবস্থানের কথা ধরা যাক, যেখানে একজন নারী সম্পত্তি এবং উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত। তাদের চলাচলের স্বাধীনতা সীমিত। কারণ সামাজিক নিয়ম ভিতরবাহির হিসেবে কাজ শনাক্ত করে দিয়েছে।

এগুলোর সামাজিক প্রতিক্রিয়া খুব ভয়ংকর : মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়, বাড়ির বাইরে কাজ করা মহিলাদের জন্য দুষ্কর এবং পুরুষের চেয়ে মহিলারা কম আয় করে। এর ফলে মহিলাদের নির্ভরতা বৃদ্ধি পায়। রাজনৈতিক পরিণতির দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে মহিলারা ঘরে-বাইরে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে অংশগ্রহণ করতে পারে না।

এমন অসম সামাজিক এবং অর্থনৈতিক কাঠামো অতি সহজে পুনরুৎপাদিত হতে থাকে।

যদি একজন নারীর মনে বিশ্বাস জন্মায় যে চুপচাপ থাকা এবং সামাজিক রীতিনীতি মেনে চলা হচ্ছে ভালো এবং সুন্দর মেয়ের লক্ষণ, তাহলে বিশ্বাসটি সে তার মেয়ে অথবা ছেলের বউয়ের কাছে সংক্রমিত করবে। তেমনি ধনী-দরিদ্রের ক্ষমতাবৈষম্য গরিবের ওপর ধনীর আধিপত্যকে স্বীকৃতি দেয়। উদাহরণ হিসেবে একজন কৃষি শ্রমিকের কথা বলা যায়, যে একজন শক্তিশালী ভূস্বামীর জন্য কাজ করছে। অজ্ঞতা ও অপুষ্টির কারণে সে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে বের হতে পারছে না।
আবার সে তার প্রভুর কাছ থেকে নেওয়া ঋণের জালে বন্দি আছে। যদি দেশের আইন তার পাশে দাঁড়ানোর জন্য অপেক্ষা করেও, সে কিন্তু অজ্ঞতা ও অভাবের কারণে রাজনৈতিক ও বিচারিক প্রতিষ্ঠানের সুযোগ নিয়ে অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারছে না। এভাবে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অসমতা অসম সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের দুষ্টচক্রে আটকে আছে।

দুই.

প্রেক্ষিত বাংলাদেশ। আদিকাল থেকে অর্থনীতিবিদদের কাছে প্রবৃদ্ধির পরিমাণগত দিকটা অধিকতর গুরুত্ব পেয়ে আসছে, যদিও সাম্প্রতিক দশকগুলোতে সে ধারার কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে।

বাংলাদেশে অর্জিত কৃতিত্বমূলক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি ওই প্রবৃদ্ধির গুণগত অবস্থান তিন দিক থেকে বিবেচনা করা যায়দারিদ্র্য হ্রাসের হার, আয়বিন্যাস ও কর্মসংস্থান। সেটাই হচ্ছে ভালো প্রবৃদ্ধি, যে প্রবৃদ্ধি দ্রুতগতিতে দারিদ্র্য হ্রাস করে, কম বৈষম্য সৃষ্টি করে এবং খুব দ্রুততার সঙ্গে উদ্বৃত্ত খাত থেকে ঘাটতি খাতে শ্রম টেনে নেয়। দারিদ্র্য হ্রাসের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে প্রশংসনীয় কৃতিত্ব দাবি করতে পারে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই দাবি আজ স্বীকৃত, তার পুনরুক্তির প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। যেমনসত্তরের দশকের আয়-দারিদ্র্যের প্রকোপ ছিল প্রায় ৬০ শতাংশ, ২০২৪ সালে তা দাঁড়ায় প্রায় ২৫ শতাংশে। এই উন্নতির পেছনে বড় অবদান রেখেছে লতিয়ে ওঠা মাথাপিছু আয়। বিশেষত, আশির দশকের পর থেকে জনসংখ্যা বৃদ্ধি হ্রাসের মুখে অব্যাহতভাবে জিডিপি বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে মাথাপিছু আয় তিন গুণ বেড়ে যায় এবং খুব সহজেই আমরা চিত্তাকর্ষক এ রূপান্তরের তাৎপর্য অনুধাবন করতে পারি। এর ফলে একদিকে যেমন দারিদ্র্য হ্রাসের দ্বার উন্মোচিত হয়েছে, অন্যদিকে তেমনি বাংলাদেশের বর্তমান প্রজন্ম আগের প্রজন্মের চেয়ে অধিকতরকেউ বলে দ্বিগুণ সচ্ছল জীবন যাপন করছে। তার পরও দারিদ্র্যের দহন প্রতিনিয়ত তাড়া করছে অসংখ্য মানুষকে এবং বর্তমানে জাতীয় পর্যায়ে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ দারিদ্র্যরেখার নিচে বাস করছে বলে জানা যায়। সমাজবিজ্ঞানীদের দৃঢ় বিশ্বাস, মাথাপিছু আয়ের অব্যাহত দ্রুত বৃদ্ধিই তাদের দারিদ্র্যরেখার ওপরে টেনে তোলার ক্ষেত্রে বড় রকমের অবদান রাখতে পারে।

তিন.

কিন্তু যতটা ভাবা যায় সম্পর্কটা আবার ততটা সরলরৈখিক নয়। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেশি হলে দারিদ্র্য হ্রাস দ্রুত না-ও হতে পারে এবং প্রবৃদ্ধিবৈষম্য ও দারিদ্র্য সম্পর্ক নিয়ে আমরা এর আগে আলোচনা করেছি। লক্ষ করা গেছে, এ বিষয়ে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা অন্যান্য দেশ থেকে খুব একটা ভিন্নতর নয়। এখানেও ক্রমবর্ধমান আয়বৈষম্য দারিদ্র্য হ্রাসের ওপর প্রবৃদ্ধির প্রভাবকে সংকুচিত করে রাখছে। যদি বৈষম্যের কথাই বলি, গিনি সহগ ১৯৮৩/৮৪ সালের ০.৩৯ থেকে ২০২৪ নাগাদ ০.৪৯-তে গড়ায়। বৈষম্যের এই বিস্তার শুধু দারিদ্র্য হ্রাসের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলেনি, ক্রমবর্ধিষ্ণু বৈষম্য সমাজে একটি ক্ষুদ্র অংশের হাতে আয় পুঞ্জীভূত করে আপেক্ষিক বঞ্চনার জন্ম দিয়ে চলছে। এই রূঢ় বাস্তবতা আমাদের সামনে আজ এক সামাজিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে প্রকটভাবে উপস্থিত। আর নাগরিকদের জীবনমানের বেলায় পর্বতপ্রমাণ বৈষম্য যে কী ধরনের সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে, তার ভূরি ভূরি প্রমাণ তো ইতিহাসে লিপিবদ্ধ আছেই। তবে বৈষম্যতাড়িত অসন্তোষ কখন দানা বেঁধে গণবিপ্লবে রূপ নেবে, তা নির্ভর করে সমাজের আয়বৈষম্য সহ্য করার ক্ষমতার ওপর; যেমনবাংলাদেশের জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে তীব্র বৈষম্যের ভূমিকা খাটো করে দেখার অবকাশ নেই।

চার.

তবে এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই যে বেড়ে ওঠা আয়বৈষম্য শুধু বাংলাদেশেরই সমস্যা। উদাহরণ হিসেবে ভারত ও চীনের কথা উল্লেখ করা যায়। সেখানে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যেমন ঘটেছে, তেমনি বাড়ছে বৈষম্য। আর অর্থনৈতিক অধ্যয়নে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ সাইমন কুজনেটসের সাড়া-জাগানো ইনভারটেড ইউ হাইপোথেসিসের কথা নিশ্চয় মনে আছে। তাঁর মতে, প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বৈষম্য (বিশেষত আয়বৈষম্য) বৃদ্ধি পায়, তবে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানোর পর বৈষম্য ক্রমাগতভাবে হ্রাস পেতে থাকে। এটি ঘটে মূলত এ কারণে যে বাংলাদেশ এবং বৈষম্যের বেড়াজালদরিদ্র জনগণ দীর্ঘ সময়ে প্রবৃদ্ধিজনিত উপচে পড়া প্রভাবগুলো থেকে ক্রমেই লাভবান হতে থাকে। হতে পারে, এ পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি ও বৈষম্যের মধ্যে বিরাজমান এই বিপরীতমুখী সম্পর্ক কুজনেটসের প্রতিপাদ্যের প্রতি কিছুটা হলেও সমর্থন জানায়। তবে এ প্রসঙ্গে বলে রাখা দরকার যে ধারণাটি এরই মধ্যে প্রচুর বিতর্কের জন্ম দিয়েছে এবং প্রশ্ন উঠেছে, নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে কি তাহলে এই প্রবণতা অবশ্যম্ভাবী? এ নিয়ে বিস্তৃত গবেষণা হয়েছে, যদিও বা শেষ হয়েছে কোনো উপসংহার ছাড়াই। অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন যে আপাতদৃষ্টিতে প্রবৃদ্ধি ও বৈষম্যের মধ্যে বিপরীতমুখী সম্পর্ক থাকার তেমন কোনো কারণ নেই। অনেক দেশে সম্পদের প্রারম্ভিক বিতরণ তির্যকভাবে অসম থাকার ফলে এবং ওই দেশগুলোতে বৈষম্য হ্রাস সংক্রান্ত কৌশল ও নীতিমালার ব্যর্থতাই এ ধরনের বৈষম্য সৃষ্টির পেছনে ইন্ধন জোগায়। যা হোক, আয়ের পুনর্বণ্টন দুটি উপায়ে দারিদ্র্য হ্রাসের পথ প্রশস্ত করে। প্রথমত, আয়ের স্থায়ী পুনর্বিন্যাস বিতরণ প্রভাবের মাধ্যমে তাত্ক্ষণিকভাবে দারিদ্র্যের প্রকোপ কমাতে সাহায্য করে। দ্বিতীয়ত, এটি প্রবৃদ্ধি সাপেক্ষে দারিদ্র্য প্রভাবগ্রাহকতা বা স্থিতিস্থাপকতাকে স্থায়ীভাবে বৃদ্ধি করে এবং এর ফলে যেকোনো প্রবৃদ্ধির হারের মাত্রায় দারিদ্র্য হ্রাসের বেগ বেড়ে যায়। অর্থাত্ এজাতীয় পুনর্বিন্যাস তখন দ্বৈত পুরস্কার বা ডাবল ডিভিডেন্ড বয়ে আনে : একদিকে প্রবৃদ্ধি নিজেই দ্রুততর হয় আর অন্যদিকে যে গতিতে প্রবৃদ্ধি দারিদ্র্য হ্রাস ঘটায়, তা-ও বেগবান হতে থাকে।

পাঁচ.

গিনি সহগ নিচে নামিয়ে আনতে গেলে বৈষম্যের বিরুদ্ধে বিষোদগার যথেষ্ট নয়, চাই একটি সুদৃঢ় রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রশ্রয়ের ঊর্ধ্বে উঠে পাপীদের জন্য যথাযথ শাস্তির বিধান করা। আর তাহলেই বৈষম্য নামক পাপের মাত্রার পরিসমাপ্তি না ঘটলেও তা যে অনেকখানি হ্রাস পাবে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। বিরাজমান প্রতিষ্ঠানগুলোর আমূল সংস্কার ছাড়া বৈষম্য কমানোর প্রচেষ্টার মানে দাঁড়ায় পেটে কৃমি দূর না করে পুষ্টিকর খাবার ভক্ষণ করা। কিন্তু এই অভাগা বাংলাদেশে তা কতটা সম্ভব সে প্রশ্ন উঠছে প্রতিনিয়ত।

বিরাজমান ব্যবস্থায় এই কাজটি করা খুব কঠিন। এর জন্য প্রয়োজন হবে করকাঠামোতে বিদ্যমান অব্যবস্থাপনা ও দুর্বলতা দূর করে কর ফাঁকি রোধ করা, সাধারণভাবে সম্পত্তি কর পদ্ধতি গ্রহণ করা এবং কর ব্যবস্থাপনায় উন্নতি ঘটানো। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ সাদেক আহমেদের মতে, সরকারি ব্যয় পুনর্বিন্যাসের প্রভাব থেকে আসবে জিডিপির ২ শতাংশ এবং অতিরিক্ত করের জোগান থেকে ২.৫ শতাংশ দিয়ে সামাজিক সুরক্ষার জন্য প্রয়োজন জিডিপির ৪ শতাংশ জোগান দেওয়া যেতে পারে। এর সঙ্গে যুক্ত থাকবে বিভিন্ন ধরনের অপচয় থেকে অবমুক্ত অর্থ। এবং সেটি করতে পারলে প্রবল রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিজনিত বিস্তারিত পরিকল্পনা আয় বিতরণ ব্যবস্থায় উন্নতি ঘটিয়ে অপেক্ষাকৃত অধিকতর সমতা বিধান করতে সক্ষম হবে বলে ধারণা করা যায়।

তা ছাড়া সুশাসনের মাধ্যমেও কিন্তু আয়বিন্যাসে উন্নতি ঘটানো যায়। আইনের শাসনের উপস্থিতি, যথাযথ বিধিমালা, ব্যবস্থা এবং বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীনভাবে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির মাধ্যমে চলতে এবং কাজ করতে দেওয়ার মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। সমতা বিধানের স্বার্থে রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তি এবং দম্ভ ও ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার ক্ষমতা এবং এই ঋণ পরিশোধ না করে খাজনা খোঁজার প্রবণতা অবশ্যই রুখতে হবে। অন্যদিকে একটি অপেক্ষাকৃত ন্যায়সংগত সমাজ বাস্তবায়িত করতে হলে শেয়ারবাজারে অনৈতিক বাণিজ্য এবং অন্যান্য বিকৃতি, কর ফাঁকি, সরকারি ক্রয়ে দুর্নীতি, জোর করে জমি দখল ইত্যাদি রোধ করার মাধ্যমে সমাজের উঁচু ৫ শতাংশের হাতে কুক্ষিগত এসব আয় কিছুটা হলেও কমানো যেতে পারে। বলতে দ্বিধা নেই, কুক্ষিগত সম্পদের পেছনে (এবং বিরাজমান অর্থনৈতিক বৈষম্যের পেছনে) কাজ করছে বলিষ্ঠ রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা, যা বন্ধ না হলে বৈষম্য কমবে বলে মনে হয় না। কিছু প্রতিষ্ঠান; যেমনকেন্দ্রীয় ব্যাংক, বাণিজ্যিক ব্যাংক, রাজউক, কর বিভাগ, পৌরসভা ইত্যাদিকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ মুক্ত রেখে দেয় নিয়ম-কানুন ও স্বচ্ছতার মাধ্যমে চলতে দিলেই একদিকে যেমন অর্থনৈতিক নৈরাজ্য নির্বাসিত হতে পারে, তেমনি আয়বিন্যাসের উন্নতি ঘটবে বলে আশা করা যায়।

 

লেখক : অর্থনীতিবিদ, সাবেক উপাচার্য

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

মন্তব্য

কিডনি স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রতিবন্ধকতা ও উত্তরণের উপায়

    ডা. এম এ সামাদ
শেয়ার
কিডনি স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রতিবন্ধকতা ও উত্তরণের উপায়

নিজের ও জাতির কিডনি স্বাস্থ্য সুরক্ষা করতে হলে তিনটি শব্দের অর্থ খুব ভালো করে বুঝতে হবে।

Common-ব্যাপক,  Harmful- ভয়াবহ,  Preventable -প্রতিরোধযোগ্য। অর্থাত্ কিডনি রোগের প্রাদুর্ভাব ব্যাপক, পরিণতি ভয়াবহ হলেও কিডনি রোগ প্রতিরোধযোগ্য।

কিডনি রোগের হার ব্যাপক।

সারা বিশ্বে শুধু দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ বা সিকেডি রোগীর সংখ্যা ৮৫ কোটির বেশি। এই রোগের হার দিন দিন বাড়ছে। উন্নয়নশীল বা স্বল্পোন্নত দেশে এই রোগের হার অনেক বেশি। বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকে ধারণা করা হয়, বাংলাদেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা প্রায় তিন কোটি ৮০ লাখ।
যদি কিডনি রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করে চিকিৎসা না করা যায়, তবে কিডনি ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ বিকল হয়ে যায়, যার চিকিৎসা ব্যয় অত্যন্ত বেশি। বাংলাদেশের প্রায় ৪০ হাজার রোগী কিডনি বিকল হয়ে অকালমৃত্যু বরণ করে। আরো ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষ আকস্মিক কিডনি বিকলে আক্রান্ত হয়। মৃত্যুর কারণ হিসেবে ১৯৯০ সালে কিডনি রোগ ছিল ১৯তম স্থানে।
বর্তমানে এসেছে সপ্তম স্থানে। এভাবে চলতে থাকলে ২০৪০ সালে দাঁড়াবে পঞ্চম স্থানে।

কিডনি রোগ মারাত্মক বা ভয়াবহ কেন? প্রথমত, ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ নষ্ট হওয়ার আগে অনেক ক্ষেত্রে কোনো লক্ষণ দেখা দেয় না। তাই এই রোগকে বলা হয় নীরব ঘাতক। দ্বিতীয়ত, কিডনি রোগ অন্য রোগের ঝুঁকি অনেক গুণে বাড়িয়ে দেয়।

এ জন্য কিডনি রোগকে বলা হয় ডিজিজ মাল্টিপ্লাইয়ার। যেমন স্বল্প মাত্রায়ও সিকেডি থাকলে হৃদরোগে মৃত্যুর ঝুঁকি ১০ গুণ বেড়ে যেতে পারে, তেমনি আরো অনেক রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তৃতীয়ত, কিডনি সম্পূর্ণ বিকল হয়ে গেলে তার চিকিৎসা এত ব্যয়বহুল যে আমাদের মতো দেশের শতকরা ১০ ভাগ লোকও তা বহন করতে পারে না। ফলে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ কিডনি বিকল রোগী অকালমৃত্যু বরণ করে। চিকিৎসা খরচ মেটাতে গিয়ে অনেক পরিবার দেউলিয়া হয়ে যায়।

আশার আলো এই যে কিডনি রোগ প্রতিরোধযোগ্য। যেখানে অতিরিক্ত ব্যয়ের কারণে ১০ শতাংশ লোক চিকিৎসা নিতে হিমশিম খায়, সেখানে একটু সচেতন হলে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে এই ভয়াবহ কিডনি বিকল প্রতিরোধ করা যায়।

প্রতিরোধের প্রধান দুটি উপায়

প্রথমত, প্রাথমিক অবস্থায় সুপ্ত কিডনি রোগ নির্ণয় করে তা চিকিৎসা করা। যারা কিডনি রোগের ঝুঁকিতে আছে, তাদের মাত্র দুটি সহজ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিক অবস্থায় কিডনি রোগ নির্ণয় করা যায়একটি প্রস্রাবে প্রোটিন যায় কি না; অন্যটি রক্তের ক্রিয়েটিনিন থেকে ইজিএফআর নির্ণয় করে কিডনি শতভাগের কত ভাগ কাজ করছে, তা নির্ণয় করা যায়। এই দুটি পরীক্ষা প্রাথমিক পর্যায়ে হাসপাতালেও করা যেতে পারে।

কিডনি রোগের ঝুঁকিতে আছে কারা?

যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, বংশে কিডনি রোগ আছে, ধূমপায়ী, মাদকসেবী, অতিরিক্ত ওজন, বেশিদিন ব্যথার বড়ি খেয়েছে, বারবার কিডনিতে পাথর বা মূত্রতন্ত্রের প্রদাহ হয়। শিশুকালে কিডনি রোগ থাকলে। এমনকি বয়স ৫০-এর ওপরে গেলে কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ে। যাঁরা ঝুঁকিতে আছেন, তাঁদের বছরে অন্তত দুইবার কিডনি পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত।

সুস্থ জীবনধারা

কিডনি ভালো রাখতে সুস্থ জীবনধারা চর্চা অপরিহার্য। আটটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় নিয়মিত মেনে চললে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে কিডনি রোগ প্রতিরোধ করা যায়। ১. নিয়মিত ব্যায়াম ও কায়িক পরিশ্রম। ২. উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ। ৩. সুষম ও পরিমিত খাবার গ্রহণ। ৪. পর্যাপ্ত পানি পান। ৫. ওজন নিয়ন্ত্রণ। ৬. ধূমপান ও মাদক পরিহার। ৭. ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ সেবন। ৮. নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা।

কিডনি স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রধান চ্যালেঞ্জ বা প্রতিবন্ধকতা

১. সাধারণ জনগণের মধ্যে সচেতনতার অভাব। কিডনি রোগের ঝুঁকি, লক্ষণ সম্পর্কে অজ্ঞতা, চিকিৎসা সম্পর্কে ভুল ধারণা। ২. প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার সুযোগ সীমিত। অনেক অঞ্চলে কিডনি রোগ নির্ণয়ের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকা। ৩. আর্থিক সীমাবদ্ধতাডায়ালিসিস ও কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের ব্যয় অনেক বেশি। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার জন্য পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তা বা বাজেটের অভাব। ৪. কিডনি বিশেষজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীর স্বল্পতা। জাপানে প্রতি মিলিয়ন লোকের জন্য ৩৪ জন কিডনি বিশেষজ্ঞ, পক্ষান্তরে বাংলাদেশ আছে দুজনেরও কম। অন্যদিকে সাধারণ চিকিৎসকরা কিডনি সম্পর্কে কম সচেতন। ৫. অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা ও ঝুঁকির কারণ বৃদ্ধি। যেমনডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ ক্রমাগত বাড়ছে; অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামের অভাবে কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ছে। ৬. সাংস্কৃতিক ও কুসংস্কার, ঝাড়ফুঁক, কবিরাজ, হারবাল চর্চা করতে গিয়ে বিলম্বে রোগ নির্ণয়ও কিডনি বিকলের ঝুঁকি বাড়ে।

প্রতিবন্ধকতা থেকে উত্তরণের উপায়

নীতিনির্ধারক, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। নীতিনির্ধারকদের কিডনি রোগ প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। যেমনঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য জাতীয় পর্যায়ে স্ক্রিনিং প্রগ্রাম চালু করা। সুলভ মূল্যে চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করা। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন করা।

স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের প্রাথমিক রোগ নির্ণয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সাধারণত চিকিৎসকদের কিডনি রোগের প্রাথমিক চিকিৎসায় প্রশিক্ষণ দিতে হবে। জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কমিউনিটি আউটরিচ প্রগ্রাম ও বিনা মূল্যে স্ক্রিনিং ক্যাম্পের আয়োজন করতে হবে। গণমাধ্যমের সহায়তায় কিডনি স্বাস্থ্য সম্পর্কে প্রচার করতে হবে।

চিকিৎসার ব্যয় কমানো ও সহায়তা প্রদানে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ভূমিকা রাখতে পারে। কিডনি রোগীদের জন্য স্বাস্থ্য বীমা চালু করা যেতে পারে। কিডনি রোগীদের জন্য মাইক্রোফিন্যান্স বা স্বল্প সুদের ঋণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সাশ্রয়ী কিডনি চিকিৎসা গবেষণা ও উদ্ভাবনে সহায়তা করতে হবে।

আসুন, কিডনি স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সবাই মিলে একযোগে কাজ করি এবং সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে সবার জন্য কিডনি স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা নিশ্চিত করি।

লেখক : সভাপতি, কিডনি অ্যাওয়ারনেস মনিটরিং অ্যান্ড প্রিভেনশন সোসাইটি (ক্যাম্পস) এবং অধ্যাপক, কিডনি রোগ বিভাগ, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ