<p style="text-align:justify">জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ৩৪২ ধারায় দেওয়া বক্তব্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে তুলে ধরে অশ্রুসিক্ত হলেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।</p> <p style="text-align:justify">এই মামলায় সাজা বাড়িয়ে হাইকোর্টের দেওয়া ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আপিলের শুনানি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগ বেঞ্চে আজ বৃহস্পতিবার তৃতীয় দিনের মতো অনুষ্ঠিত হয়। আদালত পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১৪ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন।</p> <p style="text-align:justify">আজ শুনানির এক পর্যায়ে এই মামলায় খালেদা জিয়ার ৩৪২ ধারায় দেওয়া বক্তব্য তুলে ধরে খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত হন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।</p> <p style="text-align:justify">এ সময় প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও আপিল বেঞ্চের বিচারপতিরা রায়ে উল্লেখিত খালেদা জিয়ার সেই বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শোনেন। এ সময় আদালত কক্ষে উপস্থিত অনেক আইনজীবীকেও আবেগাপ্লুত হতে দেখা যায়। তখন এজলাস কক্ষে সুনসান নীরবতা বিরাজ করছিল।</p> <p style="text-align:justify">এই মামলায় ৩৪২ ধারায় খালেদা জিয়ার দেওয়া বক্তব্যের যে অংশবিশেষ ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সর্বোচ্চ আদালতে উপস্থাপন করেন, সেখানে উল্লেখ করা হয় যে, প্রায় ৩ যুগ আগে মানুষের ডাকে ও ভালোবাসায় সাড়া দিয়ে আমি (খালেদা জিয়া) রাজনীতির অঙ্গনে পা রাখি। সেদিন থেকেই বিসর্জন দিয়েছি নিজের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য। আমি কেন রাজনীতিতে এসেছিলাম?</p> <p style="text-align:justify">‘নিশ্চিত ও নিরাপদ জীবন ছেড়ে কেন আমি ঝুঁকিপূর্ণ অনিশ্চিত পথে পা দিয়েছিলাম? তখন আমার সামনে মসনদ কিংবা ক্ষমতার কোনো হাতছানি ছিল না। রাষ্ট্রক্ষমতার অবৈধ দখলকারীরা চায়নি আমি রাজনীতিতে থাকি। আমি রাজনীতি না করলে তারা আমাকে অনেক বেশি সম্মান ও সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা বলেছিল। রাজনীতি করলে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হবে বলে আমাকে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছিল। সব কিছু উপেক্ষা করে আমি রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখি। কারণ, দেশে তখন গণতন্ত্র ছিল না। জনগণের নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে নেওয়া হয়েছিল। জনগণের অধিকার ছিল না। গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শুরু থেকেই আমাকে রাজপথে নামতে হয়েছিল।’</p> <p style="text-align:justify">এই মামলায় ৩৪২ ধারায় দেওয়া বক্তব্যে খালেদা জিয়া আরো বলেন, ‘আমি রাজনীতিতে এসেছিলাম শহীদ জিয়াউর রহমানের আর্দশের পতাকা হাতে নিয়ে। আমার সংগ্রাম শুরু হয়েছিল তার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার লক্ষ্য নিয়ে। আমি সব সময় চেয়েছি বাংলাদেশ যেন গণতান্ত্রিক পথে পরিচালিত হয়। মানুষের যেন অধিকার থাকে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকে। বিচার বিভাগ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা থাকে। আমি চেয়েছি আমাদের অর্থনীতি যেন শক্তিশালী হয়। বিশ্বসভায় বাংলাদেশ মর্যাদার আসন পায়। সেই লক্ষ্যসমূহ অর্জনের জন্যই আমার রাজনীতি।’</p> <p style="text-align:justify">‘আমি রাজনীতিতে যোগ দিয়ে দেশ ও জনগণের ভাগ্যের সঙ্গে নিজের ভাগ্যকে একাকার করে ফেলেছি। আমার নিজের কোনো পৃথক আশা-আকাঙ্ক্ষা নেই। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষাই আমার আশা-আকাঙ্ক্ষায় পরিণত হয়েছে। আমার জীবন পুরোপুরি জড়িয়ে গেছে এ দেশের মানুষের স্বপ্ন ও প্রত্যয়ের সঙ্গে। তাদের সুখ-দুঃখ ও উত্থান-পতনের সঙ্গে, দেশের মানুষের জীবনের চড়াই উৎরাই ও সমস্যা সংকটের সঙ্গে, তাদের বিজয় এবং সমস্যা ও সমৃদ্ধির সঙ্গে। প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ এবং এ দেশের মানুষ যখনই দুর্যোগ ও দুর্বিপাকের মুখে পড়েছে তখন আমিও দুর্যোগের মুখে পড়েছি।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘দেশ জাতি যখন সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছে, অধিকার হারিয়েছে, বিপন্ন হয়েছে তখন আমিও নানাভাবে আক্রান্ত হয়েছি। আমার পরিবারও পড়েছে নানমুখী সমস্যা-সংকটে। বারবারই প্রকাশ হয়েছে যে বাংলাদেশ ও এ দেশের জনগণের ভাগ্যের সঙ্গে আমার নিজের ও আমার পরিবারের ভাগ্য একসূত্রে গাঁথা হয়ে গেছে।’</p> <p style="text-align:justify">এর আগে, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এই মামলায় খালেদা জিয়ার দেওয়া ৩৪২ ধারায় বক্তব্য তুলে ধরে সর্বোচ্চ আদালতকে বলেন, ‘কবি কাজী নজরুল ইসলামের সেই রাজবন্দীর জবানবন্দির প্রতিফলন বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্যে উঠে এসেছে। আর খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল সংক্রান্ত কোনো অনুদান গ্রহণ বা বিতরণের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না বলা হয়েছে।’</p> <p style="text-align:justify">শুনানিতে দুদকের আইনজীবী মো. আসিফ হাসান আদালতকে বলেছিলেন যে, ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের টাকা আত্মসাৎ হয়নি। জাস্ট ফান্ডটা মুভ হয়েছে। তবে সুদে আসলে অ্যাকাউন্টেই টাকাটা জমা আছে। কোনো টাকাটা ব্যয় হয়নি।’</p> <p style="text-align:justify">২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বকশীবাজারে কারা অধিদপ্তরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। </p> <p style="text-align:justify">একইসঙ্গে খালেদা জিয়ার ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত।</p> <p style="text-align:justify">একই বছরের ২৮ মার্চ খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদকের করা আবেদনে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এরপর সাজা বৃদ্ধিতে দুদকের আবেদনে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেন। এখন ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের ওপর শুনানি চলছে।</p> <p style="text-align:justify">এদিকে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করেছেন রাষ্ট্রপতি। তবে রাষ্ট্রপতির এই ক্ষমার পরেও মামলা দুটি আইনগতভাবে লড়ার কথা জানিয়ে বিএনপির আইনজীবীরা বলেন, খালেদা জিয়া আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। রাষ্ট্রপতি তার সাজা মওকুফ করেছেন। তবে সেখানে ক্ষমার কথা আছে। খালেদা জিয়া ক্ষমায় বিশ্বাসী নন। তিনি অপরাধ করেননি। তিনি ক্ষমাও চাননি। তাই এটা আইনগতভাবে মোকাবেলা করবেন। সে অনুযায়ী আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া।</p>