সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগে সদ্য জারি করা ‘সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর চারটি ধারা সংশোধনের পদক্ষেপ চেয়ে সরকারকে আইনি নোটিশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। গতকাল বুধবার (২২ জানুয়ারি) আইন সচিবকে এই নোটিশ পাঠান হয়।
নোটিশ প্রদানকারী আইনজীবী আজমল হোসেন খোকন কালের কণ্ঠকে বলেন, “কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা, কাউন্সিলের সচিব, কাউন্সিলের ক্ষমতা ও কাজ এবং হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক নিয়োগের সুপারিশ সংক্রান্ত ধারা সংশোধন চাওয়া হয়েছে। তিনদিনের মধ্যে পদক্ষেপ না নিলে বিষয়টি নিয়ে আদালতে যাব।
”
আরো পড়ুন
ভারতে প্রশিক্ষণে যাচ্ছেন কর্মকর্তা, যা বললেন পিনাকী
নোটিশে বলা হয়েছে, ‘অধ্যাদেশের ৩ ধারা অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের দুটি দলে বিভক্ত করা হয়েছে। এর ফলে বিচারকদের মধ্যে স্বার্থের দ্বন্দ্ব দেখা দেবে। তাছাড়া কাউন্সিলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কোনো প্রতিনিধি রাখা হয়নি।
অধ্যাদেশের ৪ ধারায় বলা আছে, সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিলের সচিব হবেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল।
আবার বলা হয়েছে, তিনি হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক প্রার্থীও হতে পারবেন। এই বিধান স্বার্থের দ্বন্দ্ব তৈরি করবে।
আরো পড়ুন
রাজধানীতে গ্রেপ্তার হলেন কালিয়াকৈর ছাত্রলীগ সভাপতি সম্রাট
অধ্যাদেশের ৬ ধারা অনুসারে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হওয়ার জন্য ন্যূনতম বয়স ৪৫ ধরা হয়েছে, যা সংবিধানের পরিপন্থী এবং এর ফলে অনেক যোগ্য প্রার্থী বয়সসীমার কারণে বঞ্চিত হবেন। একই সঙ্গে এই বিধান বিচার বিভাগের কর্মকর্মাতের বিচারক হিসেবে নিয়োগের বাধ্যবাধকতা তৈরি করেছে।
তাছাড়া অধ্যাদেশর ৮ ধারার বিধান বাধ্যতামূলকভাবে অনুসরণে বাধ্যবাধকতা তৈরি করায় এটি অবৈধ, আইনগতকর্তৃত্ববহির্ভূত এবং সংবিধানের চরম লঙ্ঘন।’
অধ্যাদেশের ৩, ৪, ৬ ও ৮ ধারা সংশোধনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে নোটিশে বলা হয়েছে, তিনদিনের মধ্যে পদক্ষেপ না নিলে বিষয়টি জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় তা সংশ্লিষ্ট আদালতে নিয়ে যেতে বাধ্য হবো।
আরো পড়ুন
বিএনসিসি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সামরিক প্রশিক্ষিত ভলান্টিয়ার গোষ্ঠী
এদিকে ‘সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ, ২০২৫’-কে বৈষম্যমূলক বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন। তিনি এই অধ্যাদেশ সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার অধ্যাদেশ নিয়ে নিজের প্রতিক্রিয়ায় একথা বলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের এই নেতা।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিনের দাবি ছিল বিচারক নিয়োগের একটি নীতিমালার জন্য। শেষ পর্যন্ত একটি আইন হয়েছে। সেজন্য অন্তবর্তী সরকারকে ধন্যবাদ। কিন্তু যে আইনটি হয়েছে সেটি সম্পূর্ণ বৈষম্যমূলক। আমি এর সংশোধন দাবি করছি। এই আইনে যে প্রতিনিধিদের (কাউন্সিলে) রাখা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ বৈষম্যমূলক। কারণ হচ্ছে, নিম্ন আদালতের বিচারকদের থেকে সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগের জন্য কাউন্সিলে তাদের একজন প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। কিন্তু বেশি সংখ্যক বিচারক নিয়োগ হয় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের থেকে। কিন্তু কাউন্সিলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের কোনো প্রতিনিধি রাখা হয়নি। এই বিষয়টি শুধু আমাকে না সমস্ত আইনজীবীকে হতাশ করেছে।’
অধ্যাদেশটিকে আমলা প্রভাবিত মন্তব্য করে বার সভাপতি বলেন, ‘অধ্যাদেশটি করেছে আইন মন্ত্রণালয়। খসড়া করেছে আইন মন্ত্রণালয়। আমলাদের প্রভাব যে এই আইনে (অধ্যাদেশে) ছিল, তা একেবারে স্পষ্ট। সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ করবেন, আর সেখানে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবীদের কোনো প্রতিনিধি থাকবে না, এটা বিশ্বাস করা যায়? সর্বশেষ যেসব বিচারক নিয়োগ হয়েছে, সেখানে আমি দেখিয়েছি ১৬ বছরে একটি মামলা লড়েনি সুপ্রিম কোর্টে। কোর্টের সাথে যার কোনো সম্পর্ক নাই, তিনি বিচারক হয়ে গেছেন। অর্থাৎ ঘুরেফিরে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ ক্ষমতা আমলাদের কাছেই রয়ে গেল। কাউন্সিলে আইনজীবীদের কোনো প্রতিনিধি থাকবে না, এটা গ্রহণযোগ্য না। আমি মনে করি আইনজীবীদের অসন্তোষ দুর করার জন্য আইনজীবীদের প্রতিনিধি রেখে অনতিবিলম্বে আইনটি সংশোধন করা উচিৎ।’
স্থায়ী ও স্বতন্ত্র কাউন্সিলের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগের বিধান রেখে গত ২১ জানুয়ারি অধ্যাদেশ জারি করে অন্তবর্তী সরকার। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ থেকে এই অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এতে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগে উপযুক্ত ব্যক্তি বাছাই করে প্রধান বিচারপতি কর্তৃক রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিতে অধ্যাদেশটি প্রণয়ন করা হয়েছে। সংবিধানের ৯৫ (গ) অনুচ্ছেদে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগে আইনের কথা বলা আছে। কিন্তু ১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়নের পর গত ৫৩ বছরে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়নি কোনো সরকার।