<p>মুসলমানরা আগের সব উম্মতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। তাদের এই শ্রেষ্ঠত্বের কারণ বিবৃত হয়েছে পবিত্র কোরআনে।‌ আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা সেই শ্রেষ্ঠতম দল, মানুষের কল্যাণের লক্ষ্যে যাদের অস্তিত্ব দান করা হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের আদেশ করবে ও অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১১০)</p> <p>দুনিয়ার সম্মান ও সফলতা শুধু তাদের প্রাপ্য, যারা সৃষ্টির কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দেয়। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা রুকু করো, সিজদা করো, তোমাদের রবের ইবাদত করো এবং কল্যাণকর কাজ করো, যাতে তোমরা সফল হতে পারো।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৭৭)</p> <p>অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত, যারা (মানুষকে) কল্যাণের দিকে আহবান করবে, সৎ কাজের আদেশ করবে এবং মন্দ কাজে বাধা প্রদান করবে, তারাই হলো সফলকাম।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১০৪)</p> <p>মানুষের উপকার করা সর্বোত্তম আমল। এ জন্য যারা এই আমল করে, হাদিসের পরিভাষায় তাদের ‘খাইরুন নাস’ (সর্বোত্তম মানুষ) বলা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সর্বোত্তম মানুষ সে মানুষের উপকার করে যে।’ (ফাতহুল কাবির, ২/৯৮)</p> <p>অন্য হাদিসে এসেছে, ‘কতিপয় সাহাবায়ে কেরাম একবার কোনো এক জায়গায় বসা ছিলেন। এমন সময় মহানবী (সা.) তাঁদের পাশে এসে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আমি কি তোমাদের বলে দেব, তোমাদের মধ্যে কে সবচেয়ে ভালো এবং কে সবচেয়ে নিকৃষ্ট? সাহাবায়ে কেরাম চুপ রইলেন।রাসুলুল্লাহ (সা.) এই কথা পর পর তিনবার বললেন। অতঃপর এক সাহাবি বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের জানিয়ে দিন। তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো সে ব্যক্তি, যার কাছে কল্যাণ কামনা করা যায় এবং যার ক্ষতি থেকে বেঁচে থাকা যায়। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট সে, যার থেকে কল্যাণ কামনা করা যায় না এবং যার অনিষ্ট হতেও নিরাপদ থাকা যায় না।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২২৬৩)</p> <p>পরোপকারী ব্যক্তি আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় বান্দা। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, ‘এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় কে এবং কোন আমল আল্লাহ তাআলা সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন? তিনি বলেন, অত্যধিক পরোপকারী ব্যক্তি আল্লাহর কাছে সবচেয়ে পছন্দনীয়। যে মানুষের বিপদাপদ দূর করে, অথবা ঋণ পরিশোধ করে দেয়, অথবা লোকদের ক্ষুধা নিবারণ করে।’ (আত-তারগিব ওয়াত তারহিব, হাদিস : ২৬২৩)</p> <p>আল্লাহর পছন্দনীয় ব্যক্তি হওয়া পরম সৌভাগ্যের বিষয়। কারণ আল্লাহ তাআলা যাকে পছন্দ করেন, যাকে মহব্বত করেন, আসমান ও জমিনের সবাই তাকে পছন্দ ও মহব্বত করে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন আল্লাহ কোনো বান্দাকে মহব্বত করেন, জিবরাইল (আ.)-কে ডেকে বলেন, অমুক ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা ভালোবাসেন, তুমিও তাকে ভালোবাস। অতঃপর জিবরাইল (আ.) আকাশের অধিবাসীদের মধ্যে ঘোষণা করেন, আল্লাহ তাআলা অমুক বান্দাকে ভালোবাসেন, তোমরাও তাকে ভালোবাস। এরপর আকাশের অধিবাসীরা তাকে ভালোবাসতে থাকে এবং জমিনেও তাকে সম্মানিত করার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩২০৯)</p> <p>ইসলাম সব সময় সব ধরনের কল্যাণকর কাজের আদেশ দেয়। মন্দ কাজ থেকে বেঁচে থাকার কথা বলে। পরোপকারে লিপ্ত থাকা, মানুষের ক্ষতির কারণ না হওয়া ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় সকালে উপনীত হয় যে তার ভেতরে মুসলমানদের কল্যাণ ও অকল্যাণের বিষয়ে কোনো ফিকির থাকে না, সে মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (মুসতাদরাকে হাকেম : ৪/৩২০)</p> <p>এ জন্য প্রতিজন মুসলমানের একান্ত কর্তব্য হলো, মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত থাকা। তাদের উপকার করতে সচেষ্ট থাকা। আল্লাহ তাআলা সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমিন।</p>