<p>খাদিজা (রা.) ৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতা খুওয়াইলিদ, মাতা ফাতেমা। তাঁরা উভয়ে কুরাইশ বংশের ছিলেন। (সিরাত বিশ্বকোষ : ২:৩০৮)</p> <p>পিতা খুওয়াইলিদ ব্যবসায়ী হওয়ার সুবাধে তিনিও খুব সহজে ব্যবসায় থিতু হন। তৎকালীন মক্কার নামকরা ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের নাম নিলেই উচ্চারিত হতো খাদিজার নাম। তিনি নিজে ব্যাবসায়িক কাজে কোথাও যেতেন না। ব্যবসার কাজে আঞ্জাম দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট লভ্যাংশের শর্তে বিচক্ষণ লোকদের নিয়োগ দিতেন। তাদের দ্বারাই ব্যবসা পরিচালনা করতেন। এই সূত্র ধরেই নবীজির সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ। খাদিজার ব্যাবসায়িক কারবার এত ব্যাপক ছিল যে তার একক-ব্যাবসায়িক কাফেলা কোরাইশের গোটা কাফেলার সমান হতো। (সিরাত বিশ্বকোষ : ২:২৯২)</p> <p>যেহেতু নবী (সা.)-এর প্রশংসা ও গুণাবলির কথা পুরো মক্কায় প্রসিদ্ধ ছিল। তাই নবী (সা.)-এর কথা তাঁরও অজানা ছিল না। তিনি মহানবী (সা.)-এর সততা, বিশ্বস্ততা, বিচক্ষণতা ও বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগানোর ইচ্ছা করলেন। নির্ধারিত লভ্যাংশে অংশীদার হওয়ার শর্তে নবীজিকে ব্যবসা পরিচালনা করার প্রস্তাব করেন। নবীজি তাঁর প্রস্তাবে রাজি হন। চুক্তি সম্পাদিত হলে ব্যাবসায়িক কাফেলার প্রধান হয়ে মহানবী (সা.) সিরিয়া গমন করেন। ব্যাবসায়িক সেই সফরে আশাতীত মুনাফা অর্জিত হয়। এ ছাড়া তাঁর ব্যবসার উদ্দেশ্যে নবীজি (সা.) ইয়েমেন ও তিহামায়ও গমন করেছিলেন। (সীরাত বিশ্বকোষ : ২:২৯৯)</p> <p>সিরিয়ায় যাওয়ার প্রাক্কালে খাদিজা (রা.) তাঁর গোলাম মায়সারাকে নবীজির সহকারী হিসেবে সঙ্গে দেন। সিরিয়া পৌঁছে নবীজি একটি গাছের নিচে বসেন। পাশেই ধর্মযাজক নাসতুরার ইবাদত গৃহ ছিল। তিনি মায়সারাকে ডেকে বলেন, তোমার এই সঙ্গী এ উম্মতের নবী হবেন। (সীরাতে ইবনে হিশাম : ১/১৭৭)</p> <p>বাণিজ্য শেষে নবীজি যখন মক্কার উপকণ্ঠে পৌঁছলেন তখন দিনের দ্বিপ্রহর ছিল। নবীজি (সা.) আগে ছিলেন আর মায়সারা কিছুটা পেছনে। ঠিক সেই সময়ে খাদিজা তাঁর সাথিদের নিয়ে ছাদে অবস্থান করছিলেন। হঠাৎ তাঁর দৃষ্টি আগত কাফেলায় নবীজি (সা.)-এর ওপর পড়ে। তিনি দেখতে পান, নবী (সা.)-এর উট দ্রুত চলছে আর দুজন ফেরেশতা দ্বিপ্রহরের কঠিন রোদ থেকে রক্ষা করতে তাঁকে ছায়া দিয়ে আসছেন। (সীরাত বিশ্বকোষ : ২:৩১২)</p> <p>তিনি মায়সারার কাছে সফরের বিস্তারিত বিবরণ চানতে চাইলে পথে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলি সবিস্তারে বলে দেন। নবীজির বিষয়গুলো তাঁর অন্তরে রেখাপাত করে। তিনি চাচাতো ভাই ওয়ারাকা বিন নাওফালের কাছে গেলেন। যিনি পূর্ববর্তী আসমানি কিতাবের জ্ঞানী ছিলেন। খাদিজা (রা.) তাঁকে বিষয়গুলো খুলে বলেন। বিস্তারিত শুনে তিনি বললেন, তোমার কথা যদি সত্যি হয়, তাহলে তিনিই হবেন শেষ নবী। (সীরাতে ইবনে হিশাম : ১/১৭৯)</p> <p>নিজের চোখে দেখা ঘটনা, মায়সারার মুখে শোনা কাহিনি এবং ওয়ারাকার সত্যায়ন। সর্বোপরি নবীজির সততা, ভদ্রতা, বিশ্বস্ততা এবং অন্য গুণাবলিতে তিনি বিমোহিত হয়ে যান। এবং নবীজিকে বিবাহ করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হন। নবীজির কাছে এভাবে বিয়ের প্রস্তাব পাঠান—‘হে চাচাতো ভাই! আপনার মধ্যে যে বিশ্বস্ততা, সত্যবাদিতা এবং চারিত্রিক মাধুর্য আছে, আমি তাতে মুগ্ধ ও অভিভূত। আপনি রাজি থাকলে আমি আপনার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে চাই।’ নবীজি (সা.) তাঁর অভিভাবকদের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রস্তাব কবুল করেন। উভয় পরিবারের বড়দের উপস্থিতিতে আব্দুল মুত্তালিবের খুতবায় শুভ বিবাহ সম্পন্ন হয়। (সীরাতে ইবনে হিশাম : ১/১৭৮)  </p> <p>নবীজির সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আগে খাদিজার দুটি বিবাহ হয়েছিল। প্রথম স্বামীর নাম আবু হালাহ। তাঁর থেকে খাদিজার হিন্দ, হালা, হারিস ও তাহের নামে চারজন পুত্রসন্তান জন্ম গ্রহণ করেন। আবু হালাহর ইন্তেকালের পর আতিক ইবনে আয়েজের সঙ্গে খাদিজার বিবাহ হয়। তাঁর থেকে হিন্দা নামের একজন কন্যাসন্তান জন্ম গ্রহণ করেন। তিনিও ইন্তেকাল করেন। (সীরাত বিশ্বকোষ : ২/৩১২)</p> <p>নবীজির সাত সন্তানের মধ্যে ইবরাহিম ছাড়া কাসেম, তাহের, জয়নাব, উম্মে কুলসুম, রুকাইয়্যা ও ফাতিমা খাদিজার গর্ভে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি নবীজির কাছে এতটাই প্রিয় ছিলেন যে তাঁর জীবিতাবস্থায় তিনি আর কাউকে বিবাহ করেননি। একবার আয়েশা (রা.) তাঁর ব্যাপারে কিছু বললে, নবীজি (সা.) তাঁকে ধমক দিয়ে সতর্ক করেন। হাদিসে এসেছে, নবীজি (সা.) বলেন, ‘খাদিজা এ যুগের শ্রেষ্ঠ নারী।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৪৩২)</p> <p>নবুয়তের দশম বছর ৬৪ বছর বয়সে এই মহীয়সী নারী দুনিয়া ত্যাগ করে রবের সান্নিধ্যে চলে যান।</p>