<p style="text-align:justify">দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে গ্যাস ও কয়লাভিত্তিক উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে। এতে কমছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি তেলের ব্যবহার। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় সাত লাখ মেট্রিক টন ডিজেল বিক্রি কমেছে। জ্বালানি তেল ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় কয়লা ও গ্যাসের তুলনায় তিন গুণের বেশি।</p> <p style="text-align:justify">তবু আগে সারা বছর তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হতো। বন্ধ রাখা হতো গ্যাস ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার বড় একটি অংশ। এখন বিদ্যুতের চাহিদা তেমন না বাড়ায় উৎপাদন খরচ বিবেচনায় তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের  বেশির ভাগ বসিয়ে রাখা হচ্ছে। একই সঙ্গে নতুন করে আর জ্বালানি তেলভিত্তিক রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মেয়াদ আর বাড়ানো হচ্ছে না। তেলভিত্তিক পুরনো বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ধাপে ধাপে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।</p> <p style="text-align:justify">দেশের তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর (ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল) উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ছয় হাজার মেগাওয়াট। এর মধ্যে বেসরকারি খাতের ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারের (আইপিপি) উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় চার হাজার মেগাওয়াট।</p> <p style="text-align:justify">বিপিসির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ডিজেল বিক্রি হয়েছিল ৪৯ লাখ ৩৫ হাজার ৪৮৩ মেট্রিক টন।</p> <p style="text-align:justify">তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ডিজেল বিক্রি হয় ৪২ লাখ ৫৪ হাজার ৮৭৯ মেট্রিক টন। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ডিজেলের প্রাক্কলিত চাহিদা ধরা হয়েছে ৪৭ লাখ মেট্রিক টন। যদিও বিপিসির কর্মকর্তারা বলছে, প্রাক্কলিত চাহিদার চেয়ে চলতি অর্থবছরে অন্তত ১০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল কম বিক্রি হতে পারে।</p> <p style="text-align:justify">বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) সূত্র বলছে, ফার্নেস তেলভিত্তিক কেন্দ্র থেকে এখন ১ ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে জ্বালানি খরচ গড়ে ১৭ টাকা। আর গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি খরচ দাঁড়ায় প্রায় চার থেকে পাঁচ টাকার মতো।</p> <p style="text-align:justify">কয়লায় ব্যয় ছয় থেকে সাত টাকার মতো। ব্যয় বেশি হলেও গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৩ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে জ্বালানি তেল ব্যবহার করে। একই অর্থবছরে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয় ২৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছিল প্রতি ইউনিট ১১ টাকা ৫২ পয়সা, যার একটি কারণ ব্যয়বহুল তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন।</p> <p style="text-align:justify">বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত নিয়ে করা এক গবেষণার তথ্য বলছে, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত জ্বালানির ৬২ শতাংশই আমদানি করতে হয়। অন্যদিকে এসব কেন্দ্রের জ্বালানি আমদানি ব্যয় মেটাতে না পারায় অনেক কেন্দ্র বিভিন্ন সময় বসিয়ে রাখতে হচ্ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জ্বালানি ব্যয় ও খরচ বিবেচনায় জ্বালানি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মোট সক্ষমতার প্রায় ৮০ শতাংশই উৎপাদনে ছিল না।</p> <p style="text-align:justify">জানতে চাইলে বিপিডিবির সদস্য (উৎপাদন) খন্দকার মোকাম্মেল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা আগের তুলনায় ব্যয়বহুল তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন কমিয়ে আনতে পেরেছি। শীতকালে চাহিদা কম থাকায় তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো চালানোর প্রয়োজন পড়ছে না। তবে গ্রিডের কিছু লিমিটেশনের কারণে বিভিন্ন এলাকায় কিছু তেলভিত্তিক কেন্দ্র আমাদের চালাতে হচ্ছে। এখন দিনের বেলা সর্বোচ্চ ২০০ থেকে ৩০০ মেগাওয়াটের মতো তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি তেলের ব্যবহার কমে যাওয়ার কারণে বিপিডিবির ব্যয় কিছুটা কমেছে বলেও তিনি জানান।</p> <p style="text-align:justify">বিপিডিবি সূত্রে জানা গেছে, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মোট সক্ষমতা প্রায় ২৮ হাজার মেগাওয়াট। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট। তবে গ্রীষ্মে উৎপাদন করা হয় ১৪ হাজার ১৬ হাজার মেগাওয়াট। শীতে সেটা নামে ৯ থেকে ১০ হাজার মেগাওয়াটে।</p> <p style="text-align:justify">মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৪৪ শতাংশ গ্যাস, তেলভিত্তিক ২১ শতাংশ, কয়লাভিত্তিক ২৬ শতাংশ। বাকি সক্ষমতা আমদানি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি।</p> <p style="text-align:justify">বিপিসির চেয়ারম্যান (সচিব) মো. আমিন উল আহসান বলেন, ‘বিদ্যুৎকেন্দ্রে চাহিদা কমে যাওয়ায় ডিজেলের বিক্রি কিছুটা কমে গেছে। তবে অন্যান্য জ্বালানির বিক্রি অনেকটাই আগের মতোই রয়েছে।’</p> <p style="text-align:justify">বিপিসির তথ্য বলছে, ডিজেল, ফার্নেস অয়েল, জেট ফুয়েল, অকটেন, পেট্রোল, কেরোসিন, মেরিন ফুয়েলসহ অন্যান্য জ্বালানি তেল ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিক্রি হয়েছে ৬৭ লাখ ৬১ হাজার ৩২০ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ডিজেল ৬৩ শতাংশ, পেট্রোল ও অকটেন ৬ শতাংশ, ফার্নেস অয়েল ১৪ শতাংশ, জেট ফুয়েল ৮ শতাংশ, কেরোসিন ১ শতাংশ ও অন্যান্য জ্বালানি তেল ২ শতাংশ বিক্রি হয়েছে। মোট জ্বালানির ৫৬ শতাংশই ব্যবহার হয়েছে যোগাযোগ খাতে, বিদ্যুৎ খাতে ১৮ শতাংশ ও কৃষি খাতে ১৮ শতাংশ ব্যবহার হয়েছে। বাকি জ্বালানি তেল শিল্প, গৃহস্থালি ও অন্যান্য খাতে ব্যবহার করা হয়েছে।</p>