<p style="text-align:justify">মাষকলাইয়ের ডাল ও চালকমুড়া কুমড়াবড়ির প্রধান উপাদান। এ ছাড়া বেশকিছু মসলার সংমিশ্রণে এ বড়ি তৈরি করা হয়। শীতের শুরুতেই ঐতিহ্যবাহী এই খাদ্যটি তৈরির ধুম পড়েছে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলাজুড়ে। এ মৌসুমে কুমড়াবড়ি তৈরি করে বাড়তি আয় করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন উপজেলার প্রায় দেড় সহস্রাধিক নারী।</p> <p style="text-align:justify">জানা যায়, সারা বছরই কমবেশি কুমড়াবড়ি তৈরি হলেও শীত মৌসুমে-এর চাহিদা থাকে বেশি। বাজারে কুমড়াবড়ির চাহিদা এবং ভালো দাম থাকায় এলাকার অনেক পরিবার ফিরিয়ে এনেছে নিজেদের সচ্ছলতা। ঝিনাইদহের শৈলকুপার গাড়াখোলা, ফুলহরি, ভান্ডাড়িপাড়া, কবিরপুর ও লাঙ্গলবাঁধসহ উপজেলার প্রায় দেড় সহস্রাধিক গ্রামীণ নারী কুমড়াবড়ি তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিশেষ করে কার্তিক, অগ্রহায়ণ ও পৌষ এ তিন মাস তৈরি করা হয় কুমড়াবড়ি।</p> <p style="text-align:justify">গাড়াখোলা এলাকার রাশেদা বেগম জানান, ‘মাষকলাই প্রথমে রোদে শুকিয়ে জাঁতায় ভেঙে পরিষ্কার করে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। ১০ কেজি মাষকলাই থেকে আট কেজি ডাল পাওয়া যায়। এর সঙ্গে ৪ থেকে ৫ কেজি ওজনের কুমড়া ও অন্তত ৩০ টাকার মসলা দিতে হয়। এরপর ভোররাত থেকে শিলপাটায় ডাল মিহি করে গুঁড়ো করা হয়। বর্তমানে অনেক এলাকায় মেশিনের সাহায্যে প্রতি কেজি ১০ টাকা করে মাষকলাই ও কুমড়া দিয়ে মিহি করা হয়। এরপর কুড়ে রাখা চাল কুমড়াসহ মসলা মিশিয়ে সকাল থেকে কুমড়াবড়ি তৈরি শুরু হয়। প্রতিদিন সকাল ১১টা পর্যন্ত কুমড়াবড়ি তৈরির কার্যক্রম চলে। কুমড়াবড়ি তৈরির পর দুই থেকে তিন দিন একটানা রোদে শুকাতে হয়। সূর্যের আলো একটু আলো কম হলে ৩ থেকে ৪ দিন পর্যন্ত সময় লাগে। ৮ কেজি কাঁচামাল শুকিয়ে প্রায় ৬ কেজি কুমড়াবড়ি পাওয়া যায়। শুকিয়ে খাবার উপযোগী হলে হাট-বাজারে খুচরা ও পাইকারিভাবে বিক্রি করা হয়। নানা জাতের তরকারির সঙ্গে কুমড়াবড়ি রান্না করলে খাবারে এনে দেয় ভিন্ন রকমের স্বাদ। এবার প্রতিকেজি  টাকা থেকে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।’</p> <p style="text-align:justify">কুমড়াবড়ি তৈরির আরেক কারিগর ফুলহরি গ্রামের লক্ষী রানী বলেন, ‘গ্রামীণ নারীরা বসে না থেকে সংসারের বাড়তি আয়ের জন্য কুমড়াবড়ি তৈরি করেন। এখানে পুরুষদের কোনো সহযোগিতা ছাড়াই শুধু নারীরা এ কাজ করে। বর্তমান বাজারে সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। তবে কুমড়াবড়ির দাম বাড়েনি। গত বছরের দামেই আমরা বিক্রি করছি। আমাদের তৈরি এসব কুমড়াবড়ি চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, যশোর, মাগুরা ও ফরিদপুরসহ বেশ কয়েকটি জেলার পাইকাররা এসে কিনে নিয়ে যায়।’</p> <p style="text-align:justify">এ ব্যাপারে শৈলকুপার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্নিগ্ধা দাস বলেন, ‘অল্প পুঁজিতে লাভ বেশি হওয়ায় কুমড়াবড়ির সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রান্তিক পর্যায়ের গ্রামীণ নারীরা অর্থনীতিতে বেশ অবদান রাখছেন। এ উপজেলাতে বাণিজ্যিকভাবে সুস্বাদু মাষকলাইয়ের কুমড়াবড়ি তৈরি হয়ে থাকে, তা খুব সুস্বাদু। এ কুমড়াবড়ি আমাদের জেলার চাহিদা পূরণ করে অন্যান্য জেলাতেও সেগুলো সরবরাহ করা হচ্ছে। নারীরা যদি এই কর্মপরিকল্পনা আরো বৃহৎ আকারে করতে চায়, তাহলে আমাদের পক্ষ থেকে তাদের সকল প্রকার সহযোগিতা করা হবে।’</p>