লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক উৎপাদনের পরেও বাজার মূল্য কমে যাওয়ায় হতাশ গলাচিপার আলু চাষিরা। দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় পটুয়াখালী জেলায় কোন হিমাগার না থাকায় কৃষকরা মাঠে-ঘাটে, বাগানে আলু স্তুপ করে রেখেছেন। এতে শুধু গলাচিপা উপজেলায় বর্তমান বাজার অনুযায়ী প্রায় ১০ কোটি টাকার আলু নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন গলাচিপার কৃষকরা। সংশ্লিষ্ট কৃষক ও কৃষি অফিস সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
গলাচিপা উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মো. আকরামুজ্জামন বলেন, ‘এ বছর গলাচিপা উপজেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৬০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু ৩৬৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আলু বেশি চাষ হওয়ায় চাহিদা ও দাম কমে গেছে। এ জন্য এখানকার কৃষকরা তাদের উৎপাদিত আলু মাঠে-ঘাটে খড় বা পলিথিন দিয়ে স্তুপ করে রেখেছে।
’
তিনি আরো বলেন, ‘জেলার মধ্যে গলাচিপায় আলু চাষে এক নম্বর হলেও হিমাগার না থাকায় সংরক্ষণের অভাবে অনেক কৃষকই লোকসান দিতে বাধ্য হয়।’
গলাচিপার কালিকাপুর গ্রামের আলু চাষী মো. আল আমিন বলেন, ‘সাড়ে তিন একরের বেশি জমিতে আলু চাষ করি। বীজের জন্য বিএডিসি কিছু আলু কিনে নিয়েছে। বাকি আলু ক্ষেতে টাল (স্তুপ) দিয়ে রাখছি।
আলুর দাম কমে গেছে। কবে বিক্রি করতে পারমু জানি না। বরিশাল হিমাগারে যোগাযোগ করেও সেখানে সিরিয়াল পাই নাই। এখন আমি চিন্তায় আছি এতো আলু লইয়া কী করমু।’
বোয়ালিয়ার কৃষক মো. মিজান মিয়া বলেন, ‘আমরা আড়াই একর জমিতে আলু চাষ করি।
৫ লাখ ৯৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আলু পাইছি ৪ টন। এ আলুর বর্তামন বাজার মূল্য ৪ লাখ থেকে ৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। এতে আমার উৎপাদন খরচই ওঠে নাই। এ এলাকায় কোন পাইকার পাওয়া যায় না, ফলে এখন পর্যন্ত একটাও বিক্রি করা সম্ভব হয় নাই। যারা আসে তারাও দাম কম বলে। এখন সব আলু মাঠে স্তুপ করে পলিথিন দিয়া রাখছি। প্রতিদিনই আলু পঁচে আর চিন্তাও বাড়ে।’
এ প্রসঙ্গে গলাচিপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরজু আক্তার বলেন, ‘গলাচিপা উপজেলায় এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আলু চাষ বেশি হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে ২৮ টনের মতো ফলন পাওয়া গেছে। এ হিসেবে ১০ হাজার ৩৬০ মেট্রিক টন উৎপাদন হয়েছে। প্রতি টন ১৫০০ টাকা করে বর্তমান বাজারে বিক্রি হচ্ছে। কম দামে কৃষকরা আলু বিক্রি না করে মাঠে-ঘাটে স্তুপ করে রেখে দিয়েছে। উপকূলীয় পটুয়াখালী জেলায় একটি হিমাগার থাকলে হয়তো কৃষকদের এ শঙ্কট হতো না।