‘আমার বুকের ধন কবরে শুয়ে আছে। রাকিবকে হারিয়ে আমাদের জীবনের সব আনন্দ চিরতরে শেষ হয়ে গেছে। আমাদের কোনো ঈদ নেই, কোনো আনন্দ নেই। আজ রাকিব বেঁচে থাকলে একসঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতাম।
’
কথাগুলো বলেছিলেন গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ রাকিব বেপারীর মা রাশিদা বেগম।
গত বছরের ২১ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন রাকিব বেপারী।
গতকাল ঈদের বিকেল রাবিকের কবরের পাশেই দিনের অধিকাংশ সময় কেটেছে মা-বাবার।
গত ঈদ নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে করেছিলেন রাকিব।
'ফতুল্লা বাজার জামে মসজিদ'-এ বাবা ও ভাইকে নিয়ে ঈদের নামাজ পড়েছিলেন। এবার রাকিবকে ছাড়া সেই মসজিদে ঈদের নামাজ পড়তে যান বাবা মোশারেফ হোসেন। নামাজ শেষে ছেলের কথা স্মরণ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গ্রামের বাড়ি বরিশালের বানারীপাড়ায় রাকিবের কবর জিয়ারত করতে চলে আসেন মোশারেফ।
ছেলের কবর জিয়ারত শেষে বাবা মোশারেফ হোসেন বলেন, ‘বাবার কাঁধে সন্তানের লাশের চেয়ে পৃথিবীতে ভারী আর কিছু নেই। কিছুতেই এই শোক সইতে পারছি না। সবার কাছে আমার ছেলের জন্য দোয়া চাই। আল্লাহ যেন ওকে জান্নাতবাসী করেন।’
পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, গত বছরের ২১ জুলাই সকালে রাকিব ফতুল্লার পোস্ট অফিস এলাকায় বাজার করতে বের হন।
এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হন পোশাক শ্রমিক রাকিব বেপারী। ওই দিন দুপুরে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার খানপুর হাসপাতালে গিয়ে রাকিবের লাশ শনাক্ত করেন বাবা মোশারেফ হোসেন।
শহীদ হওয়ার চার মাস আগে প্রেমিকা জান্নাতকে বিয়ে করেছিলেন রাকিব। বিয়ের চার মাসের মাথায় স্বামীর মৃত্যুতে শোকে ভেঙেন পড়েন স্ত্রীও। ভেঙে যায় স্বপ্নের ‘সুখের ঘর’। এতিম জান্নাত ফিরে যান নানির কাছে।