১৯৬২ সালের ৮ জুন পাকিস্তানের দীর্ঘ সামরিক আইনও প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা হয় তাঁকে। সেই থেকে শেখ ফজলুল হক মনি বাংলার স্বাধিকার আন্দোলন-সংগ্রামের শক্তি-সাহস হয়ে ওঠেন।
১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের এক ঐতিহাসিক গৌরবোজ্জ্বল দিবস। এবারে জাতির শিক্ষার অধিকার আদায়ে আত্মদানের ইতিহাস ঐতিহ্য ছাত্রলীগকে করেছে মহিমান্বিত। শিক্ষা কমিশন আন্দোলনের বীরত্ব গাথা ইতিহাসে ১৭ সেপ্টেম্বর তারিখে বাংলার ছাত্রসমাজ ‘শিক্ষা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে।
শেখ ফজলুল হক মনির দেশপ্রেম, সংগ্রাম ও অধিকার আদায়ে ইতিহাসের অকাট্য দলিলসমগ্র তরুণ প্রজন্মের পড়া ও জানা দরকার। বিশেষ করে ছাত্রলীগের বন্ধুদের অত্যাবশ্যকীয়ভাবে এই ইতিহাস জানা বাঞ্ছনীয়।
১৯৫৩ সালের সামরিক শাসনামলে পূর্ব বাংলায় সব ধরনের রাজনৈতিক তত্পরতা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। দীর্ঘ পটপরিক্রমায় ১৯৬২ সালে শিক্ষা কমিশন আন্দোলনের ফলে স্বৈরাচার আইয়ুব সরকার মার্শল ল প্রত্যাহার করে মৌলিক গণতন্ত্র ঘোষণা করতে বাধ্য হয়।
এ সময় ছাত্রলীগের তত্কালীন সাধারণ সম্পাদক শেখ ফজলুল হক মনি আবার সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদারের পাশাপাশি আধুনিক চিন্তাধারার সংগ্রাম ও অধিকার আদায়ের প্রতিবাদী কৌশল অবলম্বন করে ছাত্রলীগের দলীয় মনোগ্রাম এবং পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। যে কারণে ছাত্রলীগের দলীয় মনোগ্রাম ও পতাকা তৈরির ইতিহাসে শেখ ফজলুল হক মনির আকণ্ঠ দেশপ্রেম ও বাঙালির ন্যায্য অধিকার আদায়ের প্রতিবাদী কল্পকাহিনি গচ্ছিত রয়েছে।
১৯৬৩ সালে ছাত্রলীগের জাতীয় কাউন্সিল আহ্বান করে নতুনভাবে ছাত্র রাজনৈতিক তত্পতরা বৃদ্ধির পাশাপাশি ছাত্রলীগের দলীয় পতাকা এবং মনোগ্রাম প্রকাশের মাধ্যমে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাংলার অর্থ-সম্পদ, ন্যায্যতা লুণ্ঠনের প্রতিবাদে সংগ্রামের প্রতীকী বার্তা দেন শেখ ফজলুল হক মনি।
তাঁর অনুরোধেই দেশের প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদিন ছাত্রলীগের দলীয় মনোগ্রাম ও পতাকার মৌলিক ধারণা প্রণয়ন করেন। এ কাজে সহযোগী হিসেবে যুক্তি-পরামর্শদানের জন্য বিখ্যাত বাংলা লৌকসাহিত্য শিল্পী অধ্যাপক মনসুর উদ্দিন সাহেবের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।
শেখ ফজলুল হক মনির দেশপ্রেমে সংগ্রাম ও প্রতিবাদের কৌশলগত রূপরেখায় চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদিন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক ও চিরায়িত বাংলার ঐতিহ্য নৌকাকে চলমান, প্রগতিশীল বিবেচনায় ছাত্রলীগের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চলমান ও প্রগতিশীলতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ছাত্রসংগঠনের মনোগ্রামের মধ্যাংশে নৌকার আকৃতি ব্যবহার করেন এবং তত্কালীন পূর্ব বাংলার সোনালি আঁশ ছিল ‘পাট’। যেহেতু পূর্ব বাংলার কৃষি খাতের স্বর্ণালি ফসল পাটের রপ্তানীকৃত লাভজনক অর্থের বেশির ভাগই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকরা অন্যায্যভাবে নিয়ে যেত; সেই প্রতিবাদে ছাত্রলীগের মনোগ্রামের দুই পাশে পাট পাতা আকৃতির ব্যবহার করা হয়েছে এবং শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির উদ্দেশ্য সামনে রেখে তিন তারকা চিহ্ন এবং স্পষ্ট বাংলা অক্ষরে ওপরে পূর্ব বাংলা ও নিচে ছাত্রলীগ লিখে চিরায়িত বাংলার ঐতিহ্য গাঢ় সবুজ রঙের পটভূমি ব্যবহারে করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দলীয় মনোগ্রাম প্রস্তুত করা হয়েছিল।
একই চিন্তাধারায় শেখ ফজলুল হক মনির পরামর্শক্রমে দেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের পরিপ্রেক্ষিতে শান্তির রং সাদা পটভূমিতে সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে তিনটি অগ্নিশিখা চিহ্নের ওপর শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির মন্ত্রে লাল রঙের তিন তারকা চিহ্নের রূপ দিয়ে ছাত্রলীগের দলীয় পতাকার আকৃতি নিরূপণ করেছিলেন বিখ্যাত চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদিন।
অবশ্য শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের এই রূপকল্প অনুযায়ী ছাত্রলীগের দলীয় মনোগ্রাম ও পতাকা তৈরির শিল্পকর্মে শেখ ফজলুল হক মনির সংগ্রাম ও অধিকার আদায়ের প্রতিবাদী বার্তায় বাঙালির ন্যায্য অধিকার লুণ্ঠনের চিত্রকর্ম চমত্কারভাবে ফুটিয়ে তুললেন তাঁরই ছাত্র তখনকার নামকরা চিত্রশিল্পী হাশেম খান। যা আজও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দলীয় মনোগ্রাম ও পতাকা হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। এভাবেই বাঙালি জাতির বৃহত্তর স্বার্থে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রামী পথচলায় ছায়াসঙ্গী হয়ে স্বাধীনতাসংগ্রামের বীজ বপনে ধারাবাহিকভাবে অবদান রাখেন শেখ ফজলুল হক মনি।
১৯৬৪ সালের ২২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনেম খাঁর আগমনের বিরুদ্ধে শেখ ফজলুল হক মনির নেতৃত্বে ছাত্রনেতারা সুদৃঢ় প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। বিক্ষোভ প্রতিবাদের কারণে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে পাকিস্তানি জান্তা শেখ ফজলুল হক মনির এমএ ডিগ্রি বাতিল করে। অবশ্য পরবর্তী সময়ে মামলায় জয়লাভ করে আলোচ্য ডিগ্রি ফিরে পান তিনি।
১৯৬৫ সালে পাকিস্তান নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার হয়ে দেড় বছর কারাভোগ করেন। ১৯৬৬ সালের ছয় দফা থেকে ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানের সংগঠক শেখ ফজলুল হক মনি আন্দোলন-সংগ্রামের থিংকট্যাংক হিসেবে ভূমিকা রেখেছিলেন। ১৯৬৬ সালের ৭ জুন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আটক অন্যান্য জাতীয় নেতার মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী শ্রমিক ধর্মঘট পালনের অগ্রভাগে নেতৃত্ব দেন শেখ মনি। ওই ধর্মঘটে পুলিশের গুলিতে তেজগাঁও শিল্প এলাকায় শ্রমিক নেতা মনু মিয়াসহ সারা দেশে ১১ জন নিহত হন। এবারেও তাঁকে গ্রেপ্তার করে দীর্ঘ দুই বছর আট মাস কারান্তরীণ রাখা হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে কারারুদ্ধ থাকা অবস্থায় ১৯৬৯ সালে বাঙালির গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মুক্তিলাভ করেন তিনি। প্রকৃতপক্ষে ষাটের দশকজুড়েই বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ বাস্তবায়নে শেখ ফজলুল হক মনি নিযুক্ত ছিলেন বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনে উপযুক্ত কর্মীদল ও সংগঠন গড়ার কাজে। ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক নির্বাচনী ইশতেহারের অন্যতম প্রণেতাও শেখ ফজলুল হক মনি।
ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গড়ে তোলা নেতাকর্মীদের সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধায় পরিণত করে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখ সমরে বীরত্ব গাথা নেতৃত্বের অর্জনই আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ। শেখ ফজলুল হক মনির ধমনিতে বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠে নিসৃত ৭ই মার্চের সেই গর্জন— ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ পরিপূর্ণভাবে কার্যকারিতা লাভ করে।
আন্দোলন-সংগ্রামের সতীর্থ সহচর সিরাজুল আলম খান, অনুজপ্রতিম আব্দুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমেদকে সহসঙ্গী করে শেখ ফজলুল হক মনি গড়ে তোলেন বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (বিএলএফ), যা মুজিববাহিনী নামে সর্বাধিক বিখ্যাত। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য শেখ ফজলুল হক মনিকে বাংলার ইতিহাস চির অমর করে রাখবে।
স্বাধীনতা লাভের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পুনর্গঠনের সংগ্রামে শেখ ফজলুল হক মনির ওপর আবারও আস্থা রাখলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর প্রত্যক্ষ নির্দেশে ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর উপমহাদেশের বৃহত্ যুব সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করলেন দূরদর্শীসম্পন্ন জননেতা শেখ ফজলুল হক মনি। যুব রাজনীতির পদযাত্রায় আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে দেশমাতৃকার অবকাঠামো উন্নয়ন সমৃদ্ধির কাজে আত্মনিয়োগ করেন বাংলার যুবশক্তিকে মানবসম্পদে পরিণত করার মধ্য দিয়ে। গড়ে তোলেন দেশপ্রেমিক আধুনিক যুবসমাজ।
দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন ও রাজনৈতিক ব্যস্ততার মধ্যেও শেখ ফজলুল হক মনির জ্ঞান আহরণের অভিলাষ বর্তমান প্রজন্মের জন্য নিদারুণ শিক্ষা হতে পারে। তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রহশালায় বিশ্বের ঐতিহাসিক তথ্যবহুল বইসমগ্র যে কাউকে বিস্মিত করত।
১৯৬৩ সালেই দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার তত্ত্বাবধানে সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত হন শেখ ফজলুল হক মনি। ১৯৬৯ সালে তাঁর রচিত গল্পের সংকলন বৃত্ত প্রথম প্রকাশিত হয়। সাবলীল লেখালেখিতে জনপ্রিয়তার কারণে পরবর্তী সময়ে এটি গীতারায় নামে দ্বিতীয় সংস্করণে প্রকাশিত হয়। যা বাংলাদেশের গণহত্যা সম্পর্কিত তাঁর সর্বাধিক আলোচিত ও ঐতিহাসিক সম্পাদনামূলক গ্রন্থ।
এরপর ১৯৭০ সালে নিজেই প্রকাশ করেছিলেন সাপ্তাহিক বাংলার বাণী ম্যাগাজিন, যা স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দৈনিক বাংলার বাণী পত্রিকায় রূপান্তর করা হয়। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন সদ্যঃস্বাধীন বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে দেশের তরুণ যুবসমাজে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সাংবাদিকতার বিকাশ ঘটাতে হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৩ সালে প্রকাশ করেন বিনোদনমূলক ম্যাগাজিন ‘সাপ্তাহিক সিনেমা’। ১৯৭৪ সালে তাঁর সম্পাদনায় ইংরেজি দৈনিক দি বাংলাদেশ টাইমস প্রকাশিত হয়। ‘দৈনিক বাংলার বাণী ও দি বাংলাদেশ টাইমস’ পত্রিকায় একই সঙ্গে ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষায়ই সম্পাদকীয় লিখতেন তিনি। এভাবেই পাকিস্তানিদের বর্বরতা, ধর্ষণ, গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের সার্বিক ফিরিস্তি তুলে ধরে বিশ্ব নজরে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে উপস্থাপন করতেন দেশপ্রেমিক লেখক শেখ ফজলুল হক মনি।
কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শ্রাবণ মেঘেঢাকা রাতের শেষভাগে বাংলার আকাশ-বাতাস নিস্তেজ হয়ে পড়ে শেখ পরিবারের নির্মম হত্যাকাণ্ডে। ঘাতকের নীল দংশনে মুহূর্তেই বিষাক্ত হয়ে যায় স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতির রক্তে রঞ্জিত মাটি। একই সঙ্গে স্বাধীনতা-সংগ্রামের দূরদর্শীসম্পন্ন প্রতিবিপ্লবী শেখ ফজলুল হক মনি ও তাঁর সন্তানসম্ভাবনা স্ত্রী আরজু মনির বুকের তাজা রক্তেও অভিশপ্ত হয় সবুজ-শ্যামল বাংলার মাটি।
আগস্টের সেই নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বিবরণীর স্মৃতিকথায় শেখ ফজলুল হক মনি ও আরজু মনির জ্যেষ্ঠপুত্র বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক শেখ ফজলে সামস পরশ তাঁর লেখা ‘নির্বাসনের দিনগুলি’ শিরোনামে এক প্রবন্ধে ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনায় উল্লেখ করেন—‘‘আমার মা মনে হয় বাবাকে অনেক বেশি ভালোবাসতেন। তাই প্রবৃত্তির বশবর্তী হয়েই মা বাবার সামনে মানবঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। সেই মুহূর্তে তিনি আমাদের কথাও ভাবেন নাই। মা স্বামীর প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসার উদাহরণ রেখে গেছেন। হয়তো বা গুলি লাগার পরে তাঁর আমাদের দুই ভাইয়ের কথা মনে হয়েছে। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ফিরে আসার আর উপায় ছিল না। তখনই মা চাচিকে বললেন, ‘ফাতু আমাকে বাঁচাও। আমার পরশ-তাপস! ওদেরকে তুমি দেইখো।’ ওটাই বোধ হয় মার শেষ কথা।”
অবুঝ দুই শিশুপুত্র শেখ ফজলে শামস পরশ ও শেখ ফজলে নূর তাপসকে রেখে বাংলার স্বাধীনতা-সংগ্রামের বিপ্লবী বীর শেখ ফজলুল হক মনি ও তাঁর সহধর্মিণী শামসুন্নেসা আরজু মনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আন্তর্জাতিক মদদপুষ্ট দেশীয় কিছু সেনা ঘাতকের নির্দয় বুলেট বিদ্ধ হয়ে মৃত্যু আলিঙ্গন করে ইহকাল ত্যাগ করেন।
শেখ ফজলুল হক মনি ১৯৩৯ সালের ৪ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামের ঐতিহ্যবাহী শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পূর্বপুরুষরা ছিলেন দরবেশ শেখ আউয়ালের বংশধর, যাঁরা উপমহাদেশের প্রখ্যাত ইসলাম সাধক হজরত বায়েজীদ বোস্তামী (রা.)-এর ধর্ম প্রচারে সহচর ছিলেন।
মধুমতী নদীর তীরভূমি টুঙ্গিপাড়ার সবুজ-শ্যামল গ্রামে শৈশব স্মৃতির মোহমায়া ছেড়ে শেখ ফজলুল হক মনি লেখাপড়ার সুবাদে ঢাকায় আসেন একবুক স্বপ্ন নিয়ে। অধ্যয়ন শুরু করেন নবকুমার ইনস্টিটিউটে। এই প্রতিষ্ঠান থেকে ১৯৫৬ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হন জগন্নাথ কলেজে এবং ১৯৫৮ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ১৯৬০ সালে বরিশাল ব্রজমোহন কলেজে ভর্তি হয়ে এই শিক্ষপ্রতিষ্ঠান থেকেই বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হয়ে ১৯৬২ সালে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। এ সময় তিনি স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। এ ছাড়া কারাবন্দি থাকা অবস্থায় ১৯৬৭ সালে আইনশাস্ত্রে এলএলবি ডিগ্রি সম্পন্ন করেন বাংলার এই সূর্যসন্তান।
স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, যুব রাজনীতির মহাপ্রাণ দূরদর্শীসম্পন্ন রাজনৈতিক, লেখক-সাংবাদিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ ফজলুল হক মনি বাংলার ইতিহাসে সংগ্রাম ও সাফল্যের অসংখ্য অকাট্য দলিল রচনা করে গেলেন মাত্র ৩৫ বছরের বর্ণাঢ্য জীবনে। ৮২তম জন্মবার্ষিকীতে তাঁর অমর কৃর্তির প্রতি বিশ্ব যুবসম্প্রদায়ের বিনম্র শ্রদ্ধা।
লেখক : সাবেক সভাপতি, ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগ (উত্তর) ও যুবনেতা, ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তর