<p>গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের যুদ্ধের ফলে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো উন্নয়ন সূচকগুলো প্রায় ৭০ বছর পিছিয়ে গেছে। এর ফলে আরো কয়েক মিলিয়ন ফিলিস্তিনি দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। জাতিসংঘের একটি নতুন প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।</p> <p>জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণের শুরু থেকে ফিলিস্তিনি অর্থনীতি এখন ৩৫ শতাংশ ছোট হয়ে গেছে। বেকারত্বের হার ‘সম্ভাব্যভাবে বেড়ে’ ৪৯.৯ শতাংশে পৌঁছতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।</p> <p>ইউএনডিপির গবেষণায় দেখা গেছে, গাজার ‘মানব উন্নয়নের প্রধান ক্ষেত্রগুলোতে গড় অর্জন’ নির্দেশকারী মানব উন্নয়ন সূচক (এইচডিআই) ১৯৫৫ সালের স্তরে নেমে আসতে পারে। এতে ৬৯ বছরের অগ্রগতি মুছে যাবে। অন্যদিকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে এইচডিআই এমন স্তরে নেমে আসতে পারে, যা ১৬ বছরের ক্ষতি নির্দেশ করবে। ইসরায়েলি সামরিক হামলা বাড়লে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে বলেও প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে।</p> <p>প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বছর গাজার দারিদ্র্যের হার প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ৭৪.৩ শতাংশে পৌঁছবে। সামগ্রিকভাবে গাজা উপত্যকা, অধিকৃত পশ্চিম তীরসহ ফিলিস্তিনি অঞ্চলে এখন ৪১ লাখ মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছে, যাদের মধ্যে গত বছরই ২৬ লাখ ১০ হাজার মানুষ যোগ হয়েছে।</p> <p>গাজার কেন্দ্রস্থল দেইর এল-বালাহ থেকে ইউএনডিপি প্রতিনিধি চিতোস নোগুচি বলেন, ‘ফিলিস্তিনের অবস্থা অভূতপূর্ব বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে।’ এ ছাড়া ইউএনডিপির প্রধান আচিম স্টেইনার জানিয়েছেন, অবকাঠামোগত ধ্বংস, দারিদ্র্য ও জীবিকা হারানোর পরিপ্রেক্ষিতে যুদ্ধের তাৎক্ষণিক প্রভাব ‘বিপুল’। তিনি আরো বলেন, ‘এই সামাজিক-অর্থনৈতিক মূল্যায়ন থেকে এটা স্পষ্ট, ধ্বংসের স্তর ফিলিস্তিনকে উন্নয়নের পথকে বছরের পর বছর পিছিয়ে দিয়েছে, সম্ভবত কয়েক দশকও।’</p> <p>স্টেইনার সতর্ক করে বলেন, যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর প্রতি বছর মানবিক সহায়তা প্রদান করলেও ফিলিস্তিনি অর্থনীতি সংকট আগের অবস্থায় ফিরে যেতে অন্তত এক দশক লাগবে।</p> <p>প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ইসরায়েলের বোমা হামলা গাজায় ৪২ মিলিয়ন টন ধ্বংসস্তূপ তৈরি করেছে, যা গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে, সোলার প্যানেল ধ্বংস হওয়ায় সেগুলো থেকে সিসা ও অন্যান্য ভারী ধাতু বেরিয়ে আসছে, যা বিপজ্জনক।</p> <p><strong>‘চারদিকে মৃত্যুর গন্ধ’ </strong><br /> এদিকে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা (ইউএনআরডাব্লিউএ) মঙ্গলবার উত্তর গাজায় আটকে থাকা বেসামরিক নাগরিকদের কাছে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর জন্য যুদ্ধবিরতির জরুরি আহ্বান জানিয়েছে। এক্সে এক পোস্টে সংস্থার প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেছেন, তার কর্মীরা যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে খাদ্য, পানি বা ওষুধ খুঁজে পাচ্ছেন না।</p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘মৃত্যুর গন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। কারণ দেহগুলো রাস্তার ওপর বা ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে আছে। লাশ সরানো বা মানবিক সহায়তা প্রদানে মিশনগুলোকে বাধা দেওয়া হচ্ছে।’</p> <p>গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী ‘আড়াই লাখেরও বেশি ট্রাক সহায়তা ও পণ্য প্রবেশে বাধা দিয়েছে’। এতে ৯৬ শতাংশ মানুষ খাদ্যসংকটের সম্মুখীন হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু করে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৪২ হাজার ৭১৮ জন নিহত এবং এক লাখের বেশি মানুষ আহত হয়েছে।</p> <p>সূত্র : এএফপি</p>