<p style="text-align:justify">রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির কর্মকতা মামদুদুর রহমানের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপগ্রন্থাগারিক পদে চাকরি পাওয়া তো দূরের কথা, তার আবেদন করার মতো শর্ত পূরণই হয়নি। নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের তৎকালীন নেতাদের ফোনকলসহ নানা কলাকৌশল কাজে লাগিয়ে শেষ পর্যন্ত ঠিকই নিয়োগ বাগিয়ে নেন তিনি।</p> <p style="text-align:justify">২০০৯ সালের ২ মে, এক বিজ্ঞপ্তিতে সেন্ট্রাল লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সেন্টারে সহকারী গ্রন্থাগারিক পদের জন্য যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়; তাতে বিজ্ঞপ্তির পদের ৩ নম্বর শর্তে দেখা যায়, লাইব্রেরি সায়েন্সে দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতক সম্মানসহ দ্বিতীয় শ্রেণির মাস্টার্স ডিগ্রি ও সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে অন্যূন ৫ বছরের অভিজ্ঞতা এবং কম্পিউটার পরিচালনায় বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। </p> <p style="text-align:justify">কিন্তু আবেদনের শেষ তারিখ ২০ মে ২০০৯ তারিখে তার অভিজ্ঞতা ছিল ৪ বছর ৪ মাস ৩ দিন। তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ডকুমেন্টেশন অফিসার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন ১৭ জানুয়ারি ২০০৫ তারিখে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ না করেই তিনি ২০০৯ সালের ১২ আগস্ট সেন্ট্রাল লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সেন্টারে সহকারী গ্রন্থাগারিক হিসেবে নিয়োগ পান। </p> <p style="text-align:justify">বেরোবির তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর ড. মু আবদুল জলিল মিয়ার নিকট বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গাইবান্ধা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিকের প্রেরিত প্রত্যয়নপত্র থেকে জানা যায়, মামদুদুর রহমানের বাবা বদরুল উলা লাবিব গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। এ ছাড়া আওয়ামী আমলে গাইবান্ধা জেলা জজ কোর্টের এপিপির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন বলেও উল্লেখ করা হয়।</p> <p style="text-align:justify">মামদুদুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা পরিষদের সদস্য ছিলেন এবং স্বাধীনতা পরিষদের হলুদ প্যানেল সদস্য হিসেবে অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশেনের নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করেন। তার বাবা আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয়ে এবং গাইবান্ধার সাবেক এমপি মাহবুব আরা গিনির সুপারিশে তিনি চাকরি লাভ করেন বলে জানা যায়।</p> <p style="text-align:justify">মামদুদুর রহমান স্বীকার করে বলেন, ‘আমার চাকরির জন্য বাংলাদেশে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতারা সুপারিশ করেন।’</p> <p style="text-align:justify">জানা যায়, মামদুদুর রহমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে সুবিধা লাভের জন্য আওয়ামীবিরোধী ভূমিকায় নেমেছেন।<br />   <br /> তিনি ২০১৭ সালের জুলাই মাসের ২ তারিখে উপগ্রন্থাগারিক হিসেবে পদোন্নতি পান এবং ২০১৯ সালের ২৬ জুলাই ২ বছরের ব্যবধানে তথ্য গোপন করে অতিরিক্ত গ্রন্থাগারিক পদে পদোন্নতির চেষ্ঠা করেন। কিন্তু বাছাই বোর্ডের নিকট যোগ্য বিবেচিত না হওয়ায় পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়নি। যা, সিন্ডিকেটের ৬৩তম সভার সিদ্ধান্ত-১২ তে উল্লেখ করা হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">মামদুদুর রহমানের চাকরির জন্য তৎকালীন ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপনসহ তিন ছাত্রলীগ নেতার ফোন কলের সুপারিশে হয়েছে বলে তিনি নিজেই গর্ব করে জানান।</p> <p style="text-align:justify">মামদুদুর রহমান বলেন, ‘হ্যাঁ, ‌‌‌‌আমার জন্য একজন নয়, তিনজন ফোন করেছিল। এটা আমি অস্বীকার করছি না। তবে আওয়ামী লীগের সুপারিশটি আমার জন্য নয়, আমার ছোট ভাইয়ের জন্য নেওয়া হয়েছিল।’</p> <p style="text-align:justify">আবেদনের যোগ্যতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তখন কত বছরের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছিল, তা আমার মনে নেই। তবে আমার উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজের অভিজ্ঞতা আছে। পাশাপাশি গ্রিন ইউনিভার্সিটিতে ১১ মাস কাজ করেছি।’</p> <p style="text-align:justify">নিয়োগের শর্ত পূরণ না করে কীভাবে চাকরি পেলেন—এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. হারুন-অর রশিদ বলেন, ‘তার ফাইল এখনো আমার হাতে পৌঁছায়নি। তবে বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখব।’</p> <p style="text-align:justify">বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শওকাত আলী বলেন, ‘উনি যেহেতু আগে নিয়োগ পেয়েছেন, তাই আমার জানা ছিল না। বিষয়টির সত্যতা পেলে আগামী সিন্ডিকেটে এবং পদোন্নতি বোর্ডে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’</p>