ঢাকা, মঙ্গলবার ০১ এপ্রিল ২০২৫
১৮ চৈত্র ১৪৩১, ০১ শাওয়াল ১৪৪৬

ঢাকা, মঙ্গলবার ০১ এপ্রিল ২০২৫
১৮ চৈত্র ১৪৩১, ০১ শাওয়াল ১৪৪৬

চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করুন

  • মুদ্রানীতি ঘোষণা
শেয়ার
চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করুন

বাংলাদেশ ব্যাংক জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে। নতুন মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি আগের মতো রাখা হয়েছে। আগামী জুন পর্যন্ত বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ৯.৮ শতাংশ, সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৭.৫০ শতাংশ লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। ব্যাংক খাত থেকে সরকারকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন টাকা ছাপিয়ে (রিজার্ভ মানি) মুদ্রার সরবরাহ বাড়াবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে।

মুদ্রানীতি ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিনিয়োগ বৃদ্ধির স্বপ্ন দেখছেন না তিনি। মূল্যস্ফীতি কমানোই প্রধান টার্গেট। তাঁর আশা, আগামী জুন মাসের মধ্যে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৭ থেকে ৮ শতাংশের মধ্যে নেমে আসবে।

তখন ধীরে ধীরে নীতি সুদহার কমানো হবে। তাঁর মতে, যেকোনো সিদ্ধান্তের ফল আসতে ছয় থেকে ১২ মাস পর্যন্ত সময় লাগে। আর কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়ার জন্য ১৮ থেকে ২৪ মাস সময় প্রয়োজন হয়। তাঁর আশা, দেশের মূল্যস্ফীতি আগামী জুনের মধ্যে ৭ থেকে ৮ শতাংশ ও ২০২৬ সালে ৫ শতাংশে নেমে আসবে।
এখন মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কাছাকাছি। বর্তমান বাস্তবতা হচ্ছে,  দেশের মানুষ বিশেষত কম আয়শ্রেণির পরিবারগুলো মূল্যস্ফীতির কারণে হিমশিম খাচ্ছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো মূল্যস্ফীতি। মুদ্রানীতিতে বংলাদেশ ব্যাংক যে নীতি গ্রহণ করেছে, তার লক্ষ্য বা মূল উদ্দেশ্যও হচ্ছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্যতম কার্যক্রম হলো দেশের মুদ্রা ব্যবস্থাপনা।

মুদ্রা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ ও দেশের অভ্যন্তরে বিনিয়োগ (সরকারি, বেসরকারি) প্রভাবিত করার পাশাপাশি মুদ্রা ব্যবস্থাপনার মূল লক্ষ্য থাকে দেশের প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করা। আবার প্রবৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত থাকে কর্মসংস্থান ও সামাজিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা অর্জন। সুদহার দ্বারা মুদ্রা সরবরাহ ও বিনিয়োগের পরিমাণ নির্ধারিত হয়ে থাকে। মুদ্রা সরবরাহের নিয়ামক নীতি সুদহার। ২০২৫ সালের জানুয়ারি-জুন পর্যন্ত মুদ্রানীতিতে রেপো হার ১০ শতাংশই রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বিনিয়োগ মন্দাকালেও নীতি সুদহার ১০ শতাংশে বহাল রাখার সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি মনে করে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে এই কঠোর অবস্থান বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহের পাশাপাশি সামগ্রিক অর্থনৈতিক সম্প্রসারণকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। তাদের মতে, জানুয়ারি-জুন ২০২৫ সালের জন্য বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৯.৮ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত বেসরকারি খাতকে আশাহত করেছে। ডিসিসিআই মনে করে, এতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ আরো হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেবে। বেসরকারি খাতের আস্থা ও ব্যাবসায়িক কার্যকলাপ পুনরুদ্ধারের জন্য এই খাতে ঋণ প্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা অবশ্যই দুই অঙ্কের ঘরে থাকা প্রয়োজন।

মূল্যস্ফীতি, নিম্ন প্রবৃদ্ধি, ধীরগতির বেসরকারি বিনিয়োগসহ বর্তমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ঘোষিত মুদ্রানীতি কার্যকর হোকএটাই আমাদের প্রত্যাশা।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

নতুন উচ্চতায় দুই দেশের সম্পর্ক

    প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর
শেয়ার
নতুন উচ্চতায় দুই দেশের সম্পর্ক

বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার চীন। পদ্মা সেতু, পায়রা বিদ্যুৎ হাব, রেলসংযোগসহ অনেক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে চীনের সহায়তায়। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যকার সেই সম্পর্ক এক নতুন উচ্চতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ ও চীন জলবিদ্যুৎ, পূর্বাভাস, বন্যা প্রতিরোধ ও দুর্যোগ হ্রাস, নদী খনন, পানিসম্পদের সমন্বিত ব্যবস্থাপনা, পানিসম্পদ উন্নয়ন এবং সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি বিনিময়ের ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদারে সম্মত হয়েছে।

গত শুক্রবার বেইজিংয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং ও অধ্যাপক ইউনূস বৈঠক করেন। চীনের রাজধানীর গ্রেট হল অব দ্য পিপলে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এই সফরে বাংলাদেশ ও চীন অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতা সংক্রান্ত একটি চুক্তি এবং ক্লাসিক সাহিত্যের অনুবাদ ও প্রকাশনা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিনিময় ও সহযোগিতা, সংবাদ বিনিময়, গণমাধ্যম, ক্রীড়া ও স্বাস্থ্য খাতে আটটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করে।

এশিয়ার বোয়াও ফোরামের মহাসচিবের আমন্ত্রণে অধ্যাপক ইউনূস গত ২৬ ও ২৭ মার্চ চীনের হাইনান প্রদেশে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার বার্ষিক সম্মেলনে অংশ নেন।

সম্মেলনের সাইডলাইনে চীনের উপপ্রধানমন্ত্রী ডিং শ্যুয়েশিয়াং অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর চীন সরকারের আমন্ত্রণে প্রধান উপদেষ্টা ২৭ থেকে ২৯ মার্চ বেইজিং সফর করেন। সেখানে চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হান ঝেংও অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বাংলাদেশ ও চীনের পক্ষ থেকে যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তিস্তা নদীর সমন্বিত ব্যবস্থাপনা ও পুনঃসংস্কার প্রকল্পে চীনা কম্পানিগুলোর অংশগ্রহণকে বাংলাদেশ স্বাগত জানিয়েছে।
উভয় পক্ষ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা এবং নীল অর্থনীতিতে সহযোগিতার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সম্মত হয়েছে। সমুদ্রসংক্রান্ত বিষয়ে বিনিময় জোরদারে এবং উপযুক্ত সময়ে সামুদ্রিক সহযোগিতা সংক্রান্ত নতুন সংলাপ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, চীন রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়ায় তার সামর্থ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে।

শুক্রবার বেইজিংয়ের দ্য প্রেসিডেনশিয়াল-এ চীনা ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে এক বিনিয়োগ সংলাপে অংশ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা চীনা বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহবান জানান।

তাঁর এই আহ্বানে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়। চীন সরকার ও চীনা কম্পানিগুলোর কাছ থেকে বাংলাদেশ ২১০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ, ঋণ ও অনুদানের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে।

আমরা আশা করি, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বিদ্যমান ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক উত্তরোত্তর আরো জোরদার হবে এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে চীন আগামী দিনগুলোতে আরো বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

মন্তব্য

সম্প্রীতির বন্ধন সুদৃঢ় হোক

    পবিত্র ঈদুল ফিতর
শেয়ার
সম্প্রীতির বন্ধন সুদৃঢ় হোক

দীর্ঘ এক মাসের সিয়াম সাধনার পর আনন্দের বার্তা নিয়ে এসেছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। মুসলমানদের প্রধান দুটি ধর্মীয় উৎসবের অন্যতম এই ঈদুল ফিতর। প্রতিবছর ছেলে-বুড়ো, নারী-পুরুষ, ধনী-দরিদ্র-নির্বিশেষে সবাই শরিক হয় এই আনন্দ উৎসবে। যে যার সাধ্যমতো এই দিনটি আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপন করে থাকে।

হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি ভুলে মানুষে-মানুষে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। ঈদুল ফিতর আসে সুশৃঙ্খল আচার-আচরণের শিক্ষা নিয়ে। আসে কৃচ্ছ্র ও শুদ্ধতার প্রতীক হয়ে। ঈদের আনন্দ নিকটজনদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পথের বিড়ম্বনা অগ্রাহ্য করে সবাই ছুটে যায় পরিবার, আত্মীয়-স্বজনের কাছে।
এবারও সেই চিরচেনা দৃশ্য। স্রোতের মতোই মানুষ ঢাকা ছেড়েছে।

দীর্ঘ এক মাসের সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে প্রত্যেক মুসলমান নৈতিক, আত্মিক ও সামাজিক পরিশুদ্ধির শিক্ষায় পরিশীলিত হয়। তাকওয়ার শক্তিতে বলীয়ান হয়ে নতুন জীবন শুরুর উদ্দীপনা পায়।

তাই ঈদ আসে শত্রুতা ও বৈরিতার প্রাচীর ডিঙিয়ে, বন্ধুত্ব ও মিত্রতার হাত বাড়িয়ে। ঈদ আসে মহামিলনের মহোৎসবে মনকে মাতিয়ে তুলতে। পরিশুদ্ধ হৃদয়ে পরিতৃপ্তির ছোঁয়া লাগাতে। তাই ঈদের আনন্দ সংক্রমিত হতে থাকে হৃদয় থেকে হৃদয়ে। দুস্থ, হতদরিদ্র, এতিম, নিঃস্ব ও ছিন্নমূল মানুষের মুখেও এই পবিত্র দিনে হাসির ফোয়ারা দেখা যায়।
মুসলমানদের এই খুশির দিনটিকে পরম আনন্দে ভাগাভাগি করে নেয় ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরাও। আর এভাবেই সর্বজনীন হয়ে ওঠে ঈদ।

ঈদুল ফিতর একাধারে আনন্দোৎসব ও ইবাদত। এই আনন্দ আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা প্রাপ্তির, জাহান্নাম থেকে মুক্তির। এই আনন্দ সিয়াম-কিয়ামের শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞতার। এই আনন্দে নেই কোনো পাপ-পঙ্কিলতা। এই আনন্দে কেবলই সওয়াব ও পূর্ণতা। ধীরে ধীরে এই আনন্দ সবার মাঝে সঞ্চারিত হতে থাকে। এই দিনে হতদরিদ্র, এতিম, দুস্থ, নিঃস্ব ও ছিন্নমূল মানুষের মুখেও হাসি ফোটে। ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ব্যবসায়ী ও কর্মজীবীরাও এ সময় ব্যস্ত হয়ে পড়েন সমান তালে। ঈদ উপলক্ষে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সুবিধা তাঁরাও ভোগ করেন। এভাবেই সর্বজনীন হয়ে ওঠে ঈদ।

ঈদ মুসলমানদের জন্য শুধু একটি ধর্মীয় উৎসবই নয়, সম্প্রীতি-সৌভ্রাতৃত্ব শেখার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষও। এই উৎসবের মাধ্যমে প্রত্যেক মুসলমান একে অপরের আরো কাছাকাছি আসে। শুধু মুসলমান নয়, অন্যান্য ধর্মের মানুষের সঙ্গেও আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়। পবিত্র রমজান আমাদের চিত্তশুদ্ধির যে শিক্ষা দিয়েছে, ঈদুল ফিতর হচ্ছে সেই শিক্ষা কাজে লাগানোর দিন। আজ একটি দিনের জন্য হলেও ধনী-গরিব সবাই দাঁড়াবে এক কাতারে। ভুলে যেতে হবে সব বৈষম্য, সব ভেদাভেদ। হিংসা, বিদ্বেষ ও হানাহানি থেকে নিজেদের মুক্ত করতে হবে। শান্তিপ্রিয় মানুষ হিসেবে সারা বিশ্বে মুসলমানদের মর্যাদা ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে হবে। ইসলাম যে প্রকৃত অর্থেই শান্তির ধর্ম, সেটি প্রমাণ করতে হবে। 

ঈদের সামাজিক দিকটিও গুরুত্বপূর্ণ। রোজা ও ঈদের সময় দরিদ্রদের প্রতি সমবেদনা ও সহযোগিতার মনোভাব বৃদ্ধি পায়। বৈষম্যের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসার কথা বলে ঈদ। ঈদ মানে পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন বৃদ্ধি। আমাদের ঘরে ঘরে ফিরে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি। সুদৃঢ় হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য। সবার ঘরে পৌঁছে যাক ঈদের সওগাত। আমাদের অসংখ্য পাঠক, গ্রাহক, বিজ্ঞাপনদাতা, বিপণনকর্মী, শুভানুধ্যায়ীসহ সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

এই ধারা অব্যাহত থাক

    প্রবাস আয়ের রেকর্ড
শেয়ার
এই ধারা অব্যাহত থাক

অর্থনীতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের জন্য একটি বড় সুখবর হচ্ছে রেমিট্যান্স বা প্রবাস আয়ের ক্রমাগত বৃদ্ধি। রেমিট্যান্সযোদ্ধারা বৈধ পথে ক্রমেই বেশি করে অর্থ পাঠাচ্ছেন। ফলে প্রতি মাসেই বাড়ছে প্রবাস আয়ের পরিমাণ। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ঈদের আগে চলতি মাসের প্রথম ২৬ দিনে ২৯৪ কোটি ডলারের প্রবাস আয় এসেছে।

শেষ দুই দিনে এসেছে ১৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এতে প্রথমবারের মতো তিন বিলিয়ন বা ৩০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বৃহস্পতিবার যে প্রবাস আয় এসেছে, তা এই হিসাবে ধরা হয়নি।

নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ক্রমেই বেশি করে রেমিট্যান্স আসছে।

সরকার রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়ানোর জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপও নিয়েছে। এসব কারণে প্রবাসীরাও বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। একই সঙ্গে কমেছে হুন্ডি ব্যবসা ও অর্থপাচার। খোলাবাজারের মতোই এখন ব্যাংকে রেমিট্যান্সের ডলারের দাম পাওয়া যাচ্ছে।
আড়াই শতাংশ প্রণোদনাও পাচ্ছেন প্রবাসীরা। আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে আরো বেশি বেড়েছে রেমিট্যান্সের গতিপ্রবাহ। কারণ এ সময় প্রবাসীরা দেশে থাকা পরিবারের সদস্যদের কাছে কিছুটা বেশি পরিমাণে অর্থ পাঠান। গত ফেব্রুয়ারি মাসে সব মিলিয়ে প্রবাস আয় এসেছিল ২৫২ কোটি ডলার। এ মাসে প্রতিদিন গড়ে ১১ কোটি ৩২ লাখ ডলার এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিনে প্রবাস আয় এসেছে ১৬৬ কোটি ডলার। চার দিন পর অর্থাৎ ১৯ মার্চে প্রবাস আয় দাঁড়ায় ২২৫ কোটি ডলার। এর মধ্যে শুধু ১৯ মার্চ এক দিনেই এসেছে ১৩ কোটি ডলার। আবার ১ থেকে ২২ মার্চ তথা মাসের প্রথম ২২ দিনে প্রবাস আয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৪৩ কোটি ডলার, যা ২৪ মার্চে বেড়ে ২৭০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। ২৬ দিনে আয় বেড়ে হয় ২৯৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে গড়ে ১১ কোটি এবং দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়ে ১২ কোটি ডলার করে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত বছরের একই সময়ে এসেছিল ১৯৭ কোটি ডলার; বৃদ্ধি পেয়েছে ৪৯.৪৯ শতাংশ।

আমরা মনে করি, বৈধ পথে রেমিট্যান্স আসাকে আরো নানাভাবে উৎসাহিত করতে হবে। পাশাপাশি হুন্ডি ব্যবসার দৌরাত্ম্য কমাতে হবে। একই সঙ্গে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও দক্ষ জনশক্তি প্রেরণে আরো বেশি জোর দিতে হবে।

মন্তব্য

দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিন

    থেমে নেই মুদ্রাপাচার
শেয়ার
দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিন

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে একটি প্রধান বাধা হচ্ছে বিদেশে মুদ্রাপাচার। মুদ্রাপাচার রোধে অনেক আলোচনা হলেও কাজের কাজ প্রায় কিছুই হয় না। ফলে ক্রমাগতভাবে বাড়ছে মুদ্রাপাচারের পরিমাণ। মুদ্রাপাচার রোধের দায়িত্বে নিয়োজিত সংস্থাগুলোর ভূমিকা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।

ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যানশিয়াল ইনটেগ্রিটির (জিএফআই) তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৭৪ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা পাচার হয়। পাচার হয় আরো অনেক উপায়ে। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, সিলেটের ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ফকর ব্রাদার্সের দুই কর্ণধারের বিরুদ্ধে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অর্থপাচারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কয়লা ও পাথর আমদানির আড়ালে প্রথমে টাকা পাচার করেছেন, পরে সেই টাকায় কিনেছেন লোভনীয় গোল্ডেন ভিসা
জুমেইরাহ ভিলেজ সিটিতে যৌথভাবে গড়েছেন ৩৩ তলার বিশাল অট্টালিকা। এর আনুমানিক মূল্য প্রায় ৩৯৪ কোটি টাকা। এই সম্পদের প্রকৃত তথ্য আয়কর নথিতে গোপন করে কর ফাঁকিও দিয়েছেন অর্ধশত কোটি টাকা।

জানা যায়, অর্থপাচারে অভিযুক্তরা হলেন ফকর ব্রাদার্সের চেয়ারম্যান ফকর উদ্দিন আলী আহমেদ ও তাঁর ছেলে ফকরুস সালেহিন নাহিয়ান।

অনুসন্ধান বলছে, দুবাইয়ের জুমেইরাহ ভিলেজ সিটিতে (প্লট নম্বর ৬৮১৬৪৮১) প্রায় ২৯ কাঠা জায়গার ওপর ৩৩ তলাবিশিষ্ট সাফায়া ৩২ নামের একটি ভবন নির্মাণ করে দার আল কারামা নামের একটি রিয়েল এস্টেট কম্পানি। যৌথ অংশীদারির ভিত্তিতে এই কম্পানির মালিকানায় আছেন ফকর উদ্দিন ও ফকরুস সালেহিন নাহিয়ান। এই ভবনে ২২৪টি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে, যার সিঙ্গল বেডরুমের একটি ফ্ল্যাটের দামই বাংলাদেশি মুদ্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা থেকে শুরু। আছে দুই ও তিন বেডরুমের ফ্ল্যাটও। অর্থপাচারের প্রমাণ পাওয়ায় এরই মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি) পিতা-পুত্রের কর ফাঁকি এবং দেশের সম্পদের তথ্য খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে।
এরই ধারাবাহিকতায় ফকর ব্রাদার্স সংশ্লিষ্ট ১৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। অবশ্য এ বিষয়ে ফকরুস সালেহিন নাহিয়ান বলেন, দুবাইয়ে সাফায়া ৩২ নামের প্রোপার্টি আমাদের বলা হচ্ছে। সেটি আসলে ইনটেলেকচুয়াল প্রোপার্টি। এই ভবন নির্মাণে বাংলাদেশ থেকে কোনো টাকা নেওয়া হয়নি। আমরা শুধু অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রির পার্টনার হয়েছি, যে চুক্তি ২০২৪ সালের ২ জুলাই করা হয়েছে। সেই চুক্তিনামা আমাদের কাছে আছে। অর্থাৎ আয়কর আইন অনুযায়ী এখনো প্রোপার্টির বিস্তারিত আয়কর আইনে দেখানোর সুযোগ আছে। তাই এটিকে এখনই কর ফাঁকি বলা যাবে না।

বাংলাদেশ থেকে নিয়মিত অর্থ পাচার করা হচ্ছে। অভিযোগ আছে, গত দেড় দশকেই প্রায় ৩০ লাখ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। অতীতে পাচারবিরোধী বিভিন্ন সংস্থার তদন্তেও অনেকের নাম এসেছে। মুদ্রাপাচারে জড়িত অনেকের নাম পানামা পেপারসসহ আরো অনেক আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে। কিন্তু পাচারের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির উদাহরণ নেই বললেই চলে। আমাদের বিশ্বাস, মুদ্রাপাচার বিরোধী সব সংস্থা সমন্বিতভাবে উদ্যোগী হলে এ ধরনের আরো অনেক ঘটনাই বেরিয়ে আসবে। ফকর ব্রাদার্সের মুদ্রাপাচারের অভিযোগগুলোর দ্রুত ও সুষ্ঠু তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি মুদ্রাপাচারের জমে থাকা মামলাগুলোর বিচারকাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ