<p style="text-align:justify">‘ছুটির ঘণ্টা’ চলচ্চিত্রটি হয়তো তোমরা অনেকেই দেখেছ। ঘণ্টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে স্কুল ছুটি হয়ে যায়। স্কুলের বাথরুমে আটকে পড়ে নিদারুণ কষ্টে মারা যায় এক ছাত্র। স্কুল ছুটি বা ক্লাসের বিরতি বোঝানোর জন্য বাজানো হয় ঘণ্টা বা কাঁসর। এটি এক ধরনের বাদ্যযন্ত্রও। তবে কাঁসরের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার দেখা যায় পূজার আচার-অনুষ্ঠানে।</p> <p style="text-align:justify">সংগীতের অন্যতম উপাদান বাদ্যযন্ত্র। ধ্বনির উৎপত্তি ও ব্যবহারভেদে বাংলা বাদ্যযন্ত্রকে চার ভাগে ভাগ করা যায়—ততবাদ্য, শুষিরবাদ্য, আনদ্ধবাদ্য ও ঘনবাদ্য। যেসব বাদ্যযন্ত্রে তার থেকে ধ্বনি সৃষ্টি হয় সেগুলোকে ততবাদ্য বলে। যেমন—বীণা, সেতার, তানপুরা, সরোদ ইত্যাদি। শুষির বাদ্যযন্ত্র বাঁশ, কাঠ বা অন্য ধরনের ধাতব পদার্থ দিয়ে বানানো হয়। বাতাস বা মুখের ফুঁ দিয়ে ধ্বনি সৃষ্টি করা হয় এতে। যেমন—সানাই, বাঁশি ইত্যাদি।</p> <p style="text-align:justify">আবার যেসব বাদ্যযন্ত্র চামড়া দিয়ে আচ্ছাদিত ও চামড়ার ওপর আঘাতের ফলে ধ্বনি সৃষ্টি করে তা আনদ্ধবাদ্যের অন্তর্ভুক্ত। যেমন—তবলা, মৃদঙ্গ, পাখোয়াজ ইত্যাদি। ঘনবাদ্য ধাতু দিয়ে নির্মিত অর্থাৎ পিতল বা কাঁসা দিয়ে তৈরি। এসব বাদ্যে আঘাতের ফলে ধ্বনি সৃষ্টি হয়।</p> <p style="text-align:justify">কাঁসর বাদ্যযন্ত্রটি ঘনবাদ্যের অন্তর্ভুক্ত। ঘনবাদ্য দুই রকমের হয়—অনুরক্ত ও বিরক্ত। যে বাদ্য সংগীতে ব্যবহার করা হয় সেগুলোকে বলা হয় অনুরক্ত। যেমন—করতাল, মন্দিরা, জলতরঙ্গ ইত্যাদি। যে ঘনবাদ্য পূজার অনুষ্ঠান, স্কুলের ছুটি বা ক্লাস বিরতি, পিটি প্যারেড বা লোক আকর্ষণের জন্য ব্যবহার করা হয় তা বিরক্ত। যেমন—ঘণ্টা, কাঁসর ইত্যাদি।</p> <p style="text-align:justify">কাঁসর সাধারণত গোলাকৃতির হয়ে থাকে। এতে কাঠ, লোহা বা অন্য কোনো ধাতুর মুগুর দ্বারা আঘাত করে ধ্বনি উৎপত্তি করা হয়। এর থেকে উৎপাদিত ধ্বনি অনেক দূর পর্যন্ত শোনা যায়। এটি কানাতোলা থালার আকৃতিবিশিষ্ট একটি বাদ্যযন্ত্র। এর এক প্রান্তে দুটি ছিদ্র করে দড়ি বাঁধা থাকে। সাধারণত বাম হাতে দড়ি ধরে ঝুলিয়ে ডান হাতে কাঠির সাহায্যে বাজানো হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজামণ্ডপে ঢোলের সঙ্গে কাঁসরও বাজে।</p> <p style="text-align:justify">কাঁসরের মতোই দেখতে আরেকটি বাদ্য আছে। এটি কাঁসর অপেক্ষা বেশ ছোট। এর নাম কাঁসি। এর ধ্বনি অপেক্ষাকৃত তীব্র। বিভিন্ন লোকসংগীতে ঢোল, কাঁসরের সঙ্গে কাঁসিও বাজাতে দেখা যায়। এ ছাড়াও শোভাযাত্রা, শবযাত্রা, যুদ্ধযাত্রায় প্রাচীনকাল থেকেই কাঁসরের ব্যবহার লক্ষণীয়।</p> <p style="text-align:justify">♦ আতিফ আতাউর</p>