দৈনন্দিন সুন্নত

যেসব কাজে আল্লাহর প্রশংসা করতে হয়

মো. আবদুল মজিদ মোল্লা
মো. আবদুল মজিদ মোল্লা
শেয়ার
যেসব কাজে আল্লাহর প্রশংসা করতে হয়

ঈমানদার আল্লাহর প্রশংসা করে এবং তাঁর  প্রতি কৃতজ্ঞতা ও আনুগত্য প্রকাশ করে। ইসলামের শিক্ষা হলো, মুমিন কোনো ভালো কাজ করলে এবং সন্তোষজনক কিছু অর্জনের পর আল্লাহর প্রশংসা করবে। দৈনন্দিন জীবনের ভালো কাজে আল্লাহর প্রশংসা করে নিজেকে আল্লাহর আনুগত্য ও কৃতজ্ঞায় অভ্যস্ত করে তুলবে। আল্লাহর প্রশংসা করতে হয়—এমন কিছু দৈনন্দিন কাজ তুলে ধরা হলো—

 

১. ঈমানের কৃতজ্ঞতা সর্বক্ষণ : ঈমান হলো মানুষের প্রতি আল্লাহর সবচেয়ে বড় অনুগ্রহ।

তাই মুমিন সর্বদা ঈমানের দৌলত লাভের জন্য আল্লাহর সপ্রশংস কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। পবিত্র কোরআনে মুমিনের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে, ‘তারা বলবে, প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি আমাদের দ্বিনের পথ দেখিয়েছেন। আল্লাহ আমাদের পথ না দেখালে আমরা কখনো পথ পেতাম না।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ৪৩)

 

২. পানাহারের সময় : রাসুলুল্লাহ (সা.) খাবার শুরুতে বিসমিল্লাহ এবং শেষে আল্লাহর প্রশংসা করতেন।

আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, খাবার সামনে এলে রাসুলুল্লাহ (সা.) পাঠ করতেন, হে আল্লাহ, আপনি আমাদের যে জীবিকা দান করেছেন, তাতে বরকত দিন এবং আমাদের জাহান্নামের শাস্তি থেকে বাঁচান।’ (আল-আজকারুন নাবুওয়াহ, হাদিস : ৫৫৬)

আবু উমামা (রা.) বলেন, নবী (সা.)-এর দস্তরখানা তুলে নেওয়া হলে বলতেন, অসংখ্য-অগণন পবিত্র ও বরকতময়  প্রশংসা আল্লাহর জন্য। হে আমাদের প্রতিপালক, এ (খাবার) থেকে কখনো মুখ ফিরিয়ে নিতে পারব না, বিদায় নিতে পারব না এবং এ থেকে বেপরোয়াও হতে পারব না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৪৫৮)

 

৩. নতুন কাপড় পরিধানের সময় : আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন নতুন কাপড় পরিধান করতেন, জামা অথবা পাগড়ির নাম উচ্চারণ করে তিনি পাঠ করতেন, ‘হে আল্লাহ, সব প্রশংসা আপনার জন্য, আপনি আমাকে এই কাপড় পরিধান করিয়েছেন।

আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি এই কাপড়ের কল্যাণ ও তার জন্য যে কল্যাণ নির্ধারণ করেছেন এবং আশ্রয় প্রার্থনা করছি এই কাপড়ের অনিষ্ট ও তার জন্য যে অনিষ্ট নির্ধারণ করে করেছেন।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪০২০)

 

৪. ঘুম থেকে ওঠার পর : ঘুম মৃত্যুতুল্য। তাই ঘুম ভাঙার অর্থ হলো নতুন জীবন শুরু করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘুম ভাঙার পর পাঠ করতেন, ‘সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদের মৃত্যু দান করার পর আবারও জীবিত করেছেন এবং আমরা তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তন করব।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৩২৪)

৫. ভালো স্বপ্ন দেখলে :  আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) পছন্দনীয় কিছু দেখলে বলতেন, ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যার করুণায় নেক কাজগুলো পূর্ণতা লাভ করে।

’ তিনি অপছন্দনীয় কিছু দেখলে বলতেন, ‘সর্বাবস্থায় সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৮০৩)

 

৬. হাঁচি দিলে : আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, “আল্লাহ যখন আদম (আ.)-এর ভেতর ‘রুহ’ ফুঁকে দিলেন এবং রুহ মাথায় দিয়ে পৌঁছাল, তিনি বললেন, ‘সব প্রশংসা জগত্গুলোর প্রতিপালক মহান আল্লাহর জন্য।’ তাঁর প্রতিপালক তাঁকে বলেন, ‘আল্লাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করুন।” (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৪২০)

 

৭. সকাল বা সন্ধ্যায় উপনীত হলে : আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর সাহাবিদের শিক্ষা দিয়ে বলতেন : তোমাদের কেউ যখন ভোরে উপনীত হয় তখন সে যেন বলে, ‘হে আল্লাহ, আপনার হুকুমে আমরা ভোরে উপনীত হই এবং আপনার নির্দেশেই সন্ধ্যায় উপনীত হই। আপনার নির্দেশেই আমরা জীবন ধারণ করি এবং আপনার নির্দেশেই মারা যাই। আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তনস্থল।’ আর যখন সন্ধ্যায় উপনীত হয় তখন যেন বলে, ‘হে আল্লাহ, আমরা আপনার হুকুমেই সন্ধ্যায় উপনীত হই, আপনার নির্দেশেই সকালে উপনীত হই, আপনার নির্দেশেই জীবন ধারণ করি এবং আপনার নির্দেশেই মারা যাই। আবার আপনার কাছেই পুনরায় জীবিত হয়ে ফিরে যেতে হবে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৯১)

 

৮. দোয়ার আগে : ফাদালাহ ইবনে উবায়দ (রা.) থেকে বর্ণিত, একদা রাসুলুল্লাহ (সা.) এক ব্যক্তিকে নামাজের মধ্যে দোয়ার সময় আল্লাহর বড়ত্ব ও গুণাবলি বর্ণনা এবং নবী (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠ করতে শুনলেন না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, এই ব্যক্তি তাড়াহুড়া করেছে। অতঃপর তিনি ওই ব্যক্তিকে অথবা অন্য কাউকে বলেন, ‘তোমাদের কেউ সালাত আদায়কালে যেন সর্বপ্রথম তাঁর প্রভুর মহত্ব ও প্রশংসা বর্ণনা করে এবং পরে নবী (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠ করে, অতঃপর ইচ্ছানুযায়ী দোয়া করে।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ১৪৮১)

 

৯. ফরজ নামাজের পর : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আল-হামদুলিল্লাহ এবং ৩৩ বার আল্লাহু আকবার পাঠ করবে; এগুলো মিলে ৯৯ বার হয়। শততম বারে সে বলবে, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি এক ও অদ্বিতীয়। সব রাজত্ব ও সব প্রশংসা তাঁর জন্য। তিনি সর্ববিষয়ে সক্ষম। তবে আল্লাহ তার পাপগুলো ক্ষমা করে দেবেন—যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫৯৭)

 

১০. খুতবার শুরুতে : আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের বিয়ের খুতবা শিক্ষা দিয়েছেন—‘সমস্ত প্রশংসা এক আল্লাহর জন্যই। আমরা তাঁর কাছে সাহায্য চাই, তাঁর কাছে ক্ষমা চাই এবং তাঁর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি।...’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২১১৮)

লেখক : সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

কোরআন থেকে শিক্ষা

    পর্ব, ৭৩০
শেয়ার
কোরআন থেকে শিক্ষা

আয়াতের অর্থ : আমি তোমাদের কাছে অবতীর্ণ করেছি সুস্পষ্ট আয়াত, তোমাদের পূর্ববর্তীদের দৃষ্টান্ত এবং মুত্তাকিদের জন্য উপদেশ। আল্লাহ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর জ্যোতি, তাঁর জ্যোতির উপমা যেন একটি দীপাধার, যার মধ্যে আছে একটি প্রদীপ, প্রদীপটি একটি কাচের আবরণের মধ্যে স্থাপিত, কাচের আবচরণটি উজ্জ্বল নক্ষত্রসদৃশ্য; তা প্রজ্বলিত করা হয় পূতঃপবিত্র জায়তুনগাছের তেল দ্বারা, যা প্রাচ্যের নয়, প্রতীচ্যেরও নয়... (সুরা : নুর, আয়াত : ৩৪-৩৫)

আয়াতদ্বয়ে আল্লাহর নুর বা জ্যোতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

শিক্ষা ও বিধান

১. কোরআনের মৌলিক দান বা সুফল হলো দ্বিনের অকাট্য প্রমাণ, আবশ্যক জ্ঞান ও উপদেশ।

২. আল্লাহর নুর বা জ্যোতি হলো মানবজীবনের সবচেয়ে বড় পাথেয়।

তা হলো আসমানি হিদায়াত। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে হিদায়াত দেন।

৩. পাঁচটি আমল মুমিনের অন্তর্দৃষ্টি তৈরি করে : ক. সুন্নতের অনুসরণ, খ. আল্লাহর স্মরণ ও ধ্যান, গ. হারাম দৃষ্টি থেকে বাঁচা, ঘ. প্রবৃত্তি থেকে বাঁচা, ঙ. হালাল খাদ্য গ্রহণ।

৪. যে ব্যক্তি হারাম বিষয় থেকে নজর বা দৃষ্টি সংযত রাখে আল্লাহ তাঁর চোখে নুর দান করেন।

৫. মুমিনের প্রজ্ঞা হলো জ্যোতি আর তার সঙ্গে যখন কোরআন-হাদিসের জ্ঞান যুক্ত হয় তখন জ্যোতির ওপর জ্যোতি হয়।

(আল কোরআন তাদাব্বুর ওয়া আমল : ১৯/১৩)

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য
পর্ব : ২৩

তারাবিতে কোরআনের বার্তা

শেয়ার
তারাবিতে কোরআনের বার্তা

সুরা ইয়াসিন

সুরার শুরুতে কোরআনের কসম করে বলা হয়েছে যে মহানবী (সা.) অবশ্যই আল্লাহর রাসুল। তিনি সঠিক পথে সুপ্রতিষ্ঠিত। তাঁকে পাঠানো হয়েছে এমন একটি সম্প্রদায়কে ঈমানের দাওয়াত দেওয়ার জন্য, যাদের পূর্বসূরিদের সতর্ক করা হয়নি। এরপর মক্কার কাফিরদের ঈমান না আনার কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে তাদের অন্তর তালাবদ্ধ।

পরে কিয়ামত সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ণনা আনা হয়েছে। কিয়ামতের দিন জাহান্নামবাসীদের পৃথক করা হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জান্নাতবাসীদের জন্য শান্তি ও নিরাপত্তার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এরপর বলা হয়েছে যে মহানবী (সা.) কবি নন, বরং তিনি স্পষ্ট কোরআনের মাধ্যমে সতর্ককারী।
গাছ থেকে আগুন সৃষ্টির তত্ত্ব বর্ণনা করা হয়েছে।

আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত

১. আলেমদের কাজ পৌঁছে দেওয়া।

(আয়াত : ১৬-১৭)

২. মানুষ নিজের অমঙ্গল নিজে ডেকে আনে। (আয়াত : ১৯)

৩. মানুষের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করো।

(আয়াত : ২১)

৪. দ্বিন নিয়ে উপহাসকারীদের জন্য আফসোস। (আয়াত : ৩০)

৫. শস্য উৎপাদন আল্লাহর দান।

(আয়াত : ৩৩)

৬. আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করো। (আয়াত : ৩৪-৩৫)

৭. আল্লাহর নিদর্শন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না। (আয়াত : ৪৬)

৮. জান্নাতে মুমিনের সব প্রত্যাশা পূরণ হবে।

(আয়াত : ৫৭-৫৮)

৯. শারীরিক সুস্থতা আল্লাহর ইচ্ছাধীন। (আয়াত : ৬৬)

১০. কোরআন কোনো কাব্য নয় এবং আলেমদের জন্য কাব্যচর্চা শোভনীয় নয়। (আয়াত : ৬৯)

১১. পাপীদের কথায় ব্যথিত হয়ো না। (আয়াত : ৭৬)

১২. নিজের অস্তিত্বের কথা ভুলে যেয়ো না। (আয়াত : ৭৭)

১৩. আল্লাহর উপমা সৃষ্টি কোরো না। (আয়াত : ৭৮)

১৪. সর্বময় ক্ষমতা আল্লাহর জন্য।

(আয়াত : ৮৩)

সুরা সাফফাত

সুরা সাফফাতের মধ্যে প্রধানত তিনটি গায়েবি বিষয় যথাফেরেশতা, জিন ও পরকাল সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। শুরুতেই ফেরেশতাদের শক্তিমত্তা এবং আল্লাহর হুকুম পালনে একনিষ্ঠতা সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। এরপর জিনদের বিষয় আনা হয়েছে। জিনদের একটি দল ফেরেশতাদের পারস্পরিক কথাবার্তা জানার জন্য আকাশে ওঠার চেষ্টা করে। আর তখনই জ্বলন্ত উল্কা তাদের ধাওয়া করে। এই সুরায় কাফিরদের কিয়ামতের দিনের করুণ পরিণতির কথা বর্ণনা করা হয়েছে। উপদেশের জন্য নুহ, ইবরাহিম, ইসমাঈল, হারুন, ইলিয়াস, লুত ও ইউনুস (আ.)-এর ঘটনার কিছু অংশ আনা হয়েছে। ফেরেশতাদের প্রশংসা করে সুরাটি শেষ করা হয়েছে।

আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত

১. মন্দ লোকেরাই উপদেশ গ্রহণ করে না। (আয়াত : ১৩)

২. আল্লাহর নিদর্শন নিয়ে উপহাস কোরো না। (আয়াত : ১৪-১৫)

৩. আল্লাহ একনিষ্ঠ বান্দাদের সম্মানিত করবেন। (আয়াত : ৪০-৪১)

৪. পূর্বসূরিদের ভ্রান্তপথ পরিহার করো। (আয়াত : ৬৯-৭০)

৫. আল্লাহর কাছে বিশুদ্ধ মনে উপস্থিত হও। (আয়াত : ৮৪)

৬. সুসন্তান লাভের জন্য প্রার্থনা করো। (আয়াত : ১০০)

৭. আল্লাহর সাহায্যেই মানুষ বিজয়ী হয়। (আয়াত : ১১৬)

সুরা সাদ

এই সুরায় দাউদ, সুলায়মান, আইয়ুব ও আদম (আ.)-এর ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। অন্যান্য মাক্কি সুরার মতো এই সুরায়ও তাওহিদ, রিসালাত ও আখিরাত সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। মুশরিকদের ভ্রান্ত আকিদা খণ্ডন করা হয়েছে। জান্নাতের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও জাহান্নামের আজাবের ভয়াবহতা সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। নুহ (আ.)-এর জাতি, ফেরাউনের জাতি, আদ জাতি, সামুদ জাতি, লুত (আ.)-এর জাতি ও মাদিয়ানবাসীদের ধ্বংসের ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। আনা হয়েছে ইয়াকুব, ইসমাঈল, ইয়াসআ ও জুলকিফল (আ.)-এর ঘটনা। একেবারে শেষের দিকে আদম (আ.)-এর ঘটনা আনা হয়েছে।

আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত

১. কোরআন উপদেশপূর্ণ কিতাব।

(আয়াত : ১)

২. কোরআন অবিশ্বাসকারীদের জন্য রয়েছে শাস্তি। (আয়াত : ৮)

৩. সৃষ্টিজগৎ আপন কাজের মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত করে। (আয়াত : ১৮)

৪. ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রনায়ক জ্ঞানী ও বাগ্মী হবে। (আয়াত : ২০)

৫. শরিকদের প্রতি অবিচার কোরো না। (আয়াত : ২৪)

৬. মুমিন ভুল স্বীকার করে অনুতপ্ত হয়। (আয়াত : ২৪)

৭. খেয়ালখুশির অনুসরণ মানুষকে সত্যচ্যুত করে। (আয়াত : ২৬)

৮. আল্লাহর কোনো সৃষ্টিই অনর্থক নয়। (আয়াত : ২৭)

৯. কোরআন নিয়ে চিন্তা ও গবেষণা করো এবং অনুধাবনের চেষ্টা করো।

(আয়াত : ২৯)

১০. আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে দান করো। (আয়াত : ৩৯)

১১. বিপদে আল্লাহকে স্মরণ করো।

(আয়াত : ৪১)

১২. পাপের উপলক্ষ হইয়ো না।

(আয়াত : ৬১)

১৩. নিষ্ঠাবানরাই শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচতে পারে।

(আয়াত : ৮২-৮৩)

গ্রন্থনা : মুফতি আতাউর রহমান

 

মন্তব্য

প্রশ্ন-উত্তর

    সমাধান : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা
শেয়ার
প্রশ্ন-উত্তর

কয়েকজন পালাক্রমে ইতিকাফ করে ১০ দিন পূরণ করা

প্রশ্ন : আমাদের মসজিদে রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করার লোক খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই সবাই মিলে এটা নির্ধারণ করে নেয় যে লোকজন পালাক্রমে ১০ দিন ইতিকাফ করবে। প্রশ্ন হলো, এর দ্বারা এলাকার সবার পক্ষ থেকে ইতিকাফ আদায় হবে?

মাসরুর, ঝিনাইদহ

উত্তর : ইতিকাফ মাসনুন আদায় হওয়ার জন্য একই ব্যক্তিকে রমজানের শেষের ১০ দিন ইতিকাফ করতে হয়। সুতরাং প্রশ্নে বর্ণিত পদ্ধতিতে ইতিকাফ আদায় হবে না, বরং মহল্লার সবার জিম্মায় সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া থেকে যাবে।

(বুখারি, হাদিস : ২০২৭, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া : ১৩/১৫২-১৫৬, ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ৫/৪৯০)

 

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

ইসলামী আইনে মব জাস্টিসের কোনো সুযোগ নেই

নুর মোহাম্মদ
নুর মোহাম্মদ
শেয়ার
ইসলামী আইনে মব জাস্টিসের কোনো সুযোগ নেই

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে মব জাস্টিসের প্রবণতা দেখা দেয়, যা কখনো পরিকল্পিত আবার কখনো অপরিকল্পিত। পরিকল্পিত এ দৃষ্টিকোণ থেকে যে পূর্বেই ঘোষণা দিয়ে কারো ওপর আক্রমণ করে বসা। আর অপরিকল্পিত এ বিবেচনায় যে কোথাও সন্দেহভাজন কাউকে পাওয়া গেল অথবা কাউকে অপরাধী মনে হলো অথবা প্রকৃত পক্ষেই অপরাধীফলে প্রথমে দু-একজন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করল, সন্তোষজনক না হলে তাকে মারধর করে কিংবা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মব তৈরি করে। অতঃপর দেখা যায় আরো কিছু লোক জড়ো হয়ে এক পর্যায়ে সবাই মারধর করতে থাকে।

কোনো কোনো সময় পরিস্থিতির শিকার উক্ত ব্যক্তি মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। প্রকৃত ঘটনা বুঝে ওঠার আগেই অনেকে এতে জড়িত হয় এবং মনে করে উক্ত ব্যক্তি যেহেতু অপরাধী, তাই তাকে শায়েস্তা করার অধিকার তাদের রয়েছে!

প্রকৃত পক্ষে এ ধরনের মব জাস্টিসকে প্রচলিত ও ইসলামী আইনের কোথাও অনুমতি দেওয়া হয়নি। ব্যক্তি পর্যায়ে কেউ কাউকে শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা ইসলামে দেওয়া হয়নি। কেউ অপরাধ করলে ইসলামের বিধান হলো, আইন ও বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।

আর শাস্তি কার্যকর করার ক্ষমতা সরকার কিংবা সরকার কর্তৃক মনোনীত প্রতিনিধির। এ ব্যাপারে ফুকাহায়ে কিরামের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। (আল-মাওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ, খণ্ড-৫, পৃষ্ঠা-২৮০)

ন্যায়সংগত কর্তৃপক্ষ ছাড়া অন্য কারো দণ্ড কার্যকর করার ক্ষমতা নেই। ইমাম ইবনু তাইমিয়্যা (রহ.) বলেন, ইসলামী দণ্ডবিধি যথাযথভাবে প্রয়োগ করা রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব।

এই দায়িত্ব পালন করা হয় যখন করণীয় কাজ ত্যাগ এবং বর্জনীয় কাজে লিপ্ত হওয়ার কারণে শাস্তি দেওয়া হয়।

(আল-হিসবাহ, পৃষ্ঠা-৪৫)

সুতরাং রাষ্ট্র কিংবা রাষ্ট্র কর্তৃক নিয়োজিত ব্যক্তি ছাড়া ফৌজদারি অপরাধের বিচারকার্য সম্পন্ন করার সুযোগ নেই।

ব্যক্তি পর্যায়ে কাউকে শায়েস্তা করার প্রবণতা পাল্টাপাল্টি প্রতিশোধের সংস্কৃতিতে রূপ দিতে পারে, যা সমাজকে অস্থিতিশীলতা ও অরাজকতার দিকে ঠেলে দেবে। বিদায় হজের ভাষণের এক পর্যায়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমাদের জন্য আফসোস অথবা ধ্বংস! তোমরা আমার পরে একে অপরের গর্দানে আঘাত করে কুফরির দিকে ফিরে যেয়ো না। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪০৩)

উপর্যুক্ত হাদিস যারা রাষ্ট্রব্যবস্থাকে উপেক্ষা করে যারা আইন নিজের হাতে তুলে নেয়, তাদের জন্য ধ্বংসের কথা বলা হয়েছে।

এমনকি তাদের এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে কুফরির দিকে প্রত্যাবর্তনের সঙ্গে তুলনা করেছেন। অতএব, সামাজিক শৃঙ্খলা, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, সর্বোপরি ন্যয়াবিচারের স্বার্থে কোনো ধরনের মব জাস্টিস সমীচীন নয়।

লেখক : পিএইচডি গবেষক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ