<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উম্মতের প্রতি পরম দরদি মহানবী (সা.) তাঁর উম্মতকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করতে সদা সচেষ্ট ছিলেন। তিনি সব সময় উম্মতের কল্যাণ কামনা করতেন। তাদের অকল্যাণ থেকে রক্ষা করার আপ্রাণ চেষ্টা করতেন। এর ধারাবাহিকতায় তিনি তাঁর উম্মতদের বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক কাজ সম্পর্কে বিশেষভাবে সতর্ক করতেন। যেমন: একদিন রাসুল (সা.) বলেছেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তোমরা সাতটি ধ্বংসকারী বস্তু থেকে বেঁচে থাকো। তারা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, সেগুলো কী? তিনি বলেন, আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা, জাদু, যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে কাউকে হত্যা করা, যা আল্লাহ হারাম করেছেন, সুদ খাওয়া, এতিমের মাল ভক্ষণ করা, জিহাদের ময়দান থেকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করা (পালিয়ে যাওয়া), সাধ্বী সরলমনা রমণীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করা।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (বুখারি, হাদিস : ৬৮৫৭)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নিম্নে এই প্রত্যেকটি কাজের ভয়াবহতা সংক্ষিপ্তাকারে তুলে ধরা হলো, </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">১. শিরক করা : শিরক অমার্জনীয় পাপ। মহান আল্লাহ শিরককারীদের ক্ষমা করেন না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শরিক করাকে ক্ষমা করেন না। তিনি ক্ষমা করেন এ ছাড়া অন্যান্য পাপ, যার জন্য তিনি চান। আর যে আল্লাহর সঙ্গে শরিক করে সে অবশ্যই মহাপাপ রচনা করে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (সুরা নিসা, আয়াত : ৪৮)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তাই প্রতিটি মুমিনের উচিত, শিরক থেকে দূরে থাকা, শিরক হয়ে গেলে আল্লাহর কাছে খাঁটি মনে তাওবা করা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২. জাদু করা : জাদু-টোনা ইসলামের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ। তাই তা শিক্ষা করা বা জাদুকরদের বিশ্বাস করা হারাম। হাফেজ ইবনে হাজার (রহ.) বলেন, আল্লাহর বাণী</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমরা তোমাদের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ। সুতরাং তোমরা কুফরি কোরো না।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (সুরা বাকারা, আয়াত : ১০২)। এই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়, জাদু শিক্ষা করা কুফরি। (ফতহুল বারি : ১০/২২৫)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তবে নবীজি (সা.) যেহেতু মাঝেমধ্যে কোরআনের আয়াত দিয়ে ঝাড়ফুঁক করেছেন, তাঁর সীমারেখা মেনে ঝাড়ফুঁক করলে তাকে জাদু বলা যাবে না।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">৩. অন্যায়ভাবে কোনো মানুষকে হত্যা করা : অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা করা গোটা মানবতাকে হত্যার নামান্তর। তা যে পদ্ধতিতেই হোক। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করা কিংবা জমিনে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করা ছাড়া যে কাউকে হত্যা করল, সে যেন সব মানুষকে হত্যা করল...। (সুরা মায়েদা, আয়াত : ৩২)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">৪. সুদ খাওয়া: মহান আল্লাহ সুদকে হারাম করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয় হালাল করেছেন আর সুদকে হারাম করেছেন।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৫) </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সুদখোর স্বয়ং আল্লাহ ও রাসুলের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হে মুমিনরা, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের যা বকেয়া আছে তা ছেড়ে দাও, যদি তোমরা মুমিন হও। যদি তোমরা না করো (সুদের বকেয়া না ছাড়ো, সুদের কারবার অব্যাহত রাখো) তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা শুনে নাও...।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৮-২৭৯) </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সুদের সঙ্গে জড়িত সবাইকে নবীজি (সা.) অভিশাপ দিয়েছেন। বর্ণিত হয়েছে, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যে সুদ খায়, যে সুদ খাওয়ায়, যে সাক্ষী থাকে এবং যে ব্যক্তি সুদের হিসাব-নিকাশ বা সুদের চুক্তিপত্র ইত্যাদি লিখে দেয় সবার প্রতি রাসুলুল্লাহ (সা.) লানত করেছেন।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (তিরমিজি, হাদিস : ১২০৬)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">৫. এতিমের সম্পদ (অন্যায়ভাবে) ভক্ষণ করা : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নিশ্চয়ই যারা এতিমদের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে তারা তো তাদের পেটে আগুন খাচ্ছে; আর অচিরেই তারা প্রজ্বলিত আগুনে প্রবেশ করবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (সুরা নিসা, আয়াত : ১০)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">৬. যুদ্ধের মাঠ থেকে পালিয়ে যাওয়া : কোরআন-হাদিসের আলোকে সমর্থিত ইসলামী কোনো যুদ্ধ হলে, যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে যাওয়া ধ্বংসাত্মক কাজ। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাদের জাহান্নামি বলে আখ্যা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হে মুমিনগণ, তোমরা যখন যোদ্ধা-বাহিনীরূপে কাফিরদের সম্মুখীন হও, তখন তাদের পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে না (পালিয়ে যাবে না)। আর যে ব্যক্তি সেদিন তাদের পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে সে আল্লাহর গজব নিয়ে ফিরে আসবে। তবে যুদ্ধের জন্য (কৌশলগত) দিক পরিবর্তন অথবা নিজ দলে আশ্রয় গ্রহণের জন্য হলে ভিন্ন কথা; এবং তার আবাস জাহান্নাম। আর সেটি কতই না নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (সুরা আনফাল, আয়াত : ১৫-১৬)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এই আয়াত দ্বারা ইসলামের জন্য কখনো যুদ্ধে লিপ্ত হলে, যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। তবে কৌশলগত কারণে শত্রুপক্ষকে বিভ্রান্ত করে ভালোভাবে আক্রমণ করার জন্য কখনো কখনো পিছপা হওয়ার অভিনয় করলে তার সুযোগ রয়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">৭. সতীসাধ্বী নারীকে অপবাদ দেওয়া : কারো সম্পর্কে না জেনে তাকে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া কবিরা গুনাহ। যদি কেউ কোনো মুমিন সতী নারীর ওপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে, তা প্রমাণ করতে না পারে, তবে ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে অপবাদদাতা নিজেই ৮০ বেত্রাঘাত সাজার দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে যায়। তা ছাড়া এ ধরনের অপরাধ মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। (বুখারি, হাদিস : ২৭৬৬)</span></span></span></span></p> <p> </p>