এ লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচনের ন্যূনতম ২১ দিন আগে, অর্থাৎ ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে গঠিত নির্বাচন কমিশন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সে অনুযায়ী, আগামী জুনের তৃতীয় থেকে চতুর্থ সপ্তাহে নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হতে পারে।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১৩ মে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। মনোনয়নপত্র বিতরণ ১৫ মে থেকে শুরু হয়ে দাখিলের শেষ সময় ১৯ মে পর্যন্ত। ২০ মে মনোনয়নপত্র নিরীক্ষা ও বাছাই করা হবে। প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হবে ২২ মে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ মে। এরপর ২৭ মে প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে জুন মাসের তৃতীয় থেকে চতুর্থ সপ্তাহে।
এ ব্যাপারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. সালেহ হাসান নকীব কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছি। সে অনুযায়ী আমাদের কাজ চলছে। শিগগিরই রাকসু বিধিমালার খসড়া চূড়ান্ত হবে। আশা করছি, রোডম্যাপ অনুসারেই নির্বাচন করতে পারব।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা চাকসু নির্বাচনের পক্ষে। এ জন্য
কমিটি করে দিয়েছি। কমিটি একাধিক বৈঠকও করেছে। তারাই পুরো ব্যাপারটা দেখভাল করছে।’
আগামী ২০ মার্চের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ। এ ছাড়া এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে তফসিল ঘোষণার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। গত ১১ মার্চ এসব দাবিতে উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বরাবর সংগঠনটির কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতারা স্মারকলিপি দেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রোডম্যাপ ঘোষণা না হলে তাঁরা কঠোর আন্দোলনে যাবেন বলেও হুঁশিয়ারি দেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, জুলাই-পরবর্তী প্রেক্ষাপটে ডাকসুর জন্য ছাত্রসমাজের দাবি জোরালো হয়েছে। কিন্তু হতাশার বিষয় হলো, অভ্যুত্থানের সাত মাস পার হলেও ডাকসুর দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। স্বৈরাচার পতনের মাধ্যমে যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখছি, তার নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
ঢাবি প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ডাকুস নির্বাচন নিয়ে দুটি কমিটি কাজ করছে। প্রথম কমিটি এরই মধ্যে ছাত্রসংগঠনের নেতা ও অংশীজনদের মতামত নিয়েছে। অন্য কমিটি গঠনতন্ত্রসহ অন্যান্য সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছে। তারা খুব শিগগিরই কাজ শেষ করবে। জানা যায়, ২০১৯ সালের পর বাংলাদেশে আর কোথাও ছাত্রসংসদ নির্বাচন হয়নি। অনেক বড় বিশ্ববিদ্যালয়েও ২০ থেকে ৩০ বছর ধরে ছাত্রসংসদ নির্বাচন হয়নি। বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ ২০১৯ সালে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯২ সালে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯০ সালে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৮৯ সালে, বুয়েটে ২০০১ সালে, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৮ সালে এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৭ সালে ছাত্রসংসদ নির্বাচন হয়েছে।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ছাত্রসংসদ নির্বাচনে অন্যদের চেয়ে আরো পিছিয়ে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদ নির্বাচনে তেমন গতি নেই।