নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের পরিবারের টেলিকম ব্যবসায় জালিয়াতি, প্রতারণা ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) ৯০ দিনের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সাখাওয়াত হোসেন নামের এক ভুক্তভোগীর রিটে প্রাথমিক শুনানির পর মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এই আদেশ দেন।
কথিত টেলিকম ব্যবসার জালিয়াতি, প্রতারণা ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে নির্দোষ রিট আবেদনকারীকে (সাখাওয়াত হোসেন) রক্ষায় বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন আইনত কর্তৃত্ববহির্ভূত ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, বিটিআরসির চেয়ারম্যান, যৌথ মূলধন কম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর (আরজেএসসি) নিবন্ধক, বাংরাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি)সহ ১১ জন বিবাদীকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির; সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সাদ্দাম হোসেন।
শিশির মনির কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ওসমান পরিবারের টেলিকম ব্যবসার নামে জালিয়াতি, প্রতারণা নিয়ে গত ১৪ জানুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শামীম ওসমানের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান ‘কে টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেড’র কাছে সরকারের পাওনা ১২৬ কোটি টাকা।
এই বিপুল পরিমাণ পাওনা ফাঁকি দিতে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধাররা অভাবনীয় জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনটি যুক্ত করে রিট আবেদনটি করা হয়েছে। হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দিয়েছেন।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর টেলিযোগাযোগ খাতে বেশ কিছু লাইসেন্স দেওয়া হয়।
তখন বিদেশ থেকে কল আনা ছিল লাভজনক ব্যবসা। জাহাঙ্গীর কবির নানক, শামসুল হক টুকু, শামীম ওসমানসহ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা তখন আইজিডব্লিউ লাইসেন্স নেন। লাইসেন্স নিতে ফি দিতে হয় এবং বিদেশ থেকে আনা কল থেকে আয়ের একটি অংশ বিটিআরসিকে দিতে হয়। ‘রাজনৈতিক বিবেচনায় লাইসেন্স পাওয়া ব্যক্তিরা বিটিআরসির পাওনা না দিয়ে একপর্যায়ে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেন। ছয়টি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিটিআরসি এখনো ৯২১ কোটি টাকার বেশি পাবে। শামীম ওসমানের স্ত্রী সালমা ওসমান ও ছেলে ইমতিনান ওসমানের নামে ২০১২ সালে ১৫ বছরের জন্য ‘কে টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেড’র লাইসেন্স নেওয়া হয়। এই কে টেলিকমের কাছে বিটিআরসির পাওনা ১২৬ কোটি টাকার বেশি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটিতে শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর আহমেদ এবং তার (শামীম ওসমান) ঘনিষ্ঠ জয়নাল আবেদীন মোল্লা ও জাহাঙ্গীর হোসেন মোল্লার মালিকানাও ছিল। ২০১৩ সালের ৪ আগস্ট ওসমান পরিবার কে টেলিকমের মালিকানা সাখাওয়াত হোসেন, সিলেটের স্কুলশিক্ষক দেবব্রত চৌধুরী ও বগুড়ার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী রাকিবুল ইসলামের নামে হস্তান্তর করে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, তারা কেউই এ বিষয়ে কিছু জানতেন না। জালিয়াতি করে তাদের মালিক দেখানো হয়েছে। কে টেলিকমের কাছ থেকে পাওনা আদায়ে ২০১৪ সালের ২২ জুন মামলা করে বিটিআরসি। এই মামলায় গত ১৮ অক্টোবর বিটিআরসির কর্মকর্তারা চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানার পুলিশ নিয়ে সাখাওয়াতের গ্রামের বাড়িতে গেলে তিনি মালিকানার কথা জানতে পারেন। এরপর বিটিআরসি, দুদকসহ বিভিন্ন দপ্তরে এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেন সাখাওয়াত। প্রতিকার না পেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন তিনি।