<p>দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর একটি প্রধান কারণ নিউমোনিয়া। এই মৃত্যু কমাতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে বাবল কন্টিনিউয়াস পজিটিভ এয়ারওয়ে প্রেসার (বাবলসিপ্যাপ/বিসিপ্যাপ)। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী, অক্সিজেন থেরাপির তুলনায় বিসিপ্যাপ বেশি কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, বিসিপ্যাপ ব্যবহারে নিউমোনিয়ায় শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি ৭৫ শতাংশ কমে যায়। গতকাল রবিবার ঢাকায় এক বিশেষ সেমিনারে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।</p> <p>বিসিপ্যাপ উদ্ভাবন করেছেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) বিজ্ঞানী মোহাম্মদ জুবায়ের চিশতি এবং তাঁর কিছু সহকর্মী। প্লাস্টিকের বোতল, একটি নল ও কিছু সরঞ্জাম দিয়ে এটি তৈরি। খরচ প্রায় দুই ডলার (২৪০ টাকা)।</p> <p>শিশুদের নিউমোনিয়ার চিকিৎসায় বাবলসিপ্যাপ স্থানীয়ভাবে তৈরি। সাশ্রয়ী মূল্যের শ্বাস-প্রশ্বাস সহায়ক একটি উদ্ভাবনের সম্ভাবনা তুলে ধরতে আইসিডিডিআরবিতে গতকাল বিশেষ সেমিনার আয়োজন করে প্রতিষ্ঠানটি। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ডা. সায়েবা আক্তার। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পেডিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মেসবাহ উদ্দিন আহম্মেদ ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মো. মাজহারুল শাহীন।</p> <p>জুবায়ের চিশতির উদ্ভাবিত বাবলসিপ্যাপের কার্যকারিতা প্রমাণের জন্য ২০১১ সালের আগস্ট থেকে ২০১৩ সালের জুলাই পর্যন্ত আইসিডিডিআরবির হাসপাতালে ভর্তি ২২৫ শিশুকে নিয়ে গবেষণা হয়। গবেষণায় দেখা যায়, বাবলসিপ্যাপ ব্যবহারে নিউমোনিয়ায় শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি ৭৫ শতাংশ কমে যায়। এ নিয়ে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে বিশ্বখ্যাত চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্য সাময়িকী ল্যানসেটে বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ ছাপা হয়।</p> <p>কম খরচে সহজে ব্যবহারযোগ্য ও সহজে তৈরিযোগ্য বিবেচনায় এই প্রযুক্তির ব্যাপারে অনেকেই আগ্রহী হয়ে ওঠে, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের দেশগুলো। এর কার্যকারিতা দেখানোর জন্য ২০২১ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত ইথিওপিয়ার ১২টি জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে এক হাজার ২৪০ শিশুর ওপর বাবলসিপ্যাপ নিয়ে গবেষণা হয়। তাতে নিউমোনিয়ায় মৃত্যুঝুঁকি ৮৬ শতাংশ কমতে দেখা যায়।</p> <p>আইসিডিডিআরবির সিনিয়র সায়েন্টিস্ট ডা. মোহাম্মদ জুবায়ের চিশতী বলেন, ‘আমাদের গবেষণা, যার মধ্যে বাংলাদেশ ও ইথিওপিয়ায় ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল রয়েছে, সেটি প্রমাণ করেছে যে বাবলসিপ্যাপ অনেক প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে বেশি কার্যকর। এরই মধ্যে আফ্রিকার ৩৭টি, ইথিওপিয়ার ২৪টি, নাইজেরিয়ার ১২টি এবং মালাউইতে একটি হাসপাতালে ইমপ্লিমেন্টেশন রিসার্চের মাধ্যমে আমাদের প্রযুক্তির বহুল ব্যবহার শুরু হয়েছে। এখন বাংলাদেশ এবং এশিয়ার দেশগুলোতেও এই জীবন রক্ষাকারী উদ্ভাবনের ব্যবহার বাড়ানো উচিত।’</p> <p>সেমিনারে ইথিওপিয়ায় বিসিপ্যাপের সফল বাস্তবায়ন সম্পর্কেও তথ্য তুলে ধরা হয়। জেলা পর্যায়ের ১২টি হাসপাতালে পরিচালিত কার্যকারিতা এবং সম্ভাব্যতা পরীক্ষার পর দেখা যায়, বিসিপ্যাপ সাধারণ লো-ফ্লো অক্সিজেন থেরাপির তুলনায় ৭৪ শতাংশ চিকিৎসা ব্যর্থতা এবং ৮৬ শতাংশ মৃত্যুহার কমাতে সহায়ক হয়েছে। ইথিওপিয়ায় পাওয়া সাফল্য এবং বাংলাদেশের চলমান প্রচেষ্টাগুলোর মাধমে বিসিপ্যাপ বৈশ্বিকভাবে নিউমোনিয়া সম্পর্কিত মৃত্যুহার কমাতে নিশ্চিতভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত। আইসিডিডিআরবির লক্ষ্য অনুযায়ী নেপাল এবং অন্যান্য দেশের ব্যবহার সম্প্রসারণ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্র-৩ অর্জনের ক্ষেত্রেও অবদান রাখবে।</p> <p>সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বারডেম জেনারেল হাসপাতালের (চাইল্ড ও মাদার উইং) পেডিয়াট্রিকস বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. আবিদ হোসেন মোল্লা। তিনি বলেন, ‘আইসিডিডিআরবিতে পরিচালিত ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে প্রমাণিত হয়েছে, বিসিপ্যাপ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রস্তাাবিত লো-ফ্লো অক্সিজেন থেরাপির তুলনায় ৭৫ শতাংশ মৃত্যুহার কমাতে সাহায্য করে। বিসিপ্যাপের মাধ্যমে চিকিৎসাপ্রাপ্ত শিশুদের মধ্যে হাই-ফ্লো এবং লো-ফ্লো অক্সিজেন থেরাপির তুলনায় চিকিৎসার ব্যর্থতার হার ছিল উল্লেখযোগ্যভাবে কম।’</p> <p> </p>